অনেকেই অভিযোগ করে, ইভ টিজিং-এর শিকার হচ্ছে কিন্তু মা-বাবাকে বলতে ভয় পায়, পাছে ভয়ে তারা পড়াশোনাই না বন্ধ করে দেয় এবং বিয়ে দিয়ে দেয়।
ভয় নামক ভয়ানক ব্যাধিটার জন্যেই ইভ টিজিং নামক ব্যাধিটাও ভয়াবহ আকার ধারণ করে চলেছে এই সমাজে। অপরাধীর জন্যে কি নিরপরাধরা বন্দি জীবন-যাপন করে? নাকি অপরাধীকেই বন্দি করে রাখে?
ইভ টিজারদের মা-বাবা ও টিজিং-এর শিকার হওয়া মেয়েটার মা-বাবার এই ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা আছে, আর তারচেয়ে বড় ভূমিকা রাষ্ট্রের। আপাতত মা-বাবা ও সমাজের ভূমিকা এবং ভুল নিয়েই বলি।
প্রথমত, আপনার মেয়ের তো এখানে কোনো দোষ নেই, তাহলে অন্যের অপরাধের জন্যে তাকে কেন পড়াশোনা বন্ধ বা বিয়ে দিয়ে শাস্তি দেবেন? মেয়েকে মানসিক ও শা্রীরিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলুন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শেখান। নিজেরাও সোচ্চার হোন, সমাজের বাকি মানুষদের নিয়ে এইসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। প্রতিবাধ-প্রতিরোধের বিকল্প নেই।
দ্বিতীয়ত, কেউই জন্ম থেকেই ইভ টিজার না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো, সঙ্গদোষ, অপসংস্কৃতি ইত্যাদির প্রভাবে পড়ে এমন সমাজ গর্হিত আচরণে তারা উদ্বুদ্ধ হয়। তাই মা-বাবার উচিত ছেলের দিকে খেয়াল রাখা। আপনাদের ঘরেও মেয়েরা জন্ম নেয়, তাদের কেউ ইভ টিজিং করলে নিশ্চয়ই আপনার ভাল লাগবে না।
তৃতীয়ত, অনেকেই বলে- “এই বয়সের ছেলেরা একটু-আধটু এমন করেই, বয়স বাড়লে ঠিক হয়ে যাবে।” এই কথাটা বলে এমন গর্হিত কাজকে পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দেয়াটা কঠিন অন্যায়। এই একটু-আধটু থেকে অনেক কিছুই ঘটে যায়। অনেকে মেয়েই সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে বা মানসিক সমস্যায় ভোগে, পড়াশোনা চালাতে পারেনা, এসিড সন্ত্রাস এমনকি ধর্ষণের শিকার পর্যন্ত হয়। এটা কি কোনো জাতির জন্য আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ ডেকে আনছে?
চতুর্থত, অনেকে যুক্তি দেখায়, মেয়ের চাল-চলন খারাপ, তাই ছেলেরা উত্যক্ত করে। মেয়ের চাল-চলন খারাপ হলে উত্যক্তকারীর চরিত্রটা কেমন জনাব?? একটা অপরাধকে প্রশ্রয় দেবার জন্যে এ ধরণের কুযুক্তির অবতারণা নিষ্প্রয়োজন। বরং উন্নত রুচিবোধ, সংস্কৃতির চর্চা প্রয়োজন।
ইভ টিজিং-এর মতো ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিকে সমাজ থেকে নির্মূল করতে না পারলে আপনি-আমি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, দেশ ও জাতি কেউই এগোতে পারবে না। আপনার-আমার নীরব ভূমিকা এই অন্যায়কে ফুলিয়ে-ফাপিয়ে ক্যান্সারের রূপ ধারণ করাবে এবং সমাজ প্রগতির পথকে শতবর্ষ পিছিয়ে দেবে। আর কতো ইভ টিজিং-এর কবলে পড়ে আত্মহত্যা, শিক্ষা জীবনের অবসান, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, ধর্ষণ-খুন, এসিড সন্ত্রাস দেখলে আমরা প্রতিবাদী হব? এই অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিয়ে রুখে দাঁড়াব? আমাদের বিবেক, আমাদের চেতনা কি জাগবে না? আমরা কি তেলাপোকার মতো জীবন টিকিয়ে রাখতে চাই নাকি প্রতিবাদ করে বীরের মতো বাঁচতে অথবা প্রয়োজনে মরতে প্রস্তুত?
