করোনা সাংঘর্ষিক কোরবানি

মনির হোসেন মমি ৯ জুলাই ২০২১, শুক্রবার, ০৯:১৫:১২অপরাহ্ন সমসাময়িক ১৫ মন্তব্য

করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ দাপটে মানুষ শুন্য করার নিমিত্তে গত ২০১৯ সালের শেষের দিক হতে পুরো ২০২০ সাল চলে গেলো এলো ২০২১ সাল তবুও থামেনি করোনার ভয়বহতা প্রকোপ। করোনার বিস্তৃতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমন ও মৃত্যু ।
বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু বরণ করেছেন প্রায় চল্লিশ লক্ষাধিক লোক আর আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয় প্রায় দুকোটি গিয়ে দাড়িয়েছে।

বিশেষ করে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এখনো করোনায় দিশেহারা। আপনারা হয়তো অবগত আছেন ভারতে করোনা রোগীর মাঝে যে নমুনা পাওয়া গেছে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছিলো না বললেই চলে অনেকটা নতুন উপসর্গ।ভারতে করোনা আক্রান্তের অধিকাংশ মানুষ তার চিকিৎসা করাতে ব্যার্থ হয়েছেন।অনেকাংশে শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার সময়টুকুও রোগী পাননি হঠাৎ বুকে ব্যাথা শ্বাসকষ্টে সেখানে মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়েছেন।একটা সময়ে করোনার আঘাতে পুরো ভারত যেন শ্মশানভূমি।

ভারতীয় ও আন্তজার্তিক গণমাধ্যম গুলোর তথ্য মতে ভারতে তৈরী হওয়া করোনা ভাইরাসের নতুন ধরণটির নাম গবেষকরা দিয়েছেন ওয়ান-সিক্স-সেভেনটিন। গত অক্টোবর মাসে ভারতে এটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিলো তা মার্চ ২০২১ এর প্রকোপের ভয়াবহতা শুরু হয়।বিশ্বের তথ্য ভান্ডার জিআইএসএআইডি এর তথ্য মতে নতুন ধরণের এই করোনা ভাইরাসটির ধরণ বিশ্বের প্রায় ২১টি দেশে ছড়িয়েছে।এর মুলে ছিলো ভারতের সাথে যোগাযোগের ঘনিষ্টতা।বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশেই ভারতীয়দের কর্ম দক্ষতায় বসবাস।সেই হিসাবে তাদের উভয় দেশের লোকজনের যাতায়াতটা ছিলো শিথিলযোগ্য।

আমরা করোনা আগমনে শুরু থেকেই জেনে আসছি করোনার প্রকোপ হতে বাচতে স্বাস্থ সচেনতা এবং দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া বিকল্প আর কোন পথ নেই।আর পুরো বিশ্ব বিশেষজ্ঞদের মতামতও তাই বলে।স্বাস্থ সচেনতার ঘাটতি থাকলেও দূরত্বে থাকার যেন কোন গাফলতি না হয়।কথাগুলো আমি যতটা সহজে লিখছি আমিও কী তা মানছি?না,এক কান দিয়ে শুনছি অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছ,মন দিয়ে পড়ছি অন্য আর ভাবছি আসলেই করোনা বিরাজমানের আমরাই দায়ী কিন্তু তারপর!আমরা সব কিছু জানি মানি তবুও যেন গাফলতিতে গা ভাসাই যা মোটেই কাম্য নয়।

পত্র পত্রিকা লোকমুখে শুনেছি,পড়ে জেনেছি এপ্রিলে ভারত যখন করোনার দ্বিতীয় থাবায় বিপর্যদস্ত তখনি ভারতের হিমালয়াঞ্চলের হরিদ্বারে বরাবরের মত কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়।সেখানে লাখ লাখ সনাতন হিন্দু ধর্মাবলী মানুষ একত্রে মিলিত হন।এই মেলায় শুধু ভারতীয়রাই অংশ নেননি অংশগ্রহন করেছেন আসা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে হিন্দুধর্ম প্রান মানুষ।সেখানে আসা যাওয়ায় ছিলো না কোন বাধা-ছিলো না নুন্যতম স্বাস্থ সচেনতা।এমনকি মুখে মাস্ক লাগানোটাও তারা প্রয়োজনবোধ মনে করেনি।তখনি অনেকে মনে করেছিলেন ভারতে এই মনে হয় করোনা ভাইরাসটির মহামারী রূপ ধারণ করা শুরু করল।বাস্তবতা তাই বলে।

তাদের ধর্মীও এক পুরোহিত মাহান্ত শংকর এই উৎসবে যোগ দেন।উৎসব আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হওয়ার চারদিন পর পরীক্ষায় এই পুরোহিতের মাঝে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে।তখন তাকে একটি তাবুতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখার এক পর্যায় সে পালিয়ে যায়।প্রথমে ট্রেনে উঠেন এরপর প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পায়ে হেটে বারাণসী যান।সেখানে তাকে নিতে তার ছেলে আসেন এবং একটি ভাড়া টেক্সিতে কয়েকজন লোকের সাথে তার গ্রামে পৌছেন।জানা যায় সঙ্গ দেয়া পুরোহিতের ছেলে সহ সবার মাঝে করোনা পজিটিভ ধরা পরে অথাৎ সে পথে যার সাথেই সে মিশেছেন তারই করোনা পজিটিভ লক্ষ্য করা গেছে।সেই গ্রামে তখনি প্রায় তের জন করোনা রোগী মারা যায়।

কুম্ভমেলায় যোগদেন প্রায় নব্বই লক্ষ লোক।তাদের অবাধ বিচরণ এবং স্বাস্থবিধি না মানায় করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।পত্রিকা বরাতে জানা যায় সেখানে প্রায় ২৬৪২ জনের মাঝে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।যাদের মধ্যে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ধর্মীও নেতাও ছিলো।বলা বাহুল্য বলিউডের সঙ্গীত পরিচালক শ্রাবণ রাঠোর এই কুম্ভমেলা থেকে ফিরে আসার কয়দিন পরই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং মেলায় যোগ দিতে যাওয়া আরেকটি দলের নয় জনের হিন্দু ঋষি মারা যায়।কুম্ভ মেলার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে করোনার প্রকোপ আশংকা হারে বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে মহামারীর রূপ ধারণ করে।মৃ্ত্যুর এমন লাশের মিছিল পৃথিবীর মানুষ বহু যুগ ধরে দেখেনি।ভয়াবহতা এতোটাই প্রকট ছিলো যে শনাক্ত রোগী জায়গা দিতে ধর্ম বর্ণ নির্ভিশেষে মসজিদ মন্দির গীর্জা সব ওপেন করে দিতে হয়েছিল।লাশ সমাধিতে শশ্মান কবরস্থানে তিল ধরার ঠাই ছিলোনা।ভারতে বর্তমান করোনা আপডেট……আক্রান্ত তিন কোটি সাত লক্ষাধিক-মৃত্যু চার লক্ষ পাচ হাজার নয়শ ঊনচল্লিশ ।

উপরের কথাগুলো বা করোনা ভাইরাসে ভারতে আজকে যে বিপর্যয় ঘটে তার মুলে ছিলো সামাজিক দূরত্ব না মানা এবং সাধারন জনগনের মাঝে স্বাস্থ সচেনতায় উদাসীনতা।ভারতে করোনা পরিস্থিতি করুণ দশা দেখে আমাদের মানে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের মাথায় দুশ্চিন্তা ভর করে।কী ভাবে করোনার দ্বিতীয় ধাপ হতে দেশের জনগনকে রক্ষা করা যায় ইত্যাদি ভাবনার একটাই ফলাফল লকডাউন দাও,কঠোর লকডাউন দিতে হবে।

