
আমি তোমার জন্য এসেছি -(পর্ব-৪৩)
রোহান দরজায় খুলতেই আরাফ,শ্রেয়া, অমি, রহিমা ভিতরে ঢুকলে..!
এত্তো দেরি করলে কেন ভাইয়া!
সরি, একটু ব্যস্ত ছিলাম।
আরাফ ভাইয়া ওনি মিতুর বড় ভাই বলেই জিসানকে দেখাল।
জিসান সোফা ছেড়ে উঠা দাঁড়াল,আরাফ দু পা এগিয়ে গেল সালাম দিয়ে জিসানের সাথে হ্যান্ডসেক করলো।
কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ্।
বসুন বলে জিসান আরাফকে নিয়ে বসল রহিমা বললো ছোট ভাইজান আপনারা বসুন আমি ভিতরে যাই।
আরে বস এখন ভিতরে যেতে হবে না বলেই শ্রেয়া রহিমাকে থামিয়ে দিল!
রোহান আন্টিকে বলো বেলা ৩ টা বাজে এবার আমরা বেরুই।
ওরা সবাই কোথায় আরাফ জানতে চাইল?
রোহান বন্ধু,বান্ধব,মামাত,চাচাত ভাই বোন সবাইকে ডাকলো।
সবাই একে একে বেরিয়ে আসলো রোহান ভিতরে গিয়ে হলুদের সব আয়োজন নিয়ে আসলো।
প্রিয়ার জন্য রোহানের মা ভিতরে চা নাস্তা দিলে, রোহানকে দিয়ে আরাফ,শ্রেয়া,জিসানের জন্য নাস্তা পাঠাল।
রোহানের মামা ইন্ডিয়া থেকে আনা মিতুর জন্য বেনারসী,রোহানের জন্য সেরওয়ানী প্রিয়াকে দেখাল।
গহনা দেখাল,মিতু কসমেটিকস দেখাল,শাড়ী দেখাল।
প্রিয়া সব জিনিস দেখে প্রশংসা করলো, মা ওরা বেরুবে তুমি এসো বলে রোহান প্লেট,গ্লাস সব রেখে চলে গেল।
জিসান বললো আমরা সবাই তাহলে একসাথে বেরুই, হ্যাঁ বলুন সমস্যা নেই আমাদের গাড়ি আছে।
না, ধন্যবাদ ভাইয়া আমরাও গাড়ি নিয়ে আসছি, আপনাদের সবার বসতে সমস্যা হলে কয়েকজন আমাদের সাথে যেতে পারবেন।
রোহানের মামাত,চাচাত দু-বোন প্রিয়ার সাথে গাড়িতে যাবে বলে সম্মতি দিল।
আচ্ছা তাহলে আমরা নিচে যাচ্ছি আপনি কাজ করে করে আসুন বলেই আরাফ জিসানের সাথে হ্যান্ডসেক করে শ্রেয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
ততক্ষনে প্রিয়াও এসে হাজির, তাহলে আসি আন্টি একদিন সময় করে মিতু,রোহানকে নিয়ে আমাদের ময়মনসিংহে বেড়াতে যাবেন।
অবশ্যই যাব মা,ময়মনসিংহ আমার নানা বাসা আমি ওখানেই পড়াশোনা করেছি।
তাই নাকি! হ্যাঁ মা।
খুব ভালো তো কোন কলেজ.?
রোহানের মা উচ্ছাসিত ভাবে বললো আমি ময়মনসিংহ সরকারী আনন্দমোহন কলেজ থেকে অনার্স,মাস্টার্স করেছি।
ইউ আর গ্রেট আন্টি।
আমাদের বাসার পাশেই এই কলেজ, অবশ্যই বেড়াতে যাবেন।
আচ্ছা নানা বাসায় নানা,নানু বেঁচে নেই মামারা সবাই দেখের বাইরে ছোট খালামনির বিয়ে হয়েছে ময়মনসিংহ।
জায়গার নাম কি আন্টি.?
চড়পাড়া মোড় বাসা! ওর স্বামী ব্যাংকার বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলায় চাকরি করে।
শেষ বেলায় প্রিয়া আর রোহানের মায়ের কথা বেশ জমে উঠল কিন্তু জিসান আর কথা বাড়াতে দিল না।
আন্টি আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে মিতু এবাড়িতে আসুক পরে প্রিয়াকে আরেকদিন পাঠাব জমিয়ে গল্প করবেন।
জিসানের কথা শুনে রোহান হু হু হু করে হেসে দিল যাব,প্রিয়াও হাসল।
শোন তোমরা ছেলেরা যা মেয়েটা যাবার বেলায় পরিচয়টা পেলাম একটু কথা বলারও সময় দিবে না। আন্টি প্লীজ মন খারাপ করবেন না আমরা আবার আসবো বলেই জিসান প্রিয়াকে বেরুতে তাড়া দিল।
আচ্চা মা যাও আবার এসো অনেক গল্প করবো বলেই প্রিয়াকে আদর করে দিল।
প্রিয়া,জিসান দুজনেই রোহানের মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করলো।
আচ্ছা আন্টি অনেকক্ষন অপেক্ষা করলাম আঙ্কেলের সাথে দেখা হলো না। তোমার আঙ্কেল গল্প প্রিয় মানুষ হয়ত কারো সাথে কথায় জমেছে তাই বাসায় ফেরার নাম নেই।
হ্যালো ভাইয়া।
বলেন.?
