ভালোবাসার গল্প

সুরাইয়া নার্গিস ১৯ মার্চ ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৩:২৯:৫৩অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৭ মন্তব্য

পরিবারের মিষ্টি মেয়ে, কারো মিষ্টি ননদী,কারো মিষ্টি আন্টি,কারো মিষ্টি বোন,কারো মিষ্টি বন্ধু। সবকিছুতেই মিষ্টি নামটা জড়িয়ে থাকতো কারন সে যে সত্যিই মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার,মিষ্টি চেহাড়া অধিকারী হুম আমি জামান সাহেবের মেয়ের কথাই বলছি,এত ধনী পরিবারের মেয়ে তবু মনে কোন অহৎকার নেই খুব তাড়াতাড়ি সবার সাথে মিশে যায় আমার জীবনে এমন ভালো মেয়ে দ্বিতীয়টা আর দেখি নাই বললেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক তাহের স্যার। কথা শেষ না হতেই মিলন স্যার যোগ দিলেন আপনি ঠিকই বলছেন তাহের স্যার মেয়েটাকে যতই দেখি অবাক হই ইউ.এন.স্যারের মেয়ে তবু বাবার পদবী বা নিজের শিক্ষিত পরিবার, বংশ মর্যাদা নিয়ে কোন গৌরব নেই খুব সাধারন জীবন যাপন করে। কথা গুলো শুনে মোরসালিনের কান গরম হয়ে যাচ্ছিল এতক্ষন ধরে একজনের প্রশংসায় সবাই পঞ্চমূখ অথচ সেই মহারাণীর কোন খোঁজ নেই আগে আসুক দেখি সে কত রুপসী আর অমায়িক ব্যবহার তারপর বিশ্বাস করবো মনে মনে ভাবলো সিমন। মিনি মেম বললেন স্যার নীলা মেম এর বাসায় আমাকে সপ্তাহে একদিন খেতে হয় না হলে মেম এর মা রাগ করেন ওনার মা অনেক ভালো মানুষ খুব সম্ভান্ত পরিবারের মেয়ে,তাহের স্যার বললেন আমাদের ইউ.এন.ও জামান স্যার কম কিসে ওনিও অনেক ভালো মানুষ খুব সৎ যেখানে ওনার একটা সাইন পেতে কয়েক লক্ষ টাকার প্রয়োজন সেখানে স্যার সততা যাচাই করে ভালো মানুষ হলেই সাইন করে দেন, নতুন নতুন অনেক প্রাথমিক স্কুল হচ্ছে, নতুন নতুন বেকারদের কর্মসংস্থান হচ্ছে কমিটির লোকেরা নিয়োগ দিলেও তিনি তা খেয়াল রাখেন কোন ভাবে টাকার লেনদেন হচ্ছে কি না সব স্যারের অবদান। ওনি এতটাই সৎ যে স্কুল পরিদর্শনে গেলে নিজের টাকায় নাস্তা কিনে আনেন তারপর শিক্ষকদের সাথে নিয়ে খেতে বসেন ওনার বক্তব্য হলো শিক্ষকরা যা বেতন পায় তাতে নিজেদের সংসার চালাতে হিমশিম খায় সেখানে অফিসারদের নাস্তার খরচ বাড়তি টাকা নষ্ট হয় তাই তার আদেশ স্কুল পরিদর্শনে কোন অফিসার নাস্তা খাবেন না।
মন থেকে স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা আসে, স্যালুট এমন মানুষকে যাই হোক
আরো বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সেই মানুষটাই নেই যে সব গল্পের কেন্দ্রবিন্দু, হঠাৎ মিষ্টি একটা আওয়াজ আসলো “আসতে পারি স্যার সবাই জ্বি ম্যাডাম আসুন, আসসালামু আলাইকুম।
ওয়া আলাইকুম আসসালাম।।সবাই কেমন আছেন.?
