বলতে পারেন পৃথিবীতে সব চেয়ে দামী  কে?শুধুই পৃথিবীতে!এই জগৎ যিনি সৃষ্টি করেছেন তার কাছেও সবচেয়ে ব্যাক্তি তিনি হলেন মা।মা হচ্ছে পৃথিবীর সেই প্রানী যার সাথে অন্য কোন কিছুর তুলনা চলে না।এর ব্যাখ্যা আমার চেয়ে আপনার আরো বেশী জানা আছে।আর আছে উপরে সাত আসমান নীচে পায়ের তলায় মাটি ও মানুষ।যে কোন দেশের কথা বলতে পারি না তবে আমাদের এ উপমহাদেশ হতেই একটি ভৌগলিক সীমারেখাকে বা দেশকে আমরা মা বলে জানি।মায়ের পায়ের তলায় মাটি আমার আর্শীবাদ।সেই আর্শীবাদের জমিনটা যদি পবিত্র না হয় তবে সকল ধর্ম কর্মই যে বৃথা যায়।স্বাধীনের শুরুর কয়েক বছরের মাথায় এ পবিত্র ভুমি অপবিত্র হতে থাকে আমাদের স্বদেশীয় কিছু মোনাফেকদের কারনে যা আজও বয়ে বেড়াচ্ছি।বয়ে বেড়াচ্ছি রাজাকাদের বংশধরদের যারা এখনো সক্রীয় এখনো তাদের পূর্বসূরিদের ঘৃণিত কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়াতো দূরে থাক বরং উল্টো সাচ্চা দেশপ্রেমিকের সং সেজেঁ আছেন।তাদের উদ্দ্যেশ্যেই আজকের আমার এ লেখা অথবা যারা জানেননা এখনো নাপাকিরা আমাদের স্বাধীন সার্বোভৌত্বের জন্য কতটা ক্ষতিকর অথবা কতটা ক্ষতিই না করে যাচ্ছেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মাত্র তিন দিন পার হল এর মধ্যে নিউ ইয়র্ক হতে ফিরছিলেন পাকিস্তানের ভুট্ট্রো,যাত্রা বিরতিতে লন্ডনের হিথ্রোতে এক ব্রিটিশ রিপোর্টারের কাছে সাক্ষাৎকারে নিন্মরূপ কিছু কথার উত্তর দেন তিনি।
-আপনি কি এখনো মনে করেন পাকিস্তান অখণ্ড, মিস্টার ভুট্টো?
-অবশ্যই।অবশ্যই অখণ্ড!
এটা কি বাস্তবমুখী ভাবনা হলো ??
তিনি অত্যান্ত গর্ব করে বলেন
-একদম বাস্তব।বাস্তবতা কী ?এ সব ক্ষণ স্থায়ী পরিস্থিতি কোনো বাস্তবতা থাকে না… ইতিহাস সাক্ষী থাকবে,পাকিস্তানের ধ্যান ধারণা,পাকিস্তানের আদর্শ কখনোই এভাবে মুছে যাবে না।
এবার দেখা যাক নাপাকিদের জাতিগত শিক্ষা কি দিচ্ছেন আমাদের মহান মুক্তি যুদ্ধের বিপরীতে।অনেকে বলতে পারেন শুধু নাপাকিস্থান কেন বিশ্বে আরো দেশ আছে যারা ১৯৭১ সালে সর্বকালের গণহত্যা বলে বিশ্ব স্বীকৃত রক্তক্ষয়ী ত্রিশ লক্ষ প্রানের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা এই মুক্তিযুদ্ধকে স্রেফ পাক-ভারত যুদ্ধ বলে চালিয়ে যাচ্ছেন।এমনকি এ স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো বিদ্যমান আছেন যারা বিশ্বাস করেন এ দেশ এখনো নাপাকিস্থানই আছে।আমি তাদেরকে বলবো তারা মোনাফেক তারা রাজাকারদের দোসর।আমি সে দিকে যাবো না শুধু বলবো আপনার আজকের এ অবস্থান কেবলি মুক্তিযুদ্ধাদের অবদান।পৃথিবীর সব চেয়ে নিকৃষ্ট জাতি বা মানুষ তারা যারা মায়ের সাথে মাতৃভুমির সাথে গার্দ্দারী করে।নতুন প্রজন্মদের জন্য বলছি এখনো যারা এ দেশ নিয়ে শত্রুমি করে তাদের সব যুক্তি মানলেও একটি কথাই বলবে এখন আমরা স্বাধীন।এ স্বাধীনতাকে যারা স্বীকার করে না তারা জাতীয় বেঈমান ধান্দাবাজ।

