
এখন ভর দুপুর।
চারদিক বলতে যা বেঝায়, কংক্রিটের চারদেয়াল। ডাইনিং কাম ড্রইং রুমের সোফায় রোজকার মত গ্যাঁট হয়ে বসে টেলিভিশনে পুনঃপ্রচারিত ধারাবাহিকে চোখ রাখা। মোবাইলের দিকে কতক্ষণ পর পর চোখ ফিরে তাকানো,,, একটা নাম্বার…. বার বার কল লিষ্ট চেক করা….। আবার রেখে দেয়া। বার বার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। মোবাইলে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স নেই বলে মেসেজ আসছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেল। পাশের কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংয়ের ঠুকঠাক আওয়াজ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই। প্রচন্ড গরম লাগা শুরু হলো। সেই সাথে ঘাম। দর দর করে ঘামতে শুরু……। হাঁসফাঁস লাগছে। পিপাসায় মাথার তার ছিঁড়ে যাবার যোগাড়। হাতের কাছে পানির বোতল শুন্য। ডাইনিং টেবিলে জগও পানিশুন্য। ফিল্টার থেকে পানি ঢেলে নিতে হবে…..
বিকেল ৫: ১৫ মিনিটঃ
ছেলেটা অনেকক্ষণ ধরে কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে। মোবাইলে কল দিচ্ছে… আরো কিছুক্ষণ পরে দরজার হ্যান্ডেল ধরে উল্টোদিকে ঘোরাতেই দরজা খুলে গেলো। ছেলেটা প্রায় আৎকে গেল! দরজা খোলা!!! মা মা বলে ডাকাডাকি করতে করতে মায়ের রুম সহ সবগুলো রুম খুঁজছে। কোথাও নেই। রান্না ঘর বারান্দা, বাথরুম…. নেই। বোনকে ফোন দিল- মা কই? বোনঃ মা কই মানে? ছেলেঃ দরজা খোলা পেলাম, ঘরে মা নেই কোথাও। বোনঃ ফোন করে দেখছ?
ছেলেটাঃ কলিং বাজালাম অনেক্ষণ, তখনই ফোন রিসিভ করেনি মা, ঘরে ঢুকে দেখি মা কোথাও নেই, দরজা এরকম খোলা রেখে মা কোথাও তো কখনো যাওয়ার কথা না আপু!!!
বোনঃ তুই আবার ফোন দে, আমি আসতেছি।
ছেলেটা মায়ের মোবাইলে আবার কল করল, এবার রিংটোন শুনতে পাচ্ছে… সোফার কুশনের পাশেই মোবাইল রিং হচ্ছে। এবার ছেলেটা আরো ভয় পেয়ে গেল। হৃদস্পন্দন দ্রুততর হয়ে গেল। কপালের বাঁপাশের শিরা ফুলে উঠছে। কি করবে বোন না আসা পর্যন্ত কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছে না।
কমন বাথরুম বাইরে থেকে ছিটকিনি দেয়া- অর্থাৎ ভেতরে কেউ না থাকাটাই স্বাভাবিক। বোনের বাথরুমের দরজা বাইরে থেকেই বোঝা যায় কেউ নেই, আধখোলা দরজা। মায়ের বাথরুম বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই ছিটকিনি দেয়া নাকি খোলা। দশ মিনিটের মধ্যে বোন চলে এলো।
বোনঃ ফোন দিয়েছিলি আর?
ছেলেটা মা’র ফোনটা এগিয়ে দিল বোনের দিকে।
বোনঃ ফোন রেখে গেছে? কোথাও গেলে তো আমাদের কাউকে ফোন দিত! চাবি কোথায় রেখে যাবে জিজ্ঞেস করত! এভাবে তো কখনো কোথাও যায়না মা! আচ্ছা!! চেক করি তো!
ভ্যানিটি ব্যাগ টেবিলের ওপর। বদলানো কাপড় ও কোথাও নেই।
বোনঃ তুই বাথরুম দেখছিস?
ছেলেটাঃ বাথরুমে হলে এতক্ষণ থাকবে? এতক্ষণে বের হত না! বোন মায়ের বাথরুমের দরজা খুলল…… একটা আকাশ ফাটানো চিৎকার…..
।
।
।
।
বাঁ হাতের মুঠোতে চিরকুট। কেঁপে যাওয়া হাতের লেখায় একটা লাইন- ” আমাকে বাবার পাশে রেখ”…..
ছবিঃ নিজ ক্লিক
৪টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
গল্প পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। আবার ভয়ও লাগছে। আমার মা ও বাসায় একা থাকে। অফিসে থাকলে কাজের চাপে ঠিক মতো ফোন করতে পারিনা। মাঝে মাঝে অস্থির সময় পার করতে হয়। শুভ কামনা রইলো।
বন্যা লিপি
সন্তানদের বড় করার প্রয়োজনে অনেক মা নিজেদের ক্যারিয়ারের চিন্তা ছেড়ে দিয়ে সন্তান বড় করার কাজে নিয়োজিত ছিল/ছিলেন। প্রয়োজনে মা ই একসময় একাকীত্ত্বে ভোগেন। মা’ র খোঁজ খবর নিয়েন যতই অফিস চাপ থাকুক না কেন। দিনে দূবার ফোন দিয়ে অন্তত জিজ্ঞেস করবেন- মা তুমি এখন কি করছ?
মায়ের জন্য ভালবাসা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
মন খারাপ হলেও বাস্তব। একাকিত্বতা ভয়ানক জিনিস। বিশেষ করে শেষ বয়সে।
বাবা মারা যাবার আটদিন পর মা ফোনে বলেছিল – মা ভীষণ একা লাগছে। থাকতে পারিনা। কিরকম হাহাকার ছিল সে কথায়। আমাদের সন্তানের উচিত বাবা মাকে সময় দেয়া। এ সময়টাতো আমাদেরও আসবে।
ভালোবাসা আপু!!
বন্যা লিপি
একটা সময় এইসব একাকীত্ব আসলে বোঝানোও যায়না কাউকে।
ভালবাসা রইল।