
আমি তোমার জন্য এসেছি -(পর্ব-৪৯)
প্রিয়াকে বিয়ে করছিস তো, মোবাইলে ছবি নেই দেখা দেখি আমার সতীন কত সুন্দরী বলেই শীলা হেসে কুটি কুটি হলো।
-শীলার কথা শোনে সজিব, আরাফ হাসতে শুরু করলো।
-সত্যিই তো ওর জন্য তুই কত চেষ্টা করলি আমি সব জানি তো।
-দোস্ত প্রিয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়নি!
ওর সাথে আমার যোগাযোগ নেই, কোথায় আছে, কেমন আছে কিছুই জানি না।
-আরাফের কথা শোনে শীলার হাসি মুখটা এক সেকেন্ডে মলিন হয়ে গেল। শীলা চেয়ে দেখল আরাফের চোখে পানি টলমল করছে, বুঝতে পারল অনেক কিছু ঘটে গেছে আরাফের জীবনে ।
-সজিব দুজনের মুখ দেখে ওদের স্বাভাবিক করতে বললো।
-তা আরাফ ভাইয়া আমরা মিরপুর ৩ নম্বরে আছি, কবে আসবেন বলেন।
-জ্বী ভাইয়া, মাস খানেক হলো দেশে ফিরছি একটু ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি ইনশাল্লাহ্ যাব একদিন।
-ভাইয়া মোবাইল নাম্বারটা পেতে পারি!
-আরাফ নাম্বার দিল।
-মাম্মী আস বলেই ছোট একটা ৪-৫ বছরের মেয়ে বাবু শীলার আঁচল ধরে টানল!
-সজিব বললো মামনি তুমি গাড়ি থেকে নেমে আসলে কেন বলেই বাবুটাকে কোলে নিল। -আরাফ চেয়ে দেখল একদম শীলার মতো বেবিটার মুখটা নিশ্চয় শীলার মেয়ে খুব সুন্দর হয়েছে।
-হ্যাঁ মাম্মী তোমরা আস না কেন তাই গাড়ি থেকে নেমে চলে আসছি বলেই থাকল অর্থি।
-ভাইয়া আমাদর একামাত্র সন্তান রাজকন্যা অর্থি সোনা।
-বাহ্ বেশ সুন্দর হয়েছে মামনি বলে আরাফ অর্থির গাল টিপে আদর করল।
-ভাইয়া আমাদের পরিবারে নতুন আরেকজন মেহমান আসার অপেক্ষায় আছে কয়েকমাস পরে আসবে।
-গুড নিউজ।
-দোয়া করবেন ভাইয়া তার জন্য।
-শীলা তখনও মুখে হাসি নেই,তবু জোর করেই বললো বাসায় আসিস আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আসি ভাইয়া, আসসালামু আলাইকুম।
ওয়া আলাইকুম সালাম বলে আরাফ শীলার যাবার রাস্তার দিকে চেয়ে আছে।
প্রিয়ার জন্যই একদিন শীলার ভালোবাসা গ্রহন করি নাই, তবু প্রিয়াকে পেলাম না। আজ হয়ত প্রিয়ার জীবনে নতুন কারো আগমন হয়েছে! ভাবতে ভাবতে বুকের ভিতরে চিন চিন একটা ব্যথা অনুভব করে আরাফ।
গাড়িতে ওঠে বসে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়,হয়ত ভাবনাতে প্রিয়া বহু বছর আগের ক্ষতটা এখনো শুকায়নি। প্রতিটা ক্ষন রক্ত ঝরে খুব গোপনে না কাউকে বলা যায় না কাউকে দেখানো যায়…!
