মধ্যদিনের খসড়া

নাজমুস সাকিব রহমান ১৯ মে ২০১৭, শুক্রবার, ০২:০২:২৪অপরাহ্ন বুক রিভিউ ৪ মন্তব্য

গতরাতে ঝড় হচ্ছে দেখে জানালা খুলে দিয়েছি। বৃষ্টির ঝাপটা আসছে ঘরের ভেতর। তার ওপর লোডশেডিং। চমৎকার আবহাওয়া। ভূতের ছবি দেখার জন্য উপযুক্ত সময়। সমস্যা হল, ল্যাপিতে চার্জ নেই। ছবি দেখা অসম্ভব ব্যাপার। লোডশেডিং মানে ইন্টারনেটও নেই। অথচ আমার বর্তমান চরিত্রের পুরোটাই ‘অনলাইন ওয়াচিং।’
আমি সেলফোনের দিকে মনোযোগ দিলাম। ওটারও একই অবস্থা। মাত্র ৯ শতাংশ চার্জ নিয়ে সে নেভার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কী আর করা! ওটুকুই শেষ ভরসা। আমি PDF (Portable Document format) খুললাম। গত দু’মাসে প্রচুর ভূতের বই যোগাড় করা হয়েছে।
কয়েকদিন আগে মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় এর লেখা দুটো বাজে ভূতের গল্প পড়া হয়েছিল। ওই বাজে অনুভূতি কাটিয়েছি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী’র (বেঁচে থাকলে উনাকে মামা ডাকতাম) গুপি গায়েন বাঘা বায়েন পড়ে।

দেবী, হুমায়ূন আহমেদ।
দেবী, হুমায়ূন আহমেদ।

হুমায়ূন আহমেদ এর দেবী কী পড়া যায়? শুনেছি, জয়া আহসান এই উপন্যাসটিকে সিনেমার আদল দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে সিনেমা দেখার আগে বইটি আরেকবার পড়ে নেয়া উচিত। অর্থাৎ হালকা তেলে ভেঁজে ফেলা দরকার। এই ভেবেই শুরু করলাম:

‘‘মাঝরাতের দিকে রানুর ঘুম ভেঙে গেল।

তার মনে হল ছাদে কে যেন হাঁটছে। সাধারণ মানুষের হাঁটা নয়, পা টেনে-টেনে হাঁটা। সে ভয়ার্ত গলায় ডাকল, ‘এই, এই।’ আনিসের ঘুম ভাঙল না। বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। অল্প অল্প বাতাস। বাতাসের জামগাছের পাতায় অদ্ভুত এক রকমের শব্দ উঠছে। রানু আবার ডাকল, ‘এই, একটু ওঠ না। এই।’’

প্রথমবারের মত মনে হল, যে কোনও ভূতের গল্পের জন্য এটা আদর্শ শুরু। (ভূতের গল্পের ওস্তাদ স্টিফেন কিং– এর লেখাও তাই বলে।) বাইরে বজ্রপাত হচ্ছে। তার আলোয় মিসির আলীকে দেখে অবাক হলাম। অবাক হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করি:
উইলিয়াম পিটার ব্ল্যাটির একটা উপন্যাসের নাম ‘দ্য এক্সরসিস্ট।’ প্রকাশকাল ১৯৭১। এই উপন্যাসে একজন পাদ্রি (সম্ভবত ফাদার মেরিন। নামটা ভুলও হতে পারে, যদিও ভুল হওয়ার কথা না।) আছেন, যিনি খানিকটা নাস্তিকঘেঁষা হলেও মানুষের প্রতি মমতাবান। আমি এই চরিত্রের সঙ্গে মিসির আলীর অনেকখানি মিল খুঁজে পেলাম। ভুল না বললেও আগ্রহীরা এটা মিলিয়ে দেখতে পারেন। (হুমায়ূন আহমেদদ্য এক্সরসিস্ট অনুবাদ করেছিলেন। ওটা ঠিক অনুবাদ বলা যায় না, কাঠামো ঠিক রেখে নিজের মত করে লেখা। মূল উপন্যাসে প্রচুর অশ্লীলতা আছে। তিনি সেগুলো বর্জন করেছেন।)
দেবী পড়া শেষ হয়েছে।
নিঃসন্দেহে চমৎকার উপন্যাস। পড়ার সময় গাঁ ছমছম করে উঠে। আমি এক প্রকার নিশ্চিত হলাম, জয়া আহসান মোটামুটি ব্যর্থ হতে যাচ্ছেন (গভীর জলে পড়ার অনুভূতি হবে)। চঞ্চল চৌধুরী মিসির আলীকে গ্রাম্য বানিয়ে দেবেন—এরকম একটা ভয়ও আগে থেকে আছে।
মসজিদে ফজরের আজান শুরু হয়েছে।
এমন সময় ক্লাস সেভেন পড়ুয়া ছোটভাই এসে বলল, ‘ভাইয়া, ফজরের নামাজটা তোমার রুমে পড়ি? একা একা ভয় লাগছে।’
আমি জানালার বাইরে তাকালাম।
আমাদের পাশের বাড়িটা টিনের চালের। সেই চালের অর্ধেকটা জুড়ে আছে একটা কাঁঠাল গাছের ডাল। প্রচুর বাতাসে সে বাড়ির চাল ছুঁয়ে এদিক সেদিক যাচ্ছে। এই গাছটার বোধ হয় কোনও সমস্যা আছে। এতোবড় গাছ, কিন্তু কাঁঠাল ধরেছে মাত্র চারটা। এরকম কেন হবে?
ইদানীং আমার চোখে শুধু কাঁঠাল পড়ছে।
গতকাল মোহাম্মদ আলী রোডে এগারোটা কাঁঠাল দেখলাম। আম্মাকে বললাম, শুটকি দিয়ে কাঁঠাল বিচির ভর্তা খেতে ইচ্ছে করছে। তিনি পাশের বাড়ির চারটা কাঁঠালের দিকে তাকিয়ে বললেন, এগুলো কেনা চাইব নাকি?
আমি জবাব দিলাম না।
কাঁঠাল গাছের পাতার মধ্যে এক ধরণের কড়া গন্ধ আছে। আমি সেই গন্ধ পেতে লাগলাম। এরকম তো হওয়ার কথা না।

পাদটীকা:
জানালার পাশে রবি ঠাকুর এর আত্মজীবনী জীবনস্মৃতি রাখা ছিল। দুপুরে ঘুম ভাঙল বইটার কাশি শুনে। একটু পর বুঝতে পারলাম, আমার যত্নহীনতার কারণে কবিগুরুর আত্মজীবনীর ঠাণ্ডা লেগে গেছে। একবার ভাবলাম, বইটার জ্বর মেপে দেখব। পরক্ষণেই মনে হল, তার দরকার নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে রবি ঠাকুরের ভাল ধারণা ছিল। একবার বনফুল (বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়, পেশায় ডাক্তার ছিলেন।) সামান্য অসুস্থ অবস্থায় তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। তাকে দেখে রবি ঠাকুর বললেন, …।

না, আজ এটুকুই থাক। এরচেয়ে বেশি বলা ঠিক হবে না।

১৮.০৫.২০১৭

৭৫৭জন ৭৫৭জন
0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