এই শহরের মানুষগুলো সেজেছে আজ রংবেরং এর পোশাকে। চারিদিকে উৎসবের পরিবেশ। কেউ কেউ মুখোশ পরেছে, কেউবা চেহারায় পেইন্ট করেছে রং দিয়ে। রাস্তার পাশের প্রশস্ত ফুটপাতে অনেকটা আমাদের দেশের বৈশাখী মেলার মতন পশরা সাজিয়ে নানান রকম খেলনা আর রংবেরঙের লাইট বেচাকেনা চলছে।
ছয় বছরের জীবনে রিহান এই প্রথমবারের মত হ্যালোইন দেখতে বেড়িয়েছে।
দু’মাস আগে থেকেই হ্যালোইন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলো সে। দিন গুনছিলো, একত্রিশে অক্টোবর আসতে আর কতদিন বাকি। সকালে “স্পাইডার ম্যান” কস্টিউম পরে স্কুলে যায় সে। স্কুলে তাঁদের হ্যালোইন প্যারেড ছিল। নানান রকম পোশাকে, সাজে শিশুদের, শিক্ষকদের এ প্যারেড উপভোগ করার মত। বাড়ি ফিরে রিহান সীমাহীন উৎসাহ উদ্দীপনায় দ্রুততম সময়ে হোমওয়ার্ক শেষ করে ! কেননা, আজ সে বাইরে বেরুবে ক্যান্ডি কালেক্ট করতে ! ছোট মানুষ, তাঁদের উচ্ছ্বসিত ছোট ছোট চাওয়াগুলো কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না। বাইরে ঠাণ্ডা, সেই সাথে বাতাস। তবুও যেতে হলো। দোকানী’রা আজ চক্লেট নিয়ে বসে আছে শিশুদের দিবে বলে। দলেদলে শিশুরা এ দোকান, ও দোকান ঢুকছে, হাসিহাসি মুখে বেরুচ্ছে।হাতে তাঁদের মিষ্টি কুমড়ার আদলে তৈরি প্লাস্টিকের ঝুড়ি। কারো কারো ঝুড়ি ভর্তি হয়ে গিয়েছে নানান রকম চকলেটে।
আধা ঝুড়ি চক্লেট নিয়ে বাড়ি ফিরে রিহান। সেগুলো ভীষণ যত্নে রাখে। ভাইকে কিছু দেয়। খুশিখুশি মনে ঘুমোতে গিয়ে নানান কথা বলে। যেমন__ “তুমি দেখসো আমার ফ্রেন্ডকে ওখানে ? ও স্প্যানিশ, ওর নাম সেলিনা… তুমি কি চকলেট পছন্দ করো ?” আমি চোখ গোলাকৃতি করে এক পৃথিবী আগ্রহ নিয়ে বলি, ” আমি কিটক্যাট পছন্দ করি, একটা কিটক্যাট হবে, বাপ ?” রিহান চিন্তিত হয়, ঝুড়ির সব চকলেট নেড়েচেড়ে দেখে। অতঃপর চোখেমুখে আনন্দের হাসি। একটি “কিটক্যাট” ক্যান্ডি বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “এটা তোমার”।
ছোটছোট আনন্দ নিয়ে বেড়ে উঠছে আমাদের শিশুরা। ওরা খুব দ্রুতই বেড়ে উঠছে। বড় হতে হতে মায়ের কোল থেকে আল্গা হচ্ছে। একদিন জীবনের প্রয়োজনে রিহান দূরের কোন শহরে থাকবে হয়তো, যেমনটি আমি আমার বাবা-মা ছেড়ে এই শহরে এসেছিলাম। সেদিন এইসব দৃশ্য, অনুভূতি স্মৃতিপটে ভেসে উঠবে, জানি। আমি হয়তো সেদিন কাঁপাকাঁপা হাতে ঝাপসা হয়ে আসা চোখ মুছতে মুছতে বিড়বিড় করে বলে উঠবো __ আমি কিটক্যাট পছন্দ করি, একটা কিটক্যাট হবে, বাপ ?
