
রঙধনু আকাশ (২৪তম পর্ব)
তিন মাস পরঃ
নীল এখন একদম সুস্থ, দেশের খ্যাতনামা নিউরোলজিস্টকে দিয়ে গতমাসে চেক করানো হয়েছে, নীলের আর কোনো সমস্যা নাই।
রুদ্র অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে দেখলো নীলও রেডি যাওয়ার জন্য, রুদ্র বললো, ভাইয়া আজ থেকেই যাবে?
কেন তোর কোনো সমস্যা, নীল সরাসরি তাকালো রুদ্রের চোখে, কিছু যেন খুঁজছে।
না কি যে বলোনা ভাইয়া, কিসের সমস্যা হবে, চলো নাস্তা করে নিই।
দুজনেই নাস্তার টেবিলে বসলে রুদ্রর মা এবং অনিলা সবাইকে নাস্তা সার্ভ করতে শুরু করলো।
মম আজ ভাইয়াও অফিসে যাচ্ছে।
তাই খুব ভালো হয়েছে।
মম আজ কি করেছো, মাত্র মিক্সড ভেজিটেবল দেখছি?
অনিলা আনছে, তোরা শুরু কর, নীল রেনুরা কি ঘুমে?
হাঁ ঘুম ওরা, নীল খেতে খেতে জবাব দিলো।
তুই অফিসে যাওয়ার আগে তোর ড্যাডের কাছে দোয়া নিবিনা?
বা এখন না, পরে সময় করে যাবো, বলেই নীল খাওয়াতে মন দিলো।
রুদ্রর মা নীলের দিকে তাকিয়ে রইলেন, মনে মনে বললেন, অনেক চেইঞ্জ হয়ে গেছিস তুই, বড় এক নিশ্বাস ফেললেন উনি।
অফিসে পোঁছেই রুদ্র নীলকে ওর রুমে দিয়ে নিজে গেলো নিজ কেবিনে, কেবিনে বসেই কল দিলো জিএম সাহেবকে, বুঝিয়ে বললো নীলের অবস্থা এবং সবাইকে বলে দিতে বললো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকতে এবং নীলকে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সম্বোধন করতে।
ফোন রেখেই চিনুকে কল দিলো, বললো অফিসে আসতে।
ইনটাকমে কল আসাতে রিসিভ করলো রুদ্র।
স্যার উকিল সাহেব কল করেছেন।
দাও, বিপ শব্দের পর রুদ্র সালাম দিলে উকিল সাহেব বললেন, রুদ্র শুনলাম নীল ফিরে এসেছে, এখন কেমন আছে ও?
জ্বি আংকেল, একদম সুস্থ আছে ভাইয়া।
তাহলে আমি আসা উচিত।
কবে আসতে চান?
সন্ধ্যার পর আসবো তোমাদের বাসায়, সবাইকে থাকতে বলো।
জ্বি আংকেল, অবশ্যই।
ফোন ডিস্কানেক্ট করে রুদ্র নিজের কাজে মন দিলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই চিনু এলো, চিনুকে বসতে বলে ইনটারকমে কল দিয়ে কফি দিতে বললো।
শুন ভাইয়া আজ থেকে জয়েন করেছে অফিস, আমি অলরেডি এমডি পদ থেকে রিজাইন দিয়ে আগের পদে ফিরে আসছি।
চিনু অবাক হয়ে শুনতে লাগলো।
দরজায় নক শুনে রুদ্র চোখ তুলে তাকালো, নীলকে প্রবেশ করতে দেখে বললো, ভাইয়া আসো।
ইনি কে, নীল জিজ্ঞেস করলো।
ও চিন সু প্রু, ওরফে চিনু।
ওহ শুনলাম উনি আমাদের টেক্সটাইলের জিএম।
হাঁ ভাইয়া, ও আসার পর আমাদের টেক্টাটাইল খুব ভালো করছে।
কোথায় ভালো করছে, আরও ভালো করা উচিত ছিলো।
রুদ্র থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া বুঝলাম না?
আচ্ছা ও নিয়ে পরে কথা বলছি, চিনু সাহেব আপনি আগামীকাল আমার সাথে দেখা করবেন, এখন যান।
জ্বি স্যার, হতবাক চিনু বেরিয়ে গেলো।
ভাইয়া কোনো সমস্যা?
