১২ নভেম্বর অফিস হতে বাসায় ফিরেই ভাবলাম কিছু একটা করবো, সেটা কি ! হুমম মুরগী রান্না করবো, তবে মুরগীটা হবে উল্টা উপায়ে রান্না, যেমন ভাবা-ঠিক তেমনই কাজ—১০ মিনিট ভাবলাম, ইনোভেটিভ চিন্তা উকি ঝুকি দিচ্ছিল মনে—ইয়াহু! পেয়ে গিয়েছি—
মুরগীটা কেটে প্রেসার কুকারে একটা স্টিম দিয়ে নিলাম। তারপর মাংসটা উঠিয়ে নিলাম আর মুরগীর জ্বাল দেয়া পানিটা একটা পেয়ালায় রেখে দিলাম। মাংসটা টক দই আর সামান্য একটু লবন দিয়ে মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে দিলাম—
এখন কি করা যায়, আরে মন বল কি করবো ! হুমম পেয়ে গেলাম- কড়াইতে সাদা পানি দিয়ে দিলাম, তাতে লবন, হুলুদ, ধনে গুড়া, আদা বাটা, মরিচের গুড়া, সামান্য একটুসখানি রসুন বাটা,মাংস সেদ্ধ করা পানি, সামান্য একটুসখানি তেল দিয়ে জ্বাল দিতে লাগলাম। ফুটে উঠলো পানি টগবগ করে। এবার দিয়ে দিলাম ব্লেন্ড করা পরিমানমত এলাচ, তেজপাতা, দারুচিনি, গুলমরিচ। — মাথাটা ভন ভন করছে—আরে করছিটা কি !! আবার ভাবলাম, আরে দূর ! দেখিইনা হয়টা কি !!!
এবার দিয়ে দিলাম মুরগীর মাংস !! মাংস টগবগিয়ে ফোঁটা পানিতে ঘুরছে আর ঘুরছে ! ঢেকে দিয়েছি কড়াইয়ের মুখটা। এই ফাঁকে ৬-৭ টা বড় পেঁয়াজ খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে মাঝ বড়াবড় করে আট টুকরা করে কাটলাম। ছোট ছোট রসুনগুলোর কোয়া আলাদা করলাম, তারপর তা খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে পেয়ালায় রেখে দিলাম। এবার কড়াইয়ের ঢাকনা খুলে দেখলাম যে পানিটা বেশ কমে গিয়েছে- তাতে দিয়ে দিলাম পেঁয়াজ কাটা আর গোটা ছোট ছোট রসুনের কোয়া। এবার ঢাকনা দিয়ে কড়াইটা ঢেকেই দিলাম–।
বড় দুটো পেঁয়াজ কুচি কুচি করে কাটলাম। গোটা জিরার কৌটা কাছে নিলাম–। কড়াইয়ের ঢাকনা খুলে দেখলাম সামান্য পানির ঝোলে সয়লাম হয়ে আছে গোটা মাংস। কড়াইটা মাংসসহ নামিয়ে নিলাম। এবার অন্য একটি কড়াইয়ে পরিমানমত তেল দিলাম, তাতে পেয়াজ কুচি দিয়ে ভাজতে লাগলাম, যখন পেয়াজটা একটু লালচে হবে-হবে করছে, ঠিক তখনি দিয়ে দিলাম কিছু গোটা জিরা। আহা কি সুন্দর গন্ধ ! পিয়াজ-জিরার লালচে ভাজা দিয়ে দিলাম মাংসে, আর দিয়ে দিলাম ভাজা জিরার বেশ খানিকটা গুড়া, সাথে আরো দিলাম বড় দুটি কাঁচা মরিচ অর্ধেক কাটা (সুন্দর গন্ধ বের হয়)—ঢেকে দিলাম মাংসটা, পানি কমে মাখা মাখা ঝোল হয়েছে, পেঁয়াজ টুকরো আর ছোট ছোট রসুনগুলো মাংসের গায়ে আলতো করে লেগে আছে। কি পাগল করা স্বাদময় গন্ধ—কি সুন্দর একটা রং ভর করেছে মাংসের গায়ে—–
গরম ভাত থেকে ভাপ যেন উড়ে আকাশ পানে যাচ্ছে, ভাবছি কি রান্না করলাম, কি জানি বাপু এত পরীক্ষা ভাল নয়—এতক্ষণ ঝটপট একটা ডিম ভাজলেই হতো, ভয়ে ভয়ে প্লেটে ভাত নিলাম, মাংসটা ভাতের পাশে রেখে ভাবছি—করলামটা কি !! আনমনে একটা মাংসের টুকরা মুখে দিলাম, এ্যা একি স্বাদ !! নিজেকে অনেকগুলো ধন্যবাদ দিলাম—
১৬টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
মাঝেমধ্যেই একটু উল্টোপাল্টা করে রান্না করলে হেব্বি স্বাদের হয়। আমিও এমন করি। মাংস বা মাছে কখনো গন্ধরাজ লেবুর পাতা নয়তো কারিপাতা দিয়ে দেই। অন্যরকম ঘ্রাণ, স্বাদ-ও।
স্বপ্ন নীলা
দিদি !!! কত দিন পরে কথা হলো। অনেক দিন অনেক মাস, অনেক বছর ব্লগে আসি না। আমার কথা কি মনে আছে !!! আপনার ইনোভেটিভ রান্নার আইডিয়াটা ভীষণ ভাল লেগেছে —–
আসলে অফিস হতে এসেই মনে হলো কিছু একটা রান্না করবো, আর সেই ধারনা হতেই রান্না করা। যাইহোক রান্নাটা একটু ভালই হয়েছিল
অনেক অনেক শুভকামনা রইল
নীলাঞ্জনা নীলা
ভুলে যাবার মতো মানুষ আপনি নন। চিনবো না কেন, এখন এ প্রশ্নের উত্তর দিন তো আমায়! অনুরোধ রইলো নিয়মিত আসুন, অন্তত সপ্তাহে একটি দিন। কেমন?
