রাত দুটো হঠাৎ ঘুমিয়ে যাওয়া শিশুটি চিৎকার দিয়ে উঠল।মা বাবা ভয়ে আতৎকে উঠেন “কি হলো যক্ষের ধনের?কেনো এমন করছে বাবা আমার?নাহ্ কিছুতেই থামছে না চিৎকার আর শরীরটাকে এ পাশ ওপাশ মুচরানো।এত রাতে ডাক্তার কোথায় পাবো?শিশুটি মাঝে মাঝে খিচুনি দিয়ে নির্বাক হয়ে আবার হঠাৎ চিৎকার।এভাবে চলতে থাকে প্রায় ঘন্টা খানেক এরপর বাবা একটি সি এন জি এনে সোজা চলে যান হাসপাতালে।হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসা শেষে ডাক্তার সাহেব কর্তাকে জিজ্ঞাসা করেন রাতে শোবার পূর্বে শিশুটি কি খেয়েছিল?সরলতায় সত্য কথাটিই বলেন মা বাবা “শোবার আগে আম খেয়েছিল”।সেই আমটিতে মনে হয়  ফরমালিনের বিষাক্ত ক্যামিক্যাল ছিল যার জন্য শিশুটির দুধের পেটে হজমের কষ্ট হয় তার প্রতিক্রিয়াই বাচ্চার এ অবস্হা আর একটু সময় নিলে হয়তো শিশুটিকে হারাতে হত।………………………………………………………………………………

প্রশ্ন এখন আপনার বাচ্চাদের কি খাদ্য খাওয়াবেন?কে দিবে আপনাকে খাদ্য সলিটের গ্যারান্টি?তাহলে উপায়?এমন হাজারো প্রশ্ন আজ বাংলাদেশের প্রতিটি পিতা-মাতার।প্রশ্ন শুধু প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে এর সমাধানে না আছে সরকারের ভূমিকা না আছে আমদানীকারক প্রতিষ্টানগুলোর মালিকদের যুগান্তকান্তকারী কোন পদক্ষেপ।তারা হয়তো ভাবছেন “মানুষ মরবে কি বাচবে সেটা তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু তাদের ভবিষৎ সন্তান নায়- নাতনীরা যে ফরমালিনের ক্ষতির মূখে পড়বে না, ফরমালিন যুক্ত খাদ্য ভক্ষন করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?

আমাদের বাংলাদেশের স্হপতি জাতির পিতার কন্যা যাদের ক্ষমতায় বসানোর ক্ষেত্রে অঙ্গীকার ছিল জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চিত করবে,দেশ থেকে দূর্নিতি আর সকল অনিয় দূর করবে,জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে আমাদের চাওয়া থেকে পাওয়ার আশাটা একটু বেশী করতেই পারি কিন্তু আমরা কি পেয়েছিল আশানুরূপ কোন সমাধান,ক্ষমতার ছয় সাত বছরে পেয়েছি কি ভেজাল খাদ্যের বিশেষ কোন সমাধান?পাইনি বরং উল্টো এটাকে রাজনিতীতে ঢুকিয়ে একে সরবরাহ ও আমদানীতে সহজ করে দিয়েছে।  বি এন পি কে ফরমালিন দিয়ে বাচিয়ে রাখা হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্য আমরা কখনও আসা করিনি।জানা মতে ফরমালিন বিষয়ে আইন ২০১৩ খড়সা পাশ হয়েছে এখন দেখার বিষয় এর কার্যকারিতায় কত টুকু সদচ্ছি আছে। আমি ক্ষমতায় এলে সাত দিনে ফরমালিন বন্ধ হবে এরশাদ আর এক রাষ্ট্র নায়ক সে ক্ষমতায় আসতে পারলে তবে !!!এর পূর্বে সব মরে সাফা হয়ে যাক তাতে তার কিছুই আসে যায় না।এই যদি হয় রাজনিতীবিদদের মতামত তাহলে আমাদের মত দূর্ভাগা জাতি আর কে হতে পারেন।গত চার বছরে প্রায় ১১শ টন ফরমালিন আমদানী হয়েছে এ গুলো ব্যাবহার হলো কোথায়?সম্ভবত ৩৮টি প্রতিষ্টান ফরমালিন আমদানী করে কিন্তু কেনো এত গুলো প্রতিষ্টান ফরমালিন আমদানীর এবং এর যথাযথ ব্যাবহারের খোজঁ কেউ কি রাখেন?