বলতে বলতে মিষ্টি হাসিতে চেয়ার টেনে বসলেন নিলা।
মিলন স্যার বললেন নীলা ম্যাডান কোন সমস্যা একটু দেরি হলো যে আমরা সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করতেছি, স্যরি স্যার স্কুলে আসার পথে রাস্তায় একজন ভিক্ষুক অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলো আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে তারপর আসলাম।সিমন এতক্ষন সবার কথায় বিরক্ত হচ্ছিল কিন্তু দরজায় নীলাকে দেখার পর থেকে তার ভিতরে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা সত্যি অনেক কিউট প্রথম দেখাকেই ভালো লাগা তৈরি হলো দেখা যাক পরবর্তীতে কি হয়।
সিমন নীলার দিক থেকে চোখ নামিয়ে নিল কিন্তু মনের ভিতরে নীলার আনাগোনা সে বুঝতে পারছিলো। মিনি ম্যাডাম সিয়ামের মুখ দেখে কিছুটা অনুমান করার চেষ্টা করছিলেন এর মধ্যেই তাহের স্যার স্কুলের প্রধান শিক্ষিক তিনি সবার উদ্দেশ্য বললেন ” আপনারা সবাই জানেন স্কুলে একজন নতুন শিক্ষকের আগমন হয়েছে ওনি আমাদের পাশের স্কুল থেকে বদলি হয়ে আসছেন আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওনাকে চিনি ওনার বাবাও একজন স্কুল শিক্ষিক ছিলেন বর্তমানে অবসরে আছেন।
যাই হোক ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে তাই বেশি কথা বলতে পারবো না আস্তে আস্তে সবাই নিজে নিজেই পরিচিত হয়ে যাবেন।
তারপরও আমি সবাইকে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছি,,ওনি সিমন স্যার আজ থেকে আমাদের পরিবারের মেম্বার, সবাই নিজের পরিচয় দেন। মিলন স্যার বললেন, আমি এমদাদুল হক মিলন সহকারী শিক্ষন রুপগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সিমন হেসে বললো স্যার আপনি দেখি গুনী লেখক পরিচিত হয়ে খুশি হলাম বলে হাত মিলালেন।মিলন স্যার না স্যার আমাকে সারাদিনমিলন স পেটালেও দু-লাইন লিখতে পারবো না সবাই হাসতে শুরু।
সমস্যা নেই নীলা ম্যাডাম খুব ভালো লেখে,আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন তাহের স্যার সাথে যোগ করলেন আমিও ভালো লিখি কিন্তু প্রশংসা করার মানুষের অভাবে প্রমান করতে পারলাম না হা হা হা।
আচ্ছা স্যার আমি ভালো শ্রবন কারী মাঝে মাঝে আপনার লেখা আমাকে পড়ে শুনাবেন।
স্যার আমি মিনি ম্যাডাম সহকারী শিক্ষিকা।
আমি তুহিন সহকারী শিক্ষক, রুপগঞ্জ।
মহারাণী আপনার পরিচয় না দিলেও চলবে এতক্ষনে সব মুখস্থ হয়ে গেছে আর সেই সাথে আমার হৃদয়ের ভাড়ীটা আপনাকে দিবার জন্য পাগল হয়ে আছি যদি আপনি আসেন মনে মনে বললো সিমন।
আমি নীলা সহকারী শিক্ষিকা।
একে একে পরিচয় পর্ব শেষ প্রধান শিক্ষক তাহের স্যার সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ক্লাসে যেতে বললেন এবং সিমন স্যারকে নিয়ে ক্লাস টু তে ঢুকলেন ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে পরিচয় দিতে।
সিমন ক্লাস নিচ্ছে মনে মনে ভাবলো নীলা মেয়েটা সম্পর্কে আরেকটু ভালো ভাবে জানা দরকার সকল ছাত্র/ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বললো আচ্ছা তোমাদের সবচেয়ে কোন স্যার ম্যাডামকে বেশি ভালো লাগে,তোমাদের বেশি ভালোবাসেন কে..?
সবাই এক বাক্যে নীলার নাম বললো।
সিমন অবাক হলেও মেনে নিল,সত্যি নীলা অনেক ভালো একটা মেয়ে সেদিনের মতো স্কুল শেষ করে সিমন বাসায় ফিরে কিন্তু একটা মুহূত্বের জন্য মন থেকে নিলাকে সরাতে পারছে না।
মা চা দিয়ে গেছেন নিলাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে চা ঠান্ডা হয়ে গেল কিন্তু সিমনের মন শান্ত হচ্ছে না হঠাৎ মোবাইলের রিং বাজলো রিসিভ করতেই একটা মেয়ে কন্ঠ “আসসালামু আলাইকুম।আপনি কি সিমন?জ্বী আমি সিমন।
আপনি কে বলছেন?