নীচে দেখুন নাপাকিরা এখনো কোন শিক্ষায় শিক্ষিত করে আমাদের বিরুদ্ধে পুরো জাতিকে ক্ষেপিয়ে তুলছেন।একাত্তরের সময় পাকিস্তানের যারা বেঁচে ছিল,তাদের কথা নাইবা বললাম এখন যে প্রজন্মটি বড় হচ্ছে,তাদেরকে শিশু কাল হতেই শিখানো হচ্ছে পূর্ব বাংলা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের একটি অঙ্গ রাজ্য যা তারা হারিয়েছিল ভারতের ষড় যন্ত্রের কারণে।তাইতো এখনো ১৬ ডিসেম্বর আমাদের এই মহান বিজয়কে পাকিস্তানে স্মরণ করা হয় Fall of Dhaka বা ‘ঢাকা পতন দিবস’ হিসেবে।সহজে অনুমেয় করা যায় এ দেশ স্বাধীনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বেরিয়ে পড়বে এক ভয়ঙ্কর মগজ ধোলাইয়ের চিত্র,কীভাবে দেশটিতে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মনে মিথ্যা ইতিহাসের আবরণে রোপণ করা হচ্ছে এক সুতীব্র ঘৃণার বীজ

নাপাকিস্তানের প্রতিটি স্কুলে এখন ইতিহাসের নামে শেখানো হচ্ছে,১৯৭১ সালের মতো বড় একটি বিষয় নিয়ে তাদের পাঠ্য বইয়ে কী লেখা আছে জানেন দেখা যায়,পেশোয়ারের পঞ্চম শ্রেণীর একটি পাঠ্য বইতে লেখা১৯৬৫ সালের পাকভারত যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তানে বাসরত হিন্দুদের সহায়তায় ভারত অঞ্চলের জনগণকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে এবং নিজেই ১৯৭১ এর ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করে বসে।এই ষড়যন্ত্রের ফসল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যায়।এবং আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ মিলিটারি ট্রেইনিং নেওয়া এবং শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত থাকা।

অনেকেই বলতে পারেন ছোট ক্লাস বলে তেমন কিছু লিখেনি হয়তো বা বড় ক্লাসে লিখেছে তাহলেও সত্য এই যে উপরের ক্লাশের পাঠ্য বইতেও  নেই তেমন কোন স্বীকারক্তি,পরাজয় কিংবা যুগ যুগ ধরে পূর্ব পাকিস্থানে নির্যাতনের কোন প্রতিচ্ছবি-সপ্তম,অষ্টম শ্রেনী এমনকি নবম শ্রেণীতেও এই ব্যাপারে কিছুই লেখা নেই।তবে দশম শ্রেণীতে গিয়ে ১৯৭১ প্রসঙ্গ আসলেও তা এতই তুচ্ছ করে লেখা যে,যেন তখন কিছুই ঘটেনি পূর্ব বাংলায়।বইটিতে মোট সাতটি অধ্যায় আছে যার শুরুটা হয়েছে ৭১২ সালের মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় দিয়ে।পড়তে পড়তে সপ্তম অধ্যায়ের মাত্র একটা উপ-অনুচ্ছেদ হিসেবে জায়গা হয়েছে আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধের।সেখানে Fall of East Pakistan শীর্ষক স্বল্প আলোচনায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে আর তা হল কী ভাবে পাকিস্তানের সীমান্তে ভারত ‘আক্রমণ’ চালিয়েছে আর পাকিস্তানি সেনারা কত বীরত্বের সাথে সেটা মোকাবেলা করেছে!ব্যাস এই পর্যন্তই তাদের দায় সারা।

তবে কিছু কারন উল্লেখ ছিল সেখানে।কী কী কারণে পূর্ব পাকিস্তানিরা এই ‘বিদ্রোহ’টা করেছিল।কী কী ‘কারণ’ ছিল তাদের মতে?
হিন্দু শিক্ষক নেওয়া: তাদের ভাষ্য অনুযায়ী,অন্যতম ‘কারণ’ ছিল ‘হিন্দু’ শিক্ষক।সেখানে বলা হয়েছে,পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বিশাল সংখ্যক হিন্দু শিক্ষক ছিল।তারা বাঙালিদের মগজ ধোলাই এর কাজ করছিল এবং তারা এমন সব সাহিত্য রচনা করত,যেটা পড়ে বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতি ঘৃণা ভরে করা দেখা শুরু করে।
আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র: তাদের মতে আরেকটি কারণ হলো‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’।সেখানে বলা হয়েছে,পূর্ব পাকিস্তানে এক কোটি হিন্দু ছিল।ভারত তাদের রক্ষা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করত।ভারত চাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করতে যাতে হিন্দুদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো ভাল হয়।এই হিন্দুদের অনেকেই মূলত ছিল ভারতের গুপ্তচর। রাশিয়া এই পূর্ব পাকিস্তানের উপর ভারতের জুলুমে মুক্ত কণ্ঠে সমর্থন দিয়েছিল।

