আবারও গণধর্ষণ!!
সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিষয়টা দেখা যাচ্ছে, আগে দেখা যেতো নিম্নমানের লোকগুলোই এই অপকর্মগুলো করে বেড়াতো। যাদের কোন সামাজিক গ্রাউন্ড ছিলো না। পরিবার বলে কিছু ছিলো না। আর থাকলেও অশিক্ষা, কুশিক্ষা যাদের মানুষ হওয়ার পথে অন্তরায় ছিলো।
কিন্তু দিনকে দিন দেখা যাচ্ছে, এই পাশবিক কর্মটিতে এখন তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের কতিপয় কুলাঙ্গার যুক্ত হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে কি বলবেন আমি জানি না।
কিন্তু আমি যা দেখি, আমাদের ক্রমবর্ধমান শিক্ষার হার যে গতিতে বাড়ছে, সুশিক্ষা ঠিক সে গতিতে বাড়ছে না। অক্ষরজ্ঞানে পরিপূর্ণ হলেও নৈতিকতাবোধসম্পন্ন শিক্ষিত লোক ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
ছোটবেলা আমার খুব মনে আছে, বাবা ভোরবেলা নামাজ সেরেই আমাদের নিয়ে বসতেন। প্রথমে আরবী সুরা কয়েকটা মুখস্ত পাঠ করাতেন, তারপর স্রোতলিপি পড়াতেন-
*’সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেনো ভালো হয়ে চলি।
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেনো সেই কাজ করি ভালো মনে।’
*’সদা সত্য কথা বলিবে, কখনো মিথ্যা বলিও না।’
*’মিথ্যা বলা মহাপাপ।’
*গুরুজনকে করো ভক্তি।’
এমন আরো অনেক আছে, যা পড়তে পড়তে অবচেতন মনেই মস্তিষ্কে এক ধরনের ক্রিয়া কাজ করতো। শিশুমনে গেঁথে যাওয়া এসব বাক্য সারাজীবন পথ চলায় বাতি হিসাবে কাজ করেছে। এখনকার মা-বাবা কি তার সন্তানটিকে নৈতিক শিক্ষার এ দীক্ষাটুকু দেন? ঘর থেকেই তো মানবশিশুর শিক্ষার শুরু। নৈতিক মূল্যবোধ জাগাতে না পারলে অক্ষরজ্ঞানে পরিপূর্ণ সন্তানটির তো নৈতিক অধঃপতন ঘটবেই।
একসময় খুব ছোট্টবয়সে দেখতাম পাড়ার কোন কোন বিত্তশালী লোক কেমন যেনো মাথা নীচু করে পথ চলতো। দিনেদিনে সমাজে নৈতিকতার মানদণ্ড নিম্নমুখী হওয়ায় সে সময়ে যে ক্যাটাগরির মানুষ সমাজে মাথা নীচু করে পথ চলতো আজ তারাই সমাজে মাথা উচুঁ করে চলে।
তাই বলছি, জাগো সমাজ! যেভাবে শিক্ষিত ছেলেপেলেরা উৎসব করে গণধর্ষণে দলবেঁধে নামছে, বর্তমানের টাকাওয়ালা দুর্নীতিবাজদের মতো একসময় ধর্ষকরাও সমাজে মাথা উঁচু করে পথ চলবে।
আমার বাবা ছিলেন ব্যাংকার। এখনকার ব্যাংকারদের মতো তেমন মানসম্মত বেতন তখন ছিলো না। হাতেগোনা টাকা দিয়েই সারামাস কোনরকমে চলতে হতো। কিন্তু তারপরও দেখতাম সেই বিত্তশালী লোকটি বাবার সাথে কেমন নীচু স্বরেই কথা বলতো, সমীহ করতো। এমনকি পাড়াতেও সে মাথা নীচু করেই পথ চলতো। প্রতিবেশির কাছে আমার বাবা যতোটা সম্মানের ছিলেন তার একআনাও অই লোকটির প্রতি তারা দেখাতো না। বরং আড়ালে তাকে কালোবাজারি বলেই ট্রিট করা হতো।
অথচ, আজ টাকাওয়ালাদেরই জয় জয়কার। কোথা থেকে, কেমন করে, সে টাকা উপার্জন হচ্ছে তা নিয়ে কারো কোনা মাথা ব্যাথা নেই। সবাই জানছে লোকটি ঘোষখোর অথবা সীমান্তে তার ইয়াবা ব্যবসা আছে অথবা সে অবৈধ মানব পাচারকারী তবুও তার টাকা আছে, কাজেই সে মানিলোক, সাদালোক, এক্কেবারে ফকফকা!!
