সাধারণত: বিশ্বাস আর সত্যের দ্বন্দ্বে মানবকুল আজ দু’ভাগে বিভক্ত। বিভক্তি কোন ভাবে সমস্যা নয়, সমস্যা হয় তখন যখন বিভক্তি দ্বন্দ্বে রূপান্তরিত হয়। এই দুই পক্ষের পথের মধ্যে কোন পক্ষের বা উভয় পক্ষের কারোর পথ সত্য নাও পতে পারে এটা স্বাভাবিক মত। কিন্তু পক্ষপাত নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত দুই পক্ষই যদি মনে করে তাদের পক্ষের পথই একমাত্র সত্য, বিপক্ষ মিথ্যা দ্বন্দ্বের শুরুটা হয় তখনই। দ্বন্দ্ব থেকে দ্বিধা-বিভক্ত, মত-দ্বিমত, যুক্তি-তর্ক অত:পর যুদ্ধ। এই যুদ্ধটা ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করে তখন যখন এর সাথে ধর্ম জড়িয়ে যায়। যেহেতু বিশ্বাস, সত্য, ধর্ম এতগুলো বিষয়ের গোলমেলে সংমিশ্রণে যুদ্ধ হচ্ছে বা এই বিষয়গুলো সং-মিশ্রিত ফল জীবননাশী যুদ্ধ বিগ্রহের অবতারণা করছে বা করে সেহেতু আমাদের উচিৎ হবে এই বিষয়গুলোর শান্তিপূর্ণ একটি রূপায়ন। হতে পারে সেটা দ্বিধাযুক্ত।
দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে বিন্দু আকারে অবস্থান করছে ধর্ম আর এই ধর্মের চারপাশ নিরন্তর বিশ্বাস ও সত্য পুনরাবর্তন করছে। যেহেতু এই গতির প্রাকৃতিক কোন অন্তিম পরিণতি নেই সেহেতু এই ঘটনার সাথে বিবদমান পক্ষদ্বয়কেই বিবাদ নিরসনে ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রথমত: ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। ধর্ম যেহেতু আনুগত্য, যা সাধারণত “আধ্যাত্মিক ব্যাপারে” “দৃঢ় বিশ্বাস ” এঁর সাথে সম্পর্ক যুক্ত ; এবং বিশেষত: পূর্বপুরুষ হতে প্রাপ্ত ঐতিহ্য, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা, রীতি ও প্রথা মানা এবং মানবজীবন সেভাবে পরিচালনা করা সেহেতু কোনভাবেই ধর্ম যুদ্ধের বিষয় হিসাবে প্রতিভাত হতে পারেনা। পৃথিবীর ধর্মগুলো ধর্ম বিষয়ে দাবী করে থাকে এটি যে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবস্থাপত্র। সত্যর উপস্থিতির যুক্তি তর্ক এখানে অর্থহীন। সেই ব্যবস্থাপত্র যদি এর বিশ্বাসীগণ তাদের বিশ্বাসকে সত্যরূপে অন্য গোষ্ঠীর উপর প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস চালায় তখনই রক্ত ঝরে সেটা যেমন আক্ষরিক ভাবে ঝরতে পারে বা ভাবার্থে ঝরতে পারে। ধর্ম বিশ্বাস সত্যের সাথে কতটা দূরত্ব তা নিয়ে তর্ক বাড়ীয়ে তার্কিকদের তর্কের ইস্যু যোগানোর কোন মনে হয়না। আবার ধর্মের উপর বিশ্বাসটাকে সত্য বলে চালানো অর্থহীন নয় শুধু অশ্লীলও বটে।
বিশ্বাস বলতে সাধারণত: পারিপার্শ্বিক বস্তুসমূহ ও জগত সম্পর্কে ব্যক্তির স্থায়ী প্রত্যক্ষীকৃত ধারণা (উপলব্ধি) বা জ্ঞান। বিশ্বাস হতে পারে একজনের ব্যক্তিগত কষ্টার্জিত কল্পনা। আবার বিশ্বাস হতে পারে কোন জনতার সম্মিলিত জনমত। এখানে সত্যর সাথে এর সম্পর্ক একেবারেই গৌণ। সত্য হচ্ছে দর্শনশাস্ত্রের একটি ধারণা যা প্রকৃত বিষয় বা ঘটনার সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধন গড়ে তোলে। যদি কোন বিষয় প্রকৃতই ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, তখন তা সত্য হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রমাণ বিষয়ক ইস্যুতে বিশ্বাস ও সত্য পরস্পর বিরোধী বিষয়। যদি সেটাই হয়ে থাকে তাহালে কেন ধর্ম বিশ্বাসীগণ ধর্ম-অবিশ্বাসীগণের উপরে সত্য হিসাবে এটা প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে?
