দুপুরে সকলেই খেতে বসল। মেধা ও সারাও সবার সাথে বসল। মা চিকেনটা বাচ্চা দুটোর দিকে এগিয়ে দিলেন। মেজো নানু তাই দেখে চেচিয়ে উঠলেন,
” কি ব্যপার, প্রতি বেলায় এত মাংস খাওয়াচ্ছ কেন বাচ্চাদের? ”
“খালা, আমার বাচ্চারা চিকেনটা খুব পছন্দ করে। তাই চিকেনের একটা কিছু রাখতে হয় তাদের জন্য।”
“না, এটাতো হতে পারেনা। প্রত্যেকবার চিকেন খাবে কেন তারা? অন্য কিছু পছন্দ না করলেও খেতে হবে। রোজ রোজ কেন এত পয়সা নষ্ট কর তোমরা? এটা টেবিল থেকে সরিয়ে নাও। এটা ছাড়া তারা যদি ভাত না খায়,তবে থাকুক উপোস। যখন ক্ষুধা পাবে,তখন ঠিকি খাবে। যা পাবে তাই খাবে। চিকেন ছাড়াই খাবে।”
ওরকম একজন বয়ষ্কা আত্নীয়ের কথা তিনি ফেলতেও পারছেন না, তাহলে যে তাকে অপমান করা হবে। আবার মন থেকে এটা মানতেও পারছেন না যে সামর্থ্য থাকা সত্বেও তিনি বাচ্চা দুটোকে তৃপ্তিমত খাওয়াতে পারলেন না। এদিকে মেধা আর সারার মুখ গম্ভীর হয়ে আছে। আজ থেকে যতদিন পর্যন্ত মেজো নানু থাকবেন, ততদিন তারা তাদের পছন্দের খাবারটা খেতে পারবে না। মায়ের মনটাও মানছে না তাদের এ অবস্থা দেখে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।
কোনরকম খেয়ে না খেয়ে উঠে গেল মেধা ও সারা। উঠতে যাবে এমন সময় মেজো নানু আবার ধমক দিচ্ছেন,
“সারা, এ কি, তোমার খাবার প্লেট কে ধুবে? নিজের প্লেট নিজেকে ধুতে হয়,জান না? শবনম তোমার মেয়েকে কিচ্ছু শেখাওনি? আমার মেয়েতো নিজের কাজ নিজেই করতে পারে।” (আবারো শুরু হল বেমানান তুলনা, তার নবম শ্রেনি পড়ুয়া মেয়ের সাথে ২য় শ্রেনিতে পড়ুয়া সারার তুলনা! সত্যি খুব হাস্যকর এ তুলনা।)
এবার সারা মুখ ভার করে প্লেটটা বেসিনে নিয়ে গেল। কজন রান্নার লোক কেড়ে নিতে চাচ্ছিল সেটা,তারাই ধুবে বলে। কিন্তু মেজো নানুর কড়া নির্দেশ, এটা সারাকেই ধুতে হবে। এসব দেখে একজন বুয়া বলেই উঠল,
“মেয়েদের কাজ করার সময় কি ফুরিয়ে যাচ্ছে? এত ছোট বাচ্চাটাকে ধমকে কাজ শেখানোর কি দরকার? বড় হলে এমনি সব কাজ শিখে যাবে। তা ছাড়া এসব করার জন্যে আমরাতো রয়েছিই।”
মেজো নানু ধমকে উঠলেন, ” তুমি বোঝ? তুমি একটা কাজের লোক, তোমার এত বড় সাহস?”
তারপর সারার মাকে যা নয় তাই বলতে লাগলেন। কেন তিনি তার মেয়েকে রান্না শেখাচ্ছেন না? মেজো নানুর মেয়ে তো সব রান্না পারে। সারা এমন অকর্মণ্য কেমন করে হল ইত্যাদি। তিনি সারার বয়সটাকে কেন যে বিবেচনায় আনছেন না কে জানে। তবে সারার বাবা যদি বাড়িতে থাকতেন, তিনি অবশ্যই মেজো নানুকে সেটা বুঝিয়ে দিতেন।যাই হোক, সারা ও মেধা দুজনেই খেয়ে যার যার ঘরে চলে গেল। পড়তে বসলে সারা সব ভুলে যায়, কিন্তু মেধা ভুলতে পারে না। তা ছাড়া ঠিকমত আজ খেতেও পায়নি সে। তাই মন আর শরীর কোনটাতেই স্বস্তি বোধ করছে না তারা। মা একা বসে ভাবছেন, এটাই তাদের বাড়ন্ত বয়স। এখন যদি ঠিকমত পুষ্টিকর খাবার খেতে না পারে, তবে বাচ্চারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে না। তা ছাড়া মেজো নানু যদি এভাবে মানষিকভাবে অত্যাচার করতে থাকেন, তবে তাদের মানষিক বিকাশও বাঁধাগ্রস্থ হবে। তাহলে এখন উপায় কি?
