PHOTO_20150605_162545আজ ১৯শে জুন বাবা দিবস।যাদের বাবা বেচে আছেন তাদের স্বর্গ যেন তাদের ঘরেই বিদ্যমান।প্রত্যাক সন্তানকে মনে রাখতে হবে পিতা তার জন্ম দাতা।পিতার দয়ায় সে পৃথিবীতে আসতে পেরেছেন।সুতরাং পুত্রের যতই ধন সম্পদ আর জৌলুস থাকুক না কেনো পিতাকে নিজের স্বর্গীয় সম্পদ মনে করার কাছে তা যত সামান্যই বটে।
দাত থাকতে যেমন দাতের মর্যাদা বুঝা বুদ্ধি মানের লক্ষণ তেমনি বাবা থাকতে বাবার আদরটুকু ধরে রাখাটাও বুদ্ধিমানের লক্ষণ।চক্রাকারে মানব জীবনে আজকে যারা সন্তান তারাও এক দিন বাবার আসনে আসবেন তখন হয়তো পুরোপুরি বাবার অনুভুতি বুঝতে পারবেন।এ বিষয়ে নচিকেতার “বিদ্ধাশ্রম” একটি হৃদয় ছোয়া জনপ্রিয় গান শুনলে হৃদয়হীনদের হৃদয় নাড়া দিবে।
ভাগ্যের অনেক জোরে চাল চুলো ক্ষয় করে স্বপ্নের সিঙ্গাপুর পাড়ি জমাই দু বেলা দুমুঠো অন্নের খোজে।আমৃত্যু পরিশ্রম করে পৃথিবীকে পাশ কেটে যাওয়া  বাবার একটাই চাওয়া সন্তানকে তার আদর্শে মানুষ করা।তার আদর্শের ধারে কাছে যেতে না পারলেও অমানুষ হইনি এটা নিশ্চিৎ।
চোখের সামনে পুত্রের বিদেশ যাত্রা বাবার চোখের জল ছলছল করছিল যা প্রকাশ হয় না অনুভুতির আদলে বুঝতে হয় তাইতো বিদায় বেলায় তার চোখের চোখ রেখে কথা বলতে পারিনি হয়তো শুভ যাত্রায় বেঘাত ঘটবে বলে।প্রবাসের সপ্তাহ খানেক পর বাবার চিঠি হাতে এলো।চিঠিটি হাতে পেয়ে মন আনন্দের চেয়ে দুশ্চিন্তায় ছেয়ে যায়।উত্তরে কি লিখব,চিঠিটির ভিতরে হয়তো লিখা আছে ঋণগ্রস্থ বাবার ঋণের ভারে নূয়ে পড়ার কাহিনী।অশ্রুসিক্ত নয়নে চিঠির ভাজ খুললাম…..

প্রিয় মনির হোসেন,
img1443278166846পত্রে আমার দোয়া নিবা।আমি ও আমরা ভাল আছি।তুমি কেমন আছো আশা করি আল্পলাহর রহমতে ভাল আছো।পর সমাচার এই যে,গতকাল তোমার চিঠিতে পেলাম তাতে বিস্তারিত জানলাম,মনে রাখবে ধৈর্য্যই সাফল্যের চাবিকাঠি।তুমি লেখা পড়া জানা,আমার চেয়ে বিবেক বুদ্ধি তোমার কম নয়।বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে বুদ্ধি দিয়ে সাফল্যকে হাতের মুঠোয় আনতে হবে।আমার বিশ্বাস সেই লক্ষ্যে তুমি পৌছতে পারবে।
তোমার মা তোমার খাবার দাবারের প্রতি নজর দিতে বলেছে,আর সর্বোক্ষেত্রে আল্লাহর নাম নিবে দেখবে সকল বালা-মছিবত দূর হয়ে গেছে।পরিবারহীন বিদেশ আল্লাহই এক মাত্র ভরসা।আমাদের কথা তোমাকে চিন্তা করতে হবে না আল্লাহ তার বান্দাদের কোন না কোন উছিলায় হেফাজত করেন।সেই ছোট বেলায় যখন পুকুরে পড়েছিলে সকালে আর বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যায় অনেক খোজাখুজির পর হঠাৎ যখন পানির গভীর হতে তোমাকে তুলে আনল এক সাহসী যুবক,পুকুর ঘাট ভরা ছিল তখন উৎসুক জনতা তোমার নতুন জীবন দানের স্রষ্টার দরবারে ফেলল শত শত জনতার এক লম্বা দীর্ঘশ্বাস।সে দিন হতেই তোমাকে স্রষ্টার হাতে তুলে দিয়েছি তুমি যেখানে,যে অবস্থায় থাকো স্রষ্টা তোমার মঙ্কল করবেন।

