চামেলী-রামুর অভিসার
কৃষ্ণপক্ষের রাত। রামু ও কৃষ্ণা হারিস মন্ডলের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে গরু বিষ খাইয়ে মারবে বলে। ডোমপাড়ার মানুষেরা তখন ঘুমে চুর হয়ে আছে। রামু এদিক-ওদিক তাকিয়ে খুব সন্তপর্ণে হাঁটছে। তার দৃষ্টি ডোমপাড়ার বিধবা নারী চামেলীর ঘরের জানালার দিকে। রামু হঠাৎ কথা বলে উঠে…।
রামু: কৃষ্ণা তে তেনি সামনে আগাও হাম আয়োতিন।
কৃষ্ণা: আচ্ছা। তাড়াতাড়ি আইয়ে। বেশি দেরি করিয়েমত।
কৃষ্ণা আগে চলে। চামেলী এক বিধবা ডোম নারী। অকালে স্বামী গত হওয়ায় অনিয়মিত রতি আর দেহযন্ত্রের অপ্রতুল ব্যবহারে উদ্ধত যৌবন খানিকটা ক্ষয়ে গেলেও রমণীয়তা তার অঙ্গের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে যেনো উছলিয়ে উঠে। চোখের ভ্রূকুটিতে চামেলী এখনো কঠাক্ষব্যুহ হানতে পারে সদ্য পরিণীতা নারীর মতো। সেই বাণে বিদ্ধ হয়েছে রামু। হঠাৎ মাতাল গণেশের আসার শব্দ শুনে রামু প্রশ্রাব করার ভঙ্গিতে উল্টো ঘুরে বসে পড়ে। মাতাল গণেশ কোনো দিকে খেয়াল না করে ‘জলও কি জাহাজ মে, জলওকি জাহাজ মে…’ গান গাইতে গাইতে চলে যায়। গণেশ অন্ধকারে মিলিয়ে যাবার সাথে সাথেই রামু চামেলীর জানালার পাশে গিয়ে কার্তিক মাসের কামুক কুকুরের মতো ডাকতে থাকে। চামেলী জানালা খুলে দাঁড়ায়…।
চামেলী: আউ ভিতরে আউ!
জানালা দিয়ে কথাটা বলে চামেলী একটা হাসি দিয়ে ভেতরে চলে যায়। এ অমোঘ ডাক রামু ফেরাবে কি করে? শরীরে হোক না হয় মনে হোক, এই অমোঘ ডাক ফেরানোর সাধ্য কি আসলেই মানুষের আছে! খোলা দরজা পেয়ে রামু শো করে ঢুকে পড়ে চামেলীর ঘরে। কুপির হলুদাভ-লালচে আলোয় চামেলীকে উদ্ধতযৌবনা মনে হয়। রামুর তর যেনো আর সয়না।
চামেলী: তরকে হামার ঘরমে ঢুকতে কেউ দেখে নেইকে তো?
রামু: কাহে দেখেছে কা হই ভৌজি?
চামেলী: ইতনা রাতিকে হামার ঘরে ঢুকেকে দেখেছে আদমি সন্দেহ করি। হামার জোয়ানি বায়। কিন্তু বিধাব হোলি। তু কুচ্ছু না বুঝলে।
রামু: বাদ দে আদমিকে বাত। তে-হাম ঠিক তো দুনিয়া ঠিক। দিল মিলে দিলসে তো পরি কেয়া চিজ হেয়। হা হা হা…!
রামু ধীরে চামেলীর নিকটবর্তী হয়।
রামু: জানলে ভৌজি তোহার বাত মনে হোকেছে ঘরমে মন না টিকোল। খালি তোহার কাছে আয় খাতির মন কহোল। হামার সারা দেহে খুন গরমহকে উঠোল, দে অবশ হোজাল। চামেলী তুকা যাদু জানলে? সত্যি করকে বলোতো তুকা যাদু জানলো ভৌজি?!
চামেলী: আগেই তো আচ্ছা রাহা। আবার ভৌজি বোলকে বোলাওজে। দেছে বড়কা যাদু আর কুচ্ছু নেইখে। হাম তোরকে মনপ্রঠুদেকে দোঠো উজার করকে দেলি। আর তে হামার দেঠো লেকে ইচ্ছামতো খেলা করলে। এই খেলাকে নিশা বহুত বড়কা নিশা রামু। দেকে ই নিশাই দুনিয়াকে সবচে বড়কা যাদু।
রামু: সাচ্চা বোলোতেরে চামেলী তোরকে চামেলী বলেছে তোর আচ্ছা লাগোল।
চামেলী: হ সাচ্চা।
রামু: জানলে চামেলী মাঝে মাঝে হামার ডর লাগোল।
চামেলী: কাথিকে ডর?
