বান্ধবীর মুখে আক্তার জাহানের কষ্টের কথা

IMG_20160912_212000

“নিরন্তর যুদ্ধ করতে করতে, কারও সহায়তা না পেয়ে আকতার জাহান হতক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন!”
—– অধ্যাপক শাওলী মাহবুব।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলিকে নিয়ে লিখা তাঁর ঘণিষ্ঠ বন্ধু ও সাবেক সহকর্মী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাওলী মাহবুব এর লেখাটি পড়ে আমার কেবলই মনে হলো, এতো শিক্ষাদীক্ষা অর্জন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী মেয়েরাও কেনো এতো ভীতু, বোধহীন এবং ব্যক্তিত্বহীন মানুষ হয়?
জানি আমার এই কথাটাকে অনেকেই বাঁকাভাবে দেখবেন। কারণ, এই সমাজে বেশিরভাগ মানুষই নারীকে আকতার জাহান এর মতো দেখতে চায়।
সেই তো ঘর টিকলো না!
সেই তো ডিভোর্স নিতে হলো!
শেষপর্যন্ত বোকার মতো একটি সুইসাইডাল নোট লিখে নিজের জীবনটাই বিসর্জন দিতে হলো!!

received_10208637350023800

তো দিয়ে কি লাভ হলো? কিছু কি আসলো গেলো তথাকথিত স্বামীটির? (স্বামী-স্ত্রী শব্দটি আমার কাছে প্রভু-দাসী রুপ মনে হয় এবং শাওলী মাহবুবের লেখা পড়ে আকতার জাহানের দাম্পত্য সম্পর্কের ধরণটি আমার কাছে এমনটাই মনে হয়েছে।) উলটো অপমৃত্যুর দুদিন যেতে না যেতেই প্রাক্তন স্বামীটি মৃত আকতার জাহানের চরিত্র হণন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। আর তিনি কি করলেন? বিয়ে ভেঙে যাওয়ার চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও বিয়ে না করে ঘরভাঙার শোক উদযাপন করলেন। আহা নারী! তুমি কতো পতিব্রতা ছিলে! কিন্তু ফলাফল কি হলো? জিরো!!! এতো দুর্বল চিত্তের কেনো ছিলে তুমি? কেনো তুমি লাঠি ঝাঁটা খেয়েও স্বামীর ঘরে পড়েছিলে? তোমার কি ছিলো না? শিক্ষা? অর্থ? পরিপূর্ণ একজন মানুষের অবয়ব? কি ছিলো না তোমার? হ্যাঁ, তোমার একটা জিনিস ছিলো না। সেটা হলো ভেতরের শক্তি, আত্মশক্তি। তোমার মানসিক বৈকল্যই তোমাকে আজ আস্তাকুড়ে এনে ফেলেছে!
ভাবা যায়? শিক্ষিত, সুশ্রী, আর্থিকশক্তিতে বলীয়ান মেয়েটি শুধুমাত্র আত্মশক্তির অভাবে অতলে হারিয়ে গেলো!
জানলাম,
*তুমি উপার্জন করেছো ঠিকই, কিন্তু সেই উপার্জনের উপর তোমার ব্যক্তিগত অধিকার ছিলোনা স্বামীর অনুমতি ছাড়া তুমি তা খরচ করতে পারতে না।— কি হাস্যকর!
*বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে তুমি স্বামীর অনুমতি ছাড়া একাডেমিক কোন কাজে অংশ নিতে পারতে না।—হাউ ইট পসিবল?
*স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাসায় কাজের সাহায্যকারী রাখতে পারতে না।—কি করে সম্ভব?
*বড় হাঁড়ি টানতে টানতে নাকি তোমার পিঠে তীব্র ব্যথা তৈরি হয়েছিলো; ভারত থেকে চিকিৎসা করে এসেও মুক্তি মেলেনি সেই ব্যথার। — এতো লোকলজ্জা তোমার? লোকে জানবে বলে চুপ ছিলে!
*পরিবারের মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে বলে পরিবার থেকে স্বামীকে তালাক দেয়ার অনুমতি মেলেনি।—সিদ্ধান্ত তোমার। পরিবার দায় নিবে কেনো? আর অনুমতিই বা দিতে হবে কেনো?
*আরো জানলাম, যৌতুক!
রেফ্রিজারেটর থেকে শুরু করে অনেক আসবাবই তোমার মায়ের বাড়ি থেকে আনা।— যে মেয়ে শিক্ষিত হওয়ার পরও কোন ধরনের প্রতিবাদ ছাড়া মায়ের বাড়ি থেকে যৌতুক নিয়ে স্বামীর বাড়ির মানুষকে খুশি করতে চায়, আমি বলবো তাদের আসলে কোন পারসোনালিটিই নেই। যদি থাকতো তো সেদিনকেই তুমি বুঝে যেতে আর বেঁকে বসতে।
*বন্ধুর ভাষ্য অনুযায়ী মা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে তুমি অনন্য হলেও একজন আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন মানুষ তুমি মোটেই ছিলে না।
সমাজ তোমাকে আত্মহননে সহায়তা করেছে কতোটুকু সে বিচারে আমি যাচ্ছি না, তবে তোমার মানসিক বৈকল্য যে এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী সেটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।

আকতার জাহানের বন্ধু লিখেছেন, বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আকতার জাহান-এর যদি এতো দুরবস্থা হয়, তাহলে অশিক্ষিত আকতার জাহানদের অবস্থাটা সহজেই অনুমেয়।
আমি বলবো, আকতার জাহান অক্ষর জ্ঞানে শিক্ষিত ছিলেন, কিন্তু স্বশিক্ষার মাধ্যমে মানসিক শক্তি অর্জন করতে পারেন নি। যা আমি অঁজপাড়া গায়ের অনেক মেয়ের মাঝেও খুঁজে পাই।

তাই বলবো,
হাজারো আকতার জাহানকে বাঁচাতে তাই, আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠা চাই।
মুক্ত করো ভয়,
আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।

৫৩৪জন ৫৩৪জন
0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