
ফলের নাম-কাঁঠাল।
কাঁঠাল হলো আমাদের দেশের(বাংলাদেশের) জাতীয় ফল। আকারে বড়,লম্বা কিছুটা মোটাসোটা হয়। আবার গোলাকৃতিও হয়। বাইরের দিকটা কাঁটাযুক্ত কিন্তু কাঁটা গুলো ভোঁতা থাকে। ভেতরের রঙ হলুদ/গাঢ় হলুদ হয়ে থাকে। খেতে মিষ্টি লাগে। পাঁকা কাঁঠালের ঘ্রাণ খুবই তীব্র। অনেকেই সহ্য করতে পারে না। কিন্তু যাদের কাছে এই ফল অত্যন্ত প্রিয় তারা এর ঘ্রাণেই মুলত বেশি আকৃষ্ট হোন। গাছের ধরন/বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক কাঁঠাল গাছে একাধিক কাঁঠাল ধরে। একেকটি কাঁঠালের সাইজ অনেক বড় হয়। বিশালাকৃতির একটা কাঁঠাল অনেক মানুষ মিলে একসাথে বসে খেতে পারেন।
সময়-কাল: কাঁচা কাঁঠাল যারা খেতে পছন্দ করেন তারা একটু আগে আগেই শুরু করে দেন। কাঁচা কাঁঠালকে বলা হয় এঁচোড়। শহুরে এবং গ্রামীণ রান্নায় বিভিন্ন মাংসের সাথে অথবা শুধু সব্জি হিসেবে এঁচোড় বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া এঁচোড়ের কাবাব, এঁচোড় ভর্তা, এঁচোড় এর টক, ইদানীং কালের এঁচোড় বিরিয়ানি ভোজনরসিকদের নিকট মজাদার খাদ্য তালিকায় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
কাঁঠালকে সময়ের আগেই যারা পাঁকিয়ে খেতে চান তারা অনেক ধরনের সিস্টেম অবলম্বন করেন। তার মধ্যে কাঁঠালে শিক দেয়া একটি অন্যতম সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত। এই সিস্টেমে প্রথমে গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে আনতে হয়, তারপর লম্বা সরু সুঁচালো একটা লোহার শিক ( কাঠি) দিয়ে কাঁঠালের এ-মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত ফুঁটো করে দেয়া হয়। এরপর কাঁঠাল পেঁকে যায়/নরম হয়ে যায়।(এই সিস্টেম কিন্তু অন্য ফলের বেলায় কার্যকর হবে না) অনেক সময় পঁচে যাওয়ার রিস্ক থাকে।
সাধারণত জৈষ্ঠ্যমাস থেকে পাঁকা কাঁঠালের মৌসুম শুরু হয়ে যায়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস পর্যন্ত কাঁঠাল প্রেমীদের মাঝে এটা খাওয়ার ধুম লেগে থাকে।
কেউ কেউ নরম আঁশের মিষ্টি কাঁঠালের রোঁয়া (কোষ) খেতে ভালোবাসেন। আবার অনেকে পাঁকা কিন্তু একটু শক্ত রোঁয়া পছন্দ করেন। যারা শক্ত রোঁয়া পছন্দ করেন তাদেরকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে। ঐ সময়ের কাঁঠাল গুলো একটু ব্যতিক্রম হয়।
কাঁঠালের গুণ-দোষঃ প্রচুর ভিটামিনে ভরা কাঁঠালের গুণের শেষ নেই(গুগলে গিয়ে খুঁজে পাবেন)। কাঁঠালের গুণ সম্পর্কে প্রচলিত কিছু জনশ্রুতি না বললেই নয়, যদিও সত্য-মিথ্যার নিরিখ করা হয়ে উঠেনি।
কাঁঠাল খেলে নাকি ভালো ঘুম হয়,গায়ের রঙ ফরসা হয়, চুল পরা বন্ধ হয়, শরীরে শক্তি বাড়ে, চোখের জ্যেতি বাড়ে, মন ফুরফুরে থাকে, বাচ্চারা খেলে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায় আর বৃদ্ধরা খাওয়ার পরে যৌবন ফিরে পায়!
