” এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না
একবার তোমাকে দেখতে পাবো
এই নিশ্চয়তাটুকু পেলে-
বিদ্যাসাগরের মতো আমিও সাঁতরে পার হবো ভরা দামোদর…
কয়েক হাজার বার পাড়ি দেবো ইংলিশ চ্যানেল;
তোমাকে একটিবার দেখতে পাবো এটুকু ভরসা পেলে
অনায়াসে ডিঙাবো এই কারার প্রাচীর,
ছুটে যবো নাগরাজ্যে পাতালপুরীতে
কিংবা বোমারু বিমান ওড়া
শঙ্কিত শহরে।
যদি জানি একবার দেখা পাবো
তাহলে উত্তপ্ত মরুভূমি
অনায়াসে হেঁটে পাড়ি দেবো,
কাঁটাতার ডিঙাবো সহজে,
লোকলজ্জা ঝেড়ে মুছে
ফেলে যাবো যে কোনো সভায়
কিংবা পার্কে ও মেলায়;
একবার দেখা পাবো শুধু এই আশ্বাস পেলে
এক পৃথিবীর এটুকু দূরত্ব
আমি অবলীলাক্রমে পাড়ি দেবো।
তোমাকে দেখেছি কবে, সেই কবে, কোন বৃহস্পতিবার
আর এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না। ”
– মহাদেব সাহার কবিতাটি ওর বড্ড পছন্দ ছিল! সময়ে-অসময়ে, ঘরে-বাইরে, মোবাইলে কি ইনবক্সে.. সে এই কবিতাটি আবৃত্তি করতোই। কবিতা ছিল ওর ধ্যান-জ্ঞান। জীবনবোধকে সে অনুভব করতে চাইতো কবিতার দ্বারা। আর জয় গোস্বামী এবং মহাদেব সাহা ওকে পাগল করে তুলতো!
‘তবে তুমি কি করতে?’
নিজের কাছ থেকে নিরন্তর কিছু জিজ্ঞাসায় পালিয়ে বেড়াতে বেড়াতে বড্ড ক্লান্ত আজ আমান। তারপরও বেহায়া প্রশ্নগুলোর হাত থেকে মুক্তি মিলে না। পরিচিত জগৎ-সংসার তন্ন তন্ন করে একমুঠো ভালোবাসার রোদ্দুর খুঁজে না পেয়ে সেই কবে এই আঁধারের জগতের বাসিন্দা সে! তা প্রায় এক কোটি বছর তো হবেই…
– আমি কি করতাম? আমি মুগ্ধ হয়ে থাকতাম ওর সামনে। সে কবিতার রাজ্যে নিমগ্ন.. আমি ওর সন্তরণশীল দুই ঠোঁটের ওঠা-নামা আর তিরতির করে কেঁপে চলা ওর চোখের তারার ঝিলিকে অবগাহন করতাম! কয়েকটা চুল দুরন্ত সমীরের দুষ্টুমির জন্য ওর একটা চোখকে ঢেকে রাখতো.. সেই আধবোজা চোখের ভেতরের দূর অতলে হারাতে চাইতাম… এরকম কত হাজারো চাওয়া-পাওয়ার মিশেলে একজন নারী হয়ে উঠতো সে আমার অনুভবে!
‘ তবে আজ এই দূর মহাশুন্যে পালিয়ে আছ কেন?’
– পালিয়ে আছি তোমায় কে বললে? সে নারী হতে চায়নি.. কবি হতে চেয়েছে! আমাকে তাঁর কবিতার প্রচ্ছদপট বানাতে চেয়েছে.. আমি তাকে নারী বানাতে চেয়েছি.. কোনো কবির অক্ষরের প্ল্যাটফর্ম হতে চাইনি। তাই সে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আমার থেকে। সেই থেকে তাঁর দিকে মুখ করে চেয়ে আছি.. আজ এক কোটি বছর ধরে.. যদি সে ফিরে!
‘ আজ পর্যন্ত যত নারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, কেউ কি আবার ঘুরে ফিরে এসেছে? নারী বড্ড রহস্যময়ী, জানো তো?’
– হ্যা জানি। তবে সে নারী হয়ে উঠেনি এখনো। বলতো, ফিরে আসার ব্যাপারে কবিদের সম্পর্কে কি জানো?
‘ আমি কবিতা পছন্দ করি না, তাই যারা ওগুলো লিখে, তাদের সম্পর্কে আমি সম্পুর্ণ অজ্ঞ।’
– তবে তুমি অফ যাও। এত কথা বলছ কেন? একাকি থাকার জন্যই তো এতো দূরে এলাম। আমাকে একা থাকতে দাও।
একা একজন মানুষ তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে বড্ড অনুভব করে.. তাকে নিয়ে ফানুস উড়াতে চেয়েছিল.. অন্ধকার রাতের আঁধারে আলোর মিছিল হয়ে এক একটি ফানুসের দূরাকাশের নক্ষত্রবিথী হয়ে যাওয়া আর দেখা হয়নি.. গত এক কোটি বছর ধরে!
সেই কোনো এক বৃহস্পতিবারে ভালোবাসার যে বীজের জন্ম হয়েছিল, আজ এক কোটি বছর পরে তা প্রস্ফুটিত পুষ্পে পরিণত হয়ে একা এক হৃদয়বানের হৃদয়ভেদ করে বাইরে চলে এসেছে…
সেই থেকে ফুল আর হৃদয়বান একজন হৃদয়হীনার অপেক্ষায়.. জানে সে একদিন আসবেই!
# অণুগল্প
১২টি মন্তব্য
ইঞ্জা
অনবদ্য
মামুন
ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইল।
নীলাঞ্জনা নীলা
লেখাটা মন ছুঁয়ে গেলো। প্রতিটি লাইন দারুণ। অনবদ্য। (y)
মামুন
আপনার সুন্দর অনুভূতি জেনে ভাল লাগল।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানুন।
মোঃ মজিবর রহমান
খুবভাল লাগলো মামুন ভাই।
-{@
মামুন
ধন্যবাদ ভাই।
অনেক ভাল থাকুন।
মৌনতা রিতু
নারী রহস্যময়ি ;?
সাবলিল উপস্থাপন। ভাল লাগা রইল।
মামুন
সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাল থাকুন।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
দারুন একটি লেখা
মামুন
আপনার অনুভূতি জেনে ভাল লাগল।
শুভকামনা রইল।
আবু খায়ের আনিছ
আমি কবিতা পছন্দ করি কিন্তু কবিদের সম্পর্কে অজ্ঞ। ভালো লিখেছেন ভাইয়া।
মামুন
ধন্যবাদ আপনাকে।
কবিদের প্রতি আমি এক আলাদা টান অনুভব করি।
শুভকামনা এবং অনেক ভালবাসা।