মমি আজ মহা খুশি তার একমাত্র নতুন অতিথির পাচ বছরে পা দিয়েছে।এই নতুন অতিথীটির জন্য মমিকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দীর্ঘ এগারোটি বছর।লাভ মেরিজের পর হতেই মমি দীর্ঘ ছয়টি বছর প্রবাসে কাটিয়েছে। এই ছয় বছরে দেশের মাটিতে পা রেখেছিল তিন বার।তিন বারে এক বারও তার আশা বংশধরের আওয়াজ পায়নি।ব্যাথা ভরা হৃদয়ে বার বার ফিরে এসেও ব্যর্থতার গ্লানি তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছ প্রতিনিয়ত।পাড়া প্রতিবেশী মনে হয় প্রিয়তমার নামের পূর্বে বন্ধা অপেয়া বিশেষণটি জুড়ে দিল বলে।আমাদের সমাজে বন্ধাত্ত্ব একটি অভিশাপ।সেই অভিশাপের বন্ধী দেয়াল ভেঙ্গে স্রষ্টা এগারটি বছর পর ঘরে দিল এক রত্ন…সেই রত্নের আবদার কাল বাদে পরশু ঈদঁ তার জন্য নতুন জামা আর সাইকেল চাই।সাফ কথা জানিয়ে দিল ছেলে তার, নতুবা ঈদেঁর আনন্দইটাই মাটি হবে।

ছেলের এমন বায়না শুনে মমি মনে মনে হাসে আর চিন্তায় চলে যান তার অতীতে… তার পরলোকগমন বাবার মুখ খানি আজ বড় বেশী মনে পড়ছে…..কবে যেন বাবার সাথে তার শেষ দেখা হয়েছিল…ওহে মনে পড়েছে…….জিয়া আন্তজার্তিক ইয়ারপোর্ট এ ইমিগ্রেসন পাছ করার সময় বাবার লম্বা ফর্সা দেহের মাথাটা সবার উপর দিয়েই দেখা যাচ্ছে মমি ভিতরে ঢুকছেন আর বাবার ডাগর বড় চোখেরঁ কোণে জমে থাকা সন্তান বিদায়ে কষ্টের লুনা জল গাল বেয়ে পড়ছে। এক সময় দেখা দেখির দৃশ্যের সমাপ্তি।সেই শেষ দেখা ছিল মমি তার বাবার সাথে,তারপর তিন মাস পর প্রবাসে মমি জানতে পারে তার শ্রদ্ধেয় পিতামহ আর নেই,সবাইকে পর করে চলে যায় না ফেরা দেশে।চোখঁ ভিজেঁ যায় পিতৃবিয়োগে।অভাগা সন্তান মমি তার প্রথম রোজগারের একটি টাকাও পিতার হাতে দিতে পারেনি এ ব্যর্থতার গ্নানি মমির সাগর সমান চোখেরঁ জলে পূরণ হবার নয়।

