
আমি তোমার জন্য এসেছি- (পর্ব-৪৬)
অন্য পাশে হিন্দি গানের তালে তালে মিউজিক এর সাথে ছোট ছেলেমেয়েদের অসাধারন নাচ চলছে।
ভাইয়া এদিকে আসুন,দেখুন এদের প্রতিভা বলেই রিদম এগিয়ে গেল। আরাফ,শ্রেয়া সবাই চেয়ে দেখল দারুন নাচ, রিদম এসব দেখলে চলবে! বাসায় তো ফিরতে হবে।
জ্বী ভাইয়া চলুন!
মম আমি একটু মিতুর কাছে যাই পরে এসে তোমাকে কল দিব।
ওকে বলে মিরা ফোনটা কেটে দিল, এতক্ষনে ওরা সবাই ভিতরে এসে হাজির।
প্রিয়া আপু আপনি খুব ব্যস্ত তাই আমরা দেখা করতে আসলাম।
ধন্যবাদ আমার খোঁজ নেওয়ার জন্য, আমি দুঃখিত মম কল দিয়েছে তাই কথা বলছিলাম।সমস্যা নেই আপু কাল তো দেখা হবেই। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন।
শ্রেয়া বললো আচ্ছা আমরা তাহলে যাই, আল্লাহ্ হাফেজ ওরা সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল।
জিসান ওদের এগিয়ে দিতে গেল, প্রিয়া এসে হলুদে যোগ দিল। মিতুর বান্ধবী কিছু সেল্ফি তুললো, গ্রুপ ছবি তুলল মিতুও নিজের মতো করে ছবি নিল। প্রিয়া আপ্পি আসেন, ভাবী আপনিও আসেন আমরা সবাই নাচব বলে হা হা হা করে হাসল। জিসানের বউ বললো চল প্রিয়া আমি রাজি। ভাবী সত্যি আপনি নাচবেন?
হ্যাঁ চল, ওরা সবাই মিলে খুব আনন্দ করলো মিতুও বাদ গেল না।
প্রিয়া কে কল করেছে বড় মামী মম এর কথা বলতেছি।
মিতু তোর ফোন রোহান! দাও বলেই মিতু হ্যালো।
– জানু।
-হ্যাঁ বলো।
আমার ওরা সবাই আসছে এখন হলুদ দিবে, তোমার কি খবর।
-এই তো গোসল শেষ করলাম, এখন খাওয়া দাওয়া করবো।
ওহ্! তাহলে আমি রাখছি।
আমার গোসল শেষ হলে রাত ১১ টার দেকে তোমাকে কল দিব।
ওকে বাই, আল্লাহ্ হাফেজ।
মিতু এদিকে আয় বলেই প্রিয়া কবুতর, ৫ রকমের ভাজি সব মিলিয়ে এক প্লেটে খাবার নিয়ে আসল।
মারিয়য়া, ভাবী, রহিত, রুমি, কই তোরা সবাই এদিকে আস এক সাথে খাব।
কয়েক মিনিটের মধ্যে বিছানায় সবাই গোল হয়ে বসল।
প্রিয়া আপ্পি তুমি মাঝে বস, মিতু তুই আমার পাশে বস বলেই প্রিয়া বিছানায় উঠে বসল।
মিতুর মুখে মাখানো ভাত দিল, সবাই হাত সামনে রাখ বলেই প্রিয়া সবার হাতে মাখানো ভাত দিল তারপর প্রিয়া নিজেও খেল এভাবে সবাই হালকা খেল।
মেজমামী তুমি টেবিলে খাবার দাও ওরা সবাই খেয়ে নিবে, যাও সবাই খাবে।
আমি মিতুকে খাইয়ে আসছি বলে প্লেট থেকে খাবার মিতুর মুখে নিল।
রাত ১০টা বাজে সবাই তাড়াতাড়ি নিজ নিজ রুমে চলে যাও, কাল অনেক কাজ আছে।
প্রিয়া মিতুকে নিয়ে ঘুমাতে গেল এর মধ্যেই মায়ের কথা মনে পড়লো মোবাইলটা হাতে নিয়ে মমকে কল দিল।
-প্রিয়া!
