বাগানে বসে মেধা তৈরি করল এক নতুন ঘড়ি! এমন এক ঘড়ি যা আগে কেউ কোনদিন দেখেনি। ঘড়িটা প্রস্তুত করে তার সে কি আনন্দ! ঘড়িটার এক একটা বোতাম চাপছে,আর নানা কান্ড ঘটছে। ঘড়িটিতে তিনটি বোতাম। একটি চেপে পেছনে যাওয়া যায়, মানে বর্তমান সময় থেকে পেছনের দিকে, অপরটি চেপে বর্তমান সময়ে ফেরত আসা যায়। আর তৃতীয়টি চেপে ভবিষ্যত সময়ে চলে যাওয়া যায়। সময় ও স্থান লিখার জন্য আছে আরেকটা কী বোর্ড। এতে আবার একটি স্ক্রিন লাগানো আছে, যে স্ক্রিনে সে ঘড়িতে দেখানো সময়ের ঘটে যাওয়া সে স্থানের ঘটনাগুলোকে দেখাবে।যেমন, বাবা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর দুপুরে খাবার টেবিলে কি ঘটিয়েছেন মেজো নানু, তা দেখাবে, যদি সেই তারিখ ও সময় লিখে দেন। আবার বাজারে গিয়ে তিনি কি করেছেন, তার সময়টা কি বোর্ডে লিখে দেয়া হলে, স্ক্রিনে তাই দেখাবে। এটা তৈরি করেই হাসতে হাসতে মেধা বেরিয়ে এল বাগান থেকে। প্রথমেই জিনিসটা মাকে দেখালো। তিনিতো অবাক! সাথে সাথে বাবাকে কল করা হল স্কাইপেতে। তিনিও যন্ত্রটা দেখলেন। বাবা, মায়ের চোখে পানি এসে গেল ছেলের এই বিষ্ময়কর মেধা দেখে। যাই হোক, বাবা বললেন, এটার পুরো প্রক্রিয়াটা একটা ভিডিও করে ভাইবারে পাঠাতে। তাই করল মেধা। এবার তার বাবা ভিডিওটা ফেইসবুকে আপলোড করলেন। সাথে সাথে সারা পড়ে গেল চারিদিকে। হৈ হৈ কান্ড, রৈ রৈ ব্যাপার!
বাড়িতে সাংবাদিকের ভিড় লেগে গেল। কত জায়গা থেকে কত লোক আসছেন মেধাকে একনজর দেখতে। নানা জায়গা থেকে লোকজন আসছে মেধার সাথে নিজের আত্নীয়তার পরিচয় নিয়ে, তাদের দাবী মেধার সাথে একটা ছবি তুলতে দেয়া হোক। তারপর সেটা ফেইসবুকে আপলোড হবে মহা গৌরবের সাথে। স্কুলের বন্ধুরা, যারা এতদিন পেছনের বেঞ্চে বসা মেধাকে চিনতেও চাইতনা, তারাও তুলছে সেলফি। শিক্ষক শিক্ষিকারা গৌরবে গৌরবান্বিত। এরকম বহু ঘটনা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। তবে সবচেয়ে আনন্দের যে ঘটনাটা ঘটেছে তা হল, বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এঁর ব্যক্তিগত সহকারী এসে হাজির মেধার বাড়ির দোর গোড়ায়। তিনি জানালেন অসুস্থ বিজ্ঞানী ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি মেধাকে দেখবেন। এবং, তাঁর ইচ্ছা মি:স্মিথ (বিজ্ঞানীর ব্যক্তিগত সহকারী) এ যন্ত্রের ব্যপারে গবেষণা করে এটাকে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানোর একটা ব্যবস্থা করা হোক।
ছোট্ট মেধা অত কিছু না বুঝলেও বিজ্ঞানীরা এর অনেক উপকারী দিক খুঁজে বের করেছেন।যেমন
যদি আপনি সেই প্রাচীন যুগে ফিরে যেতে চান, যখন চর্যাপদ লেখা হয়েছিল, তাহলে কী বোর্ডে চাপুন ৯৫০ অব্দের সময়কাল। চলে আসবে চর্যাপদের ইতিবৃত্ত। কিংবা লিখুন ১২০০-১৩৫০, আর স্থানের জায়গায় ভারতীয় উপমহাদেশ, চলে আসবে অন্ধকার যুগের আদ্যোপান্ত। আবার আদিম যুগের সময়কাল, দেখতে পাবেন ডাইনোসর সহ আরো অনেক কিছু। কিংবা ধরা যাক, কোন একজন আসামীকে ধরা হল। সে সত্যিই কোন অন্যায় করেছে কিনা,তা এতদিন ছিল যুক্তিতর্ক নির্ভর এবং তাতে যথেষ্ট ফাঁক ফোকর বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এখন ঘটনার সময়কাল আর ঐ জায়গার নাম টাইপ করে দিয়ে দিন, ব্যস। সেই সময়ের সেই ঘটনা ভেসে উঠবে ঘড়ির পর্দায়।আবার ভবিষ্যতে কি ঘটতে পারে, তা জেনে নিয়ে আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে। বিপদ থেকে বাঁচানো যাবে অনেক মানুষকে। তো, আর কি চাই?
এদিকে, মেজো নানুকে টাইট দিতে গিয়ে যে দুষ্টুমিটা মেধা করতে চেয়েছিল, তা যে তাকে এতবড় সম্মান এনে দেবে তাতো সে কল্পনাও করতে পারেনি। যাই হোক, এতবড় একটা বিষ্ময় সাধন করার পর মেজো নানুর অত্যাচার যেন ম্লান হয়ে এল। সেগুলো এখন আর ভাবায় না মেধাকে। বরং কত দূর দূরান্ত থেকে কত শত নামী দামী মানুষ আসেন, বিজ্ঞানীরা আসেন মেধার সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন, এভাবেই তার সময় কেটে যায়।
এসব ঘটনার পর আরো একটি মজার ঘটনা ঘটল। এই বুড়ো বয়সে মেজো নানুও খুললেন এক ফেইসবুক একাউন্ট আর তাতে গৌরবের সাথে মেধার সঙ্গে সেলফি তুলে প্রোফাইল পিকচার দিলেন, যার ক্যাপশন ছিল:
“আমি ও আমার মেধাবী নাতি মেধা”।
১১টি মন্তব্য
ইঞ্জা
হা হা হা হা মেজু নানুও ফেইসবুকে একাউন্ট খুললেন, বেশ মজা পেয়েছি আপু, আমাদের মেধারা এইভাবেই বড় হোক সেই শুভকামনা রইল।
নীরা সাদীয়া
আপনার জন্যেও রইল শুভকামনা। শুভরাত্রি।
ইঞ্জা
শুভ দুপুর আপু
নীলাঞ্জনা নীলা
মেধা অবশেষে তার মেধা দেখালো।
কুটিল নানুর ফেসবুক আইডিটা কি? কিছু ধুনা দিয়ে আসতাম। 😀
খুবই ভালো লেগেছে মেধার গল্প। নতূন কি গল্প আসছে, তার অপেক্ষায় রইলাম।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ দিদি। তবে এখন আর আগের মত সময় সুযোগ মিলছে না । তাই নতুন গল্প একটু দেরি হতে পারে। শুভরাত্রি।
নীলাঞ্জনা নীলা
তবুও অপেক্ষায় রইলাম।
মৌনতা রিতু
সত্যি যদি এমন হতো! এসফ মেধারা হয়ে যেতো সবার চোখে একেকজন সেলিব্রিটি।
বাবা মায়ের চ
মৌনতা রিতু
সত্যি যদি এমন হতো! এসফ মেধারা হয়ে যেতো সবার চোখে একেকজন সেলিব্রিটি।
বাবা মায়ের চোখে এমন আনন্দের অশ্রু ঝরে পড়ত এমন সব মেধাদের জন্য। গল্পের শেষটা খুবই ভাল লেগেছে আমার।
ভাল লেখা অবশ্যই।শুভকামনা রইল। -{@
নীরা সাদীয়া
এমন হতেই পারে। যদি আমরা একটু মেধাদের পাশে দাঁড়াই, তাদের সময় দেই। ধন্যবাদ। শুভরাত।
জিসান শা ইকরাম
আপনার এই গল্পের সিরিজটি পড়া হয়নি,
সব পড়ে এরপর মন্তব্য করবো।
নিয়মিত লিখছেন, অন্যের লেখা পড়ছেন দেখে ভাল লাগছে খুব,
নতুন হিসেবে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি করছেন আপনি সোনেলায়, মিশে গিয়েছেন সবার সাথে,
আপনার উপস্থিতি এবং সাবলীলতা দেখে মনেই হয়না আপনি এখানের সর্বকনিষ্ঠ ব্লগার।
শুভেচ্ছা আপনাকে।
নীরা সাদীয়া
এভাবে উৎসাহ দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের সহযোগিতা না থাকলে এটা সম্ভব হত না। আমি সবার লেখাই পড়তে চাই। তবে সময় করে উঠতে পারিনা। শুভকামনা রইল।