এখন দেখা যাক ফরমালিন আসলেই কি এবং মানব জীবনে এর ক্ষতিগুলো ও এর প্রভাব থেকে উপায়গুলো সম্ভাব্য কি কি সংক্ষেপে আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

(y) ফরমালিন কি?

এটি একটি দাহ্য পদার্থ,তীব্র ঝাঝালো গন্ধ যুক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা মিথান্যাল গ্যাসের ৪০% জলীয় দ্রবনই ফরমালিন।প্রায় ৫০০০ সেঃ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত কপার প্রভাবকের উপর দিয়ে মিথানলের বাষ্প ও বায়ুর মিশ্রনকে চালনা করলে মিথানল আংশিক জারিত হয়ে মিথান্যাল ও পানি বাষ্প উৎপন্ন হয়।ঐ মিথানল গ্যাসকে পানিতে চালনা করলে যা ৩০-৪০% জলীয় দ্রবণ উৎপন্ন হয় তাই ফরমালিন H-CHO।

 

(y) ব্যাবহার, ক্ষতি এবং বাচার উপায়

বিশ্বে বছরে মোট ১৬ বিলিয়ন পাউন্ড উৎপাদনের ৮.২ বিলিয়ন পাউন্ড ফরমালিন উৎপাদন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে।এর ৬০ শতাংশ কাঠ বা ফার্নিচার এবং কনষ্ট্রাকশনস কাজে কঠিন ও শক্ত করার কাজে ৩০ শতাংশ রাসায়নিক পদার্থ তৈরীতে,৭ শতাংশ ফরমালডিহাইড থার্মোপ্লাষ্টিক রেজিন উৎপাদনে ০২ শতাংশ পোষাক শিল্পে বা আবরণ যেমন পোষাক সাদা কারক,ফিনিসার,চামড়ার ভাজঁ ও রেখা দূর করা এবং ১শতাংশ ব্যাবহার হয় বিভিন্ন প্রসাধনি উৎপাদনে।এছাড়া মৃত দেহ সংরক্ষনের জন্য সবচেয়ে গ্রহন যোগ্য উপাদান যা ১৮৯৯ সাল হতে শুরু করে।মাছের প্রোটোজোয়া এবং ছত্রাক জনিত রোগে ব্যাবহার করা হয়।এছাড়াও ল্যাবরেটরীতে প্রিজারভেটিভ হিসাবে ফরমালিন ব্যাবহৃত হয়।

ফরমালিন শিল্পের শ্রমিকদের উপর পরিচালিত কিছু গভেষনায় দেখা গেছে যে কাজ করার ফলে তাদের নাকের ক্যান্সার,ন্যাসোফেরিঞ্জিয়াল ক্যান্সার এবং লিউকেমিয়া হওয়ার প্রবনতা সবচেয়ে বেশী।এছাড়াও ফুসফুস,কিডনির সমস্যাও দেখা যায়।এর প্রভাবে মানব দেহে চর্ম এলার্জি,শ্বসন সংবেদন,অ্যাজমা এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ভ্রুণের অস্বাভাবিকতা,গর্ভপাত,গর্ভস্রাভ,প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে প্রসবে মারাত্ত্বক হুমকির মধ্যে পড়তে হয়।