আরাফ আর ভাবতে চায় না হয়ত স্বামীর বুকে মাথা রেখে প্রিয়া আজ ঘুমাও আর আমি এখনো তাকে ভেবে কাঁদি কি নিষ্ঠুর নিয়তি। প্রিয়ার চিন্তুা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় আরাফ পছন্ড ঘৃনা, ক্ষোভ, নিজের ভিতরে কেঁদে ওঠে।
প্রিয়া খুব ভালোবেসেছিলাম তোমাকে পাগলের মতো কিন্তু সেই ভালোবাসার মূল তুমি দিলে না। আমি তোমাকে শেষ বারের মতো একটা চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলাম, তুমি তার জবাব দিবার প্রয়োজন বোধ করনি।
আমি অনেক ঘন্টা,অনেক দিন,অনেক বছর তোমার একটা ফোন কলের অপেক্ষায় দিন কাটিয়েছি।
তুমি ভাবতে পারবে না অপেক্ষার কষ্ট কত গভীর,কত বেদনার ও তুমি তো পিচ্চি প্রিয়া। গুন্ডা ছেলের ভালোবাসা বুঝার বয়স হয়নি বলেই উপহাসের হাসি দিল আরাফ হা হা হা হা হা।
কান্না হাসির সংমিশ্রনে আরাফ নিজেকে আজ আটকাতে পারছে না, পাগলের মতো নানা প্রলাপ বকে যাচ্ছে।
তখন থেকে প্রিয়া আমি অপেক্ষায় ছিলাম তুমি একটা বার কল দিয়ে বলবে। গুন্ডা ছেলে আমি তোমাকে ভালোবাসি বিয়ে করতে চাই…!
এই একটা কথা শোনার জন্য আমার মন অস্তির ছিলো তুমি শান্ত করতে ফিরে আস নাই।
আরাফের বুক ফাঁটা আর্তনাত চার পাশের পৃথিবী জানে না কিন্তু আরাফ জানে দু-ফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল।
অশান্ত মন আজো প্রিয়াকে ভুলতে পারে নাই, একবার দেখা হলে জানতে চাইব আমার কিসের অভাব ছিলো প্রিয়া কেন একবার আমাকে পিচু ডাকল না।
এর মাঝে আরাফের গাড়িটা বাড়ির ভিতরে ঢুকল দারোয়ান গেইট খুলে দিল,,আরাফ গাড়ি রেখে সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে আসল।
কি ব্যাপার তোমরা যাও নাই?
শ্রেয়া জবাব দিল তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
ওহ! স্যরি,স্যরি ১০ মিনিট আমি রেডি হয়ে আসছি বলেই আরাফ ওয়াশ রুমে ঢুকল।
গাড়িতে রোহান উঠার আগেই সব সিট ভরা হয়ে গেছে আমার ছেলেটা যে কথায় বসবে, রোহানের বাবার এমন কথায় মা হাসল।
তুমি এসব চিন্তা করো না রোহান যাবে আরাফের গাড়ি ওটা কাঁচা ফুল দিয়ে বর এর জন্য সাজানো হয়েছে।
আরে বাহ্ আগে বলবে তো, তাহলে আমরা রওনা হয়ে যাই বলে মুরব্বিদের বাস,কয়েকটা মোটরবাইক,জীপ গাড়ি বর যাত্রী নিয়ে বের হয়ে গেল।
রোহান! জ্বী ভাইয়া আসছি। আরাফ, শ্রেয়া অমিকে নিয়ে হাজির।
রোহান মাকে সালাম করে বিদায় নিল, রোহান “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলে ডান পা দরজার বাইরে বের করো বলেই আরাফ বাইরে আসল।
আরাফ গাড়িতে ওঠে বসল পাশে শ্রেয়া অমি রোহান অমির পাশে বসল।
