প্রথাগত ধারা ভাঙার এক যুগলের গল্প বলেছিলাম কিছুদিন আগে। পুরোনো ধারা ভেঙে এগিয়ে আসছে তরুণ-তরুণীরা। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। মেয়েটির কথোপকথন থেকে সেদিন জানলাম, পড়াশুনা শেষ করে সে চাকরিবাকরি না খুঁজে জেনেবুঝেই চ্যালেঞ্জিং এই স্বাধীন পেশায় নেমেছে। অথচ মেয়েটি মার্কেটিং বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর দুইই কমপ্লিট করেছে সিটি কলেজ থেকে। এ বছরই তাঁর স্নাতকোত্তর কমপ্লিট হয়েছে।
জানলাম, আর তাঁর সঙ্গী ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার এর উপর গ্রাজুয়েশন করা। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় ২০১৫ সালে। ঢাকায় যৌথ পরিবারে বসবাস। শুরু থেকেই মেয়েটি সংকল্পবদ্ধ ছিলো চাকুরী করবে না, নিজের মতো করে কিছু একটা করবে। কি করবে, কি করবে, ভাবতে ভাবতে একদিন হঠাৎ করেই মাথায় চাপলো অফিসে অফিসে লাঞ্চ সাপ্লাই দিলে কেমন হয়! পরিকল্পনামাফিক কর্মপ্রক্রিয়া শুরু। চ্যালেঞ্জিং, তবুও তাঁর দৃঢ় মানসিকতা তাকে হাঁটতে সাহায্য করে। আর তাঁর সাবলীল গতি এবং কাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা তাঁকে ঠিক দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।
দাম্পত্য জীবনে পরিপূর্ণতা থাকার পরও যখন একটি মেয়ে সৎ এবং সুন্দরভাবে স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বনির্ভরশীল জীবন যাপণ করতে এরকম একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তখন বিস্ময়ের পাশাপাশি পুলকিত ভাবও জাগে।
চ্যালেঞ্জিং এ পেশায় যুগলের পথচলা এ বছরের এপ্রিল থেকে। ব্যবসাটাকে দাঁড় করাতে একসাথে দুজনেই হাঁটছেন। ভদ্রলোক নিজের অন্য ব্যবসার পাশাপাশি স্ত্রীসহ এই ব্যবসায়ও নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
প্রথমদিকে ২ জন অফিসকর্মীকে লাঞ্চ সাপ্লাই দিয়ে তাদের যাত্রার শুরু। পরেরদিন ৪ জন। তারপর ১০/৩০/৬৫/৮২/ এখন সম্ভবত ২০০ জনকে খাবার ডেলিভারি দিচ্ছেন। রান্না প্রথমে নিজেরাই করতেন। এখন একজন বাবুর্চি নেয়া হয়েছে। বাবুর্চি নিলেও খাবারের মানে ও পরিবেশনে কোন ঘাটতি আসেনি।
খাবারের মেন্যুও মানসম্মত। দামটাও নাগালের মধ্যে। মেন্যু লিস্টে দশটি সেট দেয়া আছে, প্রতি সেটের মূল্য বর্তমানে ৮০ টাকা। তবে চাহিদামাফিক মেন্যু পরিবর্তনীয়।
আমি শর্টকাট এখানে তুলে দিলাম-
*ভাত
*মাছ (বড় ১পিস)/ছোট মাছ/গরু/মুরগী
*ভাজি/ভর্তা/সবজী /শাক
*ডাল
————–
*ভাত
*গরু/মুরগী
*সবজী /সালাদ
*ডাল
—————-
*খিচুড়ি/পোলাও
*ডিম ভূনা বা মাংস ভূনা/ কোরমা বা রোষ্ট
*সালাদ/ চপ এবং সালাদ
—————-
*মোরগ পোলাও/ তেহারী
*সালাদ
—————-
*ফ্রাইড রাইস
*চিকেন ফ্রাই
*চাইনিজ সবজী।
সবচেয়ে বড় কথা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশনা, যা এই নগরায়ন জীবনে বাইরের খাবারের ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাঁদের ডেলিভারি প্রসেস, কোয়ালিটি মেনটেইন, উপস্থাপনা, পরিবেশনা সবগুলো সূত্রই বলে দিচ্ছে ধারা ভাঙার এই চ্যালেঞ্জিং পেশায় আমূল পরিবর্তন আসবে। সাইফ (তরুণের নাম) সাহেবের অন্য ব্যবসা থাকলেও ফারিয়া (তরুণীর নাম) এই কাজটির মাঝেই নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান।
শুভকামনা রইলো তাঁদের জন্য।
৮টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
তাঁদের স্বাগতম। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এগিয়ে যাক তারা।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যাঁ আপু তাঁরা সফলতা পেলে তাঁদের পথ ধরে অন্য বেকার পাবে পথের দিশা।
তাঁদের -{@শুভেচ্ছা।
জিসান শা ইকরাম
দেশের বৈরী পরিবেশকে উপেক্ষা করে কিছু মানুষ ভিন্ন কিছু চিন্তা ভাবনায় চলা শুরু করেছে,
আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা এদেরকে এগিয়ে যেতে তেমন একটা উৎসাহ দেইনা।
তবে বদলাচ্ছে দেশ,
সৎ ইচ্ছা এবং আন্তরিকতা নিয়ে চললে এরা সফল হবেই।
প্রেরণা মুলক লেখা। এমন লেখার জন্য ধন্যবাদ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বিপরীতমুখি দুই মেরুতে দেশ চলছে। ধর্মান্ধরা পেছনে টানছে আর প্রগতিবাদীরা সামনের দিকে এগুচ্ছে।
সৎ ইচ্ছা এবং আন্তরিকতা নিয়ে এগোয় যারা সফলতা তাদের আসবেই।
ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভারতে অফিসপাড়ায় এমন কেটারিং নাকি খুবই চলে।
“লাঞ্চবক্স” মুভিটা দেখেছো আপু?
যাক ফারিয়া এবং সাইফ দুজনকেই আমার শুভকামনা। এভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাক আমাদের দেশকে।
ধন্যবাদ রুবা’পু সুন্দর একটি পোষ্টের জন্য।
ভালো থেকো।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
না, দেখিনি। মুভি আমার কমই দেখা হয়।
আমার বিশ্বাস সাইফ-ফারিয়া যুগলকে দেখে অনেক তরুণ-তরুণীই অনুপ্রাণিত হবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
রুবা’পু চেষ্টা করো দেখার। মন্দ লাগবে না।