দোষের মধ্যে গুরুতর দোষ হলো বেশি খেলে পেট খারাপ হবে। প্রচুর গরম লাগবে। ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাবে, সুগারের রোগীদের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
এবার আসি বিঁচিতে: কাঁঠালের আকার-প্রকার-গুণ-দোষ সব কিছু সহ আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো এর বিঁচি মানে আঁটি। অন্যান্য ফলের মতো কাঁঠালের আঁটি/বিঁচি কিন্তু ফেলে দেয়ার জিনিস নয়। অনেকের কাছে কাঁঠালের মতো বা তার চাইতেও বেশি প্রিয় আর আদরের জিনিস হলো এই কাঁঠালের আঁটি/বিঁচি। ( আরেকদিন হয়তো লিখবো)।
কাঁঠালের মুঁচিঃ কাঁঠালের মুঁচি বলা হয় একদম পিচ্চি অবস্থার কাঁঠালকে। কিছু মানুষ বিশেষ করে মেয়েরা এই মুঁচি কুচিকুচি করে কেটে পাঁকা তেতুল, নুন আর শুকনো মরিচ পোঁড়া দিয়ে এক রকমের ভর্তা বানিয়ে খেতে ভীষণ পছন্দ করে।মনে করেন কাঁঠাল খাওয়ার উদ্ভোদন ঘটে এই মুঁচি ভর্তা দিয়েই।
খোঁসা/ আবরণঃ পাঁকা কাঁঠালের আবরণ মানে খোঁসা ছাড়ানো একটু কষ্টকর। হাতে ভালো করে তেল মেখে না নিলে কাঁঠাল খাওয়া বরবাদ হবার সমুহ সম্ভাবনা থাকে। যাইহোক কষে ভরা খোঁসা গুলোকে ফেলনা ভেবে ভুল করার কোন উপায় নেই। মানুষের কাছে কাঁঠালের জনপ্রিয়তা যেমন, গবাদি পশুদের কাছে তারচেয়েও বেশি প্রিয় এই কাঁঠালের খোঁসা। কারণ তারাও এই ফল/ফলের খোঁসা খেয়ে উপকৃত হয়। গবাদি পশুদের পাশাপাশি সৌখিন ইউটিউবার রাধুনিদের কাছেও কাঁঠালের খোঁসা অনেক পছন্দ। তারা এগুলো দিয়ে বিভিন্ন রেসিপির মাধ্যমে আমাদের শিখাচ্ছেন কীভাবে কাঁঠালের জ্যাম, জেলি বানিয়ে খেয়ে আমাদের টাকাপয়সা বাঁচিয়ে লাভবান হতে পারি!
