এম বি এ পাশ করে,পুরোপুরি দুইবছর বিভিন্ন ব্যাংকে আবেদন করার পর, অবশেষে আমার ভাইয়ের চাকুরীটা হলো৷
এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পাওয়ার দুইদিন পরেই চাকুরীতে জয়েন করার জন্য সে আব্বার সাথে গেল ঢাকায়, যথারীতি, জয়েন করার পর তার পোস্টিং পেল খুলনার কাছাকাছি!!!
ছোটভাই আমার খুবই মন খারাপ করল, এত দূরে পোস্টিং হবে তা সে একটুও ভাবেনি৷
পোস্টিংয়ে যাওয়ার আগে দুই দিনের জন্য বাসায় আসলো সবার সাথে দেখা করার জন্য….বেচারা প্রচন্ড মন খারাপ করে ঘুরতেসে, ভালো করে কথাই বলছেনা কারো সাথে৷
আমি এপ্রান্ত থেকে ফোন করি, যতটুকু পারি তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি৷
এইদিকে লুকিয়ে নিজে যে কতবার কান্না করি, তা আর নাইবা বললাম৷
ছোট ভাইটি আমার- আমাদের দুবোনের পর যখন ভাইটি হলো আম্মা-আব্বা তো মহাখুশি, সবেধন নীলমনি আমাদের৷
সে যেমন আমাদের পুতুল খেলার সঙ্গী ছিলো, তেমনি আমরাও ছিলাম তার প্রথম ক্রিকেট খেলার সঙ্গী৷
একসময় ভাইটি বড় হলো, পড়াশোনায় বরাবরই ভালো স্টুডেন্ট সে৷ মনেপড়ে সে আজ থেকে এগার বছর পূর্বে যখন এ-প্লাস পেল মেট্রিকে, আমাদের পুরো ঘরজুড়ে ছিল খুশির বন্যা৷ তখনকার এ-প্লাস তো এখনকার মতো, এতবেশী কেজিতে বিকোতো না৷
আব্বা তাকে সবসময় শাসনের মধ্যে রাখত, বলত ছেলে মানুষদের একটু শাসনের মধ্যে রাখতে হয়৷
মেয়ে ছিলাম বলে আব্বার থেকে যে সুবিধাগুলো আমরা পেতাম, ছেলে হিসেবে তা সে কখনোই পায়নি৷
তবুও তার কোন অনুযোগ ছিলনা কারো উপর, অল্পতেই সে সন্তুষ্ট থাকত, এমনকি জীবনেও আমার কাছে আবদার করে কখনো বলেনি আপু আমার জন্য এটা আনো৷
সপ্তাহখানেক পূর্বে সে যেদিন, এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেল…
এখানে তখন মধ্যরাত, তবুও আম্মাকে ফোন দিই- ফোনের দু-প্রান্তে আমাদের মা-মেয়ের সে কি কান্না৷
অনেক সুখের কান্না আমাদের!!
মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলেদের চাকুরী হওয়া যেন, আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া৷
ভাইটার প্রচন্ড মন খারাপ.. আমি যখন তারে বলি, তোকে
আসতে হবে না, সবাই যাবে তোকে দেখতে, সে বলে না আপু পদ্মা পাড় হয়ে এত কষ্ট আম্মারা করতে পারবেনা, আমিই আসব…ছুটি হলেই আসব৷
আমি ভাবি- চাকুরী হওয়ার পর, এক লহমায় ভাইটা আমার অনেক বড় হয়ে গেল, কত কিছু বোঝে সে এখন…..
মায়ের আঁচলের ছায়ায় থাকা, সেই ছোট্ট মানুষটি নেই আর, ডানা মেলে এবার তাকে ছুটতে হবে, সামনে এগুতে হবে, নিজেকে শক্ত করতে হবে৷
সে বেশ বুঝতে পারে- ভালোবাসা আর মায়ার যে বাঁধনে সে বাঁধা ছিলো, এবার বুঝি তার বাঁধন ছেঁড়ার পালা!!!!
