জিম্বাবিউয়ে সাফারিঃ পৃথিবীর পথে পথে, সাল ২০০৬

নার্গিস রশিদ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:৪০:১৫অপরাহ্ন ভ্রমণ মন্তব্য নাই

 

পৃথিবীর পথে পথেঃ ভ্রমণ কাহিনী , জিম্বাবিউয়ে,  সাফারি , সাল ২০০৬ 

“If  I’ve  ever seen magic it’s been in Africa”

 

জিম্বাবিউয় সাফারি

দুই দিন ধরে ভিক্টোরিয়া ওয়াটার ফলস দেখে  তৃতীয় দিন আমরা রওনা দিলাম  জিম্বাবিউ সাফারি করতে । সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট সেরে রওনা দিলাম সাফারির উদ্দেশ্যে । অনেক দূরের পথ এটি।

যাহোক দীর্ঘ পথ যেতে যেতে জিম্বাবিউ কে দেখার সুযোগ হল। সমস্ত জিম্বাবিউ ফাঁকা ,মানুষ জন বাড়ি ঘর কিংবা চাষ বাসও নাই । আছে শুধু জঙ্গল । যা আপনা আপনেই জন্ম হয়েছে। আমাদের সুন্দর বোন বা নেপালের ঘন জঙ্গলের মতো নয়।যেহেতু ট্রপিক্যাল ওয়েদার নয় তাই বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম।মাঝে মাঝে জিরাফ চোখে পড়েছিল ।

অবশেষে আমরা এসে পড়লাম সাফারি স্পটে। এটি একটি সংরক্ষিত বোন । নাম হয়াঙ্গে ন্যাস্যানাল পার্ক ( Hwang N P) । এই জঙ্গলে ‘বিগ ফাইভ’ দেখতে পাওয়া যাবে। বিগ ফাইভ অর্থাৎ সিংহ,হাতি,রাইনো,জিরাফএবং ওয়াইল্ড বাফেলো ।তা ছাড়া জেব্রা, উইলডারবিস্ট, হরিণ,চিতা, হিপোপটামাস এসব তো আছেই।

সেখানে গিয়ে আমরা একটা মাঝারি সাইজের বোট ভাড়া করে শুরু করলাম নদী সাফারি।

নদী থেকে যত জীব জন্তু দেখা যায় সেসব তো থাকবেই তার সাথে তো কুমীর আছেই । আমাদের পরিবার প্রাইভেট ভাবে একটা বোট নিলাম। নৌকা চালক শুধু  যে নৌকাই চালায় তাই নয়।  তার সাথে তার আছে জীব জন্তু সম্বন্ধে অনেক জ্ঞান।

এক জায়গায় দেখলাম দলে দলে হাতী পানি খেতে এসেছে তার সাথে অন্য জীব যেমন জেব্রা, উইলডার বিস্ট এবং ওয়ইল্ড বাফেলো । সারা দিন  তারা খায়  তার সাথে দরকার বিপুল পানি। হাতী পানি পান করে সবচেয়ে বেশি ।তা ছাড়া হাতী তাপ থেকে রক্ষ্যা পেতে পানিতে নেমে গড়াগড়ি করতে পছন্দ করে।  হিপোপটামাসের পানি দরকার নিজেকে ডুবিয়ে রাখার জন্য। তাদের চামড়া রোদ সহ্য করতে পারেনা। চামড়াই ফাটল ধরে। কুমীর তো পানিতেই থাকে ।

নৌকা চালক সাবধান করে দিলো পানিতে হাত না দিতে,  বা নৌকার ধারে না বসতে। কারন কুমীর লাফ দিয়ে ধরে নিতে পারে।  আমরা পানিতে ডুবে থাকা কুমীর দেখলাম । কেউ কেউ আবার ডাঙ্গাই বসে রোদ পোয়াচ্ছে । কত যে কুমীর বলার নয়। আর তার সাথে ডাঙ্গায় কত রকমের জীব জন্তু।

এতদিন দেখেছি টিভির সামনে সাফারি আর একদিন যে স্বচক্ষে তা দেখতে পাবো তা কল্পনায় ছিলনা।

বিরাট লম্বা নদী । মাঝে মাঝে ঘাটের মতো । এই ঘাট দেশের মতো মানুষ চলাচল করে হয় নাই। এটা হয়েছে জীবজন্তুর দল পানি খেতে আসায়। দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার নানান রকমের জীব জন্তু দলে দলে নেমে আসছে নদীর কিনারে পানি খেয়ে চলে যাচ্ছে। আর এই জন্যই বোটে করে সাফারি করার আর একটি আনন্দ । জীবজন্তুর শেষ নাই। এখানে কোনো মানুষ বসবাস করেনা ।করা সম্ভবও নয়।

