মেধার গল্প ৪

নীরা সাদীয়া ১২ ডিসেম্বর ২০১৬, সোমবার, ০৬:৫৯:৩৪অপরাহ্ন গল্প ১৭ মন্তব্য

দুপুরে সকলেই খেতে বসল। মেধা ও সারাও সবার সাথে বসল। মা চিকেনটা বাচ্চা দুটোর দিকে এগিয়ে দিলেন। মেজো নানু তাই দেখে চেচিয়ে উঠলেন,

” কি ব্যপার, প্রতি বেলায় এত মাংস খাওয়াচ্ছ কেন বাচ্চাদের? ”

“খালা, আমার বাচ্চারা চিকেনটা খুব পছন্দ করে। তাই চিকেনের একটা কিছু রাখতে হয় তাদের জন্য।”

“না, এটাতো হতে পারেনা। প্রত্যেকবার চিকেন খাবে কেন তারা? অন্য কিছু পছন্দ না করলেও খেতে হবে। রোজ রোজ কেন এত পয়সা নষ্ট কর তোমরা? এটা টেবিল থেকে সরিয়ে নাও। এটা ছাড়া তারা যদি ভাত না খায়,তবে থাকুক উপোস। যখন ক্ষুধা পাবে,তখন ঠিকি খাবে। যা পাবে তাই খাবে। চিকেন ছাড়াই খাবে।”

ওরকম একজন বয়ষ্কা আত্নীয়ের কথা তিনি ফেলতেও পারছেন না, তাহলে যে তাকে অপমান করা হবে। আবার মন থেকে এটা মানতেও পারছেন না যে সামর্থ্য থাকা সত্বেও তিনি বাচ্চা দুটোকে তৃপ্তিমত খাওয়াতে পারলেন না। এদিকে মেধা আর সারার মুখ গম্ভীর হয়ে আছে। আজ থেকে যতদিন পর্যন্ত মেজো নানু থাকবেন, ততদিন তারা তাদের পছন্দের খাবারটা খেতে পারবে না। মায়ের মনটাও মানছে না তাদের এ অবস্থা দেখে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।

কোনরকম খেয়ে না খেয়ে উঠে গেল মেধা ও সারা। উঠতে যাবে এমন সময় মেজো নানু আবার ধমক দিচ্ছেন,

“সারা, এ কি, তোমার খাবার প্লেট কে ধুবে? নিজের প্লেট নিজেকে ধুতে হয়,জান না? শবনম তোমার মেয়েকে কিচ্ছু শেখাওনি? আমার মেয়েতো নিজের কাজ নিজেই করতে পারে।” (আবারো শুরু হল বেমানান তুলনা, তার নবম শ্রেনি পড়ুয়া মেয়ের সাথে ২য় শ্রেনিতে পড়ুয়া সারার তুলনা! সত্যি খুব হাস্যকর এ তুলনা।)

এবার সারা মুখ ভার করে প্লেটটা বেসিনে নিয়ে গেল। কজন রান্নার লোক কেড়ে নিতে চাচ্ছিল সেটা,তারাই ধুবে বলে। কিন্তু মেজো নানুর কড়া নির্দেশ, এটা সারাকেই ধুতে হবে। এসব দেখে একজন বুয়া বলেই উঠল,
“মেয়েদের কাজ করার সময় কি ফুরিয়ে যাচ্ছে? এত ছোট বাচ্চাটাকে ধমকে কাজ শেখানোর কি দরকার? বড় হলে এমনি সব কাজ শিখে যাবে। তা ছাড়া এসব করার জন্যে আমরাতো রয়েছিই।”

মেজো নানু ধমকে উঠলেন, ” তুমি বোঝ? তুমি একটা কাজের লোক, তোমার এত বড় সাহস?”

তারপর সারার মাকে যা নয় তাই বলতে লাগলেন। কেন তিনি তার মেয়েকে রান্না শেখাচ্ছেন না? মেজো নানুর মেয়ে তো সব রান্না পারে। সারা এমন অকর্মণ্য কেমন করে হল ইত্যাদি। তিনি সারার বয়সটাকে কেন যে বিবেচনায় আনছেন না কে জানে। তবে সারার বাবা যদি বাড়িতে থাকতেন, তিনি অবশ্যই মেজো নানুকে সেটা বুঝিয়ে দিতেন।যাই হোক, সারা ও মেধা দুজনেই খেয়ে যার যার ঘরে চলে গেল। পড়তে বসলে সারা সব ভুলে যায়, কিন্তু মেধা ভুলতে পারে না। তা ছাড়া ঠিকমত আজ খেতেও পায়নি সে। তাই মন আর শরীর কোনটাতেই স্বস্তি বোধ করছে না তারা। মা একা বসে ভাবছেন, এটাই তাদের বাড়ন্ত বয়স। এখন যদি ঠিকমত পুষ্টিকর খাবার খেতে না পারে, তবে বাচ্চারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে না। তা ছাড়া মেজো নানু যদি এভাবে মানষিকভাবে অত্যাচার করতে থাকেন, তবে তাদের মানষিক বিকাশও বাঁধাগ্রস্থ হবে। তাহলে এখন উপায় কি?

এমন সময় মেধার বাবা অফিস থেকে ফিরলেন। মিসেস শবনম ভাবছিলেন ব্যপারটা আজ কর্ণেল সাহেবের সাথে শেয়ার করবেন। কিন্তু তার আগেই তিনি বলে উঠলেন,

“শবনম, আমাকে অফিস থেকে মিশনে যেতে হচ্ছে। এবার পাঠাবে সেনেগাল। ১ বছর সেখানে থাকতে হবে।”

কথাটা শুনেই মেধার মা মিসেস শবনম বিমর্ষ হয়ে পড়লেন।তাই যা বলতে চাইছিলেন তা আর বলে উঠতে পারলেন না। এদিকে মেধার নানুও চলে গেছেন আমেরিকায়। এক বছরের আগে ফিরবেন না। কর্নেল সাহেব স্ত্রীকে এত চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলেন

“আরে অত ভাবছ কেন? এটাই কি আমি প্রথমবার যাচ্ছি নাকি?”

“তা নয়, তবে আম্মাও তো দেশে নেই। তুমিও চলে যাবে। দুটো বাচ্চা নিয়ে আমি একা একা…. ”

“তা কেন? তোমার মেজো খালাতো রয়েছেন। তাঁকে নাহয় বলব কিছুদিন পরপর এসে থাকবেন তোমাদের সাথে?”

মেধার মা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় একটা কিছু ভাঙার আওয়াজ এল মেধার ঘর থেকে। তারা দৌড়ে সেদিকে গেলেন।

চলবে…..
Neera Sadeea

12.12.16

৫৪০জন ৫৪১জন
0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