-হ্যাঁ মম।
-খেয়েছো?
-হ্যাঁ, তোমরা খেয়েছো.? আব্বু ঘুমিয়ে পড়ছে।
-হ্যাঁ আমরা খেয়েছি, টিভি দেখছি।
তা মিতুর গায়ের হলুদ কেমন হলে.?
খুব আনন্দ করেছি মম।
গুড।
তোমাদের কথা বলো কেমন আছো.?
কি খবর.?
-আজাদ পাশেই বসে ছিলো, মিরা কে কল করেছে.?
-তোমার মেয়ে।
-শোন প্রিয়াকে একটু খেপাও! দেখি কি বলে।
-কিভাবে.?
-বলো প্রিয়া তোমার বাবা প্রেমে পড়েছে!
-এত রাতে মেয়েটাকে খেপানো কি ঠিক হবে!
-আরে বল বল একটু মজা করি।
-অনেকদিন প্রিয়াকে খেপানো হয়না।
-ওকে।
মম চুপ কেন!
কিছু তো বল।
-প্রিয়া একটা গুড নিউজ আছে!
-গুড নিউজ! কি সেটা তাড়াতাড়ি বলো আমি শুনতে চাই।
-প্রিয়া তোমার বাবা প্রেমে পড়ছে।
বলো কি মম!!!
-হ্যাঁ আজকেই জানতে পারলাম।
-প্রিয়া আকাশ থেকে মাটিতে পড়ল গত ২৫ বছরে আব্বুকে কোন নারীর দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকাতে দেখলাম না।
সে ৫০ বছর বয়সে কারো প্রেমে পড়েছে, প্রিয়া ঘটনাটা মন থেকে মানতে পারছে না।
মিরা মুখে কাপর চেপে হাসছে, মম আব্বুকে ফোনটা দাও।
নাও তোমার মেয়ে কথা বলবে।
-আজাদ শান্ত ভাবে বললো হ্যালো মা কেমন আছো.?
-প্রিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেল, রাগি গলায় বললো অভিনন্দন আব্বু।
-কেন কেন মা।
-কারন আমার আব্বু প্রেমে পড়েছে।
-আজাদ লজ্জিত গলায় বললো হ্যাঁ মা তুমি ঠিকই শোনছো।
-তা ভদ্র মহিলা পড়াশোনা না চাকরি করেন.?
-নারে মা, ভদ্র মহিলা পুরাপুরি সংসারী।
-তাই নাকি!
-হুম আমাদের ৩০ বছরের প্রেম।
-মানে আমার জন্মের আগে থেকেই তোমাদের পরিচয়! তা এখনো ঠিকে আছে।
-হ্যাঁ এখনো ঠিকে আছে।
-মম জানে.?
-হ্যাঁ আজ বিকালেও সেই প্রেমিকার সাথে রোমাঞ্চ করলাম বিকালটা খুব ভালো কেটেছে।
-এবার প্রিয়ার চোখে পানি ছল ছল করছে।
-প্রিয়া আপ্পি কি হলো.?মিতুর এমন প্রশ্নে প্রিয়া বললো নারে কিছু না।
আপ্পি আমি বারান্দায় গেলাম রোহান কল করছে, একটু কথা বলে আসছি।
হুম ছাদে যেও না আজ বিয়ের রাত বাইরে বেরুবে না সাবধান।
ওকে আপ্পি আমি আসছি বলেই মিতু দরজা খুলে বারান্দায় চলে গেল।
প্রিয়ার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল, প্রিয়ার আওয়াজ নেই।
-প্রিয়া! প্রিয়া মামনি কথা বলো আজাদের ডাকে প্রিয়া কোন সাড়া দেয় না।
-শোন মেয়েটা মনে হয় কষ্ট পাচ্ছে, এবার সত্যিটা বলে ফেল মিরা কানের কাছে বললো।
-প্রিয়া।
-আমি আছি আব্বু, বাবার ৩০ বছরের প্রেমের পরিসমাপ্তি তো আমাকেই করতে হবে।
আমার আব্বুর বিয়ে দিব তার প্রেমিকার সাথে বলে প্রিয়া হি হি হি হি করে হেসে দিল।
-তাই নাকি! ইসস আমি তো বিয়ে করার জন্য এক পা’য়ে দাঁড়িয়ে আছি।
-তবে প্রিয়া মা সেকি আমাকে ২য় বার বিয়ে করতে রাজী হবে!