সমস্যা তো আছেই, আমার পারমিশন ছাড়া টেক্সটাইলটা কেন চালু করলি?
উপায় ছিলোনা ভাইয়া, ওই টেক্সটাইল চালু করাতে আমাদের সকল ব্যাংক লোন শোধ করতে পেরেছি।
তোকে কে বলেছে শোধ করতে, রাগান্বিত স্বরে নীল বললো।
শোধ না করলে ব্যাংক আমাদের সব কিছুই নিলামে তুলতো।
তুমি আমাকে ব্যবসা শিখাবে?
রুদ্র চুপ করে গেলো।
এ পর্যন্ত যা হয়েছে তার প্রতিটার জবাব তোকে দিতে হবে, তোর একাউন্ট স্টেটমেন্ট সহ, এছাড়া অফিসের সকল দ্বায়িত্ববার আজকের মধ্যেই ছেড়ে আমাকে বুঝিয়ে দে।
মানে কি, রুদ্র অবাক হয়ে তাকালো।
ন্যাকা নাকি, তোকে যা বলছি তাই কর, নাহলে আমি একশন নিতে বাধ্য হবো।
তুমি কিভাবে একশন নেবে বোর্ড মিটিং ছাড়া, রুদ্র স্বর উঁচু করলো।
বোর্ড মিটিং লাগবেনা, আমি আমার ক্ষমতা বলে করবো, বলেই নীল উঠে বেড়িয়ে গেলো।
রুদ্র ফোন তুলে জিএম সাহেবকে ফোন দিয়ে বললো, আপনাকে ফাইল গুলো রেডি করতে বলেছিলাম তা নিয়ে আসুন প্লিজ।
রুদ্র ফোন রেখে ওর মাকে ফোন দিয়ে সব খুলে বললো, সাথে এও বললো, সন্ধ্যায় উকিল আংকেল আসবে আজ।
আচ্ছা তুই চিন্তা করিসনা বাবা।
আচ্ছা মম রাখছি।
ফোন ডিস্কানেক্ট করে কম্পিউটারে নিজের ব্যাংক একাউন্টে লগিং করে ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রিন্টে দিয়ে চিন্তায় ঢুবে গেলো, নীলের ব্যবহার ওকে আহত করেছে।
ফোন তুলে নিয়ে চিনুকে কল দিলো।
বল দোস্তো।
বন্ধু কই তুই, রুমে আয়।
আসছি।
একটু পরেই রুমে প্রবেশ করলো চিনু।
বন্ধু অবস্থা ভালো মনে হচ্ছেনা, ভাইয়া এমন ব্যবহার করবে আমি চিন্তাই করতে পারিনি।
আমিও অবাক হয়েছিরে।
হয়ত কালকেই তোকে বরখাস্ত করতে পারে।
ও নিয়ে আমি চিন্তা করছিনা বন্ধু, আমি কয়েকদিন আগেই ভালো চাকরির অফার পেয়েছি গ্লোরিয়া জিন্স থেকে।
তাহলে তো নিশ্চিন্ত হলাম বন্ধু।
বিকালেই বাসায় ফিরলো রুদ্র, নীল আগেই ফিরে এসেছে, রুদ্র প্রথমে মার সাথে দেখা করে নিজ রুমে গেলো ফ্রেস হতে।
ফ্রেস হয়ে বেরুলে অনিলা টাওয়াল এগিয়ে দিলো, রুদ্র হাত মুখ মুছতে মুছতে সোফায় বসলো।
কি খবর তোমার, ভাইয়া বাসায় ফিরে খুব চিল্লাচিল্লি করলো দেখলাম।
কেন কি হয়েছে?
তাতো জানিনা, আমি চিল্লাচিল্লি শুনে আর নিচে যাইনি।
ভালো করেছো।
অফিসে কিছু হয়েছে নাকি?
