
আমি তোমার জন্য এসেছি -(পর্ব ৪৫)
আরাফ শেখর সাহেবকে সালাম দিলেন, কেমন আছো বাবা.?
ভালো।
আমি মিতুর বাবা ওনি মিতুর মা।
কেমন আছেন আন্টি.? ভালো। আপনারা বসেন আবিদ,শ্রেয়া,রিদম,অমি, রহিমাসহ সবাই বসলো।
আঙ্কেল আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন, আমি রোহানের বাবার বন্ধুর ছেলে কথা শেষ করার আগেই জিসান আসল।
আব্বু ওনি আরাফ ভাইয়া অনেক বছর জাপান ছিলেন বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন ব্যবসা শুরু করবেন।
আরাফ নামটা শোনে শেখর সাহেব চমকে উঠলেন! বেগম শেখরও দুজন দুজনের মুখের দিকে চেয়ে রইলেন।
আর ওনি শ্রেয়া ভাবী, রোহানের বন্ধু রিদম, আবিদ,রহিমাসহ সবার পরিচয় দিল জিসান।
হালকা নীল জামা, সাদা ওড়না কালো সুতায় কাজ করা। মাঝে মাঝে পাথর বসানো কারুকাজ, গায়ের রং ফর্সা।
চোখে কাজল হাতে চুড়ি, গালের দুপাশে কিছু চুল পড়ে আছে ওড়না মাথায় ঘোমটা সবাই চেয়ে আছে।
আসসালামু আলাইকুম বলেই জিসানের বউ ননদী মিতুকে নিয়ে সবার সামনে হাজির হলো।
ওয়া আলাইকুম সালাম বলেই আরাফ বললো বসেন।
মিতু কে বসিয়ে দিল আমার মিষ্টি ননদী মিতু আপনাদের রোহান সাহেবের হবু বউ।
ভাবী আমি আবিদ রোহানের বেস্ট ফ্রেন্ড ওই যে বিপিন পার্কে রোহানের সাথে আমিও দেখা করতে আসছিলাম।
মিতু হাসল, ভাবী আমি রিদম ওই যে আপনার বান্ধবীর বিয়েতে দেখা হয়েছিলো।
আপনাদের প্রেমের ঘটক চিনতে পারছেন?
এবার সবাই হাসলো।
ভাবী আমি রহিমা রোহানের ভাইয়ার…
আচ্চা তোমরা গল্প করো আমি ভিতরে গেলাম।
শেখর সাহেব এখানে থাকতে চান না ওরা কথা বলুক ভিতরে চলে গেলেন।
ওকে মিতু ঘোমটা একটু খোল মিষ্টি মুখটা দেখি এই যুগের মেয়ে এত লজ্জা পেলে চলে বলেই শ্রেয়া ঘোমটা সরিয়ে দিল।
মাশাল্লাহ্ নতুন বউ অনেক সুন্দর, আবিদ রিদম আরাফ,রহিমা সবাই দেখল সত্যই মিতু ভাবী অনেক সুন্দর বললো রহিমা।
আপনারা নাস্তা করুন বলেই জিসান আপেলের প্লেটটা আরাফের সামনে এগিয়ে দিল।
আঙ্গুর,কমলা,মিষ্টি নুডলস, বিস্কুট রসমালাই, চানাচুর সব প্লেটে সাজানো।
সবাই নিজের মতো খাচ্ছে আর গল্প করছে, আচ্ছা ভাবী ওই আপুটা কোথায়.?
জিসানের বউ বুঝতে পারল মেয়ে গুলো প্রিয়ার কথা জানতে চাইছে।
ও ভিতরে আছে বিয়ে বাড়ি তো একটু পরে আসবে।
ওরা সবাই মিতুকে ঘিরে বসে গল্প শুরু করলো, রোহান তোর বউ তো খুব সুন্দর একজন কল করে জানাল।
ভাবি একটু সাইড হয়ে বসুন, আমি ভাবীর পাশে বসবো বলেই তনিমা বসলো, তুই সর বলেই আবিদকে দূরে ঠেলে রিদম মিতুর পাশে সোফায় বসলো। আরাফ ভাইয়া একটু এদিকে তাকান বলেই রিদম সেল্ফি তুলে রোহানকে পাঠাল।
ভাবী আপনিও বসুন বলেই শ্রেয়াকে রহিমা বসিয়ে দিল আরাফ বাদ যাবে কেন সে ও কিছু গ্রুপ ছবি সেল্ফি তুলে রাখলো।
হাসি আনন্দ করতে করতেই রোহানের ফোন তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে, রোহানের গায়ের হলুদ দিতে কখন.?