আবিদও রোহানের গাড়িতে এসে ওঠল আর সারা রাস্তা হাসি আনন্দে ভরিয়ে তুলল।
১ঘন্টার মধ্যেই ওরা মিতুর বাড়িতে পৌছল গাড়ির আওয়াজ পেয়েই প্রিয়া বললো বড় মামী বড় এসেছে। সবাই দৌঁড়াদৌঁড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল, মিতুর বান্ধবী মাধবী বললো প্রিয়া আপ্পি আপনি চলুন! নাহ্ তোমরা যাও আমি মিতুর কাছে থাকি, ওরা সবাই বর নামাতে চলে গেল।
মিতু বসে বসে ভাবছে এমনি একটা বিয়ে বাড়িতে রোহানের সাথে দেখা,পরিচয়,ভালো লাগা ভালোবাসার সমাপ্তি বিয়েছে।
মিতু খুব খুশি রোহানকে পেয়ে সে মুসকি হাসল, প্রিয়া মনে কষ্টের আনাগোনা হয়ত এভাবেই গুন্ডা ছেলেটা কাউকে বিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছে।
যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জীবনে এক বার যেন আরাফের কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটা পায় তাতেই খুশি।
মেয়েরা গেইটে কোন ঝামেলা করবে না জিসান আগে বলে রেখেছে, রোহান প্রস্তুত ওদের দাবী মেটাতে।
মেয়েরা মিষ্টি নিয়ে গেইট আটকিয়ে দাঁড়ানো প্রায় ১৫-২০ জন ছেলে মেয়ে।
তোমরা একটু সাইড দেও মা রোহানকে গাড়ি থেকে নামাতে যাবে।
সবাই সাইড হলো বেগম শেখর রোহানের গাড়ির কাছে আসল ১ ভরি ওজনের সোনার চেইন গলায় পড়িয়ে দিল। জিসানের বউ একটা রজনীগন্ধা স্টিক দিয়ে নতুন বরকে ওয়েলকাম জানালো।
উপস্থিত সকলে করতালির মাধ্যমে নতুন মেহমানকে স্বাগতম জানিয়ে গ্রহন করে নিল।
বড় মামী চলে গেল বরকে নামিয়ে সদর গেইটে দাঁড় করানো হলো।
শ্রেয়া,অমি মেয়েরা সবাই বাড়ির ভিতরে চলে গেল, আরাফ চলে যাবে রোহান হাত চেপে ধরল।
ভাইয়া আপনি থাকেন আমার ভয় করছে, আবিদ,রিদম হেসে ফেলল, ওকে থাকছি।
বাহ্ খুব সুন্দর গেইটের আর্ট কে করেছে? আরাফের এমন কথায় মেয়েরা হাসল এসব কথায় কাজ হবে না গেইটের পুরো টাকা দিতে হবে।
আরাফ হা হা হা করে হেসে দিল গেইটের টাকা অবশ্যই পাবেন, আর্ট করাটা সুন্দর হয়েছে তাই প্রশংসা করলাম।
তারপর আপনাদের আর্জি হলুন, আমরা শোনতে রাজি কোন হৈ চৈ করবেন না, শান্ত ভাবে সমাধান দিব।
মেয়েরা আরাফের ব্যবহারে মুগ্ধ মাধবী ভাবীর কানে কানে বলেই ফেলল দেখ ভাবী। ওই লোকটার বয়স হয়েছে তবু চেহাড়াটা কত সুন্দর ২০০ জন বর যাত্রীর মাঝে তাকেই সুন্দর লাগছে।
মাধবী চুপ তোর বর শোনলে কপালে খারাপ আছে বলে দিলাম, রাখ খারাপ এমন একজনকে দেখলে কার মাথা ঠিক থাকে বলেন।
কি ব্যাপার আপনারা সবাই চুপ যে বরকে শরবত,মিষ্টি কিছু দেন আবিদের কথা শোনে মেয়েরা হাসতে হাসতে শেষ।
আরে ভাই মিষ্টি তো পরে খাবেন আগে গেইটের টাকা দেন!
কত?