এ ভাবেই চতুর্থ আর পঞ্চম শ্রেণীতে শেখানো শুরু হয়,হিন্দু এবং শিখরা কতটা খারাপ ছিল।আর উচ্চ শ্রেণীগুলোতে গিয়ে সেই কুশিক্ষাকে চির স্থায়ী ভাবে গেঁথে দেওয়া হয় তাদের।এ ভাবে পাকিস্থানীদের মগজে ঢুকিয়ে দিল ধর্মের প্রতিহাংসার বীজ।সে সময় তাদের কাছে সকল সমস্যার কারণ হলো ভারত,আর সমাধান হলো হিন্দু নিধন।সারাংশে বলতে পারি পাকিস্তানিদের বেশির ভাগের কাছেই আসলে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ ছিল একটি অজানা অধ্যায়।যারা নিজে থেকে ইতিহাস নিয়ে ঘেঁটেছে,বাস্তবতা দেখেছেন তারা বাদে বাকিরা একেবারে জানেই না যে ১৯৭১ সালে কী কারনে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল,কী কারনে ত্রিশলক্ষ তরতাজাঁ প্রান শহীদ হল,কী কারনে লক্ষাধিক নারীর সম্ভ্রমহানী,অমানবিক নির্যাতীত হয়েছিলেন,কী কারনে ঘর বাড়ী জ্বালাও পোড়াও হয়েছিল,কী বা কারন ছিল পূর্ব বাংলার জনতার এমন তীব্র ক্ষোভ সংগ্রামের।

তবে শেষ পর্যন্ত একাদশ শ্রেণীতে আরেকটু এর কাহিনীর পাওয়া যায়।সেখানে বলা হয়েছে,
ঐ সব বিদ্রোহীদের দমনে সামরিক শাসকগণ সিদ্ধান্ত নিলেন সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহারের।এই সামরিক অপারেশন গুলোতে জামায়াতে ইসলামির সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে উল্লেখ করা হয়।যাদের অত্যাচারে আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী ভারতে পালিয়ে যায়।পালিয়ে যাওয়া কর্মীদের ভারত প্রশিক্ষণ দেয় এবং ভারত পূর্ব পাকিস্তানে আবারো পাঠায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে।”মুক্তি বাহিনী”র স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে ভারত তারা তাদের গেরিলা কার্যক্রম চালাতে থাকে।অবশেষে ১৯৭১ এর ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারত বনাম পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়।স্থানীয় মানুষ তেমন সাহায্য না করায় পাকিস্তানি সৈনিকগণ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেন । সেদিন পূর্ব পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশে পরিণত হলো।এই ছিলো তাদের মোটামোটি ইতিহাসের পাঠ্য বইয়ে বর্ননা।সম্ভবত লেখকের ঐ শেষ লাইনটি লিখতে খুব কষ্ট হয়েছিল-স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ! কারন পাকিস্তানে ১৬ ডিসেম্বর মানে তো ‘ফল অফ ঢাকা’ নামে শোক পালনের দিবস।

তবে পাকিস্তানের ‘ও লেভেল’ এর ইতিহাস বইতে তুলনা মূলক বেশ ভালো লেখা আছে।রিজওয়ানা জাহিদ আহমেদের ‘Pakistan– The Real Picture (A Comprehensive History Course)’ বইতে পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর বর্বরচিত কুকীর্তির কথা লেখা আছে।সম্ভবত এটিই এক মাত্র পাঠ্যবই,যেখানে এই কথা গুলো আছে।কিন্তু সবার তো আর এই বই পড়ার কথা নয়।পাকিস্তানের অধিকাংশ শিশুই ছোটবেলা থেকে এটি পড়ে বা জেনেই বড় হয়েছে যে,‘ভারতের ষড়যন্ত্রে একটি গণ্ডগোলের ফসল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানি ‘ভাই’দেরকে তাদের ছেড়ে চলে আসতে হয়।এই সব মিথ্যে ইতিহাসকে ভিত্তি করে গল্প উপন্যাস তো আছেই।

আজকে যে বা যারাই আফ্রিদি আর ইমরানের চুমো দিচ্ছেন তাদের ভাবা উচিত তারাও ছোট বেলায় এমন সব মিথ্যে ইতিহাস পড়েই বড় হয়েছেন কিন্তু কখনো তারা এর বিরোধীতা সংশোধন বা প্রতিবাদও করেননি।সুতরাং এত কেনো নাপাকি প্রেমী।এ দেশটাকে যারা স্বাধীন করে শহীদ হয়েছেন তারাঁতো বলা যায় অনেকটা বেচে গেছেন আর যারাঁ এখনো জীবিত আছেন তাদের মুষ্টিমেয় কয়েকজন চতুর ছাড়া বাকী নিদারুণ কষ্টে আছেন।কষ্টে আছে পেটে ভাতে,অপমানে,অবহেলায়,কষ্টে আছেন তাদের নিয়ে রাজনিতীতে।তাদের দুঃখ কষ্ট লাগবে আসছে সরকার আরো সচেতন হবেন এই কাম্য।সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি রইল বিনম্ভ্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।

তথ্য:অনলাইন বিভিন্ন সাইট
ছবি:অনলাইন কালেক্টসন

১৩৩৫জন ১৩৩৫জন
0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