আমি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিলাম, হঠাৎ বোনের চিৎকারে সব পন্ড হল! চোখ খুলতেই কতগুলো ‘ম্যাগোটস’ চোখে পড়ল পায়ের কাছে! আমি ভ্রুক্ষেপ না করে ছুটে গেলাম প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই!
– ” ভাইয়া, ফ্রিজের মধ্যে কৌটায় এইটা কি?”
– ” ওহ? এর জন্য এতো জোড়ে চিৎকার! এইটা একটা ‘টার্ডিগ্রাডস’ ”
– ” মানে কি? টার্ডিগ্রাডস কি, আর এইটা কোথা থেকে আসলো? ”
– “এইটা আমি পুষছি! টার্ডিগ্রাডস নামটা অবশ্য কম মানুষই শুনেছে ! এইটার আরেক নাম ‘ওয়াটার বিয়ার’ বা সমূদ্র ভাল্লুক! মাত্র ১.৫ মি.মি, এইটা আমার পোষা, মানে দুইদিন হল পুষছি আর কি! কথা শিখানোর চেষ্টাও করছি! এইটার নাম দিছি ‘ভুচকু’! ডাক দিলেই দেখবি কিভাবে নাক কোচকায়! দে, একবার ডাক দে! ”
– ” হোয়াট দা ফিস! পাইলি কই এই জিনিস? আর ডিপ ফ্রিজে রাখছিস কেন! মরে যাবেনা? ”
-” না রে এইটা সেই চীজ, মাইনাস ২৭২ ডিগ্রি পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে! অর্থাৎ মহাবিশ্বের সবচেয়ে ‘কোল্ডেস্ট প্লেস’ বুমেরাং নেবুলাতেও ( মাইনাস ২৭২.৪ ডিগ্রি) এটা বেঁচে থাকবে ! শুধু তাই না, এই দেখ- ”
আমি ওটাকে তুলে এনে ঢাকনা খুলে কিচেনে নিয়ে গেলাম! তারপর যে ডেকচিতে পানি সিদ্ধ হচ্ছিল ওটাতে আমার বরফ হয়ে থাকা ‘ওয়াটার বিয়ারটা’ টা পুচুক করে ফেলে দিলাম! ফোসসসসস করে একটা ভয়ানক শব্দ হল!
– ” এইটা কি করলিরে হারামী? তোর কি মাথা খারাপ? পাগল হচ্ছিস দিনদিন!”
– “শোন শোন আগে, আমার ভুচকু কোনো সাধারণ প্রাণি না! ফুটন্ত পানির তাপমাত্রা মাত্র ১০০ ডিগ্রী, ৩০০ ডিগ্রীতেও এই ব্যাটা আরামে বেঁচে থাকতে পারে!! বুঝলি?”
– ” তোর ফালতু ঘ্যানঘ্যানানি পরে, প্রাণিটা তোল আগে! আহারে তুই এই রকম আবাল মানুষের হাতেই ধরা পড়লি, তোর উপর না জানি কতইনা অত্যাচার করবে, বাঁচতে দিবিনা প্রানীটাকে রে শয়তান! যেখান থেকে এনেছিস ওখানেই রেখে আয়”
– ” এটা অত সহজে মরার জিনিস না গাধি, এর আয়ু কত তুই জানিস? জানিস না দেখেই এমন বলছিস! এই প্রানির আয়ু কমপক্ষে ১৫ লক্ষ বছর! আই রিপিট, ১৫ লক্ষ…!! এটা সাগরের তলায় ১৩০০০ ফিট নীচেও বাঁচতে পারে, এভারেস্টের চূড়ায় ২০,০০০ ফুট উপরেও বাঁচতে পারে! তুই এটা কে মহাশুন্যে ছুড়ে দিলে সেখানেও অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকবে! ”
(আমি জ্ঞানীর মত হাসি মুখ করে শার্টের ভাজ খুলতেই দুটো ‘ম্যাগোটস’ নিচে পড়ল!)
– ” বলিস কি !! তুই কই পেলি এটা বললি না? ”
– ” পানির মধ্যে শ্যাওলা পঁচিয়ে কিছুদিন রেখে দিলে এটা চলে আসতে পারে, আমি ওভাবেই পেয়ে গেছি! ”
বোন আমার অবাক হয়ে রহস্যময়ীর মত তাকিয়ে দেখছে ওটাকে, আমি প্যান্ট ঝাড়তে ঝাড়তে রুমে চলে এলাম! গা থেকে আরো কতগুলি ‘ম্যাগোটস’ ঝরে পড়ল!!