হ্যাঁ ভাইয়া এখনি বেরুবে, আপ্পি আম্মুর সাথে বিদায় নিয়েই আসবে।
কার ফোন জিসানের প্রশ্নে রোহান মোবাইল রেখে বললো আম্মু ভাইয়া, ভাবী গাড়িতে অপেক্ষা করছে।
ওহ্! সরি আন্টি আমরা তাহলে যাই দোয়া করবেন।
ওনারা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন..
আচ্ছা যাও, ভালো থেকো।
আল্লাহ্ হাফেজ।
ভাইয়া কে কে আমাদের গাড়িতে আসবে,আপনারা চলে আসুন।
তিনজন এসে প্রিয়ার পাশে বসলো,প্রিয়া সাইড হয়ে বসল। জিসান ড্রাইভারের পাশে বসে পরল চলুন, গাড়ি চলতে শুরু করলো প্রিয়ার মন বেশ ভালো রোহানের মায়ের সাথে বলা কথা গুলো ভাবছে।
প্রিয়াদের ঠিক পিচনের গাড়িটাতে আরাফ, শ্রেয়া,রহিমা রোহানের বন্ধুরা যাচ্ছে। গাড়িতে একটা নিরব গান বাজছে সবাই মুগ্ধ হয়ে গান শোনছে, ঢাকা মানেই গুন্ডা ছেলে।প্রিয়ার দৃষ্টি জানালার বাইরে সারি সারি গাড়ি,বাসা,লোকজনের সমাগম যেন রাস্তায় বাজার বসেছে।
তবু প্রিয়ার মনে আরাফকে একবার দেখার আকুতি কারন এই ব্যস্ত শহরের কোথাও আরাফের বসবাস।
রোহানের বান্ধবী কল রিসিভ করেই বললো আমরা তোদের পিচনের গাড়িতে বলেই
খুব আনন্দে যাচ্ছি। বলেই হি হি হি হি করে হাসল,আপ্পি একটু সাইড প্লীজ।
প্রিয়া সাইড হলো মেয়ে দু-জন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বুঝাল আমরা এখানে ভালো আছি।
রাস্তায় হালকা জ্যাম আরাফদের গাড়িটা এই মাত্র প্রিয়াদের গাড়িটা অতিক্রম করে সামনে চলে গেল।
ওরা সবাই হাত নাড়ল! ওদের আনন্দ দেখে প্রিয়া খুব মজা পাচ্ছে আর মিট মিট করে হাসছে। প্রিয়া মা তোমরা কোথায়! রোহানদের বাসা থেকে এখনো হলুদ নিয়ে আসে নাই। মামী আমরা রোহানদের বাসায় হলুদ আয়োজন দিয়ে চলে আসতেছি।
জিসান কোথায়.? মামী ভাইয়া আমার সাথেই আছেন।
ভাইয়াকে দিব.?
না থাক, তোমরা সাবধানে এসো।
শোন মামী।
বলো মা।
রোহানদের বাসা থেকে হলুদ নিয়ে আসতেছে, ওরা আমাদের সাথেই আছে।
ওদের আলাদা গাড়ি আছে ওই গাড়িতে ৮-১০ জন আসতেছে।
মিতুকে বলো একটু রেডি হতে আমরা কাছাকাছি চলে আসছি, আর ভাবীকে বলো ফ্রিজ থেকে মাছ,মাংস নামিয়ে রান্না বসাতে বলো।
আচ্ছা আমি এখনো বউমাকে সব জানাছি,কইরে মিতু বলেই বেগম শেখর লাইক কেটে দিল।
প্রিয়া কে কল করছিলো রে.?
মামী মিতুর হলুদ নিয়ে যায়নি বলে চিন্তায় আছে, আমি সবটা জানালাম এখন শান্ত হয়েছে।
ওহ! বুঝতে পারছি..!
বাইরে শন শন শব্দে বাতাস বইতে শুরু করছে, রোহান জানালা গুলো লাগিয়ে দাও আর বাবাকে ফোন দাও এই সময় আমার বৃষ্টি কেন!