অনেক ভালো থাকুন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
রেসিপির নাম কিন্তু উল্টাপাল্টাই ভেবে নিলাম তবে উল্টা পাল্টা একটা দাওয়াত দিয়ে রন্ধণকৌশলটা জানালে ভাল হত।নিজেই রান্না করলেন নিজেই খেলেন আবার নিজের প্রশংসা নিজেই করলেন।ব্যাপারটা কেমন জানি লাখছে।আর ওহ্যা বহু দিন পর এলেন সু-স্বাগতম।সাথে দাওয়াত কিন্তু পাওনা রইলাম। -{@ শুভ কামনা।ভাল থাকবেন।
স্বপ্ন নীলা
হুমম নিজেই রান্না করলাম আর নিজেই রান্নাটা খেয়ে নিলাম— আমরা আসলে নিজেকে কখনোই ধন্যবাদ দেই না–নিজেকে খুবই বঞ্চিত করি–
হ্যা অনেক দিন পরে ব্লগে আসলাম। আপনাদের কথা খুবই মনে হতো, ব্যস্ততা আমার লেখার সময়কেও বেশির ভাগ সময় গ্রাস করে নেয়—-
অনেক অনেক ভাল থাকুন
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আপনিও ভাল থাকুন আর বেশী বেশী করে লিখুন।
মায়াবতী
আমার ছেলে মেয়ে রা প্রায় ই আমাকে বলে, আম্মু উলটা পালটা কিছু রান্না করো না প্লিজ আর আমি ও ঝাপিয়ে পরি যা তা রান্না করার যুদ্ধে। 😀 যখন যা হাতের কাছে থাকে তা দিয়ে ই কি সব যে রান্না হয় জানি না তবে সবাই আমরা আনন্দের সাথে ই ভোগ করি।
রান্না নিয়ে এমন লেখা বহু দিন পরে পড়লাম, খুব ভাল লাগলো। ভাল থাকুন।
স্বপ্ন নীলা
আপু আপনার কথাগুলো পড়ে ভীষণ মাত্রায় খুশি হলাম, আসলে গদ বাধা রান্না সবাই রাধে, মাঝে মাঝে কিছু উল্টাপাল্টা রান্না করলে মন্দ হয় না
অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপা—-
সাবিনা ইয়াসমিন
লেখাটা পড়লাম আর হাসলাম।রান্না নিয়ে যে কতরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যায়।আমি সুযোগ পেলেই করি।সব সময় নিয়ম মেনে রান্না করতে ভালো লাগে না।অনেক ভালো লাগলো অন্য রকম একটি রেসিপি পেয়ে। -{@
স্বপ্ন নীলা
হুমমম — হঠাৎ করেই এমন একটা পরীক্ষা করলাম, মাঝে মাঝে কিন্তু নিয়ম ভেঙ্গে কিছু করতে ভালই লাগে আপু। উল্টাপাল্টা রান্না কিন্তু মাঝে মাঝে ভাললাগার কারণ হয়ে দাঁড়ায়–আর সবাই তখন নতুনের স্বাদ গ্রহণ করে। স্বাদে আসে বৈচিত্র
ভাল থাকবেন নিরন্তর
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনিও অনেক ভালো থাকবেন।আর আমাদের কে আরো অনেক পড়ার সুযোগ করে দিবেন। (3 (y)
জিসান শা ইকরাম
আপনার কাছে ভাল লেগেছে এই রান্না, অন্যের কাছে অবশ্যই ভাল লাগবে।
অনেক দেশে কিন্তু এমন করেই রান্না করে। আমি কোরিয়ায় এমন খেয়েছি।
আপনার রেসিপি ট্রাই করা হবে।
অনেক দিন পরে আসলেন,
কেমন ছিলেন আপনি?
শুভ কামনা -{@
স্বপ্ন নীলা
ভাই, মাঝে আমার শরীর তেমন ভাল ছিল না, আর তাই ফেবু ও ব্লগে নিয়মিত ছিলাম না। ব্লগে এসে দেখি ব্লগ বাড়ির আঙ্গিনা ভরে গিয়েছে– অনেক সুন্দর সুন্দর লেখা— মনটাই ভাল হয়ে গেল
আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল, আপনার ভাল থাকটা অনেক অনেক জরুরী—-আর তাইতো শুভকামনা নিরন্তর
মোঃ মজিবর রহমান
কি পাগল করা স্বাদময় গন্ধ—কি সুন্দর একটা রং ভর করেছে মাংসের গায়ে—– এই স্বাদে আমরাও পাগল হলাম সুন্দর রান্না প্রনালী। ভাল লাগলো। নিয়মিত চাই।
স্বপ্ন নীলা
পোস্টটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ, শুভকামনা রইল নিরন্তর
মোঃ মজিবর রহমান
-{@