এমন সময় মেধার বাবা অফিস থেকে ফিরলেন। মিসেস শবনম ভাবছিলেন ব্যপারটা আজ কর্ণেল সাহেবের সাথে শেয়ার করবেন। কিন্তু তার আগেই তিনি বলে উঠলেন,
“শবনম, আমাকে অফিস থেকে মিশনে যেতে হচ্ছে। এবার পাঠাবে সেনেগাল। ১ বছর সেখানে থাকতে হবে।”
কথাটা শুনেই মেধার মা মিসেস শবনম বিমর্ষ হয়ে পড়লেন।তাই যা বলতে চাইছিলেন তা আর বলে উঠতে পারলেন না। এদিকে মেধার নানুও চলে গেছেন আমেরিকায়। এক বছরের আগে ফিরবেন না। কর্নেল সাহেব স্ত্রীকে এত চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলেন
“আরে অত ভাবছ কেন? এটাই কি আমি প্রথমবার যাচ্ছি নাকি?”
“তা নয়, তবে আম্মাও তো দেশে নেই। তুমিও চলে যাবে। দুটো বাচ্চা নিয়ে আমি একা একা…. ”
“তা কেন? তোমার মেজো খালাতো রয়েছেন। তাঁকে নাহয় বলব কিছুদিন পরপর এসে থাকবেন তোমাদের সাথে?”
মেধার মা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় একটা কিছু ভাঙার আওয়াজ এল মেধার ঘর থেকে। তারা দৌড়ে সেদিকে গেলেন।
চলবে…..
Neera Sadeea
12.12.16
১৭টি মন্তব্য
ইঞ্জা
ফাজিল মহিলা :@
নীরা সাদীয়া
হুম। ঠিকই বলেছেন।শুভরাত।
ইঞ্জা
শুভ দুপুর
নীলাঞ্জনা নীলা
মহিলা কাজের লোকের সাথে যেভাবে করলেন, ওটা মেনে নিতে পারলাম না। তবে কয়েকটি ব্যাপার আমি নিজেই আমার ছেলেকে শিখিয়েছি। ও যখন গ্রেড টুতে পড়তো, তখন থেকেই নিজের প্লেট ধোয়ানো শিখিয়েছি। আর যখন খাওয়া নিয়ে বিভিন্ন বাহানা করতো, তখন আমি খাওয়া সরিয়েও নিয়েছি। আজ যখন কোথাও যাই সবাই এই প্রশংসা করে যে আমার ছেলে সব খায়। আর আমার বন্ধুরা যখন বলে ওদের সন্তান খাওয়া নিয়ে খুব জ্বালায়, আমি কিন্তু অনেক শান্তিতে আছি। আর একেবারে ছোট থেকে নিজের কাজ শেখানো উচিৎ, তাতে ক্ষতির কিছু নেই। বরং লাভই হয়। আমি তাই এই ব্যাপারে ওই মহিলার সাথে একমত।
নীরা সাদীয়া
আপু আপনি ঠিক বলেছেন। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের সবকিছু শেখানো উচিত। তবে সেটা করতে হবে আদর করে, ভালবেসে। বড়রা যদি বাচ্চাদের সাথে সর্বদা জেদ করে নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে চায়, বাচ্চার চাওয়া পাওয়া কখনোই না মেটায়, তবে বাচ্চাও বড়দের কাছ থেকে এ ব্যবহারটাই শেখে। আর বাচ্চাটির মনেও প্রচন্ড জেদ, ক্ষোভ আর হতাশা তৈরি হয়। যা তার মানষিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর হ্যাঁ, বাচ্চারা সব খাবে,সেটা যেমন ঠিক, তেমনি বেড়ে ওঠার জন্য বাড়ন্ত বয়সে পুষ্টিকর খাবারের দিকেও নজর রাখা উচিত। মেধারা কিন্তু পছন্দের খাবারটা শুধু খাবে তা নয়, পাশাপাশি অন্যগুলো ও খাওয়ানো উচিত। আবার পছন্দটাও একেবারে ভুলে গেলে চলবে না।
নীলাঞ্জনা নীলা
হুম আদর করে তো অবশ্যই।
স্নেহ দিয়ে যে কাজ হয়, শাসনে লাভের চেয়ে ক্ষতি-ই হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে প্রতি-মন্তব্যের জন্যে।
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। আপনাকেও ধন্যবাদ।
অলিভার
‘মেঝ নানু’-র আচার ব্যবহার যাচ্ছেতাই রকমের খারাপ লাগছে। এরকম মহিলারা কখনোই কারও জন্যে মঙ্গলময় কিছু করার কথা চিন্তাও করতে পারে না। না হতে পারে নিজের পরিবারের আপন কেউ।
