….. আর সময়ের মতো সময় কেটে যায়, দিন যাপনের গ্লানিতে আমার চোখের চারপাশে জমা হয় অজস্র নির্ঘুম রাত। একদিন ঘুমিয়ে যাবো, দেখা হবেনা .. তোমার সঙ্গে আমার। কিংবা আমার সঙ্গে তোমার।
কোন ক্লান্ত সন্ধ্যায় রোমান সমাধিস্থলে টুইই টুইই করে রবিন শীষ দিলে আদ্র মেঘে ঢেকে যাবে ঢাকার আকাশ। অথবা আটলান্টিক পারের কোন মন্দিরের ধূপগন্ধা বাতাসের সাথে মিশে অ-সুখী দীর্ঘশ্বাসের তুফান উঠবে ; ইশ্বর, তুমি বধির কেন? … ইশ্বর উহাকে সুখী করো।
তোমার সাথে হয়তো দেখা হয়ে যাবে একদিন তার – দুইজনই চমকে উঠবে, আহা আমরা একই তুফান ভালোবেসে জঙ্গলে মুখ থুবড়ে পরে আছি, একইভাবে। তোমার কাছেই ভাসিয়া যায় অন্তর আমার।
একদিন ফোন বেজে উঠে থেমে যাবে – নো নাম্বার। কলব্যাক করতে না পারার যন্ত্রনা বুকে চেপে আরেকটু মরে যাবে তুমি। অথচ জানবেনা, ফোনের ওপাশে কেউ নেই। ইমার্জেন্সি কল লিস্টে একটা মাত্র নম্বর জ্বলজ্বল করে – জানতে চাইলে, অপঘাত চাও ; অপঘাত।
আরও একদিন তোমার বাড়ির পাশের হ্রদের পারের রেলিং ধরে দাড়িয়ে থেকে ফিরে আসবার ইচ্ছে বুকে প্রতিদিন বেচেঁ থাকি। তোমার চশমার কাচের আড়ালের চোখ ছোঁয়া হাসি দেখবো বলে – এইরকম নিস্প্রান হাসি দেখলে থাপড়াতে ইচ্ছে করে।
জাহাজী জীবন শেষ হলো ভেবে, তোমার মতোই সমুদ্রকেও বিদায় বলে চরায় তুলে রেখেছিলাম ডিঙি। অথচ, লবণাক্ত হাওয়ার ডাক রোজ শুনছি রক্তের ভেতর। বুকের ভেতর আমার বিষন্নতা শ্বাসমুল তুলে বন্ধুর করে রেখেছে ঘাসজমি, তুমি ভাবছো বিরান প্রান্তর।
জল গড়িয়ে যায় – ধার করা জীবন নিয়ে রোজ বেচেঁ থাকি, কেন থাকি। ঘোর ভেংগে গেলে একদিন উধাও পথের সাথে মিলিয়ে যাবো – তোমার দরজায় অহেতুক অহমের চিহ্ন একে দিয়ে, তুমি এসে খুলবে দুয়ার – দেখা হবেনা। সেই হতচ্ছাড়া শালিখটা ঠিক খুজেঁ নিয়ে তোমার নয়নতারার আলোজ্বলা বারান্দা নোংরা করে দিয়ে শোধ নেবে একা একা পোড়ার।
… মুখোশ গলে গেলে দেখবে, আয়নায় আমাকেই দেখা যায়। তোমার চোখের তারায়। চাকমা উপকথার সেই একমানুষ ভেংগে দুইজন বানানোর মতো – আমাকে ভেংগেই তোমাকে তৈরী করে দূরে রেখে মজা দেখে অথর্ব ইশ্বর। আর সবুজ আগুন জ্বলে ওঠে ফ্লাশে …শট টেকেন।
শেষ যাযাবর হয়ে বসে আছি, প্রান্তরের পথের ধারে।
একদিন দেখা হয়ে যাবে …… ইউরোপীয় সামারের রাতে রাস্তা আর সমাধিস্থল জুড়ে ফোটে অজস্র জেসমিন, জেসমিনের মিষ্টি ঘ্রাণ বাড়তেই থাকে রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে। …. এইসব বিষন্ন সুঘ্রাণ রাতে চুপচাপ মরে যেতে সাধ জাগে।
ত্বমসিঃ মম জীবনং
পুনশ্চ – কোথাও একটা একলা শিমুল দেখলে ধূলোয়, জেনে নিও সে কেমন আছে।
৮টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
একদিন দেখা হবে নির্ঘাত,
একলা শিমুল আর থাকতে হবে না।
কাউকে উদ্দেশ্য করে এমন লেখা পড়িনি এর আগে আর কখনো, বিষন্নতারও যে সৌন্দর্য তা এই লেখায় বুঝা যায়।
শুভ কামনা।
আগুন রঙের শিমুল
একদিন দেখা হবে, বিনম্র চন্দ্ররাতে সে আশায় বেচেঁ থাকি দাদা।
শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানবেন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
পুনশ্চ – কোথাও একটা একলা শিমুল দেখলে ধূলোয়, জেনে নিও সে কেমন আছে।
না হয় জেনে নিলাম কিন্তু উত্তর কি পাবো…কেমন আছেন আমাদের প্রিয় মুখ শিমুল? -{@
আগুন রঙের শিমুল
কেউ জানতে চাইলে অবশ্যই উত্তর আসবে ভাই, হয়তো মৃদু বাতাসে কেঁপে উঠবে পল্লব .. ভালো আছি, ভালো আছি (3
নীলাঞ্জনা নীলা
“জাহাজী জীবন শেষ হলো ভেবে…” হয়না। “যতোক্ষণ শ্বাস, ততোক্ষণই আশ”—ছুটে চলে মানুষ।
“চাকমা উপকথার সেই একমানুষ ভেংগে দুইজন বানানোর মতো”—বহু আগে শুনেছিলাম, ভুলে গেছি। শুনতে চাই।
আপনার লেখার সবচেয়ে অসাধারণ দিক হলো শব্দচয়ন। যা আমার খুব ভালো লাগে।
ভালো লেগেছে।
আগুন রঙের শিমুল
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য, বলব একদিন।
ধন্যবাদ।
মৌনতা রিতু
চমৎকার লেখেন আপনি। আপনার কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।
সুন্দর ভাবনার প্রকাশ।
আগুন রঙের শিমুল
ধন্যবাদ রিতু আপনাকে। আমি হুটহাট লিখি, গুছিয়ে মন্তব্য করতে পারিনা। তবে আপনি নীলাঞ্জনা জিশানদা সাইরাস হেলাল মমিভাই শুন্য এদের লেখাগুলো পড়ি নিয়মিত। ভালো লাগে। ভালো থাকবেন।