১.
দাঁড়াও! সাবধানে পা রেখো-
এখানে গণকবর।
কোমল মাটির তলে রক্তের বুদবুদ
এখানে শায়িত তোমার স্বজন।
একদিন যারা মাটি ভালোবেসে
জীবন ধরেছিলো হাতের মুঠোয়
তারাই ঘুমন্ত আজ গণকবরে।
দাঁড়াও! সাবধানে পা রেখো-
এখানে গণকবর।
মাটিতে কান পেতে শোনো কান্নার শব্দ
বুকের জমিনে শোনো মুক্তির আর্তনাদ
হায়েনারা বিধ্বস্ত করেছে স্বপ্ন তোমার।
দাঁড়াও! সাবধানে পা রেখো-
এখানে গণকবর।
চেয়ে দেখো এই জনপদে
মুক্তিকামী মানুষের হাড়, মাথার খুলি
বোনের মেহেদী রাঙা হাত
সেই চিবুক, ঠোঁট, নাক, সেই চোখ।
দাঁড়াও! সাবধানে পা রেখো-
এখানে গণকবর।
এই রক্তমাখা মাটির তলে
অজস্র জীবনের কোলাহল শোনো
আমাদের ব্যর্থতার দুঃসংবাদ
ভেসে আসে বিষাক্ত বাতাসে।
দাঁড়াও! সাবধানে পা রেখো-
এখানে গণকবর।
২.
তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো
এই গণকবর সেদিন ছিলো না।
তাহলে কি ছিলো সেখানে?
ছিলো শ্রমজীবী মানুষের বস্তি, খেলার মাঠ
বহমান আড়িয়াল খাঁ’র টলটলে জল,
পাটকল শ্রমিকের ঘামভেজা আঙিনা,
ক্যান্টিনের কোলাহল, বুড়ো বট গাছ।
তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো
এই গণকবর সেদিন ছিলো না।
ছিলো না অসংখ্য রমণীর চোখের জল
সুফিয়ার করুণ আর্তনাদ।
চুলের ফিতা, ভাঙা চুড়ি, নাকের নোলক
ছেড়া শাড়ি, কপালের টিপ, কানের দুল
এসবের কিছুই ছিলো না।
তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো
এই গণকবর সেদিন ছিলো না।
১০ ডিসেম্বর ২০১২
নর্থ সার্কুলার রোড
ধানমন্ডি, ঢাকা।
৮টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
কতো রক্তের বিনিময়ে এই দেশটা স্বাধীন হলো।
কবিতায় মুগ্ধতা রেখে গেলাম। (y)
সাতকাহন
ধন্যবাদ আপু।
তানজির খান
অনেকদিন পর কোন সহযাত্রীর কবিতায় এতটা দেশ প্রেম ফুটে উঠতে দেখলাম। অসাধারণ হয়েছে কবিতা। আমি মুগ্ধ,একই সাথে তাজা রক্তের আর্তনাদ ছুয়েছে আমাকে।
সাতকাহন
ধন্যবাদ তানজির খান।
অরণ্য
খুব ভাল লাগলো আমার। (y)
শুরুতেই একটা লাইন আমার লেগেছে অসাধারণ; যেন এক লাইনেই খুঁজে পাওয়া যায় গণকবর কি।
“কোমল মাটির তলে রক্তের বুদবুদ” – (y) (y)
সাতকাহন
ধন্যবাদ অরণ্য।
মরুভূমির জলদস্যু
বাবার মুখে শোনা কিছু পুরনো কথার ছবি উঠে এলো।
সাতকাহন
🙂