সন্তানদের সাথে বাবা-মা’য়ের প্রতিটি মুহূর্ত হোক উপভোগ্য।
রিমি রুম্মান
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
১৮টি মন্তব্য
লীলাবতী
হ্যালোইন নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম বিভিন্ন লেখা পড়ে এবং ভিডিও দেখে। খুবই আনন্দময় এক উৎসব। আপনি নিজে দেখেছেন বাস্তবে, কত আনন্দ এর সাথে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হয়েছে। সবাই যেন আনন্দের মাঝে থাকি। -{@
রিমি রুম্মান
হ্যালোইন এখানে বড় উৎসব। স্কুলগুলোতে সবাই নানান রকম কস্টিউম পরে যায়। প্যারেড হয়। খাবার দাবারের আয়োজন হয়। আমার বাসার পাশ দিয়ে হ্যালোইন এর বিশাল প্যারেড হয়।পুজার সময় আমরা যেমন ছাদে কিংবা রাস্তার কিনারে দাঁড়িয়ে প্রতিমা দেখতাম, ঠিক তেমন করে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার কিনারে দাঁড়িয়ে প্যারেড দেখে নানান রং এর নানান ঢং এর সাজের প্যারেড।
ইঞ্জা
মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে গেলাম, আচ্ছা হ্যালোয়িনের রাতে কি ভুত আসে, আমি বাপু ভুতে ভয় পাই আর কিটক্যাট আমার জন্যও রাকগবেন আপু। 😀
ফারহানা নুসরাত
এই উৎসবটি খুব মজার। যদিও আমাদের দেশে এটি পালন করা হয়না। একটা ভূত ভূত আমেজ ভালই লাগে।
আসলে বর্তমান পৃথিবীতে শিশুর উপযোগী পরিবেশ হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। তাই যতটুকু সম্ভব তাদের ছোট ছোট খুশিগুলোতে তাদের সাথে থাকা। এতেই তো মায়ের অন্তর শান্তি পায়। খুব সুন্দর গুছিয়ে আবেগময় একটি লেখা।
নীলাঞ্জনা নীলা
ফারহানা নুসরাত আমাদের দেশে হ্যালোইন উৎসব নেই, তবে ভূত চতুর্দশী আছে। তবে সনাতন ধর্মে কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশী পালন করা হয়। বলা হয় এই দিনে নাকি সকল অশুভ আত্মারা পৃথিবীতে নেমে আসে। যদিও একই দিনে এটা পড়েনা।
কিছু মনে করবেন না আপনার মন্তব্যের ভেতর এসে মন্তব্য করলাম বলে।
ফারহানা নুসরাত
না আপু কিছু মনে করব কেন। আসলে আমি জানতাম না এই বিষয়ে। আজ জানলাম। এবার থেকে ভূত চতুর্দশী বিষয়টি খেয়াল করে দেখব।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনি খেয়াল করে দেখবেন আমি যে এলোমেলো কথা লিখেছি তাতে দীপাবলি নিয়ে বলেছি। আর ওই যে চৌদ্দ পুরুষের বাতি। ওইদিনই কিন্তু ভূত চতুর্দশী।
ফারহানা নুসরাত
জি আপু আমি পড়েছিলাম, কিন্তু না জানার কারণে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। এখন জেনে গেছি। এবারে বুঝব।
নীলাঞ্জনা নীলা
ঠিক আছে ফারহানা। ভালো থাকুন। 🙂
রিমি রুম্মান
