কাপ্তাই ফরেষ্টের গেষ্ট হাউজের সড়কের উল্টো দিকে আনসার ক্যাম্প। সেই ক্যাম্পের ডান দিকে ধরে পাহাড়ের টিলা পার হয়ে আমরা ৪ জন বড়ছড়ার দিকে অগ্রসর হলাম। প্রায় ২কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে বড়ছড়ায় নামলাম। পায়ের গোড়ালী সমেত ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি। পানির নীচে পাহাড় থেকে আসা পাথর। এই অল্প পানিতেও ছড়ায় স্রোত অনেক। স্রোতের কারনে হয়তো বা পানি স্বচ্ছ। দুই ধারে পাহাড় ও চির সবুজ বন। এখানে বণ্য হাতিরও অবাধ বিচরন। তার কিছু আলামতও পেলাম। আমরা প্রবেশের কিছুক্ষন আগে বন্য হাতির দল আমাদের চলার পথ পাড়ি দিয়েছে। হাতির তাজা মল দেখে সময়টা নির্ধারন করা সম্ভব হলো। যাহা হোক,সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে আমরা ছড়ায় পাখি খুঁজছি। গ্রেটার হর্ণবিলের জন্য মূলতঃ এই ছড়ায় আসা। প্রায় ১০কিঃমিঃ পথ অতিক্রম করে আমরা ভারতীয় সীমারেখা বরাবর চলে আসলাম। এমন সময় আমার ডান পাশে বেশ বড় একটি গাছ নজরে আসলো। গাছে বেশ কিছু টিয়া পাখি উড়া-উড়ি করছে। এমন সময় চোখের সামনে অন্য একটি গাছের ডালে পাখিটি বসে ফল খাচ্ছে। ছবি তোলার জন্য ধীর পায়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলাম। ছড়ায় পানির শব্দে পাখিটি বুঝতে পারে তাকে কেউ অনুসর করছে। তাই এক মূহুর্ত দেরী না করে উড়ে গেল। ছবি আর তোলা হলো না। আবার উচু গাছে যে টিয়া পাখিগুলি উড়ছে তা অনেক উঁচুতে হওয়ায় ছবি তোল সম্ভব নয়।
এমনটি আমার জীবনে বহুবার হয়েছে। নতুন পাখি। যা কোনদিন দেখিনি। সেই পাখির ছবি তোলার সময় ফুরৎ করে উড়ে গেছে। মনটা ততক্ষনিক খারাপ হলেও নিজেকে সামলে নিতাম। মনকে সান্তনা দিতাম আজ না হয় তুলতে পারিনি। কাল পারবো। সেবার Red-breasted parakeet বা মদনা টিয়ার ছবি তোলা হয়নি। তবে অন্যান্য পাখি ও বন্য হাতির ছবির তুলে আমরা ঢাকার পথে রওনা হলাম। পরবর্তীতে সাতছড়ির সবুজ বনে মন ভরে এই মদনা টিয়া পাখির ছবি তুলে কাপ্তাইয়ের কষ্টটা আর কষ্ট মনে হলো না।
এদেশে সচারচর দৃশ্যমান লালবুক ও সবুজ দেহের আবাসিক পাখিটি ৩৮সেঃমিঃ দৈর্ঘ্যের ও ১৩০গ্রাম ওজনের Psittaculidae পরিবারের অন্তর্গত একটি মাঝারী আকারের আমাদের দেশীয় পাখি। মেয়ে ও ছেলেপাখির মধ্যে পার্থক্য আছে। ছেলে পাখির মাথা ধূসর বর্ণের। দুই চোখের মাঝখানে, কপালে ও নাসারন্দ্রের ঠিক উপরে রয়েছে কালো ফিতে। থুঁতনিতে মোটা কালো গোঁফের মতন রেখা আছে। গলা ও বুক লাল। মাথা ছাড়া দেহের উপরি অংশ সবুজ। ডানার দুই পাশে সামান্য হলদে দাগ। লেজের তলা হলদে-সবুজ। চোখ হলুদ। পুরুষের উপরের ঠোঁট লাল ও নীচের অংশ কালচে-বাদামি। পা আঙ্গুল ও পায়ের পাতা হলদে-ধুসর। মেয়ের পাখির উভয় ঠোঁট কালো। মাথার নীচে সুবজ আভা দেখা যায়।
মদনা টিয়া মূলতঃ মিশ্র পাতাঝরা ও চিরসুবজ বন, চা বাগান এবং পাহাড়ের পাশে আবাদি জমিতে বিচরন করে। সচারচর এরা দল বেঁধে চলে। একেক দলে নিম্নে ১২-২০টি পাখি থাকে। আবার অনেক সময় জোড়ায় দেখা যায়। এরা যখন ঝাঁক বেঁধে উড়ে তখন উচ্চ স্বরে ডাকে। এদের ডাক তেমন সুমধুর নয় ক্যাঁক…..ক্যাঁক…..ক্যাঁক…..কর্কশ শব্দে উড়ে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় ফল,শস্যদানা,ফুলের রস ইত্যাদি রয়েছে। তাই ফল বাগান ফুলগাছে ও শস্য ক্ষেতে খাবারের সন্ধান করে। মাঝে মাঝে দল বেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে শস্য ক্ষেতে হানা দিয়ে শস্যের ক্ষতিও করে।
জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস এদের প্রজননকাল। প্রজনন সময়ে এরা গাছের খোঁড়লে বা অন্যান্য খোঁড়ল পাখির পরিত্যাক্ত বাসায় খড়-কুটা দিয়ে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়ে পাখিটি ৩-৪টি সাদা বর্ণের ডিম পাড়ে। মেয়ে ও পুরুষ পাখি উভয়েই ডিমে তা দেয়। ২২-২৪ দিনে ডিম ফুঁটে ছানা বের হয়। মা-বাবা উভয়ে ছানাদের পরিচর্যা করে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত,পাকিস্তান চীন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল সহ এশিয়ার দক্ষিন-পূর্ব অঞ্চলে এদের বিস্তৃত রয়েছে। বাংলাদেশের বণ্য আইনে এই পাখি সংরক্ষিত।
লালবুক ও সবুজ দেহের টিয়া পাখি দেখেছি কিনা মনে করতে পারছি না।
বন্য হাতির খপ্পরে পরেন নি, এটাই সৌভাগ্য 🙂
টিয়া পাখির সিরিজে একটির সাথে আগের টিয়া পাখির লিংকটা দিলে মনে হয় ভালো হবে পাঠকদের জন্য। যেমন, এই পোষ্টের শেষে পূর্বের পোষ্টের শিরোনাম সহ লিংক।
শুভ কামনা অনেক অনেক।
কালো রঙের ঠোঁটওয়ালা টিয়া এই প্রথম দেখলাম!
