
আমি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা শুরু করেছি কিছুটা আগাম! আমি যখন নিজের ব্যক্তিগত ফোন পেলাম, তখনও পুরো এলাকায় মোবাইল ফোনের সংখ্যা হাতে গোনা। আর ওই সময়টায় আমার বয়সী কারও কাছে ফোন থাকাটা একেবারেই অস্বাভাবিক ছিল; বিশেষ করে সেই গ্রাম-মফস্বল এলাকায়। কারও পকেটে ফোন বেজে উঠলে ধরে নেওয়া হত, তার ফোন-ফ্যাক্সের দোকান আছে। আমার মনে আছে, এলাকার এক বয়স্ক ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- তোমার এইটা কি গ্রামীণ না নকিয়া?
গ্রামীণফোন ২০০৫ সালে ডিজুস নামের একটা নতুন সংযোগ বাজারে ছাড়ল। এই ডিজুস তখন ছেলেপেলেদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল। দুই টাকা সাতাশি পয়সা দিয়ে সারারাত কথা বলা যেত! মুরব্বিরা এদের নাম দিলেন “ডিজুস পোলাপান”। বাজারে আসার কয়েকদিনের মাথায় আগের সংযোগটা বাদ দিয়ে একটা ডিজুস কিনে ফেললাম। এবং সেটা আজ অবধি ব্যবহার করছি।
বেশিদিন ধরে একই সীম যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা “রং-নাম্বার” ঝামেলার সাথে পরিচিত হওয়ার কথা। পুরনো দিনের ল্যান্ডফোনের মতো আমার ডিজুসে রং-নাম্বার ফোন আসা শুরু হল। অবশ্য শুরুটা ছিল অনেক আগেই।
প্রথম দিকে প্রায়ই যে ফোনটা আসত, সেটা ছিল শিমুর। নতুন নতুন নম্বর থেকে ফোন আসত। মাঝ রাতে ফোন বেজে উঠত। রিসিভ করার পর কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে একটা হাঁসের মতো কণ্ঠ বলত- ‘হ্যালো, শিমু?’
একবার এক ভদ্রলোক ফোন দিলেন। সালাম দিলাম। উনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন- ‘মান্নান ভাই কই?’
বলা বাহুল্য, এটা আমার বাবার নাম। তারমানে বাবার কোনো বন্ধু ফোন দিয়েছেন। আমি আবার সালাম দিলাম, আঙ্কেল ডাকা শুরু করলাম। পরে দেখা গেল এটা রং-নাম্বার ছিল।
এই ভদ্রলোক পরে একাধিকবার ফোন দিয়েছিলেন, ‘মান্নান ভাই কই?’
একদিন এক প্রবাসী ফোন দিলেন। শুরুতেই বুঝে ফেললাম এটাও ভুল নাম্বারে এসেছে। কিন্তু ভদ্রলোক মরিয়া হয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন যে তিনি ঠিক নাম্বারেই ফোন দিয়েছেন। অনেকক্ষণের চেষ্টায় তাকে বোঝানো গেল।
ফোন কেটে দেওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় উনি আবার ফোন দিলেন। ‘ভাই, আমার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। সৌদি আরব থাকি। এবার দেশে গিয়ে আমার শ্যালকের ফোন নাম্বার আনছি। সে নাম্বার দিতে ভুল করছে! দেখেন না ভাই, আমারে কোনো হেল্প করতে পারেন কিনা। কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারতেছি না!’
আহারে!
সবচে’ বেশি যে রং-নাম্বার ফোনটা আমি পাই, সেটা হচ্ছে শামিম ভাইয়ের। এই শামিম ভাইয়ের বাড়ি বগুড়ায়, মাটিডালি মোড়ে তাঁর অটোমোবাইল সার্ভিসিং-এর ব্যবসা আছে।
প্রায়ই ফোন আসে, ‘শামিম ভাই, গাড়ির কী অবস্থা?’
– ‘শামিম ভাই, ট্যাকা পাইছেন?’
– ‘শামিম ভাই, ডেরাইভার কই?’
একদিন এরকম একজন ফোন দিয়েছেন, শামিম ভাইকে চান। আমি তাকে কলব্যাক করলাম। কাহিনীটা কী জানার জন্যে। যা জানলাম, সেটা আতঙ্কিত হওয়ার জন্যে যথেষ্ট। এই শামিম ভাই তাঁর ভিজিটিং কার্ডে ভুল করে আমার নাম্বার ছেপেছেন!
আজ সকালে ঘুম ভেঙ্গেছে এক মহিলার ফোনে। ‘ছার, আপনি কি অফিসে আইছুইন?’
আমি বললাম, ‘কে?’
মহিলা বললেন, ‘আমি সালেহা। কর্মসংস্থান ব্যাংকের খালা!’