বাসায় আসতে বলো বৃষ্টিতে ভিজলে আবার ওনার শ্বাস কষ্ট শুরু হবে বিয়ের আগে আর কোন ঝামেলা চাই না।
আম্মু এত টেনশন নিও না বৃষ্টি আসবে না বাতাস বইছে আকাশ পরিষ্কার, তারপরও আমি আব্বুকে ফোন দিতাছি।
প্রিয়া মনে মনে বৃষ্টির আহবান করছিলো, কারন বৃষ্টিতে ভেজা প্রিয়ার শখ।
আরাফদের গাড়িটা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে দ্রুত নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেল।
আপামনি গাড়ির কাঁচটা নামিয়ে দেন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, প্রিয়ার তাতে মন নেই।
সে মনে মনে বৃষ্টি ভেজার আনন্দ উপভোগ করছে আর ভাবছে অনেকদিন পর বৃষ্টি হচ্ছে একটু ভেজা উচিত।
…..চলবে।
১৭টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আজকের পর্বটা সিনেম্যাটিক হয়ে গেল। ভালো লাগছে তবে মন মানছে না ওদের দুজনের দেখা হওয়ার অনুভূতি কেমন হবে! যদিও প্রিয়া এখন বড় হয়েছে, চাকুরীজীবি হয়েছে তাই আরাফ নাও চিনতে পারে । শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
আরাফ প্রিয়ার কবে দেখা এটা আমি প্রতিদিন ভাবি, কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে একটু সময় নিচ্ছি।
তবে খুব তাড়াতাড়ি ওদের দেখা হবে বলে মনে হচ্ছে।
ভালো থাকবেন দিদি ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আসলেই বৃষ্টিতে ভেজা উচিৎ। সুন্দর লেখা। শুভ কামনা রইল।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দটা অনেক বেশি, ছোটবেলা স্কুল থেকে ফেরার পথে বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই।
রিক্সা নিতাম না বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফেরতাম তারপর আম্মু বকা দিতেন, সেটা অনেক মজার ছিলো।
ভালো থাকবেন ভাইজান।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ছোটবেলায় বৃষ্টিতে ভেজার অনেক অনেক স্মৃতি। কিছুটা কাল গ্রামে কেটেছে তাই বৃষ্টির দিনে ইচ্ছেমতো ভিজেছি, মাছ ধরেছি। দারুণ সুন্দর ছিল সেসব দিনগুলো । ধন্যবাদ ।
সুরাইয়া নার্গিস
দারুন।
আমার ছোটবেলা শহরে কেটেছে, তবে মাছ ধরা আমার প্রিয়। শখ গত বছর গ্রামে গিয়ে আমাদের গ্রামের ফিসারিতে মাছ ধরেছি ভিষন আনন্দ করেছি তবে শিৎ মাছ কাটা বিঁধিয়ে দেয় পরে ডাক্তার,ঔষধ, টাকার ক্ষতি, শারীরিক অসুস্থতা।
ভুলার নয় জীবনে হয়ত আর মাছ ধরা হবে না 😭
ফয়জুল মহী
মনোমুগ্ধকর লেখনীতে মুগ্ধতা একরাশ । শুভ কামনা অফুরান।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, আশা করি উপনাসের শেষ পর্যন্ত পাশে থাকবেন।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, আশা করি উপনাসের শেষ পর্যন্ত পাশে থাকবেন।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।
তৌহিদ
বৃষ্টিস্নাত সময়ে প্রিয়া আরাফকে মিস করছে বুঝতে পারছি। চলুক গল্প।
ভালো থাকুন আপু।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
বৃষ্টি বা নিরবতায় আমাদের সাধারনত প্রিয় মানুষদের কথা বেশি মনে পড়ে।
প্রিয়াও তাই হলো দেখা যাক এই মিস করা ওদের মিলিয়ে দেয় কিনা।
শুভ কামনা রইল ভাইয়া।
এস.জেড বাবু
সাড়ে তিন মাসে অর্ধশত পোষ্ট পাড় করে ফেললেন। আমার চোখে পড়লে একটা পোষ্ট লিখতাম আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে।
গল্পটা চমৎকার এগিয়ে যাচ্ছে। শুভকামনা রইলো
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সবাই আমার লেখা পড়ে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে তাতেই নিজেকে ধন্য মনে করি।
আপনি বলছেন তাতেই আমি খুশি হয়েছি, হয়ত আমাকে নিয়ে পোষ্ট করার মতো এখনো সেই জায়গাটা অর্জন করতে পারি নাই।
তবে আশার বিষয় ইনশাল্লাহ্ ১০০ তম পোষ্টে একটা শুভেচ্ছা পোষ্ট পাব আশা করি।
সব সময় এবাবে উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
হালিম নজরুল
বৃষ্টি শেষে জমে উঠুক প্রেম। আরাফ-প্রিয়ার শুভদিন আসুক।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
বৃষ্টি প্রিয়ার বেশ প্রিয় এই সুযোগটা তাই কাজে লাগাল, বৃষ্টি ভেজার আনন্দ বেশ আমার কাছেও।
দেখা যাব কবে আরাফ প্রিয়ার শুভক্ষন আসে, পরের পর্ব পড়বেন.
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
ইশ অল্পের জন্য এই পর্বে দেখা হলো না।
আশাকরি পরের পর্বে দেখা হবে।
জমজমাট উপন্যাস,
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল।