
ফটোগ্রাফীর শুরুতে এই পাখিটির দেখা মিলে ও ছবি তুলি। তখন জানতাম না পাখিটির নাম কি? পরে জানতে পারি পাখিটির নাম।
প্রতিটি প্রানীর কাজের সাথে তার নামকরনের একটি স্বার্থকতা থাকে। প্রানীর আচরন,খাদ্যাভ্যাস ও গতিবিধই তার নাম বহন করে। তেমনই এই পাখিটি। যার নাম ”ল্যাঞ্জা লাটোরা” বা ”কালোমাথা কসাই” বা ”কাজল আঁখি”। খাবার শিকার করার পর কসাইয়ের মতন আচরন বলেই অঞ্চল ভেদে এর আরেক নাম কসাই। পাখিটির খাদ্য গ্রহন ও শিকার অন্যান্য পাখির চেয়ে ভিন্ন। দীর্ঘ সময় ধরে এরা খাবার খায়। একটানা খাবারে অভ্যস্ত নয়। বিরতি দিয়ে খাবার খায়। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে আবারও শিকার খুঁজে। সারাদিনে তিন থেকে চারটি শিকার করে ঝুলিয়ে রেখে দিনভর আহার করতে বেশী স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করে।
কালোমাথা কসাই Lanius schach পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ২৫ সেঃমিঃ দৈর্ঘ্যের ৪৫গ্রাম ওজনের একটি প্রানীভুক পাখি। এদের পিঠ কালো ও পীতাভ। দেহের নীচটা সাদা। মাথার চাঁদি, কান-ঢাকনি, ঘাড়ের পিছন অংশ, ডানার পালক ও লেজ কালো। চোখ কাজল দিয়ে আঁকা বলে এদের আরেক নাম কাজল আঁখি। কোমর সহ দেহের বাকি অংশ ধুলি-বাদামী। চোখ কালচে বাদামী। ঠোঁট শক্ত ও বড়শীর মতন বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা স্লেট রংয়ের কালো। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারায় ভিন্নতা আছে। এদের ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে একটি প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়।
এরা খোলা মাঠে কোন খুঁটির উপর, ঝোপ, কিছুটা উচু গাছে, শহরের রাস্তার বৈদ্যুতিক তারে ও ফলবাগানে বিচরন করে। শিকারের জন্য মাঝে মাঝে মাটিতে নামে। গাছের ডালে বা খুটিতে এবং তারের উপর বসে মাটিতে এরা তীক্ষ্ম নজর রাখে। শিকার দেখা মাত্রই ছোঁ দিয়ে মাটিতে নেমে শিকার ধরে। শিকার ধরার পর গাছের ডালে মাংসের দোকানের এস মার্কা লোহার শিকের মতন গাছের বাঁকানো ডালে শিকার গেঁথে রাখে। কসাই যেমন মাংস বাঁকানো লোহার শিকে ঝুলিযে রাখে ঠিক তেমনি এরাও শিকার ঝুলিয়ে রাখে। পরে আস্তে আস্তে বড়শীর মতন বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে শিকার ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়। খাবারের সময়
অন্য পাখিদের ধার কাছে আসতে দেয় না। অর্ধেক খাবার শেষ করে আবারো শিকার খোঁজায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে বেশ কয়েকটি প্রানী শিকারের পর দিনভর খায়।
এদের খাবার তালিকায় রয়েছে পাখির ছানা, টিকটিকি,ইঁদুর ও ব্যাঙ। খাবার না পেলে মাঝে মাঝে ফড়িং, মথ, প্রজাপতি ও ঝিঁঝিঁ পোকাও খায়। ডিসেম্বর থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। প্রজননকালে নিজেরাই কাঁটাযুক্ত গাছে নরম ঘাস,মুল ও আঁশ দিয়ে বাটির মতন করে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়ে পাখিটি ৪-৬টি ডিম পাড়ে। উভয়েই ডিমে তা দেয়। ১৪-১৫দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা ফুঁটে। দুজনেই ছানাদের পরিচর্যা করে।
“কালোমাথা কসা“ বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। বাংলাদেশের সব জেলায় এদের পাওয়া যায়। ইহা ছাড়া ভারত,পাকিস্তান,নেপাল ও ভূটানে দেখা যায়। এরা সারা বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত।
বাংলা নামঃ ”ল্যাঞ্জা লাটোরা” বা ”কালোমাথা কসাই” বা ”কাজল আঁখি”।
ইংরেজী নামঃ Long tailed shrike.