৩৫টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা, দারুন মজা পাইলাম।
মজার শুরু গ্রামীন না নকিয়া দিয়ে
শেষ খালারে দিয়া।
অনেক দিন পরে পুস্টাইছুন 🙂
নাজমুল আহসান
কিন্তু “কর্মসংস্থান ব্যাংকের খালা” জিনিসটা কী? :p
জিসান শা ইকরাম
কাজের বুয়া হইতারে 🙂
অরুনি মায়া
হা হা হা এই অবস্থা নাকি | আসলে এই ব্যাপার গুলো খুবি বিরক্তিকর | আপনি তো পুরুষ তাই অল্পতেই পার পেয়ে যান | কিন্তু আমিও সেই 2005 থেকে এখন অব্দি ডিজুস ব্যবহার করছি আর সেই রকম রং নাম্বারের অত্যাচার | মুশকিল হয়েছে যখনই মেয়ে কণ্ঠ শোনে তখন আর রাখতে চায়না | আমিও রিসিভ করে ফোন ফেলে রাখি | কাটুক তাদের টাকা কাটুক আমার তাতে কি 🙂
নাজমুল আহসান
শুরুর দিকে বিষয়টা মজার ছিল। এখন বিরক্তি থেকে সহ্যের বাইরে চলে গেছে। আমি বেকার মানুষ, কেউ ঘুম ভাঙিয়ে যদি জিজ্ঞেস করে- “অফিসে আইছুইন?”, কেমন লাগার কথা বলেন 😀
অরুনি মায়া
হা হা হা তাও ঠিক | কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা খেলে অনেক কষ্টই লাগে :p
ব্লগার সজীব
:D) :D) হাহাগগ :D)
নাজমুল আহসান
:D)
ব্লগার সজীব
আমার সব মন্তব্য অনুমোদনের অপেক্ষায় ;(
অনিকেত নন্দিনী
গ্রামীণ না নকিয়া :D)
আপ্নে তাইলে ডিজুস পুলাপাইন্দের একজন! 😀
ক্যান জানি মনে অইতাছে আরো কয়েক কিসিমের ফোনকলের কথা চাইপ্যা গেছেন।
‘ছার, আপনি কি অফিসে আইছুইন?’
*অ.ট. ডরাইয়া ডরাইয়া কমেন্টাইছি। প্রোপিকে যে ফডু লাগাইছুইন, দ্যাখলেই ডর করে। 🙁
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমিও তো পরথমে ফডু দেইখ্যা ডরাইছিলাম। ;(
নাজমুল আহসান
কান্দুইন ক্যারে? ফডো দেইখা কানলে চইলত? 🙁
নাজমুল আহসান
হেইডা আফনে কিতা কন? “আরো কয়েক কিসিমের ফোনকলের কথা চাইপ্যা” যাইতাম ক্যারে? আফনের অভিজ্ঞতা আছে মনে হয় :p
অনিকেত নন্দিনী
অভিজ্ঞতা না থাকলে আর কইছি? :p
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হাহাহা…. হের ফরে আফনে হেই মহিলারে কি কইছুইন?
নাজমুল আহসান
কী আর কইতাম! কইলাম- আফা আফনে ভুল নাম্বারে ফোন দিয়ালচেন 😀
মোঃ মজিবর রহমান
হুররে হুয়া মজাইছেন
ডিজুস আমার ছিলে একখানা
তবে আমি আর ব্যাবহার করি
না।
শুধু রাতেই চলত আহারে পুলাপান !
আর পাইবনা এই সুযোগ ! ইস্রে
নাজমুল আহসান
ইশ রে 😀
মোঃ মজিবর রহমান
হুররে হুয়া মজাইছেন
ডিজুস আমার ছিলে একখানা
তবে আমি আর ব্যাবহার করি
না।
শুধু রাতেই চলত আহারে পুলাপান !
আর পাইবনা এই সুযোগ ! ইস্রে (-3
নাসির সারওয়ার
ডিজুস পুলাপাইন। বেশ বেশ। আমারো হইতে ইচ্ছে হয়।
গল্পের নামটা টাস্কি খাবার মত। শেষ লাইনের আগ পর্যন্ত আটকে ছিলো।
মজার একটা পোস্ট। অনেক শুভেচ্ছা!
নাজমুল আহসান
সময় করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ স্যার -{@
নাসির সারওয়ার
আপনি একজন মজার মানুষ।
ভালো থাকুন আর মাঝে মাঝে এরকম মজার লেখা দিন।
নাজমুল আহসান
চেষ্টা করব আপনাদের সাথে থাকার -{@
শুন্য শুন্যালয়
ছার, আপনি তাইলে সোনেলায় আছুইন? আমাদের গোলাপ বাবার পোস্টটার কি হইলো মামু? আপনি কি গোলাপ ফুলের মত পোস্ট খাইলাছেন?
আপনার এত্ত নাম পাওয়া তো ভাইগ্যের কতা। মান্নান ভাই, শামীম ভাই আবার সিমুও :p
নাজমুল আহসান
গোলাপবাবার সাথে আর দেখা সাক্ষাৎ নাই। তার এখন কী অবস্থা কইতারি না। 🙁
মিথুন
😀 ভাইয়া রঙ নাম্বারে কি কি সব জানি ঘটে, সেরকম কিছু বাদ পড়ে গেলোনা?
নাজমুল আহসান
রং নাম্বারে কিছু ঘটে নাকি? :p
নীলাঞ্জনা নীলা
:D)
নাজমুল আহসান
হাসুইন ক্যারে? :p
নীলাঞ্জনা নীলা
:D)
নাজমুল আহসান
বিরাট অবাক কাণ্ড 😮
ড্রথি চৌধুরী
:D) :D) :D) ভিজিটিং কার্ড এ
তবে আমার একটা বুদ্ধি আছে রঙ নাম্বর হলে রিচিভ করে রেখে দেই নে ব্যাটা কত টাকা আছে শেষ কর 😀
নাজমুল আহসান
আমি আপনার মতো দুষ্টু না :p
ছাইরাছ হেলাল
অবশেষে জানলাম আপনিও ডিজুস!!
তবে মন্দ না ব্যাপারটি।
নাজমুল আহসান
আপনিও নাকি? 😀