এক সময় ভাবলেন আরে করোনার প্রথম ধাপের লকডাউন অনেকটা আনসাকসেস হন সরকারের উদাসীনতা দুর্ণীতি সহ বিভিন্ন কারনে।তাই এবারো যদি লকডাউনই দেয়া হয় তবে মানুষ আগের বারের মত মানবে না ফলে দেশে ভুলে যাওয়া হরতাল অবরোধের মত ডন্টকেয়ার ইমেজে এ লকডাউনটাও অসার হয়ে যাবে।তাই এবার লকডাউন নাম পাল্টিয়ে সার্ট ডাউন দিতে হবে।মানে আধা মরা নয় একেবারেই মেরে ফেলতে হবে।লোকজন কোথাও কেউ বেরুতে পারবেন না।এমন একটি লকডাউন আরো আগে বাস্তবায় হলে আজকের এই পরিস্থিতি দেখতে হতো না।কিন্তু পক্ষান্তরে আমরা কী দেখতে পাই যেমন জনগন তেমনি তাদের সরকার।এবারো লকডাউন দিলো শিল্প কারখানাগুলো খোলা রেখে অবশ্য সরকারে এ ছাড়া উপায়ও ছিলো না।লকডাউন দিয়ে জনগনকে ফ্রী বসে খাওয়ানোর মত অবস্থাও সরকারের নেই কিংবা থাকলেও বঙ্গবন্ধুর আমলের কম্বল চোরের প্রেতাত্মারা এখনো মরেনি।

মানলাম সব কিছু কিন্তু লকডাউনের কারনে নিত্যনৈমিত্ত বাজার দরের যে উর্ধোগতি তা নিয়ন্ত্রণ করা কী সম্ভব ছিলোনা? আজকে আর সেদিকে যাবোনা আমার এ লেখায় মুল যে থিমটা তাহলো উপরে বর্নিত করোনা ভাইরাসের ভারতের যে ভয়াবহতা আকার ধারণ করে তার মুলে ছিলো দূরত্ব বজায় না রাখার কু-ফলাফল।তাহলে কী আমরাও মুখোমুখি হবো করোনার ভয়ংকর থাবার বাস্তবতায়?

অবস্থা দৃষ্টে তাই মনে হয়।একদিকে লকডাউন অন্য দিকে কুরবানী ঈদের প্রস্তুতি।আমরা যতটুকু জানি বর্তমান করোনা আক্রান্তের পরিমান এবং মৃত্যুর সংখ্যাটা বেশী দেশের বর্ডার অঞ্চলগুলোতে।যার কারনে সরকার কঠোর লকডাউন দিয়ে যাচ্ছেন যাতে বর্ডার অঞ্চলের লোকজনেরা কোন ক্রমে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ সহ অন্যান্য অপেক্ষাকৃত করোনা সেইফ মুখী অঞ্চলগুলোতে না আসতে পারেন এবং ঢাকা নারায়নগঞ্জ সহ অন্যান্য অঞ্চলের লোকজনও যেন যাতায়াত করতে না পারেন।
ভারতের কুম্ভমেলর মত জনগনের অবাদ বিচরণ যাতে না হয় সেদিকটা মাথায় রেখে সরকার শত বাধা অভিযোগ উপেক্ষা করে লকডাউন দিয়ে যাচ্ছেন।

আর কয়দিন পরই কোরবানী মানে ঈদুল আযহা।ঈদুল আযহার মুল যে বিষয়টা তা হলো আল্লাহর নামে পশু কোরবানী করা।সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হলো কোরবানী ঈদের পশুগুলো অধিকাংশই বিক্রয়ের উদ্দ্যেশ্যে বর্ডার অঞ্চল হতে শহরের বিভিন্ন হাটে আসে।এছাড়াও আসে ভারত নেপাল বার্মা সহ অন্যান্য দেশ হতে।

যেহেতু করোনার প্রকোপটা বর্ডার অঞ্চলেই বেশী তাহলে কোরবানী পশুর হাটের এই যে রমরমা আয়োজন চলছে তা দেশের করোনা প্রকোপ কম অঞ্চলগুলোতে করোনা সংক্রমন ঠেকানো কী সম্ভব?রেড এ্যালার্ডকৃত অঞ্চলের পশুগুলোর সাথে আসবেন সেই সব অঞ্চলের লোকজন।মিশবেন করোনা সেইফে থাকা বিভিন্ন অঞ্চলের লোকের সাথে তাতে কী করোনা সংক্রমন ছড়ানোর আশংখা উড়িয়ে দেয়া যায়?তাহলে আমরা এ কোন পথে হাটছি!আমরা কেনো এর বিকল্প পথ দেখছি না?

