অনেকদিন থেকে বন্ধুদের জন্য কনে দেখছি। পাত্র পক্ষের হয়ে কনে পক্ষের সাথে অনেক বিষয়ে কথা বলছি। আলাদা ভাবে কনেদের সাথেও কথা বলছি । আজ আপনাদের কাছে যা বলছি সেখানে আমি নিজেই পাত্র । আসুন শুরু করা যাক প্রথম থেকে ঃ
আমার বন্ধুদের প্রায় সবার বিয়ে করা শেষ আমরা দুই থেকে তিন জন এখন বাকি আছি । তো কথায় কথায় এক বন্ধু বলল চল তোকে একটা মেয়ে দেখাই তোর পছন্দ হলে পরে কথা বলা যাবে । প্রথম দিন তেমন একটা আগ্রহ দেখালাম না । বললাম পরে যাব এভাবে কয়েকদিন গেলো । সম্ভবত গত ১১ ই নভেম্বর এর ঘটনা দোস্ত আমার ফোন দিয়ে বলল আজ আমরা যাচ্ছি । এখানে বলে রাখা দরকার মেয়েটি আমার বন্ধুর মামা শ্বশুরের মেয়ে । যাহোক , হাতে ওইদিন অনেক কাজ ছিল তাঁর পরে আবার আবহাওয়া ভাল ছিলনা । আমার যতদূর মনে পড়ে অনেক শীত আর নিম্নচাপ ছিল । দোস্ত আমার বলল আমরা ৪ জন যাব । তোর ভাবী আমি তুই আর ছোট ভাই, মামি অনেক দিন থেকেই যেতে বলছিল চল এই সুযোগে কাজ টাও হয়ে যাবে । আমি প্রথমে রাজি না হলে ও শেষ পর্যন্ত বন্ধুর কথায় গেলাম । মনে একটা ভয় ছিল বাড়িতে জানলে সবাই অনেক কষ্ট পাবে । আমি একাই মেয়ে দেখতে যাচ্ছি ?
যাহোক , আমরা বাসে উঠলাম সন্ধায় নাটোর থেকে রনবাঘা গেলাম ঘড়ি দেখি নাই সম্ভবত ৭ টা বেজেছিল । রনবাঘা নামার পরে একটা সিএনজি ভাড়া করে কিছু দূর যাবার পরে একটা রাস্তার মাথায় নামায় দিল । ভেতরে একটা অনুভূতি কাজ করতেছিল আপনাদের কাছে ব্যাখ্যা করার মত ভাষা আপাদত আমার জানা নাই । এবার আর কোন গাড়ি নাই হাঁটতে হবে, শুরু করলাম হাটা গ্রামের দিকে হাঁটছিলাম আর হাঁটছিলাম মাঝে মাঝে দু একটা মোটর সাইকেল পার হয়ে যাচ্ছিলো । ঠাণ্ডায় জড়সড় হয়ে বাড়ি গেলাম তখন প্রায় রাত ১০ বাজে ।
বাড়িতে ঢুকার পরে গেস্ট রুমে বসলাম , ভাবী আর ছোট ভাই ভেতরে গেলো । একটু পরে দেখি একজন দু জন করে আসে আর যায় আমি ভাবছিলাম হয়তো এমনিতেই , কিন্তু উদ্দেশ্য যে আমি বুঝতে খুব বেশি একটা সময় লাগলো না । নাস্তা আসলো কয়েক রকমের যা দেখে আমার অবস্থা খারাপ তিন দিনেও এত খাবার শেষ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না । আমি ভাব নিলেও ভেতরে আরেকটা ভয় কাজ করতে লাগলো আল্লাহ্ এই রাতে আসলাম পাত্রী দেখতে যদি এখন আমার বাসায় খবর দেয় বা বিয়ে দিয়ে দেয় ? আমি শেষ এলাকায় ঢুকা অসম্ভব । আবার মনে সাহস পেলাম বন্ধু আমার পাশে আছে । তাদের ভাগ্নি তো আমার এলাকায় আছে তা ভেবে হয়তো তেমন কিছু করবে না । আর উল্টা পাল্টা কিছু করলে নাটোর ঢুকলে সুদে আসলে শোধ দিব । আবার মনে হল ধুর কি ভাবছি আসছি ঘুরেফিরে যাই । মনের ভেতর এইসব চলতে ছিল । যাহোক নাস্তা গুলির বেশি দোস্ত রে দিয়ে শেষ করালাম।
রাত তখন প্রায় ১১ টা । রাতের খাবারের আয়োজন । আমি অবাক হলাম তারা এত রকমের খাবার তৈরিতে কত না জানি সময় লাগাইছেন । আমি গুনে রাখছিলাম প্রায় ১৭ রকমের খাবার ছিল পানি ছাড়া । আমি খাইতে পারলাম না বেশি একটা দোস্ত আমার খাইতেছিল কোন রকম বিবেচনা ছাড়া । আর খাবেই বা না কেন ? তাঁর তো মামা শ্বশুর বাড়ি । খাবার শেষ করে আমি একটা কম্বল গায়ে দিয়ে বিছানার এক পাশে বসে টিভি দেখা শুরু করলাম । এর মাঝে অনেকেই আমার রুমে আসছেন , মেয়ের দাদি, চাচা, চাচি, ছোট ভাই, দাদা আরও অনেকেই ।