মধ্যবিত্ত পরিবাবের সন্তান মমি।নারায়ণগঞ্জ আদমজী পৃথিবীর বৃহৎ পাটকল যা বর্তমানে নেই সেখানে মমির বাবা পাকিস্হান আমলে “৭১ এর কয়েক বছর পূর্বে ঘোষ লেন-দেনের অপরাগতায় পুলিশের চাকুরী ছেড়ে তখন এই পাট কলে বদলি হিসাবে মাসিক চার’শ টাকা হিসাবে তাতঁ সেকশনে চাকুরী জীবন শুরু করেন।তারপর স্বাধীনত্তোর বাংলাদেশ জম্ম নেয়ার পর নিজ কর্মগুণে বদলি চাকুরী পারমেন্ট করেন।১৯৮০ সালে সে একটি লাইনের লাইন সর্দার হিসাবে পদন্নতি পান কিন্তু বেতনের পরিমান পরিবারের চাহিদা তুলনায় তেমন বেশী নয়।সংসারে সাত সদশ্য সংখ্যাগুলোর সব চাহিদা পূরণ করতে মাঝে মধ্যে ঋণে পড়ে যান।আজ বাদে কাল ঈঁদুল আজহা।মমির বয়স আর কত সাত আট বছর হবে হয়তো কিন্তু বয়সের আন্দাজে মেজাজটা বেশ গরম কিছু হলেই ঘরের জিনিসপত্র ভাঙ্গা শুরু করে দেয়।বেচারা মমির পিতার অবস্হা বেগতিক মমি একা হলে কথা ছিল না পাচ সন্তান কাকে রেখে কাকে ঈদের নতুন জামা কিনে দেবে তার পর আবার সাইকেল।ঈদের ঠিক আগের রাতে যেটাকে আমরা সাধারনতঃ চাদঁ রাত বলি,সেই রাতে কয়েকটি প্যাকেট নিয়ে মমির বাবা ঘরে ঢুকেন।ছেলে মেয়েরা সবাই অপেক্ষায় ছিল বাবা কখন ঈদের নতুন জামা নিয়ে ঘরে ফিরবেন। মমির খেলার সঙ্গীদের অনেকেই ঈদেরঁ বহু আগেই ঈদের জামা ক্রয় করে ফেলেছেন তা দেখে মমির সীমহীন আফসোস।অবশেষে বাবার আগমনে মমি স্বস্তি পেল।বাবা একে একে সবগুলো জামা নাম ধরে ডাক দিয়ে যাচ্ছেন দামের বিচারে যাই হোক কিংবা ফুটপাতের ক্রয়কৃত হউক তবুও ছেলে মেয়েরা জামা পেয়ে মহা খুশি এতেই পিতার স্বার্থকতা।মমি তার প্যান্ট এবং সার্ট ততক্ষনাৎ পরিধান করে বসতে গিয়ে প্যান্টের পায়ু নির্গত বরাবর সেলাই ছিড়ে যায়।সে কি কান্না মমির একে বারে সব খুলে ছিড়ে ছুড়ে জামা ফেলে দেয় মাটিতে বাবা শত চেষ্টাতেও বুঝাতে পারছেন না যে কাল ঈদের দিনটা চলে গেলে আরেকটি নতুন জামা কিনে দিবেন।মমির তাতেও কান্না থামছে না।অবশেষে বাধ্য হয়ে বাবা আবার মার্কেটে গেলেন কিন্তু অর্থের সীমাবদ্ধতা থাকায় ক্রয় করতে না পেরে চলে এলেন এলাকার স্হানীর এক টেইলারের কাছে।টেইলারকে অনুরোধ করে একটি বাচ্চাদের প্যানট বাকীতে সংগ্রহ করে নিয়ে যান।ততক্ষনে মমির নয়নে তন্দ্রাদেবী ভর করে স্বপ্নের জগতে নিয়ে যায় মমিকে।

আগামী কাল ঈদুল আজহা।ঈদের জন্য মমি কেনা কাটা করতে মা বাবার সাথে মার্কেটে গেল।লাল নীল ঝলমলে বাতিতে দোকাগুলো সাজাঁনো লোকে লোকারণ্য কোথাও তিল ধরার ঠাই নেই শীতের দিন হওয়া সত্ত্বেও মানুষের ভিড়ে গরমের বাস্প লক্ষনীয়।মমি মায়ের হাত ছেড়ে হঠাৎ হঠাৎ এক বার এই দোকানে আর এক বার ঐ দোকানে অবুঝের চঞ্চলতায় ছুটাছুটি করছে।মায়ের চোখঁ রাঙ্গানিতেও থামেনি তার দুষ্টুমি।এক বার মমি মায়ের হাত ধরা অবস্হায় লক্ষ্য করল দুরের কে যেন তাকে অনেকগুলো লাল নীল জামা বের করে তাকে ডাকছে……সেও আস্ত করে মায়ের হাতটি ছেড়ে চলে গেল ইশারা দেয়া লোকটির কাছে।লোকটি সাত রং এর সাতটি জামা মমির হাতে দিল।

-এইগুলো কার জন্য?

-এইগুলা সব তোমার জন্য

-এত্তগুলো! ঠিক আছে,একটা ছোট ভাইয়াকে একটা বড় আপুকে একটা মেঝো আপুকে,একটা আব্বুকে একটা আম্মুকে দিব আর এগুলো সব আমার তাই না আংকেল?

-হ্যা…

পিছনে ফিরে মমি আম্মু আব্বুকে দেখতে না পেয়ে কান্না জুড়ে দেয়।

আব্বুর ডাকে হঠাৎ চমকে উঠে মমি।বাস্তবে আব্বুকে পেয়ে কান্নায় জড়িয়ে ধরে।

-তোমরা কই গেছিলা আমারে একা ফেলে?

মমির আব্বু আঃ কাদির বুঝতে পেরেছিলেন ছেলে তার স্বপ্ন দেখছিল।

-কই?কোথাও যাইনিতো….এইতো এখানেই আমরা।

-আমার নতুন জামা কই?

-এই নাও তোমার নতুন প্যান্ট।

প্যান্টটি হাতে নিয়ে মমি নাড়া চাড়া কি যেন দেখছে তারপর…

-এটা নাতো,আরো অনেক সুন্দর সুন্দর,ভাইয়া আপুকেও দিয়েছি খুব সু্ন্দর জামা আব্বু,সেই জামা পড়েই ঈদঁ করব।

কাদির সাহেব পড়লেন নতুন জামেলায় ছেলেকে কি করে বুঝাবে যে সে স্বপ্ন দেখছিল……

চলবে

 

 

 

৪৭৩জন ৪৭৩জন
0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