রিফাত নওরিন
আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র!!!
১৬টি মন্তব্য
নিহারীকা জান্নাত
ঠিক যেন আমার ছোটভাইটি। আমাদেরও দু’বোনের পর ভাই। খুব আদরের। সে এখন চাকরী করে, সংসার হয়েছে কিন্ত এখনো আমার আম্মা তাকে নিয়ে টেনশন করে। ফোন না পেলে কান্নাকাটি, যেন সে এখনো বাচ্চা।
লেখাটি অনেক ভালো লাগলো।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপু… -{@ –
জিসান শা ইকরাম
অত্যন্ত মায়া ময় লেখা,
এইসব নিয়েই আমাদের পারিবারিক দিন রাত্রি।
ভাল লেখেন আপনি।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া৷
ভালো থাকুন৷
আবু খায়ের আনিছ
এভাবে বাঁধন ছেড়ার পালা চিন্তা না করে ভিন্ন ভাবে চিন্তা করলে মন্দ হয় না, বাঁধন মজবুত করার পালাও হতে পারে।
ভালো লিখেন আপনি।
রিফাত নওরিন
ভালো বললেন তো আপনি,অন্যভাবেও ভাবা যায় তাহলে৷
অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন৷
অপার্থিব
ব্লগ বাঁচিয়ে রাখতে নুতুন ব্লগার প্রয়োজন তাই আপনাকে এই ব্লগে স্বাগতম। সে যুগে ক্লাস ফাইভ, এইটে বৃত্তি আর মেট্রিক-ইন্টারের জিপিএ ফাইভওয়ালাদের সমাজে বেশ দাম ছিল, লোকে সম্মান দিত, মেয়েরা নোটের জন্য আসতো, পাড়ার ক্রিকেট মাঠে ওপেনিং এ ব্যাটিং জুটতো! কই গেল সেসব দিন!! আর দশটা স্বাভাবিক বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনচিত্র খানিকটা উঠে এসেছে লেখায়, ভাল লাগলো।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ৷
শুভেচ্ছা জানবেন৷
শুন্য শুন্যালয়
আপনি অনেক ভালো লেখেন দেখছি। ভাইটাকে যে এখনো কতোটা মমতায় জড়িয়ে রেখেছেন তা লেখায় স্পষ্ট ফুঁটেছে। বাঁধন কখনো ছেড়ে না। দূরে গেলে একটু ঢিলে করে দিতে হয় সুতো, আবার কাছে এলে সুতো গুটিয়ে নিতে হয়। ভাইটির জন্য অনেক শুভকামনা।
রিফাত নওরিন
অনেক অনেক ধন্যবাদ৷
শুভেচ্ছা রইলো৷
ইলিয়াস মাসুদ
মায়ের সাথে যদি কারো কিছুটাও মিল থেকে থাকে সে হচ্ছে বোন, ভাই বোন সবার জন্য রইলো অনেক অনেক শুভ কামনা 🙂
রিফাত নওরিন
অনেক অনেক ভালো থাকুন…শুভেচ্ছা নিবেন৷
মৌনতা রিতু
আমার ভাই নেই তাই এই অনুভূতিবুঝি না। তবে ভাবি ইশ! একটা যদি ভাই থাকতো।
অনেক যত্ন করে লেখা। খুব মমতা ঢেলে দেওয়া।
এমন লেখা আরো উঠে আসুক। শুভকামনা।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপু, এতো সুন্দর মন্তব্যের জন্য!!
ভালো থাকুন!!!
নীলাঞ্জনা নীলা
অনেক ভালো লিখতে পারেন আপনি।
এমনিতে আমরা দু’ বোন। কিন্তু ভাইয়ের আদর আর ভালোবাসা দুটোই পেয়েছি। তাই বুঝি ভাই কি!
লিখুন আরোও।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপু…
ভালো থাকুন !!!! -{@