যদিও আবিদ,রিদম,রিমঝিম, তনিমা কারো যেতে ইচ্ছে করছে না তবু যেতে হবে।
প্রিয়া বললো জিসান ভাইয়া ওদের বলো মিতুকে হলুদ লাগিয়ে পরে যেতে আমি সব রেডি করে রাখছি।
ডেকোরেটরের ভিতরে ছোট স্টেইজ করা হয়েছে সেখানেই মিতু বসবে, কাঁচা ফুলের মালা দিয়ে সারা বাসা সাজানো হয়েছে। সাউন্ড বক্সে চলছে হিন্দি,ইংরেজী গান যা শেখর সাহেবের একদম পছন্দ না তবু মেনে নিচ্ছে মেয়ের বিয়ে বলে কথা।
প্রিয়া বিয়ে বাড়িতে প্রতিটা কাজকে তার দায়ীত্ব মনে করে কাজ করতেছে।
বড় মামী মেজ মামী কোথায় দেখেছো.?
মেজ জিসানের রুমে তুমি যাও আমি সব ফল,মিষ্টি ড্রাইনিং রেখেছি লিস্ট দেখে মিলিয়ে নিও।
ধন্যবাদ মামী তোমাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছি।
আরে পাগলি বলে কি তোমরা একটু আনন্দ করবে সেটা তো আমরা চাই।
আচ্চা মামী আমি গেলাম, আর মামা তুমি একটু ভিতরের রুমে যেও মেহমানদের রাতে খেয়ে যেতে বলো।
হয়ত খাবে না তবু তুমি বললে ওরা খুশি হবে।
আচ্চা এখনি যাচ্ছি…
আপেল,কমলা,আঙ্গুর, বেদেনা,কালোজাম, জাম্বুরা,পেঁপে, লেবু, পায়েস, আনারস এসব দিয়ে নাকি গায়ে হলুদের প্লেট সাজাবে। বুঝলে জিসানের মা, বেঁচে থাকতে আর কত কি দেখবো বলেই শেখর সাহেব হা হা হা হা করে হাসলেন।
চুপ করো মেয়েটা শোনলে কষ্ট পাবে, বাদ দেও ওরা আধুনিক যুগের ছেলেমেয়ে ওদের চিন্তা ভাবনা আলাদা।
তুমি ঠিক বলছো, আচ্ছা আজাদকে একবার কল দিবে মিরাকে নিয়ে মিতুর বিয়েতে আসতে, কতদিন মিরাকে দেখি না
আচ্চা রাতে কল দিয়ে বলে দেখবো.!
আমি একটু বাইরে থেকে আসছি তোমরা থাকো বলেই আরাফ নিচে নেমে গেল।
মিতুকে হলুদ দিবে আনন্দ ফুর্তি করো তারপর রাতে খেয়ে তারপর যাবেন বলেই শেখর সাহেব সোফায় বসলেন।
নাহ্ আঙ্কেল আমাদের এখনি ফিরতে হবে, আমরা বাসায় ফিরলে রোহানের গায়ে হলুদ হবে।
সরি! সরি, আপনাদের সাথে দেখা করতে পারছি একটু ব্যাস্ত প্লীজ সবাই একটু আমার সাথে ভিতরে আসুন।
ভিতরে মিতুর হলুদের আয়োজন করেছি চলুন, ভাবি আপনি মিতুকে হলুদ কাপর পড়িয়ে স্টেজে বসিয়ে দিন।
প্রিয়া সবাইকে নিয়ে পাশের রুমে ঢুকল টেবিলে সব সাজানো দেখে শ্রেয়া মুগ্ধ বাংলাদেশের প্রথম কোন বিয়ে দেখছে সে।
কিছুক্ষনের মধ্যে মিতুকে স্টেজে বসানো হলো মামা,মামী প্রথমে তোমরা মিতুর মুখে হলুদ লাগাবে। পরে মিষ্টি মুখ করিয়ে উঠে যাবে, এভাবে সবাই হলুদ দিবে।
শোন কেউ মিতুর মুখে হলুদ ঘষবে না শুধু হাত ধরে রাখবে ছবি তুলা হলে সরে যাবে অন্যজনকে সুযোগ দিবে।
সবাই প্রিয়ার কথা বুঝে নিল ক্যামেরা রেডি, ভিডিও করার জন্য দু-জন আসছে জিসান সবাইকে তাদের দায়ীত্ব বুঝিয়ে দিল।
আধুনিক যুগ সবার হাতে এন্ডয়েড ফোন ছবি তুলতে সমস্যা নেই, প্রিয়াকে মিতুর পাশে বসে পড়ল সাথে রিমঝিম,শ্রেয়া,অমি,রহিমা,তনিমা, মিতুর দুজন বান্ধবী সবাই বসলো।
রঙিন আলোই সব আলোকিত চারদিক জ্বলমল করছে,
মামা মিতুকে হলুদ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন,মিতুর কপালে আদরের চুমু একে দিলেন পরম মমতায়। আজকের পর মেয়েটা পর হয়ে যাবে এটা ভাবতেই তার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছিল।
বিয়ের মাধ্যমে সে কাল থেকে এ বাড়ির মেয়ে না মেহমান হয়ে যাবে মিতুর চোখে পানি বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন।
শেখর সাহেব মেয়ের মুখে মিষ্টি দিয়ে উঠে চলে গেলেন, বেগম শেখরও তাই করলেন হলুদ,মিষ্টি মুখে দিলেন ছবি তুলা হলো না।
শ্রেয়া, ভাবী,আবিদ,রিমঝিম একে একে সবাই হলুদ দিল হঠাৎ প্রিয়ার মোবাইলটা বেজে উঠল প্রিয়া রিসিভ করে…! হ্যালো বললো তারপর বিয়ে বাড়ির হৈ চৈ আর কিছু শোনতে পেল না।
মিতুর কানে কানে বললো মম কল দিয়েছে আমি একটু ভিতরে গিয়ে কথা বলে আসছি।
ভাবী আপনি একটু সামলাও আমি ৫ মিনিট পরে আসতেছে বলে প্রিয়া চলে গেল।
আপ্পি আমাকে হলুদ দিয়ে যাও, প্রিয়া মুসকি হেসে মিতুর কপালে চুমু দিল। মিষ্টি বোন আমার দোয়া করি সুখি হও বলে হলুদ লাগিয়ে দিল।
জিসান, মেজ মামী, বউ মিতুর বান্ধবী,প্রতিবেশি,আত্মীয় মিতুকে হলুদ দিল।
তোমাদের কি অবস্থা আমাদের যেতে হবে তো, আরাফের এমন কথায় সবাই উঠে পড়ল।
আরে ভাইয়া যে প্লীজ বসোন আমার একমাত্র বোন একটু দোয়া করে যান জিসানের কথা শুনে আরাফ মিতুর কাছে এগিয়ে আসল।
রিমঝিম হলুদ বাটি এগিয়ে দিল, আরাফ দু আঙ্গুলে হলুদ নিয়ে মিতুর গালে লাগিয়ে দিল।
দোয়া করি যেখানেই যাবে সেখানে রাজত্ব করো পরিবারে সবার মন জয় করে সুখি সুন্দর সংসার গড়ে তুল।
আরাফ হাসতে হাসতে মিষ্টি মুখে দিল, মিতুও অন্য চামচে আরাফের মুখে মিষ্টি তুলে দিল।
এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি আরাফ মুগ্ধ হয়ে মিতুর দিকে চেয়ে আছে! আজ থেকে তুমি আমার ছোট বোন উপস্থিত সকলে করতালির মাধ্যমে আরাফ মিতুর ভাইবোনের সম্পর্ককে স্বাগতম জানাল।
আরাফের চোখে আনন্দের অশ্রু সে উঠে দাঁড়াল মিতু আরাফকে সালাম করে দোয়া গ্রহন করলো। আরাফ তার প্যান্টের পেকেট থেকে ২ হাজার টাকা বের করে প্রিয়ার হাতে গুজে দিল।
পিচ্চি এটা দিয়ে চকলেট খাবি,উপস্থিত সকলে যেন আরেকবার মুগ্ধ হলো আরাফের ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ।
ওরা সবাই বিদায় নিল প্রিয়া তখনো তার বাবা মায়ের সাথে কথা বলছিলো।
আচ্ছা আমরা তাহলে কাল বরযাত্রী কখন আসবে, রোহান মিতুকে কল করে জানাবে।
…..চলবে।
১৪টি মন্তব্য
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
হলুদ পর্ব শেষ এবার বরযাত্রী আসার অপেক্ষা। আমরাও নতুন পর্বের অপেক্ষায়। সাবলীল গতিতে এগিয়ে যাক গল্প। বরাবরের মতো ভালো লাগা। শুভ কামনা রইলো ।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
আলহামদুলিল্লাহ্ মিতু, রোহানের হলুদের পর্ব শেষ হলো এখন বরযাত্রী যাবে।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রািত হলাম, পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
