প্রায় রাতেই ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে মেয়েকে ক্লাশের বইয়ের সামনে বসে থাকতে দেখে বাবা ছুটি দিয়ে দেন, ঃযা, আজ অনেক রাত হয়ে গেছে, আগামীকাল দেখবো। ক্লাশে বাসন্তী বেশ মোটা রকম একটা বই নিয়ে এসেছে। শরৎ রচনাবলী’র মোটা বইগুলোর মতো। সেরকমই কোনো বই হবে হয়তো! জানতে চাইতেই, নিষেধ করলো ধরতে। কৌতুহল বেড়ে গেলো।প্রায়শই ভাগাভাগি করে গল্পের বই আদানপ্রদান হয়। আজ এ বই কেন ধরতে /দেখতে বারন করছে বাসন্তী? টিফিন পিরিয়ডে অনেকেই কাছেই বাসা বলে, বাসায় গিয়ে খেয়ে আসে।ফেরার সময় বুকের কাছে চেপে ধরে নিয়ে এসেছে একটা মোটা মতো বই।পুতুল এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো ঃ”দেখাবিনা ক্যান? বই কার? কে দিয়েছে? পুতুলটা এমনিতেই একটু ডেয়ারিং রকম সাহসী। ঝাড়ি খেয়ে বাসন্তী বললো, বাসন্তীঃ এটা মাধব’দা দিয়েছে অপু’দিকে পৌঁছে দিতে। বার বার বারন করে দিয়েছে, যেন অন্যকারো চোখে না পরে!!! বললো কেন কথাটা? “যেন অন্য কারো চোখে না পরে “??? পুতুল কি যে সে পাত্রী? এক কথায় কথা শুনবে? নানা রকম কৌশলে নিয়ে নিলো বইটা। পঞ্চ বান্ধবী প্রথম বেঞ্চের প্রথম সারির শুরু থেকেই প্রতিদিন আসন গ্রহন। গিতা,মালা,বাসন্তী,পুতুল এবং স্বয়ং নিজ।টিফিন বিরতির পরের ক্লাশ ইংরেজী রেপিড রিডার ক্লাশ নেন, মুকুন্দ বাবু স্যার। আপাত ঠান্ডা, নম্র,সদা হাস্য প্রচন্ড আমুদে এবং প্রয়োজনে প্রচন্ড বদরাগী একজন শিক্ষক।সহজে রাগেননা, যখন রাগেন পুরো স্কুল কম্পাউন্ড জেনে যায়, আজ মুকুন্দ স্যার ক্ষেপেছেন। রিতী অনুযায়ী ক্লাশে স্যার প্রবেশ মাত্রই সকলে দাঁড়িয়ে সন্মান জানানো প্রতিটি ক্লাশেই নিয়ম। অমুক পৃষ্ঠার অমুক প্যারা বের করো! শুরু হলো লাইন বাই লাইন রিডিং পড়ে পড়ে বুঝিয়ে দেয়া। ধুকপুকানি নিয়ে সবার প্রতিক্ষা, কোনো এক লাইনে থেমো গিয়েই ছাত্রী’দের ধরবেন ঃ”বল, এই লাইনটা কি হবে? আজ স্যার ঠোটস্থ পড়েই যাচ্ছেন!! একটু পর পর চোখ তুলে দেখছেন কোন ছাত্রী’র মনোযোগ আছে কি নেই।