বাংলাদেশ ও ভারতীয় মানুষদের বিদ্বেষ
একটা সম্প্রদায় কেবল জাতি নয় দ্বিমত তথা দ্বিধা সংশয় ও ইতিহাস গত দিক থেকে বাংলাদেশ ও ভারতীয় মানুষদের মধ্যে দিন দিন বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি হচ্ছে ।যা শুধু একটা জাতি নয় পুরো মানব ইতিহাসে একটি দেশের জন্য নিন্দাজনক। আমাদের কাছে এখন দুইটা প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে ভারতীয়রা বাংলাদেশ বিরোধী কেনো ? আর দ্বিতীয় প্রশ্ন বাংলাদেশের মানুষ ভারতবিরোধী কেনো? এটা বেশি উপলব্ধি করা যায় যখন ক্রিকেট খেলা অথবা কোনো উন্নয়ন বা ক্ষয় ক্ষতি এই গুলো দেখলে এক দেশ অন্য দেশের মানুষ দের উপর ট্রোল করে শুধু তাই নয় তীব্র অকট্য ভাষায় সমালোচনা করে। বেশিরভাগ মানুষ না বুঝে করে আর কেউ কেউ জেনে শুনে প্রতিহিংসা করে। কিন্তু কেনো? এর কিছু উপলক্ষ কারণ আছে তা হলো ইতিহাসগত কারণ,সীমান্ত সমস্যা,নদী সমস্যা,বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি,১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন,২০১৫ সালের বাংলাদেশি হিন্দুদের গণহত্যার দাবি,২০১৭ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ভারত সফর,ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাব,কাশ্মীর সমস্যা,১৯৯২ সালের বাবরী মসজিদ ধ্বংস,২০১৬ সালের রুপির অবমূল্যায়ন। আমি মনে করি উপরোক্ত এই কারন গুলো ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিহিংসা বা বিরোধীতা যেটাই বলি না কেনো তার কারন।এর বাইরে মূল কারণ হচ্ছে এই ঘটনাগুলির পাশাপাশি, ভারতী ও বাংলাদেশের মিডিয়া এবং রাজনীতিবিদরাও বিরোধী মনোভাবকে উস্কে দেয়। এর ফলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিরোধ মনোভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ থেকে পূর্ব পাকিস্তান নামে একটি নতুন দেশ গঠিত হয়। কিন্তু ভারতীয় নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতার দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ভারতের প্রতি ক্ষোভ এবং অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রতি বছরই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করে থাকে। এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাবকে আরও উস্কে দেয়।বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। এই সমস্যার কারণে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।তিস্তা, গঙ্গা, মেঘনাসহ অনেক বড় নদী ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু এই নদীগুলোর পানি ভাগাভাগি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। ভারতের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে বাংলাদেশের জনগণ ভারতের প্রতি ক্ষুব্ধ।ভারত বিশ্বের বৃহত্তম এবং শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে একটি। বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় অনেক ছোট এবং দুর্বল দেশ। ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাব বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়।১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পর থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটতে থাকে। এই দাঙ্গায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়, যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল মুসলমান। ভারতের বিরুদ্ধে এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য বাংলাদেশের মুসলিমরা ভারতকে দায়ী করে। কাশ্মীর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিতর্কিত অঞ্চল। ভারত কাশ্মীরকে তার অংশ হিসেবে দাবি করে, কিন্তু পাকিস্তান কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবি করে। এই সমস্যার কারণে বাংলাদেশের মুসলিমরা ভারতের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করে। পাকিস্তানের পরাজয়ে ভারতের এই ভূমিকা বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতার জন্ম দেয়। কিন্তু কিছু মুসলিম মনে করে যে, ভারত শুধুমাত্র নিজের স্বার্থে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিল।ভারতের উত্তরপ্রদেশে ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তারা মনে করে যে, ভারত সরকারই এই ঘটনার জন্য দায়ী।ভারত ২০১৬ সালে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে। এর ফলে বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। তারা মনে করে যে, ভারত এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছে।বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নতি করেছে। এই উন্নতি দেখে ভারতীয়দের মধ্যে কিছুটা হতাশা এবং প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব দেখা দিয়েছে।২০১৫ সালে বাংলাদেশে কিছু হিন্দুদের হত্যার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর কিছু ভারতীয় রাজনীতিবিদ বাংলাদেশি সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তোলেন। এই অভিযোগ ভারতীয়দের মধ্যে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাবকে উস্কে দেয়।২০১৭ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ভারত সফরে যান। এই সফরের সময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে দেখা করেন। এই দেখাদেখির পর কিছু ভারতীয় রাজনীতিবিদ বাংলাদেশকে ভারতের অধীনে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এই মন্তব্যে ভারতীয়দের মধ্যে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব আরও বৃদ্ধি পায়। এই সকল মনোভাব দুইটা দেশের মানুষের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অবশ্য বাংলাদেশ ও ভারতের সকল মানুষই বিরোধী নয়। অনেক মানুষই ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে।
এই বিদ্বেষের ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের জনগণের মধ্যেও পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই বিদ্বেষ দূর করার জন্য দুই দেশের সরকার এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দুই দেশের সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা প্রয়োজন। দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং ভ্রমণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
একমাত্র পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতাই এই বিদ্বেষকে দূর করতে এবং দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সুতরাং দেশ বিদ্বেষী না হয়ে নিজের দেশকে ভালোবাসুন ও অন্য দেশকে ও।
শিক্ষার্থী সৌরভ হালদার ব্যবস্থাপনা বিভাগ সরকারি ব্রজলাল কলেজ খুলনা
[email protected]
৩টি মন্তব্য
স্বপ্ন নীলা
আমি মন দিয়ে আপনার লেখনীটা পড়লাম। চমৎকার বিশ্লেষণ। এই লেখাটা লিখার আগে আপনি যে ব্যাপক লেখাপড়া করেছেন তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। যাইহোক, যাই ঘটুক না কেন এখন সময় এসেছে কুটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোড়দার করার। তাছাড়া মিডিয়া একটা বড় ব্যাপার তো বটেই। মিডিয়া ইচ্ছে করলে অনেক কিছুই পারে। ভারতের মত বড় দেশে এখন মন্ত্রীসভায় কিছু নেতা আপত্তিজনক কথা বলে। তাদেরও ভাবতে হবে যে তারা সব কিছুতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়–তাই তাদের একটু রয়ে সয়ে কথা বলা জরুরী। প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্টে যেয়ে ট্র্যাম্পের নিকট অভিযোগ করেছে-যেটা তার কোন ক্রমেই উচিত হয় নাই। এটা বাংলাদেশের মর্যাদাকে অনেক খাট করে দিয়েছে।
সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আশা করা যায় এই স্নায়ু যুদ্ধের অবসান হবে।
সৌরভ হালদার
ধন্যবাদ সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষরাও দিন দিন ভারতবিদ্বেষী হয়ে উঠছে এই দুই দেশের মধ্যে বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে না হলে ভবিষ্যতে এ আরো ভয়ংকর কিছু আমরা দেখতে পাবো যা আশানুরূপ হবে না
নার্গিস রশিদ
অনেক ভারতীয়দের সাথে মেসার সুযোগ হয়েছে। প্রথমেই তারা বাংলাদেশীদের নিচু চোখে দ্যাখে । তারা মনে করে সুপিরিয়র । তারা ধনী আমরা দরিদ্র । তারাও এক সময় দরিদ্র ছিল তা ভুলে গেছে। আমরাও যে এক সময় উঠতে পারি তা তারা ভাবতে পারেনা। খুব বেশি কম্পেটেটিভ । চায়না শক্তিশালী হচ্ছে তা তারা সহ্য করতে পারেনা।