যে ব্যক্তি ধর্ম বিশ্বাস করেনা, বিশ্বাস না করার কারণে তার দোষ কেন হবে? দোষটা বরং তখন হতো যদি উক্ত ব্যক্তি ধর্ম বিশ্বাস না করে বলত আমি ধর্ম বিশ্বাস করি। একজন ধর্ম বিশ্বাসীর ধর্ম বিশ্বাস যদি অপরাধ না হয়ে থাকে তাহলে একজন ধর্ম অবিশ্বাসীর ধর্মের বিভিন্ন বিষয় অসত্য এই বিশ্বাস কেন অপরাধ হবে? ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্ম অবিশ্বাস দু;টোই বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। কাউকে জোর পূর্বক তার বিপরীত বিশ্বাসের শ্রুতি আদায় তাকে দিয়ে বলপূর্বক মিথ্যা বলানো বই কিছুই নয়।
ধর্ম অবিশ্বাসীদের বিষয়ে এইটুকু বলা যেতে পারে একজন ধর্ম বিশ্বাসী যেমন তার পক্ষের যুক্তি তুলে ধরে শালীন ভাবে কিছু বলতে পারেন বা লিখতে পারেন তেমনি আপনিও আপনার কথা লিখতে পারেন বা বলতে পারেন কিন্তু কটু কথা বলতে বা লিখতে পারেন না। যদিও কোন বিষয়ে কারোর সাথে ভদ্রোচিত দ্বিমত পোষণ অনুভূতিতে আঘাত হানা হতে পারে না বলেই আমার মনে হয়।
সুতরাং মত-দ্বিমত থাকবে, বিশ্বাস অবিশ্বাস থাকবে, তর্ক-বিতর্ক থাকবেই। তবে সৃষ্টিকুলের বুদ্ধিমান প্রাণী হিসাবে সবার উপরে থাকবে শান্তি, সৌহার্দ, ভালবাসা। তবেই তো আমরা মানুষ।
উপসংহারে গান্ধীজীর একটি উদ্ধৃতি টেনে শেষ করব। গান্ধীজী তাঁর দীর্ঘদিন যাবত তার বিশ্বাসকে বলতেন, ঈশ্বর হল সত্য। পরবর্তীতে তিনি তাঁর মত বদলে বলেন, সত্যই হল ঈশ্বর। সুতরাং বিশ্বাস অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব থেকে ভালবাসা থাকবে সবকিছুর উপরে। সকলকে ধন্যবাদ।
আলমগীর কবির।
দর্শনা।
9/5/2015 12:44:20 AM
১৬টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার কাছে বিশ্বাসটাই আগে।
প্রবাদই তো আছে, “বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ, তর্কে বহুদূর।” কেউ বলে “বস্তু।”
মানবতার মৃত্যু ঘটে ধর্মের কাছে। একটি শিশুর জন্মের পর সে কি জানে সে কোন ধর্মের? বড়ো হবার সাথে সাথে সে বোঝে।
ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ এমন একটি পোষ্টের জন্য।
alamgir_kabir
যে কোন বিশ্বাস আপনাকে বধির ও অন্ধ করে দেয়। তাহলে বিশ্বাস কেন? শান্তিপূর্ন দ্বিমত পোষণ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শুন্য শুন্যালয়
কেউ কাউকে বিদ্রুপ করে, আঘাত করে কিছু বলা উচিৎ না। কিন্তু হচ্ছে কোথায়? আসলে যারা বিশ্বাস করেনা, তাদের মন্তব্য বিশ্বাসিদের আঘাত করবেই। আমি তাদেরকে একটু বেশিই গোড়া ভাবি।
আপনার পোস্টটা খুব ভালো লেগেছে ভাইয়া।
সোনেলায় প্রথম পদার্পনে স্বাগতম জানাচ্ছি। -{@
alamgir_kabir
প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। সত্য কথা আয়নার মত। আমার রূপ যেমন আয়নাতে ঠিক তেমনটাই দেখাবে। যদি আয়নায় আমার রূপ কুৎসিত দেখতে পাই সেটা আমার রূপের দোষ আয়নার দোষ নয়। যৌক্তিক সতমতের জন্য আবারও ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
মানব প্রেম নাই থাকলে ধর্ম
দিয়ে ধর্মই রক্ষা হয়