সামনে বই রেখে লাইন টু লাইন বোঝার জন্য, সবার চোখ পাতলা চটি’র মতো রেপিড রিডার বইয়ের উপর, কিছু পর পর স্যারের মুখের দিকে তাকানো, যেটুকু যে না বোঝে মাঝে হাত তুলে অথবা দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করা, “স্যার, এ লাইনটা বুঝিনাই,অথবা স্যার, এই শব্দটার মানে কি? গালিভার সাহেব এখনো টের পাননি, লিলিপুটের দল আষ্টেপৃষ্ঠে সুতো’র রশিতে বেঁধে ফেলেছেন ঘুমন্ত চুল,হাত,পা পুরো শরীর। পুতুলও টের পায়নি। স্যার পড়াবার ফাঁকে ফাঁকে দেখে নিয়েছেন, পুতুলের মনোযোগ একদৃষ্টে নিবদ্ধ মোটাবইয়ের উপরে।আচমকা চেয়ার ছেড়ে উঠে কেড়ে নিলেন বইখানি। স্যারকে উঠতে দেখে সব ছাত্রী’রা উঠে দাঁড়িয়ে গ্যাছে।বইটা উল্টে পাল্টে দেখছেন আর উঁচু গলায় তিরস্কার করে যাচ্ছেন!! মনে মনে প্রমাদ গোণা শুরু।আল্লাহ্ বাঁচিয়েছেন।ক্লাশ সেভেন পড়ুয়া ছাত্রী যখন অতিরিক্ত বড়দের বই পড়া’র প্রতি বেশি আগ্রহ দেখায় ক্লাশে এসে!! তার ফলাফল কমের উপর দিয়েই গেছে বলে মনে হয়েছে। বইটা পড়তে বা দেখতে চেয়ে, না পারার আফসোস মুহুর্তে শোকরানায় পরিনত হলো। পাশের ক্লাশ থেকে মান্নান স্যার চলে এলেন, অন্য ক্লাশের পড়ানো বন্ধ হয়ে গ্যাছে মুকুন্দ স্যারের চিৎকারে। নিজ ক্লাশের সব মেয়েদের মাথা লজ্জায় হেট হয়ে ঝুলে পরেছে বুকের কাছে।একেকটা পাতা ওল্টাচ্ছেন আর বিকৃত ভঙ্গিতে মুকুন্দ স্যার মান্নান স্যার তিরস্কার করে যাচ্ছেন। বাসন্তী স্যারের পা ধরে চাইছে যেন টিচার্স রুম পর্যন্ত বইটা না যায়। পুতুলের মধ্যে কোনো অনুশোচনার বালাই নেই।ঠাঁয় মাথা সোজা রেখে দাঁড়িয়ে আছে। কল্পনায় ভাবতেই শিউরে শিউরে উঠা। নিজেকে দাঁড় করাতে পারছিনা কল্পনাতে ও। টিচার্স রুমে বাবা আছেন। বইটা যদি আমার কাছ হতে উদ্ধার হতো? এখনো মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে ভাবতে গেলে। পরের বছর, বার্ষিক প্রতিযোগিতায় বাবার শিখিয়ে দেয়া আবৃত্তি উপস্থাপনে সম্ভাব্য তিন প্রতিযোগী’কে পেছনে রেখে আশ্চর্যজনক (নিজের কাছে) ভাবে প্রথম হয়ে গেলাম।
চলবে………
২০টি মন্তব্য
তৌহিদ
আসছি
বন্যা লিপি
🌹🌹🌹🌷🌷🌷🌷গোলাপ ফুলের শুভেচ্ছা, পেরথম আইলেন, তাই
তৌহিদ
ধন্যবাদ 🌹
তৌহিদ
আচ্ছা বইয়ের ভিতরে কি প্রেমপত্র দিয়েছিলো নাকি? ভাগ্যিস অল্পের উপর দিয়ে গিয়েছে!!