এর আগে কক্ষনো দেখিনি। টিয়া পাখির ঠোঁট খুবই ধারালো হয়। অনেক বার আঙুল কেটে গেছে এর কামড়ে 🙁
তবে টিয়া পাখির যে জিনিস সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে তা হলো এর গায়ের রঙ আর এদের স্বরণশক্তি। আর টিয়ার পাখিদের খাবার খাওয়ার স্টাইলটাও দারুণ।
১৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মদনা টিয়ার রংটা ধূসর, সবুজ, কমলার মিশেলে দারুন কম্বিনেশন। টিয়ার এতো রঙ জানা ছিলো না। তবে টিয়ার ডাকটা সত্যিই বিদঘুটে, ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ কানে লাগে একদম। ওদের রং আর ঠোঁট গুলো খুব ভালো লাগে। অগনিত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
শামীম চৌধুরী
অনেক ধন্যবাদ দিদিভাই।
আপনার জন্যও শুভ কামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
লালবুক ও সবুজ দেহের টিয়া পাখি দেখেছি কিনা মনে করতে পারছি না।
বন্য হাতির খপ্পরে পরেন নি, এটাই সৌভাগ্য 🙂
টিয়া পাখির সিরিজে একটির সাথে আগের টিয়া পাখির লিংকটা দিলে মনে হয় ভালো হবে পাঠকদের জন্য। যেমন, এই পোষ্টের শেষে পূর্বের পোষ্টের শিরোনাম সহ লিংক।
শুভ কামনা অনেক অনেক।
শামীম চৌধুরী
সঠিক বলেছেন ভাইজান। আসলে ভুলটা আমারই হয়েছে। সিরিজ লেখাগুলিতে আগের পর্বের লিংক থাকলে পাঠকদের জন্য সহায়ক হয়। পরবর্তীতে লিংক সহ দেবো।
ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
কালো রঙের ঠোঁটওয়ালা টিয়া এই প্রথম দেখলাম!
এর আগে কক্ষনো দেখিনি। টিয়া পাখির ঠোঁট খুবই ধারালো হয়। অনেক বার আঙুল কেটে গেছে এর কামড়ে 🙁
তবে টিয়া পাখির যে জিনিস সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে তা হলো এর গায়ের রঙ আর এদের স্বরণশক্তি। আর টিয়ার পাখিদের খাবার খাওয়ার স্টাইলটাও দারুণ।
শামীম চৌধুরী
টিয়া পাখি বাঙালী জাতির ঐতিহ্য বহন করে। ভালো থাকবেন সবসময়। শুভ কামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
চট্টগ্রামে জানালা খুললেই একটা না একটা টিয়া দেখা যায়। এখন আপনার এগুলো পড়ে মিলানোর চেষ্টা। কোনটা কোন টিয়া?
শুভকামনা
শামীম চৌধুরী
এরা চট্টগ্রামের সবুজ বনের পাখি। লোকালয়েও দেখা যায়।
তৌহিদ
এযাবতকাল টিয়া নিয়ে যত পোষ্ট দিয়েছেন তারমধ্যে এটিই সবচেয়ে সুন্দর দেখতে। ছবি তুলতে গেলে নিশ্চিত অনেক এক্সাইটমেন্টের মুখোমুখি হতে হয়।
ভালো থাকুন ভাই।
শামীম চৌধুরী
অনেক ধন্যবাদ ভাইজান। ভালো থেকো পরিবারের সাথে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভাইয়া আর কত টিয়া আছে/ দেখাবেন। আমি জীবনেও জানতাম না একরকম টিয়া হয়। আল্লাহর সৃষ্টি কত সুন্দর।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
শুভ সকাল।🌹🌹
শামীম চৌধুরী
আপু,
৭ প্রজাতির মধ্যে ৬ প্রজাতির নিয়ে লেখা হয়েছে। আর একটার পরিচিতি বাকি আছে।
সুপায়ন বড়ুয়া
টিয়ার এতো রঙ জানা ছিলো না।
তবে টিয়ার ডাকটা সত্যিই সত্যি কানে লাগে
ভালো লাগলো ভাইজান।
অগনিত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ দাদা।
হালিম নজরুল
আগে শুধু টিয়া চিনতাম। এখন তাদের বহু রকম জানছি আপনার কল্যাণে, ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।
শামীম চৌধুরী
শুভ কামনা রইলো কবি ভাইজান।