রাত প্রায় বারটার কাছাকাছি মেয়ে (পাত্রী) আমার রুমে আসলো , বন্ধু সোফায় বসতে বলল । মেয়েটা সামনা সামনি বসলো । দোস্ত, আমার কেমন আছ ? কি অবস্থা ছোট ছোট কয়েকটা প্রশ্ন করলো । আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না দোস্ত আমার বার বার বলতে ছিল কিছু জানতে চাইলে জিজ্ঞেস কর । আমি বিভিন্ন প্রোজেক্ট এর কাজে বিভিন্ন স্কুল , কলেজ এ প্রোগ্রাম করেছি, একসময় নিজের একটা কোচিং ছিল, মেয়ে কলিগ ছিল, এবং বন্ধু দের বিয়ের অনেক পাত্রী দেখতে গিয়েছিলাম। সব মিলিয়ে মেয়েদের সাথে আমার অনেক মেশার সুযোগ হয়েছে । কিন্তু এই মেয়ে দেখতে গিয়ে বুঝলাম আমি অনেক অপরিপক্ক । আমি তেমন কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারলাম না । মাত্র কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলাম । আপনাদের বলি হাসবেন না কিন্তু !!!
# তুমি লেখা পড়া করছ কোথায় ?
-একটি মহিলা কলেজে।
# লেখা পড়া শেষ করে নিজে কিছু করবো বা হব ? এমন স্বপ্ন দেখো ?
– মেয়েটি মনে হয় আমার এই প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না ।
# বিয়ের জন্য বড়রা বলছে জন্য না নিজের ও সম্মতি আছে ?
– কোন উত্তর দেয় নি ।
# তোমার যদি এখন বিয়ে হয়ে যায় । লেখা পড়া শেষ করবা না ?
– বড়রা যা বলবে তাই করবো ।
# তোমার বাবা কি করেন ?
– একটি গ্যাস ফিল্ডে চাকরী করেন । সেখানেই থাকেন ।
আমি যখন এই প্রশ্ন গুলী করছিলাম আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়েছিলাম মাত্র । অনেক রাত হয়ে গেছে বললাম ঠিক আছে তুমি যাও ।
মেয়েটি যাবার কিছুক্ষণ পরে মেয়েটির মা আসলেন ছালাম দিলাম। পাশের সোফায় বসলেন । অনেক সময় আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন । কিছুই জানতে চাইলেন না । কোন প্রশ্নও করলেন না । আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিত । তাঁর পরেই জানতে চাইলাম কেমন আছেন ? উত্তর দিয়েই জানতে চাইলেন আসার সময় কষ্ট হয়েছে কিনা ? আর এখন কিছু লাগবে কিনা ?
আমি না সুচক উত্তর দিলাম ।
আর মনে মনে পাঁশে বসে থাকা বন্ধুরে গালি দিতেছিলাম । শালা কোন বিপদে আমারে ফালাইল টেনশন এ তো এখন ঘুমও আসবে না । প্রায় রাত একটা বাজলো । গ্রাম পুরাই সুনসান নিরব । আমরা ঘুমের প্রস্তুতি নিলাম । আর মনে মনে ভাবতে ছিলাম ভোর বেলা এই এলাকা ছাড়তে হবে না হলে । গ্রামের মানুষ আমারে দেখতে আসবে :v 😛 দোস্ত রে বুঝাইলাম দেখ সকালে আমার অনেক কাজ ৮ তাঁর মাঝেই নাটোর যেতে হবে । তুই কালকে থাক আর বাড়ি আসলে আমরা একসাথে বসে সব ব্যাপারে কথা বলবো । যাহোক দোস্ত মানেজ করলো আমি সকালেই বের হচ্চি । আমি ঘুম থেকে উঠলাম অনেক ভোরে । উঠেই রেডি হলাম । ও বাবা একি সকাল ৭ তাঁর মাঝেই হরেক রকমের নাস্তা, পিঠা , মিষ্টি আর কত কি ? ভাবলাম আল্লাহ্ এইকি জামাই আদর ? রাতে দুই বারে যা দিছে আর এখন যা দিল আমি নিশ্চিত ৭ দিন খাইতে পারব !!
তাহলে কি একেই জামাই আদর বলে ??????