ধর্ষণের মতো মানবিক অপরাধও কি একসময় সমাজে স্বাভাবিক জায়গা করে নেবে? আজ যদি ধর্ষণকে কেবল নারী বিষয়ক সমস্যা বলে এড়িয়ে যাওয়া হয় তবে ভবিষ্যতে তা সমাজের জন্যই বিষফোঁড়া হিসাবে দেখা দেবে।
কাজেই জাগো সমাজ….
২৪টি মন্তব্য
স্বপ্ন
নৈতিকতার শিক্ষা আমাদের কমে যাচ্ছে দিন দিন।পিতাই আজকাল অনৈতিক কাজ করেন,সেখানে তিনি আর নৈতিকতা শিক্ষার ধারক হতে পারেন না।ধর্ষন হয়ত এক সময় স্বাভাবিক একটি ঘটনা হয়ে যাবে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমি আশাবাদী।
যুগেযুগে, শতাব্দীকাল ধরে অমন পশুরুপী দু-একজন মানুষ ছিলো, থাকবে। তাই বলে তো আর আশা ছেড়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকলে হবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে আর সেসাথে আলোর পথে সমাজকে এগিয়ে রাখতে হবে। বিবেকবান মানুষকে সদাতৎপর থাকতে হবে।
জিসান শা ইকরাম
ধর্ষন পরবর্তি মিডিয়ার ভুমিকা,প্রচলিত আইন,সামাজিক মনোভাব না পাল্টাতে পারলে ধর্ষন কমবে না।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আগে সামাজিক মনোভাব পালটানো জরুরী। এর জন্য জরুরী মানুষের মধ্যে বোধকে জাগ্রত করা।
অরণ্য
“অক্ষরজ্ঞানে পরিপূর্ণ হলেও নৈতিকতাবোধসম্পন্ন শিক্ষিত লোক ক্রমেই কমে যাচ্ছে।” – খুবই দুঃখজনক কিন্তু চরম সত্য।
আমরা অনেকেই এডুকেশনের নামে আসলে ছুটছি লিটারেসির দিকে। এ তারই ফসল। 🙁
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ঠিক তাই।
আর সে জন্যেই সমাজে ঐশীদের মতো দিকভ্রান্ত সন্তানদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে মা-বাবার কাছে নীতির থেকে প্রীতি প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি, যা সন্তানকে বেপড়োয়া করে তুলছে।
সীমান্ত উন্মাদ
সবার আগে আমাদের দেশের ৭৫ পরবর্তী সময়ে গনতন্ত্রকে গন ধর্ষণ করে আসা মানুষগুলোকে শাস্তি দিতে হবে, ভাবছেন কেন এই কথা বললাম? কারন আইনের শাসন নষ্ট করেছে এই সব মানুষগুলো। আর আইনের শাসন যেই দেশে নষ্ট সেই দেশে কখনো সঠিক বিচার হয়না, হয় ব্যাভিচার। যখন এই সব প্রতিনিয়ত ঘটে বিচারের নামে প্রহসনে, তখন সবাই সাহস পেয়ে যায়।
আমার মতে ধর্ষণ প্রমান হবার সাথে সাথে জন সমুখে যদি এদের গুলি করে মারা হয় তবেই কমবে নষ্টদের ঘৃন্য নষ্টামী। এদের জন্য কোন রিমান্ড কিংবা আদালতের দরকার নাই।
শুভকামনা জানিবন নিরন্তর।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, নষ্ট সমাজ গড়ে উঠার পেছনে ৭৫ পরবর্তী সুবিধাবাদী স্বৈরচারী সরকার ও তারপর গণতন্ত্রের মুখোশে তাদের দোসর সহায়ক ভুমিকা রেখেছে নিজেদের টিকিয়ে রাখার স্বার্থ বিবেচনা করে।