না তেমন কিছু না, আমি একটু ঘুমাই, আমাকে আজানের আগে ডেকে দিও, বলেই রুদ্র উঠে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
এই শুনছো, মাগরিবের সময় হয়ে এসেছে, শুনেই রুদ্রর ঘুম ছুটে গেলো, কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে উঠে পড়লো, ওজু করে এসে আজান শুনলো, এরপর নামাজ পড়ে নিচে নেমে এলো।
অনিলা কিচেন থেকে কফি আর বিস্কিট নিয়ে এসে সোফায় বসে এগিয়ে দিলো।
মম কই?
আছে কিচেনে।
সন্ধ্যার পর উকিল সাহেব এলে সবাই ড্রয়িংরুমে এসে বসলে রুদ্রর মা বললেন, ভাই আপনি পড়া শুরু করুন।
উকিল সাহেব উইল পড়া শুরু করলেন, আমি শফিক আহমেদ, বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিক ভাবে ভালো ফিল করছিনা, মনে হচ্ছে আমি বেশিদিন বাঁচবোনা, যদি এমন ঘটনা ঘটে যায় তা ভেবেই আমি সজ্ঞানে, বুঝে শুনে এই উইল সম্পাদন করলাম।
যদি হটাৎ আমার মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে আমার স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পত্তির তিন ভাগ হবে, শুধু মাত্র বাড়িটি ছাড়া, বাড়িটি আমার স্ত্রী মিসেস শফিক ওরফে রেহনুমা শফিক পাবে, এই বাড়িতে আমার স্ত্রীর বর্তমানে আমাদের সকল সন্তানরা থাকতে পারবে যতক্ষণ আমার স্ত্রী চাইবে।
আমার বাকি সম্পত্তির তিন ভাগ উকিল সাহেব সমহারে দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বন্টন করে দেবেন।
এই তিন ভাগের এক ভাগ পাবে আমার বড় ছেলে নীল আহমেদ ও তার পরিবার, দ্বিতীয় ভাগ পাবে আমার একমাত্র মেয়ে এবং তৃতীয় ভাগ পাবে আমার স্ত্রী।
রুদ্র আর অনিলা অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো।
বাহ বাহ দারুণ হয়েছে, নীল উচ্ছাস করলো।
আমি এখনো শেষ করিনি, উকিল সাহেব বললেন।
জ্বি জ্বি আপনি পড়ুন।
আমার স্ত্রীর অবর্তমানে বা তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি আমার পালক পুত্র রুদ্র আহমেদ পাবে, যদি আমার স্ত্রী দিয়ে যায়।
রুদ্র বজ্রহতর মতো বসে রইলো।
……. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
১৮টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
রুদ্রের পরিচয়টা সবার সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেল। নীলের আচরণটা সত্যিই দুঃখজনক আর বিস্ময়কর।হয়তো সে নীলের সত্যটা জানতো বলেই নীলের সাথে এমন আচরন করছে। অনেক অনেক দিন পর নতুন পর্ব পেলাম। আশা করি সব মিলিয়ে ভালো আছেন ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অফুরন্ত
ইঞ্জা
প্রথমেই বলে নিই, নতুন কোম্পানিতে জয়েন করেছি আপু, খুব ব্যস্ততা বেড়েছে বলেই ব্লগে কম আসছি, যদিও সবার লেখা সুযোগ পেলেই পড়ছি।
সত্যি দুঃখজনক যে রুদ্রের বাবার উইল, যা রুদ্রর পরিচয় উম্মুক্ত করে দিলো, নীলের আচরণ যা ভেবেছেন তাই, সে রুদ্রের পরিচয় আগে থেকেই জানতো।
খুব দ্রুতই গল্প শেষের পথে এগুচ্ছে, সাথে থাকুন আপু।
ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অভিনন্দন নতুন কোম্পানিতে জয়েন করার জন্য। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। শুভ দীপাবলির শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