আমি কোন রকম হালকা খেয়েই সবার কাছে বিদায় নিয়ে বের হলাম । কপাল মন্দ গ্রামে কোন গাড়ি পাইলাম না । বন্ধু মেইন রাস্তা পর্যন্ত আগাইয়া দিল । রাস্তায় এসে বাসে উঠার পরে মনে হল আমি স্বাধীন ! আমারে আর কে ধরে ? ভেতর থেকে ভয় গুলী কেটে গেলো । নাটোর এসে হাঁসপাতালে উঠলাম কিছু কাজ ছিল শেষ করে বাড়ি গিয়া গত রাতের ঘুম কভার করলাম ।
এর মাঝে বন্ধু আমার অনেক বার ফোন দিছে । ধরি নাই , তাঁর দুদিন পরে বন্ধু আমার বাড়ি ফিরে আমারে ফোন দিতেছে আমি আর দেখা ও করি না ফোন ও ধরি না । আসলে আমি কি জবাব দিব ? আমি সেখানে যাবার আগেই বলছিলাম দেখ আমি কিন্তু এখন বিয়ে করবো না । আমার আর কিছু সময় লাগবে ।
এর পরে মনে হয় ৫ দিন পরে বন্ধুর প্রতিষ্ঠানে গেলাম । কথায় কথায় আমারে বলল মামি তো তোর মতামত জানতে চাইছে । ভাল মন্দ কিছু তো বললি না । আমি তাকে আগের কথাই বললাম ।
ও মেয়েটির কথা আপনাদের বলা হয়নি । মেয়েটি একটু শ্যামলা বর্ণের ছিল । হয়তো তারা ভেবেছিলেন আমি সে জন্য আর সামনে আগাইনাই । আসলে আমার কালো ধলায় কোন সমস্যা নাই । আমি একজন মানুষ চাই । যার আলাদা পার্সোনালিটি আছে । যে অন্যায় কে অন্যায় বলবে তাঁর কাছে অন্যায়ের বা মিথ্যার প্রশ্রয় থাকবে না । যে আমার সাথে বন্ধুর মত মিশবে । জিবনের উত্থান পতনের সম অংশীদার হবে । যে আমার কাছে বা তাঁর পরবর্তীদের কাছে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হবে । এই গুলী কেন চাইব না বলেন ? আমি এসএসসি পাসের পরে একবার বিচ্ছিন্ন ভাবে একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম অনেক স্বপ্ন ছিল যাহোক মেয়েটি জানিনা কি কারণে চলে গেছে , তাঁর পরে তাঁর সে দিকে জড়াই নাই ভেবে রাখছিলাম প্রেম করবো বিয়ের পরে । দেখবো কিভাবে কোন দিকে আমার প্রেম পরাজিত হয় ।
জিবনের ২৮ বসন্তে এসে আজ ও সে বিশ্বাসে আছি। দেখা যা সামনে কি হয় ……………………………….
উপরে আমি যা লিখেছি তা হুবুহ বর্ণনা করেছি মাত্র । তাই হয়তো পেশাদার লেখকদের লেখার মত রস খুঁজে পাবে না । আসলে কল্পনা না মেশালে লেখায় কেমন জানি অপূর্ণতা থাকে আমার মত । কিন্তু এই জাগায় আমি খুবই দুর্বল , ভালো থাকবেন সবাই ।
৪টি মন্তব্য
মেহেরী তাজ
ভালো লিখেছেন। আর কোন বসন্ত পার না করেই শুভ কাজটা সেরে ফেলুন। সোনেলার সব্বাইকে দাওয়াত দিতে ভুলে যাবেন না আবার।
অলিভার
আপ্যায়নের কারণে আপনার ভীতি খুব ভালোই ফুটে উঠেছে :D)
যাই হোক, গায়ের রঙ যেমনই হোক ব্যক্তিত্ব থাকা চাই- এই ব্যাপারটা আপনার ভালো লেগেছে। তবে এত অল্প কথা আর পরিবারের মাঝে থেকে হুট করেই একটা মেয়েকে বোঝা সম্ভব না। হয়তো আপনি যেমনটা খুঁজে বেড়াচ্ছেন তা এর মাঝেও আছে, কিন্তু প্রকাশ ভঙ্গিতে তা নিয়ে আসতে পারে নি।
শুভ সংবাদের অপেক্ষায় রইলাম 😀 😀
শুন্য শুন্যালয়
জামাই না হয়েও জামাই আদর কাকে বলে দেখে ফেলেছেন, আলহামদুলিল্লাহ্। অলিভার ভালো বলেছে, এতো অল্প সময়ে কাউকে বোঝা সম্ভব নয়। শুভ সংবাদের অপেক্ষায় রইলাম। আমরা সোনেলার সবাই জামাই আদরের ভাগ পেতে চাই।
খেয়ালী মেয়ে
বিয়ে না করেই জামাই আদর পেয়ে গেলেন, আল্লাহ্ ই জানে যখন কাউকে বিয়ে করবেন-সেই বিয়ের পর আপনার জন্য কি অপেক্ষা করছে 🙂