কিন্তু এখন যখন সরকারপ্রধান নিজেই তা নির্মূলে সচেষ্ট। তাই আমাদের সামাজিক ভুমিকা রেখে তাঁকে সহায়তা করা জরুরী এবং তা যে যেভাবে পারি। কারন দেশটা তো আমাদের। আমরা সজাগ এবং তৎপর থাকলে প্রতিকূল পরিবেশে সরকারপ্রধানের হাত শক্তিশালী হবে।
সীমান্ত উন্মাদ
একদমই ঠিক। তবে এই সামাজিক এই আন্দলনের পাশাপাশি আমার মতে প্রাইমারী লেভেল থেকেই আমাদের নৈতিক শিক্ষা বিষয়টা চালু করা উচিত। কারন ছোটরা কিন্তু এই গুলো দেখেই বড় হচ্ছে। তাদের মনে নানা প্রশ্ন জন্ম দিচ্ছে। এর উত্তরগুলো তাদের সঠিক ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(y)
শুন্য শুন্যালয়
এখনকার মা বাবা অনেকের মুখেই শুনেছি ….কমপিটিশন খুব বেড়ে গেছে। কিন্ডার থেকেই শুরু করিয়ে দেয়া হয় সেই প্রতিযোগিতার পেছনে। মানবিক বোধ, সুষ্ঠ শিক্ষার শিক্ষা দেয়া হয়ই না, এতো সময়ই বা কোথায়? আর রয়েছে অন্যায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব। প্রতিদিন কতো যে ধর্ষনের খবর শুনি, কটার বিচারের কথা শুনি আমরা? অন্যায়ের মাথাই যদি এতো উঁচুতে উঠতে থাকে তাহলে এ সমাজ পাতালে যেতে বাধ্য।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, প্রবলেমটা যে শুধু মা-বাবাতেই সীমাবদ্ধ তা নয়, শিক্ষাব্যবস্থায়ও অনেক অসঙ্গতি শিশুদের মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। বয়সের থেকে পড়াশুনার বোঝা বেশি চাপিয়ে দেয়ায় বাচ্চারা খেই হারিয়ে ফেলছে। আর মা-বাবাও স্বাভাবিক শিক্ষা অর্জনের থেকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকাকেই শ্রেয় মনে করছেন। ফলশ্রুতিতে বোধ-বিবেচনাহীন আত্মকেন্দ্রিক অনেকটা যান্ত্রিক মন নিয়ে বাচ্চারা বেড়ে উঠছে।
অন্যায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না ঘরে না বহিরাঙ্গনে হচ্ছে। ঘরে অন্যায় করে পার পেযে যাওয়ায় বাইরে তা ছড়িয়ে পড়ছে। একবার ভাবুন তো, যে কুলাঙ্গার সন্তানটি ধর্ষণের মতো পাশবিক ও অমানবিক অপরাধ করছে সে কি তার পরিবার থেকে বিতাড়িত হচ্ছে? হচ্ছে না।
শিশু রাজনের হত্যাকারী ময়না মিয়ার মায়ের মতো মা এখন এদেশে বিরল, যে মা কিনা আপন সন্তানকে আপরাধের জন্য নিজেই পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
মানুষ পরিবার-পরিজন ছাড়া থাকতে পারে না। কাজেই পরিবারই হচ্ছে প্রধান বিচারালয়, এখানে প্রশ্রয় না পেলে রাষ্ট্র তথা সমাজেও পরিত্যাক্ত।
খেয়ালী মেয়ে
প্রকৃত শিক্ষার বড়ই অভাব–আর এই প্রকৃত শিক্ষার অভাবেই আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কালো অপরাধের জয় জয়কার…….একদিন সব নষ্টদের দখলে চলে যাবে, হুমায়ুন আজাদ যথার্থই বলেছেন………
