প্রিয়ন্তি আর আসিফের মাঝে মাঝেই ঝগড়া লাগে। এটা হলো প্রচণ্ড ভালোবাসা আর আবেগ থেকে আসা খুনসুটির ঝগড়া। সে নিয়মে এবারো আজ ঝগড়া লাগলো।
কিন্তু আজকের ঝগড়া আসিফের ভালোবাসার অস্তিত্ব নিয়ে ঝগড়া।
প্রিয়ন্তির আগের প্রেমিকের সাথে কোনো কারনে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আসিফ এ বিষয়ে কখনোই প্রিয়ন্তিকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আসিফ ভাবে মানুষের জীবনে প্রথম প্রেম আসতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু এ কথা শুধু প্রিয়ন্তি জানে কেন সম্পর্কটা ছিন্ন করেছিল সে। প্রিয়ন্তিরা গরীব বলে ছেলেটির মা’র অনুরোধেই সে সময় তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছিল সে। এ নিয়ে দু’পরিবারে কম জল ঘোলা হয়নি।
প্রিয়ন্তির জীবনে আসা প্রথম প্রেমের সেই ছেলেটি হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছে, হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে জরুরী। কিন্তু ম্যাচিং হার্ট পাওয়া যাচ্ছে না। মৃত্যু শয্যায় থাকা ছেলেটির শেষ ইচ্ছে প্রিয়ন্তিকে একবার কাছ থেকে দেখার।
আসিফ শেষ চেস্টা করছে প্রিয়ন্তির সাথে একটা কমিটমেন্টে আসার। প্রেমিকযুগলের এরকম সিচুয়েশনে ঝগড়া লাগলে তা হয় শুকনো খড়ের গাঁদায় আগুনের স্ফুলিঙ্গ পড়ার মত। দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা লেলিহান শিখা যেন আসিফের মনকে আজ গ্রাস করছে।
আসিফ : দেখ, তোমাকে শেষবারের মতো বলছি; ওর (প্রিয়ন্তির আগের প্রেমিক) আর আমার মধ্যে যেকোন একজনকে তোমাকে বেছে নিতে হবে। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি, বাট আমি তোমার অপশন হিসেবে থাকতে পারবো না।
প্রিয়ন্তি : নাহ, এই সিচুয়েশনে আমি ওকে ছাড়তে পারবো না। তুমি তো জানই যে ওর হার্টের প্রবলেমটা খুব বেশি সিরিয়াস। ও আর বেশি দিন বাঁচবে না। ওর জীবনের শেষ সময়টা অন্তত ওর পাশে কাটাতে চাই।
আসিফ : ওকে। ভালো থেক। গুড বাই ফরএভার।
১৫ দিন পর ….
প্রিয়ন্তির আগের প্রেমিকের হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ। প্রিয়ন্তি একসময় হার্ট ডোনারের পরিচয় জানতে ডাক্তারের কাছে গেল।
ডাক্তার তখন তাকে হার্ট ডোনারের দেওয়া একটা নোট দিলো।
নোটটাতে লেখা ছিলো– “আমার হৃদপিন্ডটাকে শুধু তোমার জন্যই আগলে রেখেছিলাম সযতনে। আমি আমার যত্ন করে রাখা কলুষ মুক্ত হৃদয়টা তাকে দিয়ে গেলাম। আমার হৃদয় তার কাছে থাকলে তোমার ভালোবাসা আমারই কাছে থাকবে। তবে তোমার কাছে অনুরোধ এই সত্যটি তুমি কখনওই কারো কাছে বলোনা।”
ছেলেটা সুস্থ হয়ে আবার প্রিয়ন্তির জীবনে ফিরে আসে। একদিন সেই ছেলেটা প্রিয়ন্তিকে চ্যালেন্জ করে বসলো। খুব সহজ একটা চ্যালেন্জ, “তুমি যদি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো তাহলে তুমি আমার সাথে একটা সম্পূর্ণ দিন কোনরকম যোগাযোগ করবে না। যদি তুমি টানা ২৪ ঘন্টা যোগাযোগ না করে থাকতে পারো তাহলে আমি তোমাকে আজীবন ভালোবাসবো।”
প্রিয়ন্তি রাজি হলো। সে সারা দিন একবারও যোগাযোগ করলো না ছেলেটার সাথে। কোনো ফোন-কল বা কোন এস.এম.এস – কিছুই করলোনা।
পরদিন সে দৌড়ে গেল ছেলেটার বাসায়। প্রিয়ন্তি জানতো না যে ছেলেটার ক্যান্সার ছিলো আর তার আয়ু ছিলো মাত্র ২৪ ঘন্টা।
প্রিয়ন্তির চোখ দিয়ে অঝোর-ধারায় পানি পড়লো যখন সে দেখতে পেলো, ছেলেটা কফিনের শুয়ে আছে আর তার পাশে একটা চিঠি।
সেখানে লেখা আছে – “তুমি পেরেছো, আমার ভালোবাসাকে জয় করতে পেরেছো। আমার সমাধিতেও কি তুমি প্রতিদিন এসে একটি করে ফুল দিতে পারবে ?”