বৈজ্ঞানিক নামঃ Lanius schach
ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা।
২১টি মন্তব্য
শাহরিন
ভাই জানার শেষ নেই। অনেক ধন্যবাদ নতুনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
এই কসাইদের অনেক ছবি আমি তুলেছি, তবে এমন চমৎকার একটা পাখির এই কঠিন নামটা না দিলেও চলতো।
শামীম চৌধুরী
লেখাতেই বলেছি বেশ কিছু প্রানী বা পাখির আচার আচরনের উপর বাংলা নামটা দেয়া হয়েছে। আঞ্চলিক ভেদে।
কামাল উদ্দিন
হুমম, ধন্যবাদ শামীম ভাই।
জিসান শা ইকরাম
পাখিদের মধ্যেও কসাই আছে!
কালোমাথা কসাই পাখি সম্পর্কে জানলাম,
ধন্যবাদ আপনাকে।
শামীম চৌধুরী
ভাইজান, কসাই সর্বত্র।
প্রদীপ চক্রবর্তী
অনেককিছু জানলাম দাদা।
অজস্র ধন্যবাদ ও শুভকামনা দাদা।
শামীম চৌধুরী
শুভেচ্ছা জানবেন দাদাভাই।
সুরাইয়া পারভিন
ফটোগ্রাফী উপস্থাপন সব মিলিয়ে দারুণ
শামীম চৌধুরী
অনেক ধন্যবাদ আপু উৎসাহ দেবার জন্য।
নিতাই বাবু
আপনার কাছ থেকে পাখি বিষয়ে অনেককিছু জানা যায়। এর আগেও অনেক পাখিদের সাথে পরিচয় হয়েছিল, আপনার পোস্টের মাধমে। এখন নতুন করে পরিচয় হলো, “কালোমাথা কসাই”র সাথে। চমৎকার সব পাখিদের বর্ণনা আপনার মাধ্যমেই জানা যায়। শুভকামনা সবসময়।
শামীম চৌধুরী
দাদভাই, আমার প্রায়ই ৫০০+পাখির ছবি তোলা আছে। দোয়া করুন যেন সবগুলিরই পরিচয় সোনেলার উঠানে দিতে পারি।
সঞ্জয় কুমার
ছবি এবং পাখির নাম দুইটাই চমৎকার৷
আপনার তোলা সব ছবি দেখতে চাই৷
তথ্যসমৃদ্ধ লেখা৷
তৌহিদ
এর আচরণ আসলেইতো কসাইয়ের মত! খালি শিকার করে আর খায় আবার শিকার করে। নতুন করে ল্যাঞ্জা লাটোরাকে জানলাম আপনার লেখায়।
ভালো থাকবেন ভাই।
শামীম চৌধুরী
তুমিও ভালো থেকো আদরের ভাইটি।
এস.জেড বাবু
দেখা হয় নাই চক্ষ্মু মেলিয়া
আসলেও তাই।
নতুন কিছু জানলাম-
কাঁজল আখি নামটা সুন্দর
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাইজান।
এস.জেড বাবু
শুভেচ্ছা আপনাকে ও
অনন্য অর্ণব
পাখির নাম ও কসাই হয় !!! বাপরে বাপ খাইছে আমারে 😀😀
শামীম চৌধুরী
কসাই নামটাইতো এমন।