মাছ বা সিজনাল ফলের মধ্যে এর অপব্যাবহার একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারনে এখনও এর প্রভাবে ক্ষতিকর দিকটি পুরোপুরি গবেষনায় আসেনি আর কোন খাবারটির মধ্যে ফরমালিন নিশ্চিত আছে কি না তা জানা আমাদের দেশে এখনও অজ্ঞ।স্বাস্হ্য ঝুকি ছাড়াও ফরমালিন মিশ্রিত খাদ্য গ্রহনের ফলে মানব দেহে ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে এর নানাবিদ জটিলতা বা গেস্ট্রো-ইন্টেস্টাইনাল ক্যান্সার সহ অন্যান্য জটিল রোগে ভোগতে পারে।এ ছাড়াও চোখেরঁ রেটিনার কোষ ধ্বংস করে রেটিনাকে অকার্যকর করে।মানব দেহে ফরমালিন ফরমালডিহাইড ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়ে রক্তে এসিডিটি পরিমান বাড়িয়ে শ্বাস প্রশ্বাস অস্বাভাবিক ভাবে উঠা নামা করায়।ফরমালিন সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু শিশু ওবৃদ্ধদের বেলায় বেশী ঝুকিপূর্ণ।ফরমালিন যুক্ত খাবার দুধ কলা মাছ মাংসের মতন বিষাক্ত খাবার খেয়ে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে বসে।বুদ্ধিমত্তা হ্রাস সহ ফুসফুস, কিডনি,লিভার ,হার্টের জটিল সমস্যা হয় এবং বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে মরন ব্যাধি ক্যান্সারেও আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

(y) ফরমালিন দেখতে অনেকটা সাদা পাউডারের মতন পানিতে সহজে দ্রবনীয়।পরীক্ষা করে দেখা গেছে শুধু পানিতে প্রায় এক ঘন্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফরমালিনের মাত্রার পরিমান কমে ৬০-৬১ ভাগ কমে যায়।

(y) লবনাক্ত পানিতে এক ঘন্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ৯০ ভাগ ফরমালিনের মাত্রা কমে যায়

(y) প্রথম চাউল ধোয়া পানিতে ও পরে সাধারন পানিতে ফরমালিন যুক্ত মাছ ধুলে শতকরা ৭০ ভাগ কমে যাবে।

                                                            (y) সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হলো পানি ও ভিনেগার মিশ্রনে যা ১০% আয়াতন অনুযায়ী ১৫ মিনিট  ভিজিয়েঁ রাখলে শতকরা ১০০ ভাগ বিসুদ্ধ নিশ্চিত থাকা যায়

-{@ ফল ও সবজি হতে ফরমালিন দূর করা -{@

(y) ফরমালিন নামক যে ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ক্রয়কৃত ফলগুলতে দেয়া হউক না কেনো খাবারের পূর্বে এক ঘন্টা বা তার চেয়ে বেশী সময় ফলগুলোকে পানিতে ভিজিয়েঁ রাখলে মোটামোটি নিশ্চিত থাকা যায়।

(y) লিচু কাচাঁ অবস্হায় সবুজ পাকলে ইটা লাল গাছে ফরমালিন স্প্রে করার কারনে লিচুর রং হয় গাঢ় মেজেনটা এটা কোন মতেই খাওয়া যাবে না ।

(y) সবজি রান্না করার আগে গরম পানিতে লবন মিশিয়ে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।

(y) বাজারে সতেজ,উজ্জ্বল বেগুন বা অন্যান্য সবজি না ক্রয় করে কিছুটা অনুজ্জ্বল,পোকায় কিছুটা আক্রান্ত এমন সবজি ক্রয়ই ভাল।

“আর কি বলব

অবশ্য বলার কিছুই নেই

মানুষ এবং বিবেকের যুদ্ধ

অপেক্ষায় থাকা”।

সহযোগিতায়:ইন্টারনেট

৫৯৪জন ৫৯৪জন
0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