আমরা স্কুলে একবার ধরা খেয়েছিলাম বন্ধুরা সবাই। একজনের ডায়েরীর ভিতর প্রেমপত্র ছিল। স্যারের হাতে আচ্ছা মার খেয়েছিলাম।
তবুও সেসব মজার স্মৃতি।
ভালো থাকবেন আপু।
মাহমুদ আল মেহেদী
চমৎকার ছোট বেলার স্যারদের কথাগুলো মনে পরে গেল। সব এখন সৃতির পাতায়। আপু লেখাটা আমার কাছে মনে হচ্ছে কয়েকটা প্যারা করে দিলে আমাদের পড়তে সুবিধা হতো।
বন্যা লিপি
ভাই মেহেদি, মাঝখানে প্যারা আকারে দিতে গিয়ে ভীষন সমস্যা’র সম্মূখীন হতে হয় আমাকে , মাঝে মাঝে আবার খুব সুন্দর ভাবে চমৎকার যেভাবে চাই সেভাবে লিখে যেতে পারি। আমিও চাই আমার চোখে আমার লেখাটা পরিপাটি লাগুক,আমারো ভালো লাগে। নিজেই চেষ্টায় থাকি সার্বিক ভাবে গুছিয়ে লিখতে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য। দোয়া রাখবেন যে সফল হই।আপনার প্রতি শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
প্রেমপত্র হইলেও তো কতা ছেলো 😊
উহা ছেলো “অতিরিক্ত বড়’গের বই “যাহা কিনা প্রাপ্তবয়স্কঃ না হইলে চোকে দেকাও অপ্রাপ্ত বয়সী’দের নিষুদ আচে। এমতাবস্থায় শোকরানাই ছেলো হাজার শোকর। কুনোরকম যদি টিচার আব্বা বুইজতো/জাইনতো বইখানি তাহার মাইয়ের হস্ত হতি উদ্দার হইয়েচে………আইজকা ভাবতিও আরেকবার মাতাখানা আমার ঘুরান্টি দিয়া চক্কর মারে 😊😊😊
তৌহিদ
আফা যাহা নিষিদ্ধ ছুডুবেলায় তাই পড়তে মন চাইতো।
নিষিদ্ধ জিনিষ যে নিষিদ্ধ সেটা ছোটবেলায় কেউ না বললে কিন্তু সেদিকে আর কেউ পা বাড়াতোনা মনে হয়।
ধন্যবাদ জানবেন।
ইঞ্জা
এমন মোটা বই ছোটোদের দিতে নেই তা কি জানতোনা প্রেরক, কেমন বিটকেলে সদ্ভাব দেখছি। 😠
বন্যা লিপি
বিটকেল মাধব’দা বাসন্তী’কে যথাসম্ভব আস্থা করেছিলেন, ভেবেছিলেন ও পারবে বিশ্বাস রাখতে, কাজটা যে মোটেই ঠিক করেননি! সে ব্যাপারে আফসোস করেছিলেন পরে। অপু’দিও রেগে গিয়েছিলেন মাধব’দা র প্রতি। ধন্যবাদ ভাই।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা আপু
মোঃ মজিবর রহমান
বই যাক মান থাক।
বন্যা লিপি
কি ভয়ানক ব্যাপার ছিলো সে দিনটা!! জোরকপাল রক্ষা পেয়েছি মান নিয়ে। ধন্যবাদ ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
স্যাররা ঠিকই করেছেন, ছোটো হয়ে বড়দের বই পড়ার এতো শখ হবে কেন!! ক্লাস গুলো আর টিচারেরা এমন হয় বলেই হয়তো প্রতিদিন ছয়/ সাত ঘন্টার ক্লাস করেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন এতো বর্নিল হয়।
চলুক, তোমার সাথে নিজের স্মৃতিতে ঢুকতে পারছি বন্যা। ভালো থেকো। শুভকামনা +ভালোবাসা ❤❤
বন্যা লিপি
স্যার’রা খুব কম করেছেন বলেই আমার /সবার মনে হয়েছে সেদিন! অভিভাবক ডেকে এনে অপদস্ত করেননি এ ছিলো জোড়কপাল।সত্যিই সেইসব বর্নিল দিনগুলো আজো মন পোড়ায়।
ভালো থেকো ভালোবাসায়💕💕🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
স্মৃতি কথার সুন্দর উপস্থাপন।
লেখা প্রকাশ করার পূর্বে উপরে দুটো অপশন আছে- visual , লেখা। লেখায় ক্লিক করে যে স্থানে প্যারাগ্রাফ দরকার সে স্থানে ক্লিক করে এন্টার দিলেই প্যারাগ্রাফ হয়ে যাবে। সব প্যারাগ্রাফ সম্পন্ন হলে visual এ ক্লিক করে প্রকাশ করলেই লেখা মনের মত দেখাবে।
বন্যা লিপি
কৃতজ্ঞতায় ধন্যবাদ,আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি আপডেট হতে। 🌹🌹
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু এমন এক জায়গায় এসে থামেন যে নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
বন্যা লিপি
পড়ার আগ্রহটুকু জমিয়ে রাখা…… একটু পারিবারিক সমস্যা’র কারনে ধীরগতি লেখায়। কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালোবাসায় ভালো থাকুন সবসময় 🌻🌻
নীলাঞ্জনা নীলা
সকল সমস্যা ঠিক হয়ে যাক। তারপর আসুন লেখা নিয়ে।