চমৎকার আরেকটি পর্ব পেলাম আপু, আমি ধীরে ধীরে প্রতিটি পর্ব পড়ে আসছি, আজকের পর্ব তো গায়ে হলুদের যা আমাদের সার্বজনীন সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন, গল্প এগিয়ে যাক আপু, সাথে আছি।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
আজ হলুদ পর্ব শেষ হলো খুবই আনন্দঘন পরিবেশে, সবার মুখে হাসি।
সবমিলিয়ে চেষ্টা করছি ভালো কিছু লেখার, খুব ভালো লাগছে ভাইজান।
আপনাদের মতো গুণীজন আমার লেখা নিয়মিত পড়ে মতামত দেন।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন ভাইজান
ইঞ্জা
আপু আমি গুণী কিনা জানিনা কিন্তু আমি প্রতিদিনই শিখি, আপনার এগিয়ে চলার পথের সাথি হয়ে আমিও শিখছি।
ধন্যবাদ।
সুরাইয়া নার্গিস
স্বাগতম ভাইজান, অনুপ্রনিত হলাম।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব ভালো হচ্ছে। সবকিছু নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
আপনার নিখুঁত মতামত, নিয়মিত আমার লেখা পড়ে অনুপ্রেরনা দেওয়া সব কিছু আমাকে মুগ্ধ করে।
আমার জানামতে সবাই হয়ত আমার উপন্যাসের সব গুলো পর্ব পড়ার সময় পায়নি।
তবে দিদি ভাই আমার লেখা সবগুলো পর্ব পড়েছেন, এবং সুন্দর মন্তব্য করেন যা আমাকে সব সময় আবেগ আপ্লুত করে।
মন থেকে কৃতজ্ঞতা ও স্যালুট জানাই দিদি ভাই আপনাকে আমার পাশে থাকার জন্য।
ভালো থাকবেন দিদি।
ফয়জুল মহী
অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর লেখা । পড়ে অভিভূত হলাম
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
আলহামদুলিল্লাহ্ মিতু, রোহানের হলুদের পর্ব শেষ হলো এখন বরযাত্রী যাবে।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রািত হলাম, পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
গায়ে হলুদ পর্ব শেষ হলো খুবই আনন্দঘন পরিবেশে, সবার মুখে হাসি ফুটলো। খুব ভালো লাগলো। নিখুঁতভাবে তুলে আনলেন আপু।
নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দাদা ভাই।
হলুদ শেষ সামনে বিয়ে দাওয়াত রাখবেন দাদা ভাই.. ☺
আপনি বেশ কয়েকপর্ব পড়েন নাই হয়ত ব্যস্ততা, অনেকদিন পর পড়ছেন দেখে ভালো লাগছে।
দাদা আপনাদের মতো গুণীজনেরা লেখা পড়লে উৎসাহ্ পাই।
পরের পর্ব গুলো পরার আমন্ত্রন রইল দাদা।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।
হালিম নজরুল
প্রিয়া ২০০০ টাকা সেলামী পেল! আমি তো অল্পতেই পার পেয়েছিলাম।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
দারুন ব্যাপার তো আপনিও সালামী দিয়েছিলেন জেগে ভালো লাগছে।
তবে আরাফ হয়ত ২০০০টাকা দিসে তবে ওই অল্প দেওয়াই হয়ত আন্তরিকতা বেশি ছিলো।
আপনার লেখা পড়ে বুঝি মানুষটা অসারাধন ব্যক্তিত্বের অধিকারী সদা হাস্যউজ্জল।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন ভাইয়া।