প্রতিদেনের মত আজও সমাধিতে একটি রক্ত লাল গোলাপ নিয়ে এসেছে প্রিয়ন্তি। দু’চোখের নোনা অশ্রু তার গাল বেয়ে পড়ছে এপিটাফটার ওপর। সে পানিতে হাতে ধরা গোলাপের পাপড়িগুলো ধীরে ধীরে কালচে হয়ে আসছে।
ঝাপসা চোখে প্রিয়ন্তি পাপড়িগুলোকে দেখে ভাবছে, আচ্ছা! আসিফের হৃদপিন্ডটার রঙও কি এমন ছিল??
১৭টি মন্তব্য
তৌহিদ ইসলাম
আমি কবি বা লেখক হিসেবে পরিচিতি পেতে চাইনা।আমি আমার মনের কথাগুলি সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
সোনেলায় স্বাগতম আপনাকে।
লিখে চলুন, পরিচিতি আপনাআপনিই হয়ে যাবে।
তৌহিদ ইসলাম
ধন্যবাদ আপু, শুভেচ্ছা অফুরান ☺
ইঞ্জা
সোনেলার উঠোনে সু-স্বাগতম ভাই, খুব খুশি হলাম আপনাকে আমাদের মাঝে পেয়ে, আমরা সোনেলায় যারা আছি সবাই যেন একি পরিবারের, যার কারণে আমাদের সকলের সুখ, দুঃখ নিজেদের মাঝে ভাগাভাগি করে চলি, আশা করবো আপনিও আমাদেরকে আপন করে নেবেন।
প্রতি ২৪ ঘন্টা পরপর পোস্ট দিতে পারবেন, তার আগে দেবেননা প্লিজ।
লেখাটির বিচারক ছিলাম বিধায় কোন ধরণের কথা বললামনা।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ভাই।
তৌহিদ ইসলাম
ধন্যবাদ দাদা, একই দিনে দুটি পোস্ট করায় ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আসলে ড্রাফট এ জমা রাখতে গিয়ে পোস্ট করে ফেলেছি। পরবর্তীতে লক্ষ্য রাখবো দাদা।
সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
খুব সুন্দর একটি গল্প নিয়ে সোনেলায় পদার্পন করলেন,
স্বাগতম সোনেলায় -{@
শুভ কামনা।
তৌহিদ ইসলাম
অনেক ধন্যবাদ প্রিয়, আপনাদের কাছ থেকেই অনুপ্রেরনা পাই। ভালোবাসা জানবেন। -{@
জিসান শা ইকরাম
সোনেলা একটি ছোট ব্লগ সাইট, তবে আন্তরিকতার উষ্ণতা এখানে অনেক বেশি ভাই।
নিয়মিত আসুন, আশাকরি ভাল লাগবে আপনার।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
নোটটাতে লেখা ছিলো– “আমার হৃদপিন্ডটাকে শুধু তোমার জন্যই আগলে রেখেছিলাম সযতনে। আমি আমার যত্ন করে রাখা কলুষ মুক্ত হৃদয়টা তাকে দিয়ে গেলাম। আমার হৃদয় তার কাছে থাকলে তোমার ভালোবাসা আমারই কাছে থাকবে। তবে তোমার কাছে অনুরোধ এই সত্যটি তুমি কখনওই কারো কাছে বলোনা।”
বাহ! দারুন উক্তি। -{@
তৌহিদ ইসলাম
ধন্যবাদ ভাই,অনুপ্রেরিত হলাম।
তৌহিদ
ব্লগে প্রথম লেখায় মন্তব্য করেছিলেন আপনি। কৃতজ্ঞতা জানবেন ভাই।
মৌনতা রিতু
ভালবাসা আত্মার টান। সে টানে মানুষ ছুটে যায় বার বার।
আমার কৃষ্ণচূড়া খুব পছন্দ। লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়া।
হৃদপিন্ড নামক বস্তুটি সত্যিই কি লাল। নাকি কারো কালচেও থাকে বা ধূসর!
সোনেলায় স্বাগতম। ভালো লেখেন আপনি।
তৌহিদ ইসলাম
ধন্যবাদ, অনুপ্রেরিত হলাম আপু।
কামাল উদ্দিন
কঠিন প্রেমের গল্প, এমন গল্প পড়তে ভালোলাগে, কিন্তু কেউও এমন বিরহী প্রেম চায় না………ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম ভাই।
তৌহিদ
এত পুরোনো লেখা খুঁজে নিয়ে পড়েছেন!! অবাকই হলাম ভাই। এমন পাঠক পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।
কামাল উদ্দিন
আচ্ছা ওর এফিটাফে কি লিখা ছিল?
তৌহিদ
এপিটাফে লেখা ছিলো-
হৃদয় দেহ থেকে দেহে দেহান্তরিত হয়
তবু ভালোবাসা রয়ে যায় হৃদয়ের মনিকোঠায়….