
দরজার বাইরে হিমুর জুতো দেখে পরপর তিনবার কলিং বেল বাজালাম। কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছিলাম না। দরজাটাও ভিতর থেকে লক করা। মনের মধ্যে তখন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাতের ছোঁয়ার টেপাটেপিতে বুক ধড়ফড় করছিলো। চিন্তার ভিড়ে কপালের মোড়ে অযথাই ঘাম এসে ঠেলাঠেলি করছিলো। আর বুকের ভেতরটা হাহাকারের দাবানলে পুড়ে ঠোঁটের চৌকাঠ অবধি শুকিয়ে যাচ্ছিলো নিমেষেই।
হিমুকে বারবার ডেকে ডেকে অস্হিরতার শহরে ঘুরপাক খাচ্ছি। কিন্তু কিছুতেই ঠিকানা মিলছে না। যেন বারবার ডেকে ডেকে একই স্থানে এসে পৌঁছেছি। আর হতাশায় বুক বাধছি।
হিমুর মোবাইলে কল দিচ্ছি বারবার। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। দরজার মেঝে বরাবর কান পাতলে রিংটোনের শব্দ শোনা যাচ্ছে কিন্তু হিমুর কোন খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। তখনই মনে আরও বেশি খটকা লাগে।
ম্যানেজারকে ডেকে এনে দরজার ছিটকিনি ভেঙে রুমের মধ্যে প্রবেশ করতেই দেখি হিমু অচেতন হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। নিশ্বাসের সাথে সাথে নাক দিয়ে ফরফর করে ফেনা তুলে রক্ত বের হচ্ছে।
হিমুকে পাশের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হলো। বেশ কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বললো – বিপদ কেটে গেছে। তবে সময়মত না আনতে পারলে হয়তো বড় কোন দূর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হতো।
ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম – কি হয়েছে ওর?
ডাক্তার বললো – মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন।
– আঘাতের চিহ্ন! মানে কি? রুমে তো কেউ ছিলো না।
ডাক্তার বললো – কি বলেন?
– হুমম, ঠিকই বলছি। ও তো একাই রুমের মধ্যে ছিলো।
ডাক্তার বললো – তাহলে নিশ্চয়ই কোনকিছু দেখে ভয় পেয়ে ওয়ালের সাথে গুঁতো খেয়ে এরকম হয়েছে।
– তারমানে? আপনি বলতে চাইছেন ভূত দেখে..।
ডাক্তার বললো – হুমম, হতে পারে।
– দিনের বেলায় ভূত আসবে কোথা থেকে।
রহস্য কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। যেন কামড়ে কামড়ে আঁকড়ে ধরে পিছুপিছু ঘুরঘুর করছে। আর আমার শান্ত মস্তিষ্কটাকে পাগলের প্রলাপের বেড়াজালে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ঘোলাটে কর দিচ্ছে।
রুপার কথা ভাবতেই হিমুর মোবাইল বেজে উঠলো। পকেট থেকে বের করেই দেখি রুপার নাম্বার। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো – জানু, উপহারটা খুলে দেখেছো কি?
বললাম – আমি তোমার জানুর রুমমেট বলছি।
রুপা – ভাইয়া, কেমন আছেন (সালাম দিয়ে)?
জ্বি, আছি। কোনরকম। আচ্ছা, তোমাদের মধ্যে কি কোন ঝামেলা হয়েছে আজ?
রুপা – নাতো ভাইয়া। কি হয়েছে বলুন তো।
(বিস্তারিত….)
রুপা – ঠিক আছে আমি এখনই আসছি।
রুপা এসেই চুপচাপ কাঁদতে লাগলো। আমি শুধু শান্ত করার চেষ্টা করছি আর বলছি তেমন কিছুই হয়নি। কিন্তু রুপা বারবার বলতে শুরু করলো – আমার জন্যই আজকে…। আমি কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না। রুপার কাছে কারণ জানতে চাইলাম।
রুপা বললো – আজকে যখন আমার সাথে ওর দেখা হয় তখন ওকে বলেছিলাম তোমার কি সাহস হবে বাবার সামনে গিয়ে আমাদের সম্পর্কের কথা বলতে?
