ব্যাস্ত জীবনের হাজার কাজের ভীরে মন যখন একটু প্রশান্তির খুজে হারিয়ে যেতে চায় তখন আমরা দুর দুরান্তে হারিয়ে যেতে চাই, কেউ দেশে কেউ বিদেশে। আমি খুব ভ্রমনপ্রিয় মানুষ, জীবনের তাগিদ কিংবা মনের খোরাক আমাকে বার বার দেশ থেকে দেশান্তরে টেনে নিয়ে গেছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারীর ২০ তারিখ আমি প্রথম মালেয়শিয়া ভ্রমনে আসি। উদ্দেশ্য দেশ দেখা আর পাশা পাশি ব্যাবসায়িক কোন রাস্তাঘাট বের করা। তখন জানতাম না এই দেশ আমাদের দেশের মত ধান্দাবাজ লোকের আরেক অভয় অরাণ্য।
আমি সবে মাত্র ইমিগ্রেশন পার করে ট্রেন এর টিকিট কাউন্টার খুজতে বেড়িয়েছি কুয়ালা লামপুর যাবার জন্য ( কুয়ালা লামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট কুয়ালা লামপুর মেইন শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত ) কিছুক্ষন পর লক্ষ করলাম আমাকে এক জন কালো পোশাক পরা ভদ্রলোক কাছে ডাকছেন, আমি ভাবলাম ইমিগ্রেশন অফিসার কেননা মালায়শিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ কালো পোষাক পরে। আর আমাদের দেশের কিছু আসাধু দালাল চক্রের অবদানে আমাদের দেশী যেই কাউকে এই দেশের ইমিগ্রেশন অফিসাররা এয়ারপোর্টের যেখানে সেখানে আটক করে নানান প্রশ্ন করে থাকেন, তাই বাধ্য হয়ে আমি ঐ ভদ্রলোকের কথায় সায় দিলাম।
ওনি আমার কাছে এসে একটা পরিচয় পত্র দেখিয়ে বললেন যে তিনি ইমিগ্রেশন অফিসার, মালয়শিয়ার এই জাতিয় পরিচয় পত্র মালায় ভাষায় তাই কিছু বুঝার উপায় ছিল না, তিনি আমার পাসপোর্ট দেখতে চাইলেন, দেখালাম। তারপর জানতে চাইলেন কোথায় যাব, বললাম কুয়ালা লামপুর যাব, তখন তিনি আমাকে বললেন আমার হোটেল বুকিং আছে কিনা, বললাম আছে, তখন তিনি ঐ হোটেলে কল দিলেন এবং দেখলেন আমার অরিজিনালি বুকিং আছে, তখন জানতে চাইলেন আমার কাছে কত ইউ এস ডলার আছে, আমি সরল মনে বলে দিলাম ২,২০০ ইউ, এস ডলার আর ৩০০ মালায় রিংগিত আছে।
তারপর তিনি বললেন তিনি আমাকে কুয়ালা লামপুর নিয়ে যাবেন তার জন্য আমাকে ১০০ রিঙ্গিত দিতে হবে, আমি বললাম যে আমি একা যেতে পারব কিন্ত তিনি নাছুরবান্দা আমাকে দিয়ে আসবেন, তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে তার সঙ্গে রওনা দিলাম, তিনি আমাকে যথা সময়ে আমার হোটেলের সামনে নামিয়ে দিলেন। ঐ দিনের জন্য আমি বেঁচে গেছি কেননা আমার ড্রাইবার ভাল ছিলেন, বলা হয় নাই তিনি ইমিগ্রেশন অফিসার ছিলেন না, তিনি ছিলেন লিমোজিন কোম্পানির টেক্সি ড্রাইভার। পরে জানতে পারি এই সব ড্রাইভার এয়ারপোর্টে ফাঁদ পেতে বসে থাকে যারা মাঝ রাস্তায় আপনাকে ছিনতাই করে সব কিছু কেড়ে নিয়ে মাঝপথে ফেলে চলে যাবে। যাইহোক ঐ যাত্রায় আমি বেঁচে গেছি। তাই যেকোন বাংলাদেশী মালেয়শিয়া প্রথম আসবেন দয়া করে এয়ারপোর্টের টেক্সি এড়িয়ে যাবেন। আর দ্বিতীয়ত এড়িয়ে চলবেন পুলিশ, বিশেষত রাতের বেলায় মালেয়শিয়ান পুলিশরাও ফাঁদ পেতে বসে থাকে রিংগিত কামানোর কালো জাল বুনে। কেননা ওরা বেশিরভাগই পোশাকধারী ছিনতাইকারী, বাকে পেলে সব কাগজ পত্র থাকার পরও আপনার পকেট কাটতে চাইবে। তাই মালেয়শিয়া ভ্রমণে সতর্ক থাকুন সব সময়।