আমি নীলা।
মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি সিমন বললো জী ম্যাডাম বলুন কেন ফোন দিলেন.?
স্কুলে দেরি হওয়ায় তেমন কথা বলতে পারি নাই কাল আমার জন্মদিন তেমন কোন আয়োজন নেই পরিবারের লোক জন ছাড়া।
আসলে স্কুলটা আমার পরিবারের মতো তাই সেভাবে কাউকে বলা হয়নি কাল আমার জন্মদিন সেটা সবাই জানে তাই নিজ দ্বায়ীত্বে চলে আসবে আপনি নতুন তাই জানালাম পরবর্তীতে নিজ দ্বায়ীত্বে চলে আসবেন হি হি হি হি।
সুন্দরী রমনীর যে হাসিও সুন্দর হয় সেটা সিমন আজ বুঝলো নীলার হাসিটা অনেক মিষ্টি। আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৪ টায় তাহের স্যার আপনাকে কল দিবেন স্যারের সাথে আমার কথা হয়েছে প্লীজ আসবেন বলেই লাইনটা কেটে দিল।
সিমন ভাবছে কি উপহার দেওয়া যায়,আচ্ছা নীলা কাল কি ড্রেস পড়বে জানলে সিমন সেই ড্রেসের সাথে ম্যাচিং সার্ট পড়তো কারন সিমন খুব সৌখিন মানুষ নতুন নতুন ড্রেস পড়তে ভালোবাসে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।
দুপুর থেকে নীলার বাসায় চলছে বাসা সাজানোর কাজ জন্মদিনের তেমন কোন আয়োজন নেই তবু সবাই নিজ মনের আনন্দ একে অন্যের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য আসতে শুরু করছে নীলার বন্ধু বান্ধব,ছোট বোন মিমের বন্ধু,আশে পাশের বাসার ছোট ভাই বোনদের চিৎকার, চেঁচামেছিতের মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি খুব উৎসবমূখর একটা পরিবেশ জামান সাহেবের তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে নীলা মেজ তবে ভালোবাসাটা নীলার উপর সবার বেশি।
মেয়ের জন্মদিন বলে জান্নাত মানে নীলার মা তার মেয়ের সব প্রিয় খাবার রান্না করছেন, নীলার বড় বোন তার স্বামী,সন্তান নিয়ে হাজির মোটামুটি কাছের সব আত্নীয়স্বজন আসছে ছোট কাট বিয়ে বাড়ি বললেন ভুল হবে না।
তুহিন স্যার,তাহের স্যার,মিনি ম্যাডাম,মিলন স্যার সবাই আসছে নীলার চোখ কাউকে খোঁজছে যার জন্য তার সব সাজগোজ কিন্তু সে নেই দেখে নীলার মনটা খারাপ হয়ে গেল।মিনি ম্যাডাম একটু রহস্যের গন্ধ পেলেন তিনি হাসি দিয়ে বললেন নীলা ম্যাডাম সিমন স্যার রাস্তায় জ্যামে আটকা পড়ছেন কিছুক্ষনের মধ্যেই জয়েন্ট করবেন আমাদের সাথে আপনি কোন টেনশন করবেন না 😀
সবার হাসি শুরু নীলা লজ্জায় মুখ আড়াল করে ডাকলেন বড় আপ্পি একটু এদিকে আস।
মিলন স্যার আবার তাবাসার সাথে বেশ পরিচিত তাবাসাও শিক্ষিকা স্কুলের ট্রেনিং পরিচয় তাঁরা দুজনেই সাথে তুহিন স্যার যোগ দিলেন।
তাহের স্যার বললেন সিমন স্যার বাসা চিনতে কোন সমস্যা হয়নি..?নাহ্ স্যার কোন সমস্যা হয়নি।
নীলার বাবা এগিয়ে আসলেন সবার সাথে কথা বললেন নীলা দেখলো সিমন ও নীল সার্ট পড়ে আসছে অপূর্ব সুন্দর লাগছে হ্যান্ডসাম গায়ের রং ফর্সা নীলে যেন আরো সুন্দর লাগছে নীলার মন বেশ আনন্দ লাগছে কারণ মনে মনে সেও সিমনকে পছন্দ করে ফেলছে।
মিনি ম্যাডাম সহ সবাই মনে মনে অবাক হচ্ছে আচ্ছা সিমন আর নীলা কি পূর্ব পরিচিত না হলে দুজনের সাজ পোশাক এত মিল কেন.? জন্মদিনের আকর্ষন নীলা আর সিমন কারণ নীলাও আজ মায়ের পুরনো নীল শাড়িটা পড়েছে মাঝে মাঝেই পড়ে কারণ নীলার বাবা বলেন তার রাজকন্যাকে নীল শাড়িতে দারুন লাগে নীলারও প্রিয় রং নীল।
সিমনও ব্যাপারটা ভাবলো নীলা জানলো কিভাবে আমার নীল রং প্রিয় সেও নীল শাড়ি পড়লো, নীলা এমনি সুন্দর তারপর নীল শাড়িতে নীল পরী মনে হচ্ছে সিমন নীলার চোখে একবার চোখ পড়তেই নীলা চোখ সরিয়ে নিল তাদের মাঝে তেমন কোন কথা হয়নি।
তাহের স্যার জামান সাহেবের সাথে গল্প আর আড্ডা ভালোই চলছে নীলার মা ডাকলেন সবাই চলে আস কেক রেডি কারন কেকটা নীলার মা নিজের হাতে তৈরি করছেন মেয়ের জন্মদিনে।
সবাই মিলে কেক কাটা হলো তারপর রাতের খাবার খেয়ে সবাই বিদায় নিল।মিনি ম্যাডাম নীলাকে ইশারা করে বললেন ম্যাডাম ব্যাপার কি নীলে নীল সাজ জানতে পারি.?নীলা হেসে বললো আরে নাহ্ মেম তেমন কিছু না।
নীলা পরদিন স্কুলে যায় সিমন নীলাকে কিছু বলতে চায় কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে বলা হয় না, নীলা দেখতে বেশ রাগি সিমনের সাহস হয়না তবু ভালোবাসে,ভালোবাসি বলতে চায়। বলতে চায় নীলা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই,সারাজীবনের জন্য তোমার সুখে,দুঃখে পাশে থাকতে চাই তোমার মুখের হাসির কারন হতে চাই কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে.?
কারো সাহায্য লাগবে হঠাৎ মনে আসে মিনি মেম এর কথা তার সাথে নীলার খুব ভাব তাকে ব্যাপারটা জানাতে হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ কয়েকদিনের মধ্যেই মিনি মেম এর সাথে সিমনের খুব ভাব জমে ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় যেকোন বিষয় শেয়ার করে মেমও ভালো সমাধান দেয়।
এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই সবাই খুব আপন হয়ে যায় সিমন আর নীলা সবার বয়সে ছোট তাহের স্যার,মিলন স্যার বয়সে সবার বড় হলেও চিরসবুজ মানুষ দুজন মানুষ বয়সকে পিচনে পেলে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলেন খুব ফ্রেন্ডলি।
তুহিন স্যার মিনি মেম সম বয়সি তারপরও সবার সাথে সবার আন্তরিকতার শেষ নেই এক সুতোই গাঁথা অনেক গুলো প্রাণ একটা সুন্দর পরিবার এখানে এসে সিমন খুব খুশি বাবা,ভাই,বোনের মতো সম্পর্কের মানুষ পেয়ে। দেখতে দেখতে ৬ মাস চলে গেল সিমন যে নীলাকে চোখে হারাত আজকাল তাকে দেখলেই সিমনের বিরক্ত লাগে, গাঁ জ্বালা-পুড়া করে তারপরও এক স্কুলে থাকতে হবে বিধায় মুখটা দেখতে হয় না হলে মুখ দেখাও বন্ধ রাখতো।
নীলা বুঝতে পারে না তার অপরাধ কি.!কেনই বা সিমন স্যার এত বিরক্ত তারপরও নীলা যতটা পারে ভালো ব্যবহার করে কষ্ট পেলে প্রকাশ করে না ইদানিং নীলার মনটা বেশ খারাপ স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিবে এই সময় সিমনের খারাপ আচরন গুলো তাকে কষ্ট দিত তবুও কিছু বলে না তাহের স্যার,মিলন স্যার নীলাকে বুঝায় স্কুলের চাকরিটা না ছাড়াতে কারণ আজকের বাজারে সরকারী চাকরি সোনার হরিণ সহজে পাওয়া যায় না কিন্তু নীলা যা বলে তাই বাবা জামান সাহেবও মেয়ের পক্ষে ভালো না লাগলে চাকরিটা ছেড়ে দাও।
নীলার বাবা ইউ.এন.ও তিনি জানেন কি ভাবে কোথায় যোগাযোগ করতে হবে সকল কাগজ পত্র রেডি করে শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। হঠাৎ করেই কয়েকদিনের মধ্যে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেল নীলা একা থাকতে শুরু করলো
পরদিন স্কুলে আসলো সিমন বললো নীলা মেম আপনি আমার সাথে কম কথা বলবেন, পারলে আমার সামনে কম আসবেন।
স্যার জানতেন না যে নীলা স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে ওই দিনটাই নীলার স্কুলের শেষ দিন।
নীলা সিমন স্যারের পাশে দাঁড়িয়ে শুধু বললো স্যার আমি চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন, আমার জন্য দোয়া করবেন।
সিমন স্যার এর মধ্যেই জেনে গেছেন আলিফ চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে আর কোনদিন কথা বলবে না,সামনে আসবে না।
চলে আসার সময় সবাই কাঁদছে নীলাও কাঁদছে…
সিমনের বুকটা ফেটে যাচ্ছে অজানা কষ্টে কিন্তু নীলাকে কিছু বলতে পারছে না তবু বললো ম্যাডাম আমাকে ক্ষমা করবেন প্লীজ।
নীলা স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরে প্রথম প্রথম খারাপ লাগে স্কুলের স্যার,মেম মাঝে মাঝে বাসায় আসে গল্প করে নীলার ভালোে লাগে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়।
নীলা তার পরিবারকে সময় দেয় সবকিছু ভালোই চলছে, কয়েক মাস পর সিমন স্যার তাঁর বিয়ের কার্ড নিয়ে নীলাদের বাসায় আসলেন,ম্যাডাম আপনাকে আমার বিয়েতে যেতেই হবে কারণ আপনি নিজ হাতে আমার বউকে সাজিয়ে দিবেন।
নীলা কোন পার্লারে কাজ শেখে নাই তারপরও পরিচিত প্রায় সবার বিয়েতে কনে সাজানোর কাজটা নীলা খুশি মনেই করেন নীলা হ্যাঁ বলেই সিমনকে বিদায় দিল।
মিনি ম্যাডাম ফোন দিয়ে জানালেন সিমন স্যারের বিয়ে গায়ে হলুদের দিন নীলা গেল হালকা সাদা শাড়ি পড়ে স্কুলের সবার সাথে খুব সুন্দর লাগছিলো নীলাকে।সিমনের বাড়িতে ঢুকেই নীলা বুঝতে পারলো পুরনো জমিদার বাড়ি কয়েক গ্রামের মধ্যে সিমনরা ধনী সম্মানীয় ব্যক্তি সিমনের বাবা আসলেন সবাই সালাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।
ঘরের সব জায়গায় পুরনো আসবাব পত্র, জানালার পর্দা সবকিছুতেই সৌখিক মানুষ বুঝতে হবে বাড়ির কর্তী মানে সিমনের মা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন বাড়িটা দেখতে চোখ মন দুটোই ভরে যাবে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই নতুন জামাই মানে সিমনের আগমন ঘটলো সাদা পাঞ্জাবী পরে সিমন সামনে আসতেই নীলার মনের পুরনো ক্ষতটা আবার আঘাত পড়লো সে নিবর চেয়ে আছে সিমনও সেইম অবস্থা সাদা শাড়িতে নীলা দারুন লাগছে এবার নীল পরী না সাদাপরী মনের আকাশে আবার বৃষ্টি নামালো। অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা আবেগে আপ্লুত নীলা মনের অজান্তে চোখের কোণ থেকে দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো এটা সিমনের জন্য নীলা বুঝতে পারলো কেউ দেখার আগে মুছে ফেলল কিন্তু নীলার চোখের পানি সিমন ঠিকই বুঝতে পারলো।কথা প্রসঙ্গে সিমন নীলাকে বললো আপনি একা কেন, আপনার স্বামী আসেন নাই.?
সবাই হাসতে শুরু করলো তুহিন স্যারের হাসি যেন থামছিলো না, তাহের স্যার হেসে বললেন মিলন কান্ড দেখ নীলা বিয়েই করে নাই আর সিমন স্যার নীলার জামাই খোঁজতেছে হা হা হা হা। মিনি ম্যাডাম হাসতে পারছিলেন না কিছুটা অবাক হয়েও সবার সাথে মুচকি হাসলেন। নীলা হাসতে বললো স্যার আমি তাকে কোথায় পাব..?
সিমন স্যার কেন..?
নীলা আমি এখনো বিয়ে করি নাই তো…!!
সিমন জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যের আজ মুখামুখি দাঁড়িয়ে যে সত্যিটা তার জীবনের সব গুলো স্বপ্নকে মেরে ফেলেছে,তাকে কষ্ট দিয়েছে,একা বাঁচতে শিখিয়েছে সিমন স্যারের চোখে পানি।অনেক কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু বুকের ভিতরে বোবা কান্না তার মুখ বন্ধ করে দিল।
রাগন্বিত হয়ে মিনি মেম এর দিকে তাকালেন মিনি মেম মাথা নিচু করে রাখলেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না 😭।
নীলা জানতে পারল স্যার স্কুলে প্রথম দিন নীলাকে দেখেই ভালো লাগে, বিয়ের জন্য পছন্দ করে মিনি মেডামকে সেই কথা জানায় ম্যাডাম মজা করে মিথ্যা বলে নীলা ম্যাডামের বিয়ে হয়ে গেছে..!
তাই সিমন ভেবে দেখে একজন বিবাহিত মহিলার প্রতি মনে ভালো লাগা আসা পাপ,তাই সে নিজেকে ধমন করতে পারছিলো না বলেই নীলার সাথে খারাপ আচরন করতো,তাকে সামনে আসতে এমন কি তার সাথে কথা বলতেও নিষেধ করে….😭
সব শুনে নীলার চোখে পানি ঢলমল করছে সিমনে ভিতরের রুমে চলে গেল। হঠাৎ ভিতরে হৈ হুল্লুর নীলা রুমের ভিতরে গেল আচ্চা আন্টি কি হয়েছে বয়স্ক মহিলা বললেন তোমাদের মধ্যে নীলা কে..?
কেন আন্টি..?
সিমন পাগলামি শুরু করছে,আগামীকাল ওর বিয়ে আজ সে নীলাকে বিয়ে করতে চায়..!
কথাটা শুনে নীলা খুব লজ্জা পেল,কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে বাড়িটা ত্যাগ করলো…
বাসায় আসতেই সিয়ামের বাবার ফোন..হ্যালোঃ মা তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবে..?
জ্বী আঙ্কেল বলেন, আমার সার্ধের মধ্যে থাকলে দিব..!
সিমন তোমাকে বিয়ে করতে চায়..
না আঙ্কেল আমি একজনকে পছন্দ করি।
সিমন দেখতে হাজারে একজন,ব্যবহার খুব ভালো ১বছরে বুঝতে পারছি।কিন্তু আমি একজনের আমানত তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবনা।
আঙ্কেল খুশি হয়ে বললেন ভালো থাকো মা,দোয়া করি পছন্দের মানুষটাকে নিয়ে সুখি হও।
নীলা নিজেকে খুব অপরাধী ভাবলো মিথ্যা বলার জন্য কারণ সে তো কাউকে ভালোবাসেনা।নীলা মনকে শান্তনা দিল এটা ভেবে যে আমার মিথ্যাটা একটা মেয়ের বিয়ের স্বপ্নটা পূরন করবে।
নীলা ফোনটা রেখে খুব কাঁদলো, কেন কাঁদলো সেটা নিলার কাছেও অজানা…!

তাং- ১৪-০২-২০১৯ইং

সুরাইয়া নার্গিস আলিফ

২৩৭৫জন ১৬৭৮জন
0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