হিমু বলছিলো – তুমি কি আমার সাহস পরীক্ষা করতে চাইছো?
রুপা – হুম, চাইছি। নইলে ভবিষ্যতে দেখা যাবে তুমি লেজ ঘুটিয়ে…।
হিমু – তাহলে পরীক্ষা হয়ে যাক।
রুপা – তোমাকে আমি একটি উপহার দেব। সেটা খুলে তুমি যদি ভয় না পাও তাহলে বুজবো তোমার সাহস আছে। আর যদি…।
হিমু – ঠিক আছে বুঝতে পেড়েছি।
রুপা আবারও কাঁদতে শুরু করলো। আমি আবারও অনুনয়-বিনয় করে থামিয়ে বললাম উপহারটা কি ছিলো?
রুপা – উপহার বলতে কাঠের বাক্সে একটি ইদুরের খেলনা ছিলো। যেটা খুলতেই ইদুর খেলনাটি লাফিয়ে উঠবে।
হুমম, এখন বুঝতে পেড়েছি।
১৫টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
শেষে কিনা খেলনা ইঁদুরের কাছে হিমুর সাহস পরাজিত হলো!! বেচারার বিয়ে মনেহয় এ জনমে হবেনা,,,
চলুক, পরের পর্বের অপেক্ষা করি 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়, প্রকৃতপক্ষে খেলনাটি যে প্রথম খুলবে সে আসলেই ভয় পাবে। ভয় না পেলেও চমকে উঠবে।
ছাইরাছ হেলাল
পড়ে, একটি কথা বলতে চাই,
এবারের প্রথম দিকে শব্দ-জটিলতা তৈরি করেছেন, ইচ্ছাকৃত কী না জানিনা,
হিমু লেখায় মন হয় এগুলো যায় না, ভেবে দেখুন। সাবলীলতা রক্ষা করা যায় এমন হতে হবে।
নৃ মাসুদ রানা
হুমম, সেটা ঠিকই বলেছেন। আসলে কিছু কথা জড়িয়ে দিয়েছে স্বভাবতই।
আরজু মুক্তা
দারুণ উপস্থাপনা। মনে হচ্ছে দ্বিতীয় হুমায়ুনের বই পড়ছি।
শুভকামনা
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, ভালো লেগেছে বলে আমারও ভালো লাগলো।
নিতাই বাবু
এই পর্বটিও খুব ভালো লেগেছে। চালিয়ে যান, সাথে আছি দাদা।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, এভাবে পাশে থেকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য।
এস.জেড বাবু
হিমু ভয় পায়,
ইঁদুরে ভয়!
মজার পর্ব ছিলো-
দেখি কোন পর্বে সাহস দেখিয়ে রুপার মন জয় করে।
নৃ মাসুদ রানা
হুমম, সে পর্ব আর প্রকাশ করবো না। বাকী পর্বগুলো বইয়ে পাবেন।
এস.জেড বাবু
একেবারে ঠকালেন তা বলবো না-
বই একটা কিনে নিবো, বের হলে সংগ্রহ করার পদ্ধতি বলবেন।
ধন্যবাদ প্রিয় ভাইজান
জিসান শা ইকরাম
হিমু সামান্য ইদুর দেখে ভয় পাবে!
হিমুর এই অবমূল্যায়ন জাতি মেনে নেবে?
ভালই লাগছে
শুভ কামনা।
নৃ মাসুদ রানা
মেনে নেবে কি না জানিনা! তবে আমার বিশ্বাস গল্পটি সবার ভালো লাগবে…
সুরাইয়া পারভিন
খেলনা ইঁদুরে ভয় পেয়ে হসপিটালাইজ
চমৎকার উপস্থাপন
নৃ মাসুদ রানা
অনেকেই হয়। আর আমার গল্পের নায়ক…