ISIS / ISIL / Waffen / @albaraka_news

প্রথমেই আমার এই লিখার নাম করন প্রসঙ্গে বলতে চাই, কেন আমি বলছি “বিশ্ব রাজনীতি বনাম আলকায়দা থেকে আইএস-বিহাইন্ড দি সিন”। এর কারন ইতিমধ্যে কিছু বিষয় আপনারা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন যে, যেসব রাষ্ট্র এই আইএস কিংবা অন্যান্য জঙ্গী নিধনে নেমেছেন, অনেকের অভিযোগ তারাই নাকি এদের স্রষ্টা। আসলেই কি তাই? যারা হয়ত জানেন না তাদের এই প্রশ্নের উত্তর পরিস্কার করার জন্যই আমার এ প্রয়াস শুরু। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন সীমান্ত উন্মাদ দুনিয়ায় এতো কিছু থাকতে জঙ্গী নিয়ে গবেষণা বা লিখা শুরু করলো, যে যেভাবেই ভাবেন। এর পিছনে আমার কাছে কিছু যুক্তিক কারন আছে। যা প্রেক্ষাপট আকারে আমি বলতে চাই ভূমিকাতেই।

প্রেক্ষাপট একঃ এক ফেইসবুক বন্ধু তার স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘আইএস যোদ্ধারা খুব নিষ্ঠাবান মুজাহিদ। মন্তব্যে আমি এবং আমার এক সাংবাদিক বড় ভাই দুইজনেই লিখেছিলাম, ধর্মের উদ্দেশ্য হলো অসভ্য মানবজাতিকে সভ্য করে তোলা। মানবিক করে তোলা। ধর্মের নামে কেউ যদি বর্বরতা আর অমানুষিকতার আশ্রয় নেয়, তাহলে তো তিনি মানুষই হতে পারলেন না। যিনি মানুষ হতে পারলেন না, তার আবার কিসের ধর্ম? কিসের জিহাদ? এই জবাব পেয়ে আমাদের তুলোধুনো করেছিল ওই ফেসবুক বন্ধ এবং তার অনুসারীরা, তার পর যথারীত আমাদের ব্লক মারা হয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে পাল্টা জবাব কেন দেইনি। দেইনি কারন ফেসবুকে ধর্মের বিহাস বৃথা। তাতে কোন মীমাংসা হয়না বরং জট পাকায়। আমার বিশ্বাস এই লিখা যারা পড়ছেন অনেকের সাথে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, এবং আমাদের সাথে যা করা হয়েছে আপনাদের সাথেও একি ঘটনা করেছে তারা। তাই আমি চিন্তা করলাম এই আইএস অনুরক্তদের সম্পর্কে একটু অনুসন্ধ্যান করা দরকার। করতে গিয়ে যা পেলাম তাতে আমি বিস্মিত একি সাথে হতবম্ভ। দেখলাম আইএস এর বর্বরতার ছবিগুলো শেয়ার করে তারা মন্তব্য করছে- ঠিকই আছে শিয়া কুর্দি আর খ্রিস্টানদের এভাবেই মারা উচিৎ। এরা সুন্নিদের উপর বহু অত্যাচার করেছে। এদিকে, আইএস এর খিলাফত নিয়ে আশাবাদি কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন “অবশেষে নিপীড়িত মুসলিমের জন্য একটি খিলাফত এসেছে। যে কোন মূল্যে এই খিলাফতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

দীর্ঘদিন বিশ্ব বাণিজ্য এবং রাজনীতি নিয়ে কাজ করার সুবাদে, এবং আমার ১০ থেকে বছর আগের একটা সিরিজ লিখা “বিশ্ব রাজনীতি এবং তথাকথিত তৃতীয় বিশ্ব” নামের আর্টিকেল লিখতে গিয়ে তখনি দেখেছি তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বিশেষ করে পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে জঙ্গী নামের একটা ব্যাবসা চালু করে উন্নত বিশ্বের মুনাফা হাকানোর একটা প্লেন ১৯৪৭ এর পর থেকেই একটু একটু পূর্ণতা পাচ্ছিলো, যা আজো বিষ ক্ষতের মত বয়ে চলছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। কিন্তু তাদের এই বিশেষ প্লেনটি মানে জঙ্গীবাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে খুব কম মানুষই, বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ ওয়াকিবহাল। এরি কারনে আমার মনে কটা প্রশ্ন জাগল, এই মানুষরা যদি জানতেন, আইএস যোদ্ধারা ধর্মের বলে বলিয়ান কোন মুজাহিদ নন বরং যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব আর ইসরাইলের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের ফলাফল, এবং তাদের মূল উদ্দেশ্যটা জিহাদ বা খিলাফত না, বরং মুসলিমদের ভাইয়ে ভাইয়ে দাঙ্গা বাঁধানো,  তাহলে কি বাংলাদেশের মত একটি উদার মুসলিম দেশের কোন মানুষ আইএস এর প্রতি এমন শর্তহীন সমর্থন ব্যাক্ত করতেন? আমার দূঢ় উত্তর না। তাই এই বিশেষ বিষয়ের ইতিহাস এবং এর সম্পর্কিত যত সাংবাদিক এবং স্কলারের বিশ্লেষন এবং লিখা বই আছে সেই গুলো বিশ্লেষন করে তথ্য নিয়ে সুত্র মিলিয়ে সাধারনের জন্য এই জঙ্গীবাদ এর মুল হেতু আর এই ষড়যন্ত্রের দালিলিক প্রমান সহ সত্যকে সামনে আনার চেষ্টা করেছি।

isis women

প্রেক্ষাপট দুইঃ আপনি হয়তো ভাবছেন, সুদূর পারস্য, মধ্যপ্রাচ্য, বিশ্ব মানচিত্রের এতো দূরের দেশের জঙ্গীদের ব্যাপারে আমাদের মাথাব্যাথার কি দরকার? কিন্তু আমি তথ্য ঘাটতে গিয়ে পেলাম ভিন্ন কথা। প্রায়ই নাকি বাংলাদেশী বংশোদভূত প্রবাসী তরুন, তরুনী আইএসের জিহাদের ডাকে ঘর ছাড়ছে। বাংলাদেশেও নাকি মিলছে আল কায়দা এবং আইসের প্রশিক্ষণ পাওয়া জংগী, প্রতিদিনই ধরা হচ্ছে তাদের কখনো ২১ জনের দল কিংবা কখনো ১৮ জনের, সাথে পাওয়া যাচ্ছে অস্ত্র, গোলা বারুদ।  এরা নাকি চরমপন্থীরও চরমপন্থী। প্রায় বাছ বিচার ছাড়াই নাকি মানুষ খুন, কল্লা কাটা চলছে। আইএসের হাত থেকে অপহরণের পর ছাড়া পাওয়ারাতো বলছেন, পুরো সাহারা মরুভূমিটাই নাকি ঘাটি। আইএস মানেই নাকি যোদ্ধাদের জিহাদ, আল নিকাহর নামে অসংখ্য নারীকে বিয়ের সুযোগ? আর যখন দেখলাম এই প্রলোভন দেখাতে বাংলাদেশেও  ফেইসবুকের মাধ্যমে আইএস শাখা চালু হয়েছে? আর যারা আইএস নিধনে নেমেছে সেই সব বড় বড় রাষ্ট্রই নাকি আবার তাদের স্রষ্টা! তখন আর থেমে থাকার বা পিছিয়ে পড়ার প্রশ্নই আসেনা, কারন এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন আমার আপনার বাবা, রক্ত দিয়েছেন আমাদের ত্রিশ লক্ষ মা বোন ভাই, আর দুই লক্ষ মা, বোনের ইজ্জত হয়েছে লুন্ঠিত। এই বাংলাদেশকেতো জঙ্গীদের ঘাঁটি হতে দেওয়া যাবেনা। ঝড় এবং ঝাপ্টা যতই আসুক। তাই এই প্রচেষ্টা।

মূল প্রসঙ্গঃ ভাবছিলাম কোথা হতে শুরু করা যায়। বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহের পর, এইটুকু আমার কাছে পরিস্কার হয়ে গেলো যে বিশ্বব্যাপি, নতুন করে বেপক ব্যাপ্তি নিয়ে জঙ্গীবাদের উত্থান এর পিছনে, নাইন-ইলেভেনের হামলার ঘটনার বিস্তৃত একটা মেল বন্ধন আছে, তাই সেখান থেকেই শুরু করা যাক আর করলাম ও নাইন-ইলাভেনের ঘটনা দিয়ে। কারন, বিশ্ব রাজনীতির খোলনলচে পাল্টে দেওয়া ওই ট্র্যাজেডিকে ঘিরে আজও নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে মানুষ। এদিকে তথ্য উপাত্ত বলছে ঐ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ দিনের বন্ধু সৌদি আরবের জোরালো ভূমিকার কথা অস্বীকার করেন না, খোদ মার্কিন রাজনীতিবিদরাও। অনেক বিশ্লেষকই বিশ্বাস করেন, আজকের উত্তাল বিশ্ব পরিস্থিতির মূল শেকড়টা নাইন-ইলাভেন ট্রাজেডিতে। ওই ঘটনাকে পুঁজি করে শুরু হওয়া সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ, গত এক যুগ ধরে ধারাবাহিক ভাবে বিশ্বকে অনিরাপদ করেছে, করেছে বসবাসের অযোগ্য। আফগান যুদ্ধের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ধর্মীয় কোন গোষ্ঠির হাত ধরে এই পৃথিবীতে জঙ্গীবাদের বিস্তার হয়নি। বরং যুগে যুগে বিভিন্ন রাষ্ট্র শক্তির অর্থ-অস্ত্রের মদদে জঙ্গীবাদ নামের বিষবৃক্ষটিকে বাড়তে দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তান, ইরাক আর চলমান সিরিয়া সেই প্রমানই দেয়।

আমি কোন বোদ্ধা বা ইতিহাস বিশ্লেষক নই খুব সাধারন একজন শিক্ষনবিস সাংবাদিক মাত্র। আমি গত কয়েক বছরে সাংবাদিকতার যে শিক্ষা পেয়েছি তা থেকে জেনেছি আমার একমাত্র কাজ তথ্য তুলে ধরা আর সে কাজটিই আমি করেছি কিছু মানুষের সহযোগিতায়। দেশি বিদেশি কয়েকজন গুনি বিশ্লেষক এবং সাংবাদিকের জঙ্গীবাদ নিয়ে লিখা আর্টিকেল, মার্কিন ডিক্লাসিফায়েড বিভিন্ন দলিলপত্র থেকে শুরু করে এই বিষয়ে অনুসন্ধানী যত প্রতিবেদন, আলোচিত নানা বই, এই সম্পর্কিত ওয়েব সাইটের সাহায্য নিয়েছি। আমাদের বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক সুজন ভাইয়ের জঙ্গীবাদ নিয়ে লিখা বই থেকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি আমি, আমার লিখা সুচারু এবং সহজ ভাবে সাজাতে। এই বিষয়ের যত গভিরে গেছি, তত পরিস্কার হয়েছে ইতিহাসের নানা কাল পর্বে জঙ্গীবাদকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল, পাকিস্তান, আর সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলোর ষড়যন্ত্রের খোলস অনাবৃত হয়েছে আমার কাছে আর তাই কেবল তথ্য উপাত্তসহ আপনাদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। তথ্যের সাথে তথ্যের মেল বন্ধন ঘটিয়েছি আর চেষ্টা করেছি গল্পের মত করে ইতিহাসের অনুচ্চারিত সেইসব সত্যকে সামনে নিয়ে আসার।

এই লিখাটি আমি সোনেলায় পর্ব আকারে দিব, কারন নাইন ইলেভেন থেকে আইএস জঙ্গী উত্থান এবং সর্বশেষ বাংলাদেশে তাদের সক্রিয় হবার ঘটনা পর্যন্ত এটি একটি দীর্ঘ লিখা হবে। কারন এযে গত ১৪ বছর শেষ করে ১৫ বছরে পড়তে চলেছে আর বিস্তৃতি ঘটছে ক্যান্সারের জীবানুর মত দ্রুত, হচ্ছে দ্রুত থেকে দ্রুততর। বড় হবার আরো একটি কারন এখানে ধর্ম নিয়ে আইএস সহ অন্যান্য জঙ্গী সংগঠন গুলো বিশেষ করে ইসলামের খন্ডিত আর মনগড়া ব্যাখ্যাকে তাদের প্রধান অস্ত্র বানিয়ে নিয়েছে, সে বিষয়ে বিশ্বের বরেন্য ১২৬ স্কলারের মতামত ও সঠিক ব্যাখ্যাও তুলে ধরেছি। এই খানেই আমি সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি সুজন ভাইয়ের বই থেকে। কারন মাত্র দেড় বছরের চেষ্টায় একা আমার পক্ষে সম্ভব না এতো ব্যাখ্যা একসাথে জড়ো করা।

ভূমিকার শেষেঃ আমার এ চেষ্টায় কোন ভুল থাকলে ধরিয়ে দিবেন দয়া করে। সব পর্ব শেষ করতে হয়ত বছর লেগে যাবে। আশাকরি পাশে পাবো আপনাদের। যারা বাংলাদেশে বসবাস করছেন এই মুহূর্তে তাদের প্রত্যেকের প্রতি অনুরোধ চোখকান খোলা রাখুন। আপনার আশেপাশেই হয়ত অবস্থান নিয়ে আছে জঙ্গী দোসরা, সময় সুযোগে হামলে পড়তে পারে সর্বশক্তি নিয়ে, আমাদের সোনার বাংলায় আর তাদের সহযোগিতার জন্য তো মুখিয়ে আছে আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিগুলো, যারা পাকিস্তান নামক নীতিহীন রাষ্ট্রটির দোসর, আর আইএস আলকায়দা তো মৌদুদীবাদিদের নতুন সংস্করণ মাত্র। সচেতন হোন অন্যকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিন। আমাদের দেশে জঙ্গীবাদের মদদ দেওয়া হচ্ছে, পাকিস্তান থেকে আর এই পাকিস্তান বিশ্বব্যাপী জঙ্গী ষড়যন্ত্রের অংশ হয়েছে কেবল মাত্র বাংলাদেশ এবং ভারতের উপর প্রতিশোধ নিতে আর তাদের মাটি পশ্চিমাদের ব্যাবহার করতে দিচ্ছে তাদের ব্যাক্তি আর্থিক স্বার্থ হাসিলের জন্য।

 

সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। জোট বদ্ধ হয়ে প্রতিরোধের জন্য তৈরি হন এদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।

৬৬৫জন ৬৬৭জন

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