নামিবিয়া,বোতসোয়ানা, জাম্বিয়া আর জিম্বাবিউ এর  মিলন স্থল (‘Quadripoint Area’)

বোট ম্যান আমরাকে নিয়ে আসলো এমন একটা স্পটে যেখানে চারটি দেশের সীমানা একটা স্পটে । নামিবিয়া, বোতসোয়ানা ,জাম্বিয়া এনং জিম্বাবিউ । এটাকে বলা হয় (Quadripoint Area) নামিবিয়া সরু ভাবে প্রবেশ করেছে এই সীমানার মানচিত্রে  । খালি চোখে কিছু দেখা যাবেনা। কারন এটা একটা  ন্যাচারের অংশ। কোনো কোস্টগার্ড নাই। নৌকা চালক দেখিয়ে দিলো কোনটা কোন দেশের এলাকা। জীবজন্তু তো আর সীমানা বুঝেনা । তারা নিজের মতো যেদিক ইচ্ছা সে দিকে যাচ্ছে।

বোটে সাফারি করে দুপুরের খাবার শেষে এবার আমরা বড়ো  সরো  জীপে উঠলাম একটা দলের সাথে স্থল সাফারি করার জন্য।  যেখানে যে জীব জন্তু দেখা যাচ্ছে সেই জীবজন্তু  কে দেখার জন্য ড্রাইভারদের মধ্যে ফোনে ফোনে যোগাযোগ হয়। তখন সব গাড়ীর চালক নিজ নিজ গাড়ি এনে তা দেখার সুযোগ করে দায়।

এই ভাবে আমরা দেখলাম  সিংহ হাতী, জিরাফ সাম্বা, গণ্ডার আরও কত কি। আসলে জন্তুর সমাবেশ দেখতে চাইলে এই আফ্রিকাতেই আসতে হবে। এতো এতো জন্তু শুধু এই আফ্রিকাতেই আছে । তবে উত্তর আফ্রিকা নয়। আর একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম মানুষ দেখে এই জন্তু গুলো এতোই অভ্যস্ত হয়ে গেছে তারা পালিয়ে যায়না। তারা তাদের কাজ করে যাচ্ছে।

সারা দিনের সাফারি শেষ করে আবার আমরা সন্ধ্যার দিকে ফিরে আসলাম আমাদের রিসর্টে

পরের দিন স্থানীয় একটা কাঁচা বাজার গেলাম । প্রত্যেক টা  দেশে আমি  আইটেনারিতে রাখি গ্রাম ভিজিট, বাজার ভিজিট, লোকাল ড্যান্স আর মিউজিয়াম দেখা। অনেক টুরিস্টই অবশ্য এগুলো পছন্দ করে। কারন মানুষের খুব সান্নিধ্যে আসা যায় ।

গ্রাম ভিজিটঃ

জিম্বাবিউ এর একটা গ্রামের বাড়ি দেখতে গেলাম । চারদিকে  কোনো  ঘেরা দেয়া নাই । গোলাকার সাইজের কয়েকটা ঘর । টয়লেট নাই । মানুষ জন খুব দরিদ্র। কাজ নাই ইনফ্লেসান খুব বেশি। টাকার মূল্য কম। মানুষ জনের মুখে হতাশা। যেহেতু চারদিকে জঙ্গল তাই রাতে টয়লেট যেতে হয় ভয়ে ভয়ে। রাতে টয়লেট করতে গিয়ে অনেক সময় হায়েনা দল বেঁধে আক্রমণ করে।  তাদের কাছ থেকে শুলাম অনেক সময় সিংহ ঘরের ছাদে উঠে ভিতরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করে।

মেয়েরাকে ঘরের মধ্যে থাকতে হবে এমন বাধ্য বাধকতার   রীতি দেখলাম না। মেয়েরা বাজারে জিনিস কেনা বেচা দুটোই করছে স্বাধীন ভাবে।

আমরা এদের জু ,কুমীরের হ্যাচারি , অনেক পুরানো বেয়ানব গাছ দেখলাম। সব শেষে বলতে হয় এতো বড়ো দেশ কিন্তু পুরোটায় গাছপালা আর জঙ্গলে ভরা। বেশির ভাগ দেশ সদ্য স্বাধীন হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের হাত থেকে। সরকার করাপ্টটেড । মানুষ পরিস্থিতির শিকার ।মানুষের জীবন খুব বেসিক ।

আফ্রিকার জিম্বাবিউ থেকে এবার ফিরে যাবার  পালা।  মনে হতে থাকলো ‘আবার আসবো’ । কারন আফ্রিকায় তো মানব জাতির আদি স্থান । মনে হতে লাগলোঃ

“If there were one more thing I could do, it would be to go on safari once again”

 

লেখকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস ,লন্ডন

 

৩৩৭জন ৩৩৩জন
0 Shares

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