এরপর কোরবানীর বিভিন্ন হাট হতে পশু কিনতে চলবে হৈহৈ রৈরৈ ব্যাপার।জবাই করতেও বিভিন্ন অঞ্চলে মিশ্রিত কসাই সহ লোকজনের মাঝে রাখা সম্ভব নয় সামাজিক দুরত্ব,থাকবেনা স্বাস্থ সচেনতা,এমন কী মুখে মাস্ক রাখাটাও হয়ে যাবে অনেকটা টাফ।এর পর কোরবানীর মাংসগুলো বিভিন্ন বাড়ী বাড়ী ডেলিভারীতেও থাকে করোনা আক্রান্তের ভয়।এক শ্রেনী লোক আছেন যারা বাড়ী বাড়ী গিয়ে মাংস সংগ্রহ করেন।সেখানেও থাকবে করোনা সংক্রমনের ভয়।তাহলে উপায়?

উপায় একটাই আমাদের সচেতন হওয়া।যেহেতু পশুর হাট আটকানো যাবে না।কোরবানী দেয়াটাও বন্ধ করা যাবে না কারন আমরা বাংলাদেশীরা সৌদির চেয়েও বড় বেশী ধার্মিক।সৌদির কাবাঘর,হজ্ব করা, মদিনা শরীফ,মসজিদ বন্ধ রাখতে পারলেও আমরা পারবো না কারন আমরাই পৃথিবীর একমাত্র খাটি মুসলমান।আর যদি তা কেউ করতে চায় তাহলে যে করতে চাইবে তাকেই নাস্তিক বানিয়ে কোরবানী করে দিবেন।অথচ হতে পারত এমনটি-প্রতি বছরইতো আমরা কোরবানী দেই এবার না হয় নাই বা দিলাম।কেউ যদি এক লাখ টাকার একটি গরু কোরবানী দেন তাহলে সেই একলক্ষ টাকা যদি এই করোনাকালে তার নিকটাত্মীয় বহু আছেন যারা আর্থীকভাবে খুব কষ্টে আছেন তাদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন তাহলে আল্লহ কী বেজার হতেন?আমার মতে নিশ্চয় না।কারন আল্লাহ কোন বস্তু দেখেন না তিনি দেখেন বান্দার নিয়ত ও হালাল কমাই যদি তাই দেখতেন তাহলে হযরত ইব্রাহীম আঃ এর স্থলে দুম্বা আসতো না।যদি মক্কার হজ্ব করা বন্ধ হতে পারে তবে কোরবানী না দেয়া কেন দোষের হবে?

জানি আমার এ লেখা দুআনাও কাজে আসবে না কিন্তু দেশে যে হারে করোনা সংক্রমন এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে সেহিসাবে আমাদের জীবনকে আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে।আমরা অবশ্যই মাস্ককে জীবনের সাথে কমন হিসাবে নিবো।দূরত্ব যতটুকু সম্ভব রক্ষা করে চলবো।নিয়মিত অন্যান্য স্বাস্থনীতি মেনে চলবো।স্রষ্টা সবাইকে রক্ষা করুন বিশেষ করে আমাদের মত গরীব দেশগুলোর প্রতি স্রষ্টার রহমত বর্ষিত হউক।

সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন।

——————————

ছবি ভিডিও তথ্য
বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম হতে সংগ্রীহিত

৭৯১জন ৬৬২জন

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