ইঞ্জা
আপনাকেও ধন্যবাদ এবং দীপাবলির শুভেচ্ছা আপু।
মোঃ মজিবর রহমান
বাস্তব বড়ই তিতা হলেও সত্য। এখানে অনিলা কিভাবে নেবে সেওটাই আগামিপর্বে বুঝব। যদিও তার বাবা জানে।
এখন মম কি করিবে সেওটাও দেখার বিষয়। কারোন রুদ্রর ফুফি।
তার দুই কুল। নিজ সন্তান ও ভাইয়ের সন্তান।
ইঞ্জা
এ সময়টা বড়ই দূর্বিষহ ভাই, অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে, আগামী পর্বে সব বুঝা যাবে ভাই, সাথে থাকুন, ভালোবাসা জানবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
সংগে আছি। দ্রত ছাড় দিবেন আশা রাখি। যদিও কর্ম্ব্যস্ত।
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ
সুপায়ন বড়ুয়া
নীলের ব্যবহারে আহত হলাম।
রুদ্র পালক পুত্র সেটা হল জানা।
গল্পটা নতুন মোড় নিল।
দেখা যাক কোনদিকে গড়ায়।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
নীলের ব্যবহার সত্যি আহত করে দাদা, রুদ্র পালক পুত্র হওয়াতে সমস্যা আরও ঘনীভূত হলো, আগামী পর্বে বুঝা যাবে গল্প কতদূর এগুলো, সাথে থাকুন দাদা।
ভালোবাসা জানবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
রুদ্রের জন্য খারাপ লাগছে। গল্প একটু অন্য বাকে গেল মনে হচ্ছে। শুভ কামনা রইল। শুভ সকাল।
ইঞ্জা
স্বাভাবিক, গল্প শেষের দিকে এসে অন্য বাঁকে ঘুরলো, দেখা যাক কি হয়।
ধন্যবাদ আপু। 😊
আরজু মুক্তা
ভালোই চলছে। পারিবারিক সাথে রোমাঞ্চ।
অপেক্ষায় পরের পর্ব।
এতো দেরি করে দেন কেনো?
ইঞ্জা
আপু রোমান্স কই পেলেন? 😱
আপু ব্যস্ততার কারণে ব্লগেই আসতে পারছিনা।
তৌহিদ
এতো সারে সর্বনাশ হলো দেখছি। রুদ্র আর নীলের মাঝে ফাটল ধরলো তাহলে! এই শোক রুদ্র বা তার মা সহ্য করতে পারবেতো!
এতদিন যদি রুদ্রকে ছেলের মত দেখলেন তবে শেষতক তিনি এসে রুদ্রর সাথে অন্যায় করেছেন এটি। মানিনা মানবোনা।
সবকিছু তাড়াতাড়ি ঠিক করেন কইলাম ভাইজান। না হলে রুদ্রর পক্ষে আন্দোলন চলবে কিন্তু।
শুভকামনা সবসময়।
ইঞ্জা
সমস্যা হলো রুদ্র তার মায়ের ভাইয়ের সন্তান, স্বাভাবিক ভাবেই রুদ্রর বাবা তার মায়ের প্রাপ্তি থেকেই তাকে দিচ্ছে, এতে আমি অন্যায় কিছু দেখছিনা, পরে নীল কি করে তা দেখার অপেক্ষা মাত্র।
ধন্যবাদ ভাই।
ভালোবাসা জানবেন।
শামীম চৌধুরী
হায়…হায়…!! এতোদিন তো ভেবেছিলাম রুদ্র নীলের সহদোর ভাই। আজ আপনার গল্পে রুদ্রের আসল পরিচয়টা উম্মুক্ত করলেন। ভাবতেই পারিনি রুদ্র শফিক সাহেবের পালক পুত্র। আর নীলের আচরনেও বুঝা যায়নি রুদ্র তার গর্ভজাত মায়ের সন্তান নয়। শফিক সাহেব হয়তো ভবিষ্যত মঙ্গল চিন্তা করেই এমন উইল করে গেছেন। রুদ্রর মমের আচরনেও পাঠক বুঝতে পারেনি সে তার গর্ভের সন্তান নয়। সামনের পর্বে মনে হয় খেলা জমবে। দেখা যাক রুদ্রের আচরন ও কুটকৌশল কেমন হয়।
গল্পটি যেমন উপভোগ করলাম তেমন হতাশ হলাম।
শুভ কামনা রইলো।
ইঞ্জা
ভাই এর আগেও রুদ্রের বিয়ের আগের পর্বে রুদ্র যে পালক পুত্র তা বলা হয়েছিলো যদিও তা রুদ্র জানতোনা যা আজ জানলো।
দেখা যাক আগামী পর্বে কি হয়।
ধন্যবাদ অনিঃশেষ ভাই।