রামু: দেকে ই খেলামে যদি অধরম হকোল। যদি পাপ হকে।
চামেলী: কাথিক অধরম, কাথিক পাপ। দেকে কোনো ধরম নেইখে, খেলামে কোনো পাপ নেইখে। তর নৃপেন দা ঝট কারকে মরগা। হামার দেকে পহাড়াদার চিরদিন খাতির হামরেকে একলা রক্কে চালাগা। আদমিঠো নেইখে কিন্তু হামার দেঠো বায়। হামার জোয়ানীতো বায়। দাও দাও করকে জ্বালামে হামার দেঠো। জ্বল জ্বল দেকে এ জ্বালা কে ভোতাই? দেঠো কোনো কুচ্ছু না মানোল। একের ভুক ভয়ঙ্কর হ, যেতনা দেওয়া জ্বাল উতনাই বাড়েল। ভগমান যে তর দাদাকে উঠাকে লেগা ইছে তুর ভগমানের অধরম না হই। দেকে অধিকারকে একবার ছোড় দিয়েছ্ ও অধিকার সবকে হোজাল। দে বহুত স্বার্থপর রে রামু, কোনো বাতই ও বেশিদিন খিয়াল না রাখোল। সব দে-ই ওকের ক্যানে একই রকম। ও মাঙোল ভুক মিটায়া খাতির। হায়রে রাক্ষস দে।
রামু: সিদ্ধি খাইবে?
চামেলী: বানাওয়ো এক সিলিম।
রামু কোমড় থেকে সাঁজ আঁকা ছোট মাটির কল্কি বের করে। সে কল্কি গতবছর পোড়াদহ মেলা থেকে কেনা। প্রতিনিয়ত সযত্ন গাঁজা তামুকের টানে সে কল্কি আপনাতেই জল বার্নিশের মতো যৌবনবতী হয়ে উঠেছে। তাতে তামুক ভরে মুখে আগুন দেয় রামু। কল্কি জ্বালিয়ে চামেলীর হাতে দেয়। চামেলী কষে মারে একটান। গলায় সাঁট লেগে কাশে। কল্কি হাত বদল হয়। চামেলী ধীরে ধীরে নেশার ঘোরে চলে যেতে থাকে। তার রূপ যেনো আরো উছলে পড়ে। চোখে ঘন কামের নেশা ঝলক মারে। আদিমতার চোরাটানে চামেলী রামুর নিকটবর্তী হতে থাকে। তারপর রামুর হাত ধরে চামেলী একা হেচকা টানে নিজের বুকে টেনে উদ্দ্যম আদরে বেহুশ করে তোলে। সুডৌল স্তনের নরম-পেশল পেষণে আত্মহারা রামু যেনো চরম কামসুখের ঘোরেই আত্মহত্যা করতে চায়।
চামেলী: তর ক্যানে কওগা রূপিয়া হই। ঘরে চাউর নেইখে। তর ক্যানে মাঙ্গতেও লাছ করোল। আর কেত্না মাঙ্গওব।
রামু: এই লে ৫০ ট্যাকা। লাছ কাথিকে? তুম হামরেকে যা দেলোও চামেলী একের কাছে ই কুচ্ছু না হো!
চামেলী: সাচ্চা বোলোতেরে রামু … সাচ্চা… সাচ্চা…!
ওরা আরো নিকটবর্তী হয়। ওদের মৃদু হাসি আর খুনসুঁটির শব্দ পাওয়া যায় ক্ষীণ স্বরে। গরম ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায় ফঁণা তোলা সাপের মতো। খানিকক্ষণের মধ্যেই চামেলী আর রামু আদিম খেলায় মেতে উঠে। জমাট ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসে অস্ফূট চাপা গলায় কোঁকানো-গোঙানো আর শিৎকারের শব্দ পাওয়া যায়। তারপর পরিশ্রান্ত চামেলীর গলাভাঙ্গা প্রশান্ত হাসি। প্রবল কামোত্তেজনায় ক্রীড়া করার সময় অস্ফূট চিৎকারে গলার ভেতরে চিড়ে গেছে তার। এমন ঘোর নিশুতি রাতে কি যেনো একটা নিশাচর পাখী অতিলৌকিক ডাকতে ডাকতে উড়ে যায়।
(………………………………………চলবে)
আগের পর্বের লিংকগুলো:
১. http://sonelablog.com/archives/12440
২. http://sonelablog.com/archives/12475
৩. http://sonelablog.com/archives/12531
৪. http://sonelablog.com/archives/12788
৫. http://sonelablog.com/archives/12859
৬. http://sonelablog.com/archives/12944
৭. http://sonelablog.com/archives/13003
৮. http://sonelablog.com/archives/13126
৯. http://sonelablog.com/archives/13269
১০. http://sonelablog.com/archives/13617
৪টি মন্তব্য
খসড়া
(y)
সাতকাহন
আপনাদের মতো বেশি পাঠক আমার নেই, মনে ক্ষুধা মিটানোর জন্য লিখি ভাই। আপনারা কয়েকজন আছেন বলেই নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করতাছি।
প্রজন্ম ৭১
অনেক শব্দ বুঝিনি । অনুমান করে নিয়েছি । ভালোই লেগেছে ।
সাতকাহন
আপনারা আছেন বলেই তো লিখি।