
আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-৩৪)
আন্টি এখনি কথা দিতে পারছি না, দু-দিন পর পাশের বাসায় সিফাত আঙ্কেলের একমাত্র ছেলে রোহানের বিয়ে আছে।
ওখানকার সব দায়ীত্ব আমার উপর দেওয়া হয়েছে বিয়েটা ভালো ভাবে শেষ হোক তারপর ব্যস্তায় কাটিয়ে উঠে একটু ফ্রি হয়ে নেই।
তারপর কয়েকদিন পর আমি রাহাত তে ফোন করে জানাব কবে যেতে পারব।
ওকে দোস্ত চলবে, রাত তো অনেক হলো এবার আমাদের বিদায় দে বাচ্চাদের নিয়ে যেতে হবে এবার বের হই! আজকের রাতটা থেকে গেলে ভালো হতো আপা এতক্ষন সময়টা ভালোই কাটলো। মনোয়ারার এমন কথা শুনে আমেনা বেগম আবেগে আপ্লুত হলেন বললেন হ্যাঁ আপা আমারও খুব ভালো লাগছে।
আমরা বয়স্ক মানুষ সম সময়সী কাউকে পেলে কথা বলতে ভালোই লাগে।
মন খারাপ করবেন না আন্টি আমি সময় করে মাঝে মাঝে মাকে আপনাকে দেখতে নিয়ে আসবো।
আর আরাফ ভাইয়া বলছে তো কয়েকদিন সবাই মিলে আমাদের বাসায় যাবেন তখন তো দেখা হচ্ছেই।
আজাদের সারাজীবনের অভ্যাস সকালে এক কাপ চা খেয়ে তারপর দিনটা শুরু করা এখন বয়স হয়েছে হাঁটাহাঁটি তেমন করে না।
শুধু ছাদে কয়েক কদম হেঁটে তারপর বিছানায় শুয়ে সকালে টিভি দেখছিলো।
মিরা হাতের কাজ থেকে করে রান্না বসাল..
ওগো শোনছো!
-বলো।
-মিতু প্রিয়ার ছোট,কলেজে পড়ে তারপরও ভাইয়া,ভাবি মিতুর বিয়ে দিচ্ছে আর আমাদের মেয়ে একজন ম্যাজিস্টেড তার বিয়ের ব্যাপারে কি ভাবলে।
-মিরা,শোন আমার মেয়ে দেখতে সুন্দর,উচ্চ শিক্ষিত,ভদ্র তার জন্য পাত্রের অভাব হবে না বলেই টিভিতে নাটক দেখতে মন দিলেন আজাদ।
-লেখাপড়া,উচ্চশিক্ষা, সার্টিফিকেট অর্জন করে চাকরি নিয়ে জীবন গড়তে গিয়ে জীবনের সুন্দর সময়টুকু নষ্ট করে ফেলল মেয়েটা..!
বিয়ের পরও তো পড়াশোনাটা চালিয়ে নেওয়া যেত কিন্তু প্রিয়ার ছেলেমানুষি সেদিন আরাফকে কষ্ট দিল প্রিয়ার দাদুমনিও চাইতেন আরাফের সাথে প্রিয়ার বিয়ে হোক মিরার চোখে পানি।
মিরা তুমি কাঁদছো! নাহ্ মায়ের কথা মনে পড়ে গেল খুব ভালোবাসতেন প্রিয়াকে বলেই আঁচলে চোখ মুছলো মিরা, আজাদ কিছুটা নিরব হয়ে মায়ের স্মৃতিতে ডুবে গেলেন।
কতদিন মায়ের মুখটা দেখি না বড্ড মনে পড়ছে মাকে, মাগো তুমি কোথায় একবার দেখা যাও।
আজাদের বুক ফাঁটা আর্তনাদ ভিতরে হাহাকার করে উঠল দু-চোখ পানিতে ভেসে গেল চোখে ঝাঁপসা দেখল।
শোন আমি বেরুচ্ছি! কোথায়?
একটু আরমান ভাইয়ার বাসায় যাব।
ওহ্! টেবিলে খাবার দিয়েছি খেয়ে তারপর বের হও।
মা খেয়েছে?
নাহ্! ওনি তোমার জন্য অপেক্ষা করতেছেন।
আমি কতবার বলছি আমি ব্যবসার কাজে বাