বাক্সবন্দি

পথহারা পাখি ১০ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ০১:২৯:১৪অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৪ মন্তব্য

ছোটবেলায় মায়ের কাছে সবচেয়ে বেশি বকা আর মার খেতাম যে কারণে, সেটা হল গল্পের বই পড়া। খুব নেশা ছিল বই পড়ার। একটা বই শেষ না হওয়া পর্যন্ত না পারতাম ঘুমাতে, না পারতাম পড়াশোনায় মন বসাতে। কখনো পড়ার বইয়ের মাঝখানে রেখে, কখনো বিকেলে ঘুমের নাম করে, কখনোবা রাতে মা ঘুমিয়ে পড়লে! বই শেষ না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পেতাম না।

বিকেলে প্রায়ই খেলতে যেতাম বাসার নীচের গ্যারেজে…দড়িলাফ, বরফ পানি, মাংস-চোর এগুলোই বেশি খেলতাম। শহরে ছিলাম, বড় মাঠ কিংবা খেলার জায়গা পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। আর এজন্যই আমাকে আর আমার ভাইকে ‘ফার্মের মুরগি’ উপাধি দিয়েছিলেন একাধিকজন। খুব মন খারাপ হতো। তবে নামকরা স্কুলে পড়তাম বলে কদরও নেহায়েত কম পাইনি।

আকর্ষণ ছিল কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্রতি। টানা কয়েকদিন ছুটি পেলেই খালার বাসায় কিংবা মামাবাড়ি ঘুরতে যাওয়ার যেই আনন্দ, ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আর মায়ের কথামত ভালো রেজাল্ট করতে পারলে বাইরের দোকানে খাওয়ার সুযোগ হতো গুণে গুণে বছরে তিনবার, কারণ বড় পরীক্ষাও যে হতো বছরে তিনটা!

খুব অবাক লাগে এখনকার বাচ্চাদের দেখলে। হাঁটতে কিংবা কথা বলতে শেখার আগেই শিখে ফেলে মোবাইল চালানো। আগের মত এখনের বাচ্চাদের মধ্যে বই পড়া, খেলতে যাওয়া, আত্মীয়স্বজনের সাথে আন্তরিকতা বজায় রাখা কিংবা কোনো ভাল শখের চর্চা করা-এসব দেখা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।

অবশ্য বাচ্চাগুলোকে দোষ দিয়ে কী লাভ মাটির পুতুলের মত তারা, যা দেখে তাই শিখে। আমরা প্রাপ্তবয়স্করা যেভাবে এই ৫ ইঞ্চি/৩ ইঞ্চি একটা বাক্সের মধ্যে আটকা পড়ে গেছি, সেখান থেকে বের হয়ে বাস্তব জীবনে পুরোপুরি ফিরে আসতে পারি কয়জন? সারাক্ষনই মোবাইলের নানান নোটিফিকেশনের চিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকি। ইউটিউবের নানা রঙচঙে ভিডিও যেন মাতিয়ে রাখে সারাদিন। বাসায় মা বাচ্চাদের চেয়ে এই যাদুর বাক্সটাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। বাবারা অফিস শেষে ফিরে পরিবারকে সময় না দিয়ে পড়ে থাকে মোবাইল নিয়ে।

আর যারা একটু বয়স্ক, তারা বন্দী হয়েছে টেলিভিশনের বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলে। টিভির সামনে বসে একের পর এক সিরিয়াল দেখেই চলেন তারা। কোন শিক্ষণীয় কিছু নেই, জেনেও চোখ ফিরাতে পারেন না।

চারপাশের সবাই এখন বাক্সবন্দি; কেউ বুঝে, কেউবা না বুঝে। বড্ড আত্মকেন্দ্রিক বানিয়ে ফেলেছে আমাদেরকে এই বাক্সগুলো। একটা ভ্রমের মধ্যে সবাইকে ডুবিয়ে রেখেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায় সেখানে, বেরিয়ে আসা বড়ই দুঃসাধ্য…

৫৭৮জন ৫৭৮জন

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