শাড়ি

রুমন আশরাফ ৩১ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ০২:৩৩:২৩অপরাহ্ন রম্য ১২ মন্তব্য

বৎসর দুই পূর্বের কথা। রমজানের ঈদের ছুটি উপভোগ করিতে পরিবারের সান্নিধ্যে আসিয়াছিলাম। দীর্ঘদিন যাবত দূরে অবস্থান করিবার কারনে পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হইতেছিল না। কর্মস্থল রাজধানীর বেশ বাহিরে তথা সিলেটে অবস্থিত বিধায় আমাকে অতিথিশালা কিংবা বিশ্রামাগার যাহাই বলুন না কেন ঐখানেই থাকিতে হইত। তাই অন্তরে প্রবল ইচ্ছা থাকিবার পরেও স্ত্রী-কন্যাকে লইয়া খুব একটা প্রমোদভ্রমণ করা সম্ভব হয় নাই। যাহাও করিয়াছি তাহাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না। তথাপি স্ত্রী-কন্যা তাহা মানিয়া লইয়াছে। বলিতে দ্বিধা নাই যে, তাহাদিগকে কখনও আমার নিকট লইয়া আসাও সম্ভব হয় নাই। যাহাই হউক, এইবার মূল প্রসঙ্গে আসি।

 

ঈদের দিন বৈকালে স্ত্রী-কন্যাকে লইয়া অদূরে কোথাও যাইবার জন্য মনস্থির করিলাম। বাহিরে যাইবার কথা শুনিয়া কন্যাকে দেখিয়া বড়ই আনন্দিত মনে হইল। অতঃপর নব বস্ত্র পরিধান এবং প্রসাধনী লেপন করিয়া আমরা তিনজন আবাস হইতে বাহির হইলাম। গন্তব্যস্থল হইলো “হাতির ঝিল”।

 

ব্যাটারি এবং গ্যাস বিহীন একটা ত্রিচক্রযান ঠিক করিলাম। রিকশাওয়ালা নির্ধারিত ভাড়ার চাইতেও কুড়ি টাকা অতিরিক্ত আবদার করাতে আমি মোটেও ক্ষিপ্ত হইলাম না। বরং ব্যাপারটাকে অতি স্বাভাবিক বলিয়া মানিয়া লইলাম। ঈদের মৌসুম অতএব ভাড়াটা যৎসামান্য বেশীই হইবে। ত্রিচক্রযানে আসন গ্রহণ করিয়াই চালককে বলিলাম, “ধীরে চালাইবে”। চালক মুখে কোনও কথা না বলিয়া হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়াইল।

 

যাত্রা শুরু হইলো মহাখালী হইতে। আমার কোলে কন্যা আর পাশে স্ত্রী। চালক মন্থর গতিতে ত্রিচক্রযান চালাইতেছে। ছুটির দিনে যানবাহনের আধিক্য নাই বলিয়া সড়কটাকে বেশ ফাঁকা মনে হইলো। সড়কের দুইপাশের দৃশ্য অবলোকন করিতেছি আর কন্যার সহিত বাক্যালাপ করিতেছি। অল্পক্ষণের মধ্যেই ত্রিচক্রযান গুলশানে আসিতেই শাড়ি পরিহিতা এক রমণীর চিত্র সম্বলিত বিশাল আকারের একটা বিলবোর্ড চোখে পরিল। বিলবোর্ডটা টাঙ্গানো রহিয়াছিল একটা পণ্য সামগ্রীর প্রদর্শনাগারের অভিমুখে। কন্যার সহিত বাক্যালাপ স্থগিত করিয়া ঘাড় ঘুরাইয়া বিলবোর্ডের উপর মুদ্রণ করা কোম্পানির নাম পড়িবার চেষ্টা করিতেছি। শাড়ি পরিহিতা রমণীর চিত্রের প্রতি আমার এহেন কৌতূহলী ভাব দেখিয়া স্ত্রী কিছুটা বিরক্ত আর রাগান্বিত হইয়াছে বলিয়া প্রতীয়মান হইলো। তাহার নয়নযুগল কিঞ্চিৎ বড় হইয়া গেলো। আমি ততোক্ষণে বহু চেষ্টার পর কোম্পানির নামটা পড়িতে সক্ষম হইলাম।

 

স্ত্রী এইবার মুখ খুলিল। আমার পানে তাকাইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি দেখিলা অমন করিয়া? শাড়ি নাকি নারী?” নিজেকে তখন কিরূপ যেন অপরাধী মনে হইলো। ওষ্ঠদ্বয়ে কিঞ্চিৎ হাসির আভা ছড়াইয়া দিয়া বলিলাম, “যাহা ভাবিতেছ তাহা কিছুই নহে। কোম্পানির নামটা পড়িলাম। ভাসাভি। আর মনে মনে ভাবিলাম তোমাকে উক্ত কোম্পানির একটা শাড়ি খরিদ করিয়া দিলে কেমন হইবে”। কল্পনাপ্রবণ প্রেমময় এইরূপ উক্তি শুনিয়া রসিকতা করিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিল, “কত টাকা সঙ্গে আনিয়াছ? খরিদ করিতে পারিবে তো? আমি হাসিয়া উত্তর দিলাম, “হাজার দেড়েক টাকা সঙ্গে রহিয়াছে”। প্রত্যুত্তরে স্ত্রী এইবার পূর্বের চাইতেও রসিকতা করিয়া বলিল, “উক্ত টাকায় শাড়ি তো দূরের কথা, ব্লাউসের বোতামও খরিদ করিতে পারিবে না”।

 

স্ত্রীর এইরূপ বাচন শুনিয়া সহসাই আমার ওষ্ঠদ্বয়ের হাসি কোথায় যেন মিলাইয়া গেলো। আমি স্ত্রীর বদন পানে দৃষ্টি দিলাম। দেখিলাম, মিলাইয়া যাওয়া আমার হাসিটা স্থান করিয়া লইয়াছে তাহার ওষ্ঠদ্বয়ে।

১০৭৬জন ৯৮২জন
0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