আরাফ জানতে চাইল।
ভাইয়া বেশি না মাত্র ১০,০০০টাকা।
ওরে আল্লা তোরা কেউ আমাকে ধর রিদমের কথা আবার হাসি শুরু।
রোহান আরাফের কানে কানে বললো ভাইয়া ঝামেলার দরকার নেই কম বেশ করে দিয়ে দেন।
……চলবে।
১৪টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক শুভ কামনা রইল নার্গিস আপু
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দাদা।
অনেক অনেক শুভ কামনা রইল, দোয়া রাখবেন আমার জন্য।
উপন্যাসটা যেন ভালোভাবে লিখে শেষ করতে পারি, পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বিয়ে বাড়ির চমৎকার আমেজ পাওয়া গেল। আরাফের খাঁটি ভালোবাসা প্রিয়াকে ঠিক পাইয়ে দেবে। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
সব সময়ের মতো সুন্দর মতামতে এবারও অনুপ্রাণিত হলাম।
দেখা যাক গল্পের মোড় কোনদিকে ঘুরে, আরাফ প্রিয়ার ভালোবাসার শেষ পরিণতি কি হয়।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল, দোয়া রাখবেন আমার জন্য।
সুপায়ন বড়ুয়া
আরাফ আজো মিস করে
প্রিয়া তোমায় বল।
বিয়েতে কি পুর্ণ হয়
সার্থক ভালবাসা হল ?
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়ে দাদা।
সুন্দর মতামতে সব সময়ের মতো এবারও মুগ্ধ হলাম।
দোয়া রাখবেন আমার জন্য, পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল দাদা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আহা, হারানো প্রেমের বেদনা — “প্রিয়া খুব ভালোবেসেছিলাম তোমাকে পাগলের মতো কিন্তু সেই ভালোবাসার মূল তুমি দিলে না। আমি তোমাকে শেষ বারের মতো একটা চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলাম, তুমি তার জবাব দিবার প্রয়োজন বোধ করনি।
আমি অনেক ঘন্টা,অনেক দিন,অনেক বছর তোমার একটা ফোন কলের অপেক্ষায় দিন কাটিয়েছি”।
এগিয়ে চলুক গল্প। সুন্দর লেখা। শুভ কামনা ।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
আপনার মন্তব্যে সত্যি মুগ্ধ হলাম, আপনারা আমার লেখা পড়েন এটার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সব সময় পাশে থাকবেন, আমার প্রতি দোয়া রাখবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
ফয়জুল মহী
যথার্থ ও নিখুঁত প্রকাশ ।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
উৎসাহ দিয়ে সব সময় পশে থাকার জন্য, সুন্দর মতামতে মুগ্ধ হলাম।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল ভাইয়া।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল।
তৌহিদ
আরাফ কি প্রিয়াকে চিনতে পারছেনা? সেদিনও তো দুজন দাওয়াত খেয়ে দুই গাড়িতে দুজন ফিরলো!
প্রেমের টানে একদিন সব খোলাসা হবে আশাকরি।
চলুক গল্প। ভালো থাকুন আপু।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
প্রিয়াকে আরাফ ছোটবেলা দেখেছে তাই মনে করতে পারছে না।
আর আরাফ প্রিয়ার সামনা সামনি এখনো দেখা হয়নি, সামনে হয়ত দেখা হবে।
সুন্দর মতামতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ভালো থাকবেন
নিতাই বাবু
শেষমেশ মনে হয় বিয়েবাড়ির গেইটের ঝামেলাটা রোহান’র কথাতেই কম আর বেশি দিয়ে ঝামেলা মেটাতে হবে। তবে দেখা যাক, লেখকের মর্জি কোনদিকে মোড় নেয়! তাই পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
প্রিয়াকে আরাফ ছোটবেলা দেখেছে তাই মনে করতে পারছে না।
আর আরাফ প্রিয়ার সামনা সামনি এখনো দেখা হয়নি, সামনে হয়ত দেখা হবে।
সুন্দর মতামতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ভালো থাকবেন