বই : একা এবং কয়েকজন
লেখক : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রকাশকঃ আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
মোট পৃষ্ঠা: ৬২৬
মূল্য: ৬৫৬ টাকা
পাঠ্য প্রতিক্রিয়া :
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় – বাঙলাভাষী এই সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ।একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক । তার লিখা এই দ্বিতীয় বই পড়লাম , এর প্রথমে ‘সোনালি – দুঃখ’ পড়েছি । আমার মতে তার লিখা কবিতা গুলোর জন্যই তিনি অধিক জনপ্রিয় ।
“একা এবং কয়েকজন” হচ্ছে উপন্যাস , যা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কয়েক বছর আগে থেকে শুরু করে ভারত মহাদেশের স্বাধীনতা অব্যবহিত কয়েক বছর পর পর্যন্ত যে পরিস্থিতি পার হয়েছে সেই সময়টা প্রকাশ করেছে ; এক পক্ষ সুবিধা ভোগের আশায় তারা হিন্দু মুসলমান এর মাঝে মারামারি – কাটাকাটি সূচনা করে দেয় এবং হুজুগে সাধারণ মানুষ গুলো মারামারি করে অকালে প্রাণ ত্যাগ করে কিন্তু ক্ষমতাধরদের কিছু আসে যায় না , তারা তাদের সুবিধা নিয়েই থাকে । ব্রিটিশ শাসন বিরুদ্ধে যখন মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছিল তখন এই সম্পূর্ণ ভারত বর্ষের নাজেহাল অবস্থা বর্ণনা করেছেন এখানে। প্রধান দুটি চরিত্র রয়েছে উপন্যাসে , ঔপন্যাসিক ‘বাদল’ নামক চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছেন । বিধবা বিবাহ প্রচলন আর বাল্য বিবাহ বন্ধ এসব এই সময়ই শুরু হয়েছিল । দেশ প্রেম , দেশের জন্য জীবন বাজী রেখে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরা এবং কোন কিছুর তওয়াক্কা না করে জেলে বসে অনশন করা সব যেন এক ঘোরের মধ্যে থেকে করা হয় অর্থাৎ যখন দেশের জন্য লড়াই করতে হয় তখন যে আর কিছু নিয়ে মাথা ঘামানো যায় না তা এই উপন্যাসে স্যার সুন্দর করে বলেছেন । যারা আন্দোলন চলাকালীন সময় মৃত্যু বরণ করে তাদের সবাই মনে রাখে কিন্তু তাদের সাথি যারা এতো মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকে তাদের কেউ খোঁজ রাখে না, তারা ধীরে ধীরে কালের গর্ভে হারিয়ে যায় এবং দেশের ক্ষমতায় বসে কিছু লোভী মানুষ । সরকারি চাকুরীজীবীদের ঘুষ খাওয়ার চল এবং চাকরী পাওয়ার জন্য ঘুষ খাওয়ানোর প্রবণতা ব্রিটিশ আমলেই শুরু হয়েছিল , তারা চলে যাওয়ার পরও এসব নোংরা গুণ যে আমরা আঁকড়ে ধরে রেখেছি সেটাই খুব হাস্যকর। কর্মহীন একটা মানুষ তার সংসার জীবনে কতোটা অবহেলিত হয় আর তাকে কতো সংগ্রাম করে বাঁচতে হয় তা এই উপন্যাসের এক চরিত্রে প্রকাশ পেয়েছে ; নিজের দায়িত্ব যে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হয় এবং এই দায়িত্ব বোধ টা নিজেই তইরী করে নিতে হয় তা ‘সূর্য’ নামক চরিত্র খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে ।টাকা – পয়সা বা ধন – দৌলত কিংবা সম্পতি এসব প্রয়োজন সুন্দর ভাবে এই পৃথিবীতে চলার জন্য কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য এসব না এবং পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য এক ভালোবাসা -মায়ার টান লাগে যে টানে প্রতিদিন বেঁচে থাকার নতুন আশা জাগবে মনে আর এ টান ছাড়া এ জীবন কিছুই না – এই সত্য গুলোই প্রকাশ পেয়েছে বড়বাবু আর তার ছেলের চরিত্রে । পরিশেষে বলা যায় সেই প্রবাদ বাক্য ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’ ; সবাই মানুষ কিন্তু কতো তফাৎ দেখা যায় এক একটা মানুষে এবং যাকে সাথে নিয়ে বাঁচার ইচ্ছে সে পাশে থাকলে জীবন কেমন হয় আর না থাকলে কেমন হয় তা বুঝা যায় এই উপন্যাসের শেষটায় । বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা যায় কারণ বড় বই সম্পর্কে কোনটা রেখে কোনটা বলবো তা ঠিক করা যায় না ।