১৬টি মন্তব্য
কৃন্তনিকা
হুম… সম্পূর্ণ সহমত
ফাহিমা কানিজ লাভা
সহমত পোষণের জন্যে ধন্যবাদ।
মশাই
বেশ পরিছন্ন লেখা। মুগ্ধতা রেখে গেলাম আর ধন্যবাদ পুরোনো লেখাগুলো পড়ার জন্য সুযোগ করে দেওয়া।
আপনার পরতিটি ধাপের সাথেই সহমত পোষণ করছি। এর প্রতিকার চাই আমিও। কিন্তু আদৌ হবে কি? আরো সচেতনতা চাই। ধন্যবাদ পোষ্টের জন্য।
ফাহিমা কানিজ লাভা
প্রতিকার একদিনে হবে না। কিন্তু লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা যারা বুঝি তারা সংগ্রাম করব আর যারা বোঝেনা তাদের বোঝাতে হবে। বেগম রোকেয়া যখন নারীদের স্কুলে আনার জন্যে কাজ কশুরু করেছিলেন, তখন মাত্র ৫ জন ছাত্রী পেয়েছিলেন। আজকে আমাদের দেশের নারীরা শিক্ষার সুযোগ পায় আগের চেয়ে অনেক বেশি। অল্প বা সম্ভব হবে কিনা- এসব ভেবে উনি কাজ থামিয়ে দিলে আজো নারীরা পিছিয়ে থাকতো।
আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে। শুভ কামনা 🙂
শুন্য শুন্যালয়
শেকড় সহ ডালপালা তোলা অনেক অনেক কঠিন, তবু আরম্ভ যে করা উচিত ।। ধন্যবাদ আপনাকে লাভা।।
ফাহিমা কানিজ লাভা
“সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে কখনো করে না বঞ্চনা”।
ধন্যবাদ আপনাকেও 🙂
মিথুন
করনীয়গুলোর কোন একটা যদি করা শুরু করা যেতো।। 🙁
ফাহিমা কানিজ লাভা
শুরু করুন নিজের চারপাশ থেকেই। সবাই যদি নিজ নিজ জায়গার সোচ্চার হয়, তাহলেও কিন্তু চিত্রটা বদলাতে শুরু করতো। আমরা জাগলেই হবে।
স্বপ্ন নীলা
এ্যাকশনে যেতে হবে ইমিডিয়েটলি। সবার আগে নিজকে বিশ্বাস করতে হবে এবং কাজ করার জন্য কমিটমেন্ট থাকতে হবে মনের ভিতর, কাজ শুরু করতে হবে। তারপর পরিবার হতে শুরু করতে হবে—আত্মীয়,,,স্কুল কলেজ, ইউনিভারসিটি————–
ফাহিমা কানিজ লাভা
চেতনায় প্রতিবাদের অগ্নিশিখা জ্বালাতে হবে। আপনার সাথে সহমত।
ছাইরাছ হেলাল
একটি জায়গা থেকে শুরু করতেই হবে ।
ফাহিমা কানিজ লাভা
শুরুটাই পথ দেখাবে।
মশাই
ভয় কোথায়? লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে আপনি তা বুঝতে পেরেছেন তা আমিও বুঝতে পেরেছি। আমরা যারা বুঝি তারা সংগ্রাম করবো আর যারা বুঝে না তাদেরকে বুঝতে হবে। সহমত।
আমার শুধু ভয় নির্লিপ্তটাতে। একটি আন্দোলন যখন শুরু করা হয় খুব আন্দোলিত ভাবেই শুরু হয়, কিন্তু ধীরে ধীরে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে এক সময় স্থিত হয়ে যায়। সম্ভব কি এইভাবে?
এই আন্দোলন শুরু হতে পারে আপনার থেকে অথবা আমার থেকে অথবা কোনো একটি স্থান থেকে তার উত্পত্তি হতেই পারে। তবে দেখুন স্থায়িত্বতার অভাবে তা ভেঙ্গে পরছে। আমার মতে সংগ্রামের পূর্বে আগে সংগ্রামে নামার মানসিকতা তৈরী করতে হবে। উদাহরণ সরূপ আমি বলতে পারি আপনি একটি পোষ্ট দিলেন আন্দোলনের ডাক দিয়ে এবং পোষ্ট দিয়েই উধাও। সেই আন্দোলন কি কোনদিন এগিয়ে যাবে? যেহেতু এই সংগ্রাম কারো একজনের মাধ্যমে শুরু হতে হবে সেহেতু যার মাধ্যমে শুরু হবে তাকে নিরালস্যে অহোরাত্রিতে কাজ করে যেতে হবে। তুলে আনুন সমাজের এই কুচিত্রগুলো একসময় সুফল আসবেই সেই আশা আজ করি।
ফাহিমা কানিজ লাভা
সংগ্রামী চরিত্র ও আপোসহীন মনোভাবে অটল চরিত্র দরকার। একটা ইভেন্ট খুললে অনেকেই গোয়িং দেয়, কিন্তু গিয়ে দেখি অল্প কজন আসে। নেতৃত্বে যে থাকবে তার চরিত্রে দৃঢতা না থাকলেও ঝামেলা। আশা করি একদিন সব সমস্যার সমাধান হবে।
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
অল্প কথায় পূর্ণাঙ্গ আলোচনা। ভালো লাগলো।
ফাহিমা কানিজ লাভা
ধন্যবাদ