-প্রিয়া অবাক হয়ে জানতে চায়, মানে কি আব্বু.?
তোমার ৩০ বছর ভালোবাসা প্রেমিকার নাম কি.?
আমার ৩০ বছরের প্রেমিকার নাম “মিরা আজাদ, আমার একমাত্র সন্তান ম্যাজিস্টেট প্রিয়া আজাদ এর মম।
প্রিয়া আনন্দে আত্মহারা আব্বু তোমার প্রেমিকা আমার মম!!
তো নয় কি!
মিরা আমার প্রথম প্রেম শেষ ভালোবাসা আমার স্ত্রী,তোমার মম।
তাহলে আব্বু মম যে বললো তুমি কারো প্রেমে পড়েছো।
তোমার মম ঠিকই বলেছে “আামি প্রতিদিন,প্রতিটা মুহূত্বে নতুন করে তোমার মায়ের প্রেমে পড়ি হা হা হা হা।
-প্রিয়াও হাসতে হাসতে বললো “I love you so much abbo”
-Love you too maa..
-সত্যি আব্বু দোয়া তোমাদের এই ভালো মৃত্যু পর্যন্ত অটুট থাকুক।
আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, এখন ঠিক আছি।
ওহ্! স্যরি মা,একটু মজা করতে চাইছিলাম।
তারপর বলো বড় ভাইজান,বড় ভাবী,মিতু মা,জিসান, ছোট গিন্নি সবাই কেমন আছেন.?
সবাই ভালো আছে আব্বু, বড় মামী মনে হয় কাল সকালে তোমাদের কল দিবে।
কেন.?
মিতুর বিয়েতে আসার জন্য।
তোমার মায়ের মনটা চাইছিলো ভাতিজীর বিয়ে খেতে কিন্তু আমার জন্য যেতে পারল না।
মিতুর হলুদ সন্ধ্যা কেমন হলো,খুব ভালো প্রচুর আনন্দ করছি তোমরা থাকলে অনেক ভালো লাগতো।
-নাও মম এর সাথে কথা বলো।
-প্রিয়া মামার বাসায় আসার পর থেকে যা যা ঘটেছে একে একে সব কিছুর বর্ণনা মমকে ফেনে দিয়ে চললো।
…..চলবে।
২৪টি মন্তব্য
এস.জেড বাবু
প্রিয়া কে ক্ষেপালে কেমন হতো ?
চমৎকার এগিয়েছে গল্প-
শুভকামনা
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আসলে সংসারে ভালোবাসার পাশাপাশি একটু মিষ্টি দুষ্টু খুনসুটি খুব দরকার তাতে ভালোবাসার প্রকাশটা বাড়ে।
সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রানিত হলাম ভাইয়া, পাশে থাকবেন।
ভালো থাকুন,শুভ কামনা রইল।
এস.জেড বাবু
আসলেই তাই। খুনশুটি থাকতে হবে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দারুন রোমান্টিক প্রিয়ার বাবা-মা। ভালো লাগলো। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন সবসময়
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
৩০ বছর পরও প্রিয়ার আব্বু,মম নতুন করে প্রেমে পড়ে, আসলে সত্যি কারের ভালোবাসা এমনি হয়।
আপনার সুন্দর মতামতে মুগ্ধ হলাম, পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন দিদি ভাই।
ইঞ্জা
বেশ সুন্দর ও সাবলীল লেখা আপু, আপনার লেখা আমার বেশ পছন্দের।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
আপনার সুন্দর, অনুপ্রেরনামূলক মতামতে আপ্লুত হলাম।
আপনার সুন্দর সুন্দর গল্প গুলো পড়েই আমি লেখায় বেশি আগ্রহি হলাম।
ভাইজান আপনার সব লেখা আমি পড়ি বেশ ভালো লাগে।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকুন ভাইজান, শুভ কামনা রইল।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, নিশ্চয় পড়বো।
ফয়জুল মহী
সহজ সরল ও নন্দিত ভাবে উপস্থাপন
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রানিত হলাম, দোয়া করবেন আমার জন্য যেন ভালো লিখতে পারি।
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
হালিম নজরুল
প্রিয়ার বাবা- মা তো প্রিয়াদের চেয়েও রোমান্টিক। বাহ
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
প্রিয়ার বাবা মা একটু বেশিই রোমান্টিক সেটা গল্পের শুরু থেকে চলে আসছে।
সুন্দর মতামতে মুগ্ধ হলাম ভাইয়া, দোয়া রাখবেন।
ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
প্রিয়ার মা বাবার রোমান্টিক আলাপে
মনটাই আনন্দে ভরে গেল।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দাদা ভাই।
সব সময় মতো সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম, প্রিয়ার বাবা মায়ের রোমান্টিকতা লিখতে আমারও ভালো লেগেছে।
নিয়মিত পর্ব গুলো পড়া যাবার জন্য কৃতজ্ঞতা রইল দাদা ভাই।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
বাহ চমৎকার প্রেম — তোমার মম ঠিকই বলেছে “আামি প্রতিদিন,প্রতিটা মুহূত্বে নতুন করে তোমার মায়ের প্রেমে পড়ি হা হা হা হা।
-প্রিয়াও হাসতে হাসতে বললো “I love you so much abbo”
-Love you too maa.. বরাবরের মতো সুন্দর লেখা। এগিয়ে যান লেখক । শুভ কামনা রইলো।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
নিয়মিত প্রতিটা পর্ব পড়ে সুন্দর অনুপ্রেরনা মূলক মতামত দিয়ে আমাকে উৎসাহ্ দিবার জন্য।
কৃতজ্ঞতা রইল ভাইজান, আপনাদের মতো গুণীজনেরা পাশে থাকলেই আমরা খুশি।
ভালো থাকবেন ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
নাচা গানাও হলো তাহলে।
মিরা আজাদ এর প্রেম পর্বটি পড়ে আনন্দে হাসতেছি। তারা তো প্রেমময় স্বামী স্ত্রীর মডেল।
চমৎকার লাগলো এই পর্বটি।
কবে যে আরাফ প্রিয়ার দেখা হবে!
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
বিয়েতে নাচা গান হবে না এটা কি মানা যায় 😉 তাই একটু আনন্দ হয়ে গেল।
কৃতজ্ঞতা রইল প্রিয় ভাইজান শত ব্যস্ততার পরও সময় করে পর্ব গুলো পড়ার জন্য।
ভালো থাকবেন ভাইজান।
শুভ কামনা রইল।
তৌহিদ
দুস্টু মিস্টি খুনসুটি মনে দোলা দিয়ে যায় কিন্তু। চলুক গল্প। শুভকামনা সবসময়।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
গল্পে দুষ্টু,মিষ্টি খুনসুটি থাকলে গল্পের বিনোদন বাড়িয়ে দেয়, আপনার ভালো লেগেছে শোনে খুশি হলাম ভাইয়া।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইল।
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার অনেক শুভেচ্ছা রইল কবি নার্গিস আপু
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দাদা।
সুন্দর মতামতে আপ্লুত হলাম,দাদা চেষ্টা করছি ভালো কিছু লেখার।
দোয়া রাখবেন আমার জন্য, পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইল।
খাদিজাতুল কুবরা
ভালো লাগলো আপু ,
সুন্দর ঝরঝরে লেখনী।
আমি নতুন জয়েন করেছি, তাই আগের পর্ব পড়িনি।
আশা করছি সামনের গুলো পড়বো
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ আপু।
আমিও নতুন ৩ মাস ২২ দিন আমার সোনেলার সাথে এখানে সবার স্নেহ,ভালোবাসায় আমি ধন্য।
কতটুকু ভালো লিখতে পারি জানি না, তবে সবার কাছ থেকে প্রচুর উৎসাহ্ পাই।
এখানে সবাই খুব ভালো, আপনিও অনেক ভালো লিখেন।
নিয়মিত লিখুন, আমার পরের পর্বগুলো পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকুন আপু।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।