তবে নীলাঞ্জনা আপুর সাথে আমিও একমত পোষন করছি। ছোট থেকেই যদি বাচ্চাদের সকল খাবার খাওয়াতে অভ্যস্ত করা যায় তবে সেটা তাদের জন্যেই মঙ্গলময় হয়।
গল্প বলা ভালো হচ্ছে.. 🙂
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ। তবে হ্যাঁ, বাচ্চাদেরকে সবকিছুই শেখাতে হয় আদর করে, ভালবেসে। মেজ নানু যেভাবে হঠাৎ করে নিজের জেদ চাপিয়ে দিচ্ছেন সেভাবে করলে বাচ্চারা জেদী আর একগুঁয়ে হয়ে ওঠে, যা তাদের মানষিক বিকাশে বাঁধা দেয়। তাদের মনটাও কিন্তু বোঝা দরকার, যে মানষিকতাটুকু মেজো নানুর নেই।
অলিভার
হুম।
বাচ্চাদের মনে একবার জেদ প্রবেশ করলে তাকে সে অবস্থান থেকে ফিরিয়ে আনা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে দাড়ায়।
নীরা সাদীয়া
হুম। ধন্যবাদ আপনাকে।
মোঃ মজিবর রহমান
মন্তব্যাও ক্রতে সাহস করতে পারছিনা। তবে সন্তানদের বাড়ির কাজ করান উচিত হালকা। হ্যা তবে অঈরকম কড়া ভাসায় না। আস্তে আস্তে শিখাতে হবে। একজন সন্তান বড় হলে তাঁর অর্থাৎ নিজ নিজ প্রয়োজনের স্বাভাবিক কাজ শিখান উচিত।
এটা আমার ধারনা।
নীরা সাদীয়া
অবশ্যই শেখানো উচিত। তবে তা ঐভাবে জেদ করে নয়। বরং ভালবেসে। কিন্তু মেজো নানু যেভাবে শেখাচ্ছেন, তাতে বাচ্চাটিতো কিছু শিখবেই না, বরং এরকম মানষিক অত্যাচারে বাচ্চারা বিগড়ে যেতে পারে। তাই তাদেরকে বুঝিয়ে শেখানো উচিত আমার ধারনা।
মোঃ মজিবর রহমান
এরকম মানষিক অত্যাচারে বাচ্চারা বিগড়ে যেতে পারে।
সহমত
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপনাকে বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য।
মৌনতা রিতু
আমি যখন কলেজে তখন ডিম ভাজতে হয় কীভাবে সেটাই জানতাম না। এটা একদম সত্যি। কারণ, বাড়িতে মা, বড় বোনরা, কাজের মানুষ ছিল তাই করা হয়নি কোনো কিছু। একবার আব্বা অফিস থেকে এসে দেখে আমি ও অন্য বোনেরা মিলে মাছ কাটতেছি। দেখে খুব খেপে গেলেন মায়ের উপর। আব্বা শুধু বলল,” আমার তো মেয়ে কার কপালে কি আছে জানি না, তাই এখন ওরা কিছুই করবে না।” বলত হাত নষ্ট হয়ে যাবে। হাতের নরম ভাব নষ্ট হবে। মা হাসত। তাই সে গ্রামে মেয়েদের কখনো বিয়েই দিতে চাননি। তবুও এই আমরা রান্না ও সংসারের কাজে কখনো শশুরবাড়িতে কথা শুনিনি। তবে, আমার দুই ছেলে আমার মশারি টানিয়ে দেয়। বিনিময়ে খাইয়ে দিতে হয় তিন বেলাতেই। তবে হ্যাঁ, এমন আত্নীয়র মুখে ঝাঁটা। যারা কলিজায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। আমার সন্তানের উপরে পৃথিবীর কেউ নেই একমাত্র উপর আল্লাহ্ ছাড়া। এই ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করি না।
আমার দুই ছেলেও তিন বেলাতেই গোশ হলে খুশিতে ডগমগ। দুইদিন যদি না পায় কেঁদেই ফেলবে।
নীরা সাদীয়া
বেশ বলেছেন। তবে হ্যাঁ, বড়রা বাচ্চার মাকে পরামর্শ দিতেই পারেন। তবে এভাবে জুলুম করে বা জেদ করে নয়। তারাও নিজে নিজে কাজ করতে শিখবে। তবে সেটা করাতে হবে আনন্দের সাথে, শেখাতে হবে ভালবে ভালবেসে। নইলে বাচ্চা বিগড়ে যেতে পারে। ধন্যবাদ আপনাকে।