গত কিছুদিন ধরে আমি যেখানে বসি সেখানেই ‘ম্যাগোটস’ চলে আসে! জানিনা কেনো! তবে মনে মৃত্যুভয় ঢুকে গেছে!! ‘ম্যাগোটস’ শুধু মাত্র মৃত প্রানীর আশেপাশেই ঘোরে! লার্ভা জাতীয়, ব্লোফ্লাই এর বাচ্চা! মৃত প্রানীর মাংসই এদের একমাত্র খাদ্য!
সারা পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীরা অমরত্ব নিয়ে গবেষনা করছে টার্ডিগ্রাডস, জেলী ফিস, হাইড্রাদের নিয়ে!
আমি বিজ্ঞানী নই, তবু একটা টার্ডিগ্রাডস হাতে নিয়ে বসে থাকি, ওকে কথা শিখাই!
-” ও ভুচকু, শোনা আমার, বলত- রে মানিক মৃত্যুকে এড়ানোর গোপন সিক্রেট টা কি? বলতে পারলে তোর জন্য একটা গোপন পুরষ্কার আছে….!”
ভুচকু শোনা আমার উত্তর দেয়না, কিছু জিজ্ঞেস করলে অদ্ভুত ভাবে কেঁপে কেঁপে শুধু নাক কোচকায়! এর দ্বারা ও কি বোঝায় কে জানে?? 🙂
১৩টি মন্তব্য
ইঞ্জা
কিছুই বুঝিনি ভাই, এইটা কি সাইন্স ফিকশন নাকি অদ্ভুতুড়ে গল্প?
শাওন এরিক
এটা সায়েন্স ফিকশন না! 😀
কিছু বাস্তব তথ্যমূলক কাল্পনিক গল্প!!
আবু খায়ের আনিছ
এই রকম প্রাণীর নাম এই প্রথম শুনলাম।
বেচেঁ থাকার মাঝে মহত্ত নেই, সুতরাং স্বাভাবিক সময়ে সুস্থ ভাবে মরে যেতে চাই। তাই এই প্রাণী হাতে পেলেও কোনদিন চেষ্টা করতাম না বলেই মনে হয়। অবশ্য ক্ষমতা মানুষকে নষ্ট করে দেয়। ভিন্ন কিছুও হতে পারত।
ভালো লাগল, ধন্যবাদ আপনাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
টার্ডিগ্রাটস প্রথম শুনলাম নামটা।
দেখার ইচ্ছে আছে, কেমন দেখতে! একটা ছবি যদি দিতেন! কতো বিচিত্র ধরণের প্রাণী যে আছে এ জগতে।
ভেবে অবাক হই। তবে একই গোত্রের প্রাণীর মধ্যে কোনো অমিল পাওয়া যায়না, অথচ মানুষ একই গোত্রের হলেও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কতো ভিন্ন!
ভালো লাগলো লেখাটি।
শাওন এরিক
যাক ছবি দিতে পেরেছি ঠিক মত! 🙂
ঠিকই বলেছেন। সম্ভবত মানুষই একমাত্র স্ববিধ্বংসী প্রাণী। এই কারনটার জন্য তাদের মনে হয় ঠিক ওতটা বুদ্ধিমান বলা যাবে না!
নীলাঞ্জনা নীলা
ছবিটা দেখেই গা শিরশিরিয়ে উঠলো।
তবে ধন্যবাদ ছবিটি দেয়ার জন্যে।
মৌনতা রিতু
গল্পটা সত্যি বুঝতে পারিনি। শুধু বুঝলাম অদ্ভুদ এক নাম না জানা প্রানীটি ডিপ ফ্রিজ ও ফুটন্ত পানিতে গেল। পনেরো লক্ষ বছর বেঁচে থাকে।
নতুন অন্যরকম একটটা গল্প। যা বোধগম্য হল না। তবুও ভাল লাগল।
ধন্যবাদ।
শাওন এরিক
😀
ছাইরাছ হেলাল
ভাল লাগল,
গল্পে এক অর্থে অমরত্ব খুঁজছেন বলেই মনে হলো।
শাওন এরিক
না ঠিক তা না! আপাতত মরতে চাইছিনা এই আর কি!! :p
মোঃ মজিবর রহমান
কি কইলেন ভাই সাব এততেই বাঁচে,
অমরত্ব হোক তাঁর।
মেহেরী তাজ
প্রাণিবিদ্যার স্টুডেন্ট হয়েও এই নাম শুনিনি আগে।
কি ভয়ংকর ব্যাপার মৃত প্রাণীর ধারেকাছে ঘুরে যে প্রানী সে প্রাণী পোষা হয় কেমনে?
যাই হোক জানতে পেরে ভাল্লাগলো!
শাওন এরিক
না না! মৃত প্রাণির আশে পাশে ঘোরেনা টার্ডিগ্রাটস! ওটাতো Maggots!! 🙂 Maggots তো পোষা নয়!!
ভালো লাগার মত কিছু দিতে পেরেছি জেনে খুশি হলাম 😀