মারজানা ফেরদৌস রুবা
প্রকৃত শিক্ষার অভাবে আত্মকেন্দ্রিক, বিচার বিবেচনাহীন সমাজবব্যবস্থা গড়ে উঠছে। সমাজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের কমিটমেন্ট নেই। দায়হীনতা সমাজকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ছোট্টবেলায় পড়েছি “কয়েকজন ব্যক্তি মিলে পরিবার, কয়েকটি পরিবার মিলে সমাজ তথা পাড়া, কয়েকটি পাড়া মিলে নগর, কয়েকটি নগর মিলে দেশ তথা রাষ্ট্র।”
কাজেই সমাজ/রাষ্ট্রের পরিবর্তন আনতে গেলে ঘর হতেই তা শুরু করতে হবে। উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুজে আমরা নিজেদেরই ঠকাচ্ছি।
কারন, সমাজে পচন ধরলে তা ঘর পর্যন্ত এসে ঠেকে।
কাজেই জাগো সমাজ….
নীলাঞ্জনা নীলা
প্রতিটি ঘরে মেয়েদেরকেই শিক্ষা দেয়া হয় ঠিকমতো চলতে, অন্যদিকে কয়টি ছেলেকে শেখানো হয় যাতে কোনো মেয়েকে কখনো খারাপ দৃষ্টিতে না দেখে?
ক’জন নারী আছে যারা পুরুষের দৃষ্টি থেকে মুক্ত? শারীরিকভাবে ধর্ষিত করতে যদি না পারে, চোখ দিয়ে প্রতিদিন ক’জন নারী ধর্ষিত হয়? সে হিসেব একজন পুরুষ ঠিকই জানে।
ঘেণ্ণা হয় এসব পুরুষদের।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এটা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান-ধারনার প্রভাব। এর থেকে পরিত্রান পেতে হলে দরকার সুশিক্ষা আর মননে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা।
মিথুন
সমাজের এ অবক্ষয় দিনে দিনে আরো বাড়বে। আমি আশার কিছুই দেখছিনা 🙁
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আশাহত হয়ে যাওয়া থেমে যাওয়াকে তরান্বিত করে। থামলে হবে না। লড়তে হবে, জাগতে হবে, জাগাতে হবে।
সো, বি একটিভ।
ইমন
জাগো সমাজ। অসাধারণ বলেছেন। 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, জাগতে হবে, জাগাতে হবে।
আজিম
হাঁ, সমাজকে জাগতে হবে, হবেই। শুধু এই বিষয়ে নয়, সমস্ত নষ্ট প্রবণতাসমূহের বিরুদ্ধে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, সেই কাজটা আপনাকে, আমাকেই করতে হবে। যে যার অবস্থান থেকেই জাগরণের কাজ করতে হবে।
সঞ্জয় কুমার
সমস্যার সমাধানের কাজ শুরু করতে হবে একবারে ঘর থেকেই । । যৌনতা বিষয়ক বিষয় গুলো সম্পর্কে শিশুদের বোঝাতে হবে । ছোট বেলা থেকেই প্রায় সব শিশু এই বিষয়ে সঠিক ধারণার পরিবর্তে ভুল ধারণা পেয়ে থাকে ।
ছেলেবেলার ভুল জ্ঞানই বড় বেলায় বিপথে চালিত করে
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, ছেলেবেলায় যা মস্তিষ্কে একবার ঢুকে, বড়বেলা সেটাই স্থায়ী হয়।