এটি শিশুদের জন্যে ভীষণ আনন্দের।
তাঁরা ব্যাগ নিয়ে ক্যান্ডি কালেক্ট করতে বের হয়। দোকান গুলোতে দোকানীরা ক্যান্ডি নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। কেউ এলে কিছু কিছু করে বিলিয়ে দেয়। অনেকটা মিলাদ শেষে বাতাসা বিলানোর মতন। 😀
মিষ্টি জিন
বাংলাদেশ বাদে যেখানেই গিয়েছিনা কেন হ্যালোইন ডেতে মেয়েদের কে ভূত সাজিয়ে স্কুলে পাঠাতে হয়েছে। ফেরার সমঁয় ছোট ছোট ভূত দুইটা একগাদা চকলেট নিয়ে হাসি মুখে বাসায় ফিরতো।বাচ্চারা খুব এনজয় করে এই অনুষ্টান টা।
একটা সময় আসে যখন পড়াশুনার জন্য হোক বা বিয়ে হোক সন্তান দূরে সরে যায়। কিছুই করার নাই । এটাই নিয়ম।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। এই যে ছোট ছোট আনন্দ নিয়ে বেড়ে উঠছে আমাদের শিশুরা, এটি ভাল লাগে বেশ।
নীলাঞ্জনা নীলা
রিমি আপু এই তো আমার ছেলেটাই এখন আর হ্যালোইন কষ্টিউমের জন্য মুখভার করে থাকেনা। বড়ো হয়ে গেছে। স্কুলে হ্যালোইন ডেন্সে গেলো তাও একটা মাস্ক নিয়ে। ভাবছিলাম এই ছেলে গতবছরও কতো জায়গায় গেছে। তবে গতকাল ওর কয়েকজন বন্ধু এসে ওকে নিয়ে গেলো। সেই বন্ধুরা আবার জুনিয়র। বললাম যা তুই, তোর ছোট ভাই-বোন থাকলেও তো যেতে হতো। গেলো নিয়ে এলো অনেকগুলো চিপস, ক্যান্ডি-চকোলেট। আমি ক্যান্ডি-চকোলেট খাইনা, আমার হাতে এনে দিলো পটেটো চিপস। বললাম না লাগবে না। টেবিলে রেখে চলে গেলো। ও জানে আমি ঠিক খাবো। 🙂
কেন বড়ো হয়ে যাচ্ছে ওরা আপু? 🙁
রিমি রুম্মান
নীলা’দি, আমার বড়ছেলে কখনই হ্যালোইন নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল না। দিনটি আসে আর যায় প্রতি বছর। কিন্তু এবার দেখি ছোটজন ভীষণ উচ্ছ্বসিত। আমি তাঁর আনন্দ আর উচ্ছ্বাসকে মূল্য দিয়েছি কেবল। ভীষণ এনজয় করেছে সে। বাড়ি ফিরে আবার সেইসব ক্যান্ডি ভাগ বাটোয়ারা করতে বসে গেছে সে। 😀 যদিও অন্য সময় তাঁরা ক্যান্ডি তেমন পছন্দ করে না, তবে হ্যালোইন বলে কথা !
এরা বড় হয়ে যাচ্ছে, অনুভূতিগুলো, স্মৃতিগুলো থেকে যাচ্ছে। 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার তো সবেধন নীলমনি একটাই।
ওর উচ্ছ্বাস কম। কিন্তু যখন একটু দেখি অনেক ভালো লাগে।
ওরা বড়ো হচ্ছে পাশাপাশি আমরাও তো বড়ো হচ্ছি আপু। 🙂
মৌনতা রিতু
আমার বান্ধবী মিতুর বাচ্চারা ছবি তুলে পাঠিয়েছে আমার ইনবক্সে। দারুন সব দুষ্টু ভুতগুলো।
রিমি রুম্মান
দুষ্টু ভূতগুলো দেখতে বেশ কিউট লাগে।
ব্লগার সজীব
সন্তানদের সাথে এমন আনন্দের ভাগীদার হওয়া দুনিয়ার সেরা আনন্দের একটি। আমাদের দেশে এমন আনন্দ ধীরে ধীরে দূরে চলে যাচ্ছে আপু।