না ধর্ম খুন হয়।
স্বাগত আপনাকে
alamgir_kabir
চমৎকার মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।
ইমন
অহ খোদা ! সবকিছু এতো কঠিন কেন ! আমি আপনার লেখার প্রথ প্যাড়া পড়ার পর আর পড়তে পারিনি। লেখার এবং পড়ার ভাষা কি আর একটু প্রাঞ্জল হতে পারে না ! এতো কঠিন করে লিখলে সাধারণ মানুষ ভাবার্থ বুঝবে কিভাবে ! ধর্ম আর বিজ্ঞান দুটার ব্যাক্ষাই প্রাঞ্জল হওয়া উচিত। শুভেচ্ছা রইলো। 🙂
আলমগীর
ভাইয়া লেখাতো সহজই আছে। আমারতো মনে হয় ঐ সময় যে কোন কারণেই হোক আপনার পড়ার মানষিকতা ছিলনা।
ইমন
হতে পারে । কিছু মনে করবেননা 🙂
আলমগীর
কোন সমস্যা নেই, আপনি ভাল থাকবেন।
নীতেশ বড়ুয়া
অনুমিত সত্যের বিশ্বাসকে প্রমাণ করাটাই হচ্ছে বিজ্ঞান। আর এই অনুমিত সত্যকে প্রমাণের জন্য লাগে জ্ঞান।
ধর্মের জন্য দ্বন্দ কোথাও নেই। কিন্তু স্বার্থবাদীরা ধর্মকে ব্যবহার করছেন কারণ বিশ্বাসের উপর আঘাত আসলে সব মানুষই নড়ে ওঠে।
সত্য কি? যা ভাল তাই সত্য নাকি যা ঘটে সেটাই সত্য? যা ঘটে সেটাই যদি সত্য হয় তবে এখানে বিজ্ঞান কি করতে পারে? এ তো জ্ঞান যে এটাই ঘটেছে বলেই এটাই সত্য! তাহলে বিজ্ঞানের সাথে সত্যের দ্বন্দ কোথায়! আবার আমি বিশ্বাস করি এমনটাই ঘটেছে এবং জ্ঞান দিয়ে সেই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত প্রমাণ করাটাই হচ্ছে বিজ্ঞান।
ধর্মে ঈশ্বরের বিশ্বাস। এই বিশ্বাসকে সত্য বলে প্রমাণ করবেন কি করে? জ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করে-তাইতো? তো বিজ্ঞান কি করছে? সৃষ্টির রহস্য খুঁজে চলেছে-নয়কি? এই বিজ্ঞান যদি হয় “অনুমিত সত্যের বিশ্বাসকে প্রমাণ করা” তবে বিজ্ঞান স্বীকার করছে ‘বিশ্বাস’টি ঠিক শুধুমাত্র তা সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করা বাকি!
মানবকুল কোনদিনই বিশ্বাস আর সত্যে দু’ভাগ ছিলো না। মূলত মানবকূলের বিভক্তি স্বার্থ নিয়ে। কে কি বিশ্বাস করলো বা না করলো সেটা মূল না হয়ে এই বিশ্বাসকে স্বার্থের জন্যে কুক্ষিগতকরে রাখাতেই যতো দ্বন্দ।
আলমগীর
ধর্মের জন্য দ্বন্দ কোথাও নেই। কিন্তু স্বার্থবাদীরা ধর্মকে ব্যবহার করছেন কারণ বিশ্বাসের উপর আঘাত আসলে সব মানুষই নড়ে ওঠে।
——–এত্তসব……….তারপরও।
নীতেশ বড়ুয়া
🙂
আলমগীর
:=
নীতেশ বড়ুয়া
-{@ :=
অপার্থিব
লেখাটি ভাল ছিল তবে ধর্মে বিশ্বাস আর ধর্মে অবিশ্বাস এই দুটোকে একই নিক্তিতে মাপাটা ভুল। ধর্মে অবিশ্বাস আর বিজ্ঞানে বিশ্বাস একই সুত্রে গাঁথা। বিজ্ঞানে বিশ্বাস বা ধর্মে অবিশ্বাস যাই বলি না কেন দুটোই প্রমান সাপেক্ষে পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ আজকের বিজ্ঞানের কোন প্রমানিত থিওরি আগামীকাল ভুল বলে প্রমানিত হলে বিজ্ঞানে বিশ্বাসীরা সেটা মেনে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না। অপর দিকে ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাসের মূল কাঠামোগুলো অপরিবর্তনীয় এবং ঐ ধর্মে বিশ্বাসী সকল মানুষের সাপেক্ষেই সর্বজনীন।