মোতাঃ কাঁচা কাঁঠাল, পাঁকা কাঁঠাল, বিঁচি খোঁসা সব খাওয়ার পরে থাকলো মোতা।মোতা হলো কাঁঠালের ভিতর একটু মোটা, গোলগাল লম্বামতো একটা বস্তু। ওটার চতুর্দিকে স্তরে স্তরে কাঁঠালের কোষ সাজানো থাকে। এই মোতাকেও চাইলে কাজে লাগানো যায়। অনেক বাঙালি রান্নাঘরে ভর্তা, গুড়া মাছ বা কষানো মাংসে এই জিনিসের ব্যবহার হতে দেখা যায়।
তো; এতক্ষণে সবাই নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কাঁঠাল কেন জাতীয় ফল হয়ে গেছে; 🙂
** জানি এগুলো সবাই জানে তবুও লিখলাম। আসুন দেশি ফল- জাতীয় ফল কাঁঠাল খেয়ে দেশ ও জাতিকে(নিজেকে) ধন্য করি।**
১৬টি মন্তব্য
শাহরিন
বুঝলাম যাকে মানুষ পছন্দ করে তার দোষ ও গুণের শেষ নাই। কিন্তু জানিতে চাই কে এই ফলকে জাতীয় ফল বানিয়েছেন? 😉
সাবিনা ইয়াসমিন
আর কারা বানাবে!! আমরা/ বাংলাদেশের লাখো কোটি কাঁঠাল প্রেমিকের কথা মাথায় রেখেই স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয়করন কর্মকর্তারা এটিকে জাতীয় ফলে অধিষ্ঠিত করেছে।
রিতু জাহান
আমার একেবারে পছন্দ না কাঁঠাল।
তবে এঁচড় খাই বড় চিংড়ি দিয়ে। তারপর একবার মোচা মাখায়ে দিছিলো কে যেনো, সামান্য খাইছিলাম।
আমার বাসায় কেউ খাইতে চায় না।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেকের কাছেই এটা অপছন্দের। আবার অনেকে সারাবছর অপেক্ষায় থাকে কাঁঠালের মৌসুমে খাওয়ার জন্য।
মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ ও শুভ কামনা 🌹🌹
বন্যা লিপি
এই কাঁঠাল চর্চা পড়ে আমার কতগুলা প্রবাদ বাক্য মনে পড়ে গেলো।
১| কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো।
২| গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।
৩| পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া|
৪| জামাই কাঁঠাল খায়না খায়না শেষে ভোঁতা লইয়া টানাটানি( এইটার একটা বিশেষ কাহিনী আছে। আবার বলে বোসোনা ” কাহিনী শুনতে চাই”। ও কাহিনী শোনার দরকার নাই।)
আমার বাসায় আমার তিন বাচ্চার একজনও কাঁঠাল মোটেই পছন্দ করেনা। আর সাহেব আমার এক বসায় ২০/২৫ কোষ গিলে ওঠেন। আমিও যে পছন্দ করিনা তা নয়! তবে খাই…..
কাঁঠালবিচির ভর্তা বা মুরগি, ডাঁটা, দিয়ে রান্না যাস্ট অসাম।
তবে….কাঁঠাল কেন জাতীয় ফল!! এ প্রশ্নের উত্তর বোধ করি জাতীয় পর্যায়ের কর্তা ব্যাক্তিরাই দিতে পারবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
জাতীয়করন করা হয় বিভিন্ন দিক বিবেচনায় রেখে। সম্ভবত অন্যান্য সব ফলের চেয়ে কাঁঠালের গুনাগুন বেশি এগিয়ে আছে তাই এটি জাতীয় ফলের আসন পেয়েছে। তবে ভারতের জাতীয় ফল যদি আম না হতো তাহলে মনে হয় আমাদের দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল না হয়ে আম হতো।
উত্তর দেরিতে দেয়ার জন্য সর্যি, আর থ্যাংক ইউ এত সুন্দর মন্তব্য দেয়ার জন্য।
ভালো থেকো, শুভ কামনা 🌹🌹
সৌবর্ণ বাঁধন
এই নগর সভ্যতায় কাঁঠালের গাছে নীচ থেকে উপর পর্যন্ত ফল ঝুলে থাকার দৃশ্য মিস করি। কাঁঠালের আঠার ভয়ে ক্ষুধা সত্ত্বেও মুখ কাচুমাচু করে থাকাও ছতবেলার এক অনিন্দ্য স্মৃতি। অনেক সাবলীল লেখা।
সাবিনা ইয়াসমিন
শহরের বাসা-বাড়ি গুলোতে সৌখিনতাবসত অনেককেই বিভিন্ন ফল-ফুলের গাছ লাগান। যদিও সংখ্যায় কম তবুও কিছু কিছু বাড়িতে কাঁঠাল গাছ দেখা যায়, সন্দেহ নেই ঐসব বাড়িতে কাঁঠাল প্রেমিক আছে কারণ কাঁঠাল এর প্রতি প্রেম না জন্মালে কেউ শখের বশে কাঁঠাল গাছ লাগান না।
ধন্যবাদ সৌবর্ণ। ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
কাঁঠাল সস্তা তাই জাতীয় ফল বলে আমার ধারনা।
সে যাই হোক যার পছন্দ তার কাছে অবশ্যই মূল্যবান।
মা প্রচুর কাঁঠাল খান। আর এই গরমে মুরগীর পাখার মতো হাত পা মেলে থাকেন। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু না করলেও ঝাপটি খেতে হয়!!