আর বিশেষ কি লিখিব আজ এই পর্যন্তই..আল্লাহ তোমার সহায় হউন।
ইতি
তোমার আব্বু

সে দিন মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল কেনো জানি না,মন খারাপের কোন কারনও ছিল না।সাথীরা সবাই কাজে যোগদান করলেও আমি করিনি তখন ভোর পাচটা বাজে।আবারো কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে রইলাম হঠাৎ মোবাইলে রিংয়ের শব্দ শুনে মোবাইলটা ঘুমের ঘোরেই হাতে নিয়ে রিসিভ করলাম।
-হেলো কে মনির?
-হ্যা বলছি কে আপনি?
-আমি বাংলাদেশ থেকে তোমার বোন জামাই,
-অ,দুলাভাই…তা এ সকাল সকাল ফোন করলেন কোন সমস্যা?
-না…মানে….ঐ তোমার খালতো বোন জামাই মনিরে আব্বা মারা গেছেন….
-ইন্নালিল্লা…..কি ভাবে?
-স্টক করে…..।
মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গেল।বোন জামাই আমাকে খুব আদর করতেন।ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলাম প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে মেরিনা বীচে,খোলা আকাশের নীচে প্রান ভরে শীতল বাতাসের পরশ নিলাম।নাহ্ এখানেও মন শান্ত হচ্ছে না,কেমন যেন ছটফট করছে মন।দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত আটটার কাটা বাজল।আবারো দেশ থেকে ফোন এলো।
-হেলো….মনির,
-জি…. দুলা ভাই,হ্যা বলছিতো…কথা বলছেন না কেনো?
-তোমার আব্বা…তোমার আব্বা
বলেই দুলা ভাই হাউ মাউ করে কাদতে লাগলেন…আমার সমস্থ শরীর নিথর হয়ে আসছে,মনে কেমন যেন এক শুণ্যতা ভর করছে….দুলা ভাইয়ের কান্নার সাথে আমারও কান্না এসে যায়।কাদো কাদো ভাষায় বার বার দুলা ভাইকে প্রশ্ন করছি….।
-কি হয়ে আব্বার….বলেন না কেনো?
কান্নার ভাষায় সে বলতে থাকেন।
-তোমার খালাত বোন জামাই মনিরে আব্বাকে কবর দিয়ে বাসায় এসে আব্বা,….আব্বায় কেমন জানি লাগছে বলে হঠাৎ স্টক করেন।শত চেষ্টা করেও বাচাতে পারলাম না আর….।বলে কান্না জুড়ে দেন আর আমার কানে ধরা ফোনটি হাত ফসকে মাটিতে পড়ে গিয়ে আমিও থ’ খেয়ে গেলাম।এই বুঝি নিয়তির খেলা কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে দুজন প্রিয় মানুষের পৃথিবী হতে চির বিদায়।

মানুষের বিদায়ের চিরাচরিত পৃথিবীর এ নিয়মের ব্যাতিক্রম নেই…জন্মিলে মরিতে হইবে এটাই সত্য।এ সব সত্যতার মাঝে কিছু স্মৃতির জন্ম হয় যা আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় আমাদের।তেমনি পুত্রের প্রথম রোজগারের টাকা মা বাবাকে দিতে না পাড়ার যন্ত্রনা আজো আমাকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে পোড়ায়।সেই যে বাবা চোখ ভরা উপচে পরা জলে ইয়ারপোর্টে আমাকে শেষ বিদায় জানায় সে দিনই টের পেয়েছিলাম হয়তো আব্বার সাথে এ আমার শেষ বিদায়-শেষ দেখা কেননা আব্বার চোখের জল বার বার ইঙ্গিত দিচ্ছিল আমাকে বৈদেশে না যাবার।

৭৫০জন ৭৫০জন

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