আমি এই ‘একা এবং কয়েকজন’ উপন্যাস অনেকটা মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে পড়েছি , বড়বাবু’র চরিত্র আমার কাছে ভালো লেগেছে আর নায়কের কথা বলার কিছুই নেই ; বই তো মুগ্ধ হয়ে পড়ার কিছুই কিন্তু “সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়” স্যার এর এই বইটা পড়ার সময় অন্য রকম এক আকর্ষণ বোধ করেছি , এক বার পড়ে শেষ করে আবার প্রথম থেকে পড়েছি ; নতুন পাঠক হিসেবে আমি এই প্রথম কোন বই পর পর দুই বার পড়লাম । সব মিলিয়ে উপন্যাস আমার কাছে বেশ চমৎকার লেগেছে বাকীটা আপনারা পড়লেই বুঝতে পারবেন । তাই “সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ” এর লিখা “একা এবং কয়েকজন” উপন্যাস সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন ।
শুভ হোক আপনার পাঠ্য কার্যক্রম।
১৪টি মন্তব্য
মৌনতা রিতু
আমরা তিন ভাবি খুব ঘনিষ্ট। আমাদের তিনজনেরই বেশ বই আছে। আমরা ঠিক করেছি যে, কোনো একদিন আমরা লাইব্রেরি থেকে একটা বই নিয়ে পড়ে পরের সপ্তাহে তা নিয়ে আলোচনা করব।
তোমার এ উদ্যোগটা আমাদের কাজে লাগবে। ভালো থেকো। (3 -{@
গালিবা ইয়াসমিন
ভালো উদ্যোগ , ধন্যবাদ আপু 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
কর্মহীন একটা মানুষ তার সংসার জীবনে কতোটা অবহেলিত হয় আত তাকে কতো সংগ্রাম করে বাঁচতে হয় তা এই উপন্যাসের এক চরিত্রে প্রকাশ পেয়েছে ; নিজের দায়িত্ব যে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হয় এবং এই দায়িত্ব বোধ টা নিজেই তইরী করে নিতে হয় তা ‘সূর্য’ নামক চরিত্র খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে
এটাই জীবন ঝামেলায় ন্যুয়ে পড়েও সংসার ের সব মিটিয়ে চলায় সংসারের আয় যে অ্যানে তাঁর প্রাপ্য।
গালিবা ইয়াসমিন
ঠিক বলেছেন ; বানান ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
মোঃ মজিবর রহমান
উকে আপু।
মাহমুদ আল মেহেদী
আপনি উপন্যাস পড়ে মুগ্ধ হয়েছেন আর আমি আপনার লেখা পড়ে মুগ্ধ হলাম।
গালিবা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ , যা বুঝেছি তাই বলেছি আর কিছু না 🙂
আগুন রঙের শিমুল
সুনীল গাঙ্গুলী সব সময়ের জন্য ফেভারিট, কবিতা গল্প উপন্যাস সব কিছুতেই 🙂
গালিবা ইয়াসমিন
জী , ঠিক বলেছেন :v
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার খুব প্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে “একা এবং কয়েকজন” অন্যতম। কতোবার যে পড়েছি, হিসেব নেই।
এভাবে আরোও লিখুন।
গালিবা ইয়াসমিন
বাহ ্, :c
জিসান শা ইকরাম
এই বইটি পড়া হয়নি, ওনার পূর্ব পশ্চিম উপন্যাসটি আমি দুইবার পড়েছি।
এত বৃহৎ উপন্যাস পড়ার সময় পাবো?
সংগ্রহ করে রাখবো এটি নিশ্চিত।
আপনি প্রচুর বই পড়েন,
ধন্যবাদ এমন একটি পোষ্ট দেয়ার জন্য।
আগুন রঙের শিমুল
পুর্ব পশ্চিম কত অজস্রবার যে পড়েছি দাদা কোন হিসাব নাই, আর প্রথম আলো। দুইটাই মাস্টার পিস
গালিবা ইয়াসমিন
আমি প্রচুর বই পড়ি না ,
প্রচুর বই পড়ার চেষ্টা করছি 😀