– আরে, কাঁঠাল খাও কেন? কারন ছাড়াই ঝাপটি মারো।
কথন আছে- গরু গেলে গরু কেনা যাবে, কিন্তু কাঁঠাল বছরে একবারই আসে। তাই গরু বেঁচে হলেও কাঁঠাল খেতে হবে।
দুধে আলতা রহস্য কাঁঠাল বোঝা গেল। অন্ততঃ এটার জন্য ট্রাই করা যেতে পারে।
সাবিনা ইয়াসমিন
অতোটাও সস্তা নয়। এই বছরে কাঁঠালের মৌসুমে ঢাকায় মাঝারি থেকে কিছুটা বড় আকারের কাঁঠালের দাম ২৫০-৪০০ টাকা ছিলো।
এটা ঠিক, যে যেটা পছন্দ করে সে সেটার অপেক্ষায় থাকে। হোক কাঁঠাল অথবা করমচা।
ধন্যবাদ, ভালো থাকুন। শুভ কামনা 🌹🌹
হালিমা আক্তার
কাঁঠালের গুন গান শুনে মনে হচ্ছে বার মাস ই কাঁঠাল খেতে হবে। রঙ ফর্সা বলে কথা।অবশ্য কাঁঠাল অপছন্দের নয়। কাঁঠাল বিচীর ভর্তা আর তরকারি দুটো ই মজাদার। শুভ কামনা রইলো। শুভ রাত্রি।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহাহা, বারোমাসি কাঁঠাল পাওয়া গেলেতো ভালোই হতো। আমার কাছে কাঁঠালের বিঁচি আর এঁচড়ের তরকারি খেতে ভালো লাগে।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
খাদিজাতুল কুবরা
ফল খেতে ভালোবাসি। কাঁঠাল ও অন্যতম প্রিয় ফল।
ভালো লাগলো পড়ে নিঁখুত বর্ণনা।
কেউ ভেঙে দিলে খেতে পারি অনেক কোষ। আব্বা খুব ধৈর্য্য নিয়ে কাজটি করতেন
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি ছোটবেলায় কাঁঠাল খেতে চাইতাম না। আমার নানা আমাকে খুব আদর করে কাছে বসিয়ে খাওয়াতেন, নানার মন রক্ষা করার জন্য তখন খেতে হতো। আমার শশুর বাড়িতে এসে নানা নিজের হাতে একটা কাঁঠাল গাছ লাগিয়েছিলেন যেন আমাকে বাজার থেকে কাঁঠাল কিনে খেতে না হয়। গাছটা আমার রুমের জানালার পাশে। অনেক কাঁঠাল ধরে। তিনি এখন বেঁচে নেই, কিন্তু গাছটা আছে। যখনই কাঁঠাল পেরে সবাইকে দিই আমার নানার কথা মনে পড়ে। তোমার মন্তব্য পড়ে আমারও ছোট বেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।
আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমাদের প্রিয়মানুষদের শান্তিতে রাখেন যারা আমাদের স্নেহ-ভালোবাসায় দুনিয়াতে আগলে রেখেছিলেন। আমিন।
ভালো থাকুন। শুভ কামনা অবিরাম 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
সোনেলা ব্লগে আপনার চার বছর পুর্তি আজ।
চার বছর পুর্তিতে আপনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
শুভ কামনা প্রিয় ব্লগার।
✍️✍️✍️✍️✍️✍️ আরো লিখতেই থাকুন, লিখতেই থাকুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি।
ভালো থাকুন। শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