মাত্র ২৫ পয়সায় কথা বলুন সারারাত; কথা বলতেই থাকুন; কথা বলার উৎসবে মেতে উঠুন এরূপ লোভনীয় বা নেশাযুক্ত বিজ্ঞাপন-চমকে বিশ্বাসী ও নির্ভরশীল হয়ে বহু মানুষ বিশেষত তরুণ প্রজন্ম বখে যাচ্ছে। ছেলেতে-মেয়েতে এক অসুস্থ সম্পর্ক তৈরি হয়ে তরুণ-তরুণীরা দিশেহারা ও সর্বহারা হয়ে পড়ছে। বাবা-মায়ের কোনো সেলফোন থাকুক বা না থাকুক একজন সন্তানের হাতে একাধিক ফোন; বিভিন্ন পকেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফোনসেট এবং ব্যাগে ব্যাগে বিভিন্ন অপারেটরের নানা সিমকার্ড নিয়ে ঘুরে ঘুরে এখন তারা হয়ে পড়ছে উদভ্রান্ত, ভবঘুরে।
সেলফোন ও সিমকার্ডের এ অসুস্থ নেশা থেকে তরুণ প্রজন্মকে উদ্ধারের এমনকি সচেতন-সতর্ক করার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। কল্যাণকামী কিছু অভিভাবকের টিজিং-বিরোধী আন্দোলনের জন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু টিজিংয়ের মূলোৎপাটন তথা ছাত্র-যুব সমাজের অবক্ষয় রোধে তাদের দূরদর্শিতার অভাব দেখে হতাশা জাগে। আর অধিকাংশ অভিভাবকেরতো লেশমাত্র দায় নেই ছাত্র-যুব সমাজের প্রতি।
সেলফোন ব্যবসা করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এদেশ থেকে বছরে কত টাকা যে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, সেই হিসাব সরকার এবং অর্থ-কড়ি নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাছেই থাকার কথা। আমি কেবল ভাবছি দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ বংশধরদের বিভ্রান্তি ও পাগলামির পরিণাম-ফল নিয়ে। সেলফোন কোম্পানির Be Connected বিজ্ঞাপন-আহ্বানে সাড়া দিয়ে তথা আফিমরূপী নেশার ঘোরে পড়ে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থেকে Disconnected হয়ে পড়ছে এদেশের ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীরা। এতে পারস্পরিক অস্বাভাবিক ও অনৈতিক সম্পর্কের ভয়াবহতার পাশাপাশি তাদের নিজ নিজ স্বাস্থ্যহানির ভয়াবহতাও কম নয়।
‘সারাদিন-সারারাত’ মোবাইল ফোনে কথা বলার পরিণামের বিষয়ে আমার উক্ত মতামতের সাথে যারা দ্বিমত করবেন, তাদের সাথে বিতর্কে না গিয়ে মোবাইল ফোনে অত্যধিক কথা বলায় স্বাস্থ্যহানিও যে অনিবার্য, সে প্রসঙ্গেই শুধু থাকি। …এবং তা কিন্তু আমার নিজের কথা নয়, এমনকি ভবের হাটের কথাও নয়; খোদ যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণা-ফলের কথা। স্বাস্থ্যের ওপর মোবাইল ফোনের প্রভাব নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। সব গবেষণায়ই বেরিয়ে এসেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারে শরীরের ওপর বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাবের কথা। বিজ্ঞানীরা মোবাইল ফোনকে তুলনা করেছেন টাইম বোমার সঙ্গে। তাদের ভাষায়, মোবাইল ফোন হলো ‘হেলথ টাইম বোমা’ বা ‘স্বাস্থ্যনাশক সময় নিয়ন্ত্রিত বোমা’। বিজ্ঞানীরা তাই প্রযুক্তির এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের জন্য জনসাধারণকে সতর্ক করার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০০টি গবেষণায় মোবাইল ফোনকে মস্তিষ্কের টিউমার ও ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অন্যদিকে ব্রাজিলের সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মোবাইল ফোনের ব্যবহার মানুষের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিজ্ঞানীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, সরকারগুলো এই ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যার ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা বলেন, মোবাইল ফোনের কারণে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে শিশুরা। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সিগারেটের মোড়কে যেমন স্বাস্থ্য সমস্যার কথা লেখা থাকে, ঠিক তেমনি মোবাইল ফোনের গায়ে কিংবা দোকানে ‘মোবাইল ফোন ব্যবহারঃ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ এ ধরনের স্লোগান লেখা উচিত।
স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে যুক্তরাজ্য সরকার এরই মধ্যে ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলছেন, মানব ভ্রূণের ওপর মোবাইল ফোনের তরঙ্গের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে; গর্ভাবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ব্যাপারেও তাই সীমা বেঁধে দেয়া উচিত।
প্রযুক্তির উন্নয়নে আমরা আমাদের ভালো টাকে গ্রহণ করতে ভুলে গেছি। বাবা-মায়েরাও সন্তানের জেদের কাছে জিম্মি। চারপাশে এসব কান্ড দেখছি প্রতিনিয়ত। এই যে আসক্তি এটা ছোট বড় সবার মধ্যেই ঢুকে গেছে। এটা যে স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর এটাও অনেকে বুঝেও বের হতে পারে না। খুব ভালো লাগলো আপনার জনসচেতনতা মূলক পোস্ট। ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো
৭টি মন্তব্য
তৌহিদ
দেখুন প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন থাকবেই। এখন আমরা কে কিভাবে সেটাকে ব্যবহার করছি সেটাই আসল বিষয়। ভালো থাকুন।
ফয়জুল মহী
নন্দিত উপস্থাপন । 👍👍
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রযুক্তির উন্নয়নে আমরা আমাদের ভালো টাকে গ্রহণ করতে ভুলে গেছি। বাবা-মায়েরাও সন্তানের জেদের কাছে জিম্মি। চারপাশে এসব কান্ড দেখছি প্রতিনিয়ত। এই যে আসক্তি এটা ছোট বড় সবার মধ্যেই ঢুকে গেছে। এটা যে স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর এটাও অনেকে বুঝেও বের হতে পারে না। খুব ভালো লাগলো আপনার জনসচেতনতা মূলক পোস্ট। ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো
পার্থ সারথি পোদ্দার
খুব ভালো একটি আর্টিকেল পেলাম।অশেষ ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টির উপর আলোকপাতের জন্য।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রযুক্তির ভালোমন্দ দুই দিকই আছে। যারযার গ্রহনের উপর নির্ভর করে এটা তার জন্য কি বয়ে আনবে।
আপনি আপনার কোন পোস্টের কমেন্টের জবাব দেন না কেন?
আরজু মুক্তা
ভালো মন্দ বিচার ক্ষমতা নিজের কাছে। ভালোটা নিবো। খারাপটা ইগনোর করবো
হালিম নজরুল
আমার কাছে প্রযুক্তি খুবই উপকারী, তবে অনেকের জন্যই তা বিপর্যয়ের উপকরণ।