থাকার জন্য কুয়ালা লামপুর বুকিত বিনতাং এরিয়াতে বাজেট হোটেল থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল পাবেন, যেখান থেকে শহরের সব চেয়ে আকর্ষণীয় পেট্রনাস টুইন টাওয়ার মাত্র ১০ মিনিটের হন্টন দূরত্ব। কেনাকাটার জন্য প্যাভিলিয়ন শপিং মল বিখ্যাত, আর ইলেক্ট্রনিক্স পন্য কেনা কাটার জন্য ল’ইয়েত প্লাজা বিখ্যাত। কম দামে কেনা কাটার জন্য চলে যেতে পারেন চাইনা টাঊন পেতালিং স্ট্রিট, তবে দরদাম করবেন সাবধানে, কেননা এই মার্কেট অনেকটা আমাদের দেশের বঙ্গ বাজার টাইপের।
কুয়ালা লামপুরের কাছাকাছি আছে পোর্ট ডিকছন সমুদ্র সৈকত, পাহারে ঘেরা গেন্টিং হাইল্যান্ড, আর হাতে যদি সময় বেশি থাকে চলে যেতে পারেন লাংকাভি আইল্যান্ড, পারহাটিয়ান আইল্যান্ড, বাতুফিংগি পেনাং। মালেয়শিয়া খাবার খুব সস্তা, খুব সহজেই মিলবে বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেস্তোরা, তাছারা ইন্ডিয়ান রেস্তোরা পাবেন এখানে সেখানে খুব সহজে। ভাষা জটিলতায় খুব বেশি পরতে হবে না কেননা এইখানে কম বেশি সবাই ইংরেজি ব্যাবহার করে। শুধু একটু সাবধানে থাকবেন ইন্ডিয়ান তামিল টেক্সি ড্রাইভার থেকে আর মধ্যরাতের পুলিশ থেকে। আশা করি উপভোগ করবেন চির সবুজ মালেয়শিয়া।
২০টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
স্বাগতম সোনেলায়। প্রতারক মালয়েশিয়াতেও আছে!
বেশ কিছু তথ্য জানলাম। মালয়েশিয়া ভ্রমনে গেলে কাজে দেবে। ধন্যবাদ আপনাকে। আরো লেখুন দেশ ভ্রমনের কথা।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ ব্লগার সজীব। 🙂
মৌনতা রিতু
অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আসলে পুরো পৃথিবীটাই ভন্ড প্রতারকে ভরে গেছে। এই সব ট্যাক্সি ড্রাইভার সব দেশেই আছে।
ইকবাল কবীর
ঠিক বলছেন আপনি, তবে মালেয়শিয়াতে খুব বেশি প্রতারনা করে টেক্সি ড্রাইভাররা। তাছাড়া মালেয়শিয়ান পুলিশ ভদ্রবেশী ছিনতাইকারী।
লীলাবতী
ভ্রমন কাহিনী আমার ভাল লাগে খুব। দেশ ভ্রমনে না গিয়েই লেখা পড়ে জেনে যাই সবকিছু। মনে হয় ভ্রমন করছি 🙂 আপনি তো ভালো ভ্রমণ কাহিনী লেখেন। নিয়মিত লেখুন ভাইয়া। আমাদের সোনেলায় স্বাগতম আপনাকে -{@
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
লীলাবতী
আপনি সোনেলায় নতুন। নতুনরা সাধারনত অন্য লেখকদের লেখায় মন্তব্য করেন না। আপনি এর ব্যতিক্রম। আপনি যে অত্যন্ত সামাজিক তা প্রমান করেছেন। এটি দেখে ভালো লাগছে ভাইয়া। আমরা একে অন্যের লেখা পড়বো এটিই সৌজন্য।
ইকবাল কবীর
কেউ যদি কাউকে কিছু দিতে না জানে তাহলে কিছু পাওয়ার আশা করাও অন্যায়, আমি যদি অন্য লেখকদের লেখা নাই পরি তাহলে আমি আশা করতে পারি না অন্য লেখকরা আমার লিখা পরবে। সোনেলায় এসে ভাল লাগছে অনেক, ধন্যবাদ আবার ও আপনাকে।
লীলাবতী
একদম সঠিক কথা বলেছেন। সোনেলায় আপনার ভালো লাগবে। আমরা এখানে একটি পরিবারের মত ভাইয়া। থাকুন আমাদের মাঝে পরিবারের একজন হয়ে সুখ দুঃখের সাথী হয়ে।
ইকবাল কবীর
🙂 🙂 🙂 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
যাক, মালয়েশিয়া ভ্রমনের বিস্তারিত বিবরণ পড়ে জানাও হলো আর কিছু সতর্কতামুলক পরামর্শও পাওয়া গেলো। ধন্যবাদ সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য।
ইকবাল কবীর
আপনাকেও ধন্যবাদ মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম।
ভ্রমন কাহিনী অত্যন্ত গুছিয়ে লিখেছেন আপনি।
মালয়েশিয়া ভ্রমনের সুযোগ হয়েছে আমার, প্রতারনার কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে আমারো।
পুলিশ খুবই দুর্নিতিপরায়ন।
আরো লেখুন ভ্রমন কাহিনী।
শুভকামনা।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ ভাই।
খসড়া
ভ্রমন কাহিনী সবসময়ই জনপ্রিয়। আপনার লেখা সুন্দর প্রানোজ্জ্বল হয়েছে।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে।
দীপংকর চন্দ
অনেক গোছানো লেখা এবং সাবলীল।
লেখাটি সতর্ক করবে মালয়েশিয়া ভ্রমণে ইচ্ছুকদের।
আমার শুভকামনা অনিঃশেষ জানবেন।
অনেক ভালো থাকবেন। সবসময়।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
মালয়েশিয়া যাওয়া হবে কিনা জানিনা। তবে অনেক তথ্য পেলাম আপনার পোষ্টে। গেলে কাজে লাগবে।
আর প্রতারণা কোথায় নেই! আমাকে ট্যাক্সি দেয়া হয় এক্সিডেন্টের পর থেকে। বেশীরভাগ ড্রাইভার পাকিস্তানী, তারপর বাংলাদেশী, ভারতীয় খুবই কম। দুই নম্বরী বেশী করে পাকিস্তানীগুলো, ভাড়া না লিখেই কাগজ ধরিয়ে দেয় সিগনেচারের জন্য। আমিও দেই। প্রথম বলেছিলাম, তখন একজন বললেন শেষে আমাকে কেউ নিতে আসবে না। হুইলচেয়ার নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ হুইলচেয়ার ভ্যানগুলো চালায় পাকিস্তানীরা।
ইকবাল কবীর
পাকিস্থানী গুলা মালেয়শিয়াতে ও শয়তানের হাঁর। সুযোগ পেলেই মানুষের সাথে প্রতারনা করে। আমার শোরুম থেকে ৩৫০০ রিংগিত বাকি নিয়েছিল এক পাকি। ৬ মাস হয়ে গেছে পেমেন্ট দিয়ে যায় নাই, এখন ফোন দিলে ধরে না, এসএমএস দিলে রিপ্লে করে না। আর ইন্ডিয়ান তামিলরা প্রতারনার শীর্ষে। ঠিকই বলেছেন পৃথিবীর সব দেশেই প্রতারক চক্র থেকে কোথাও হত বেশী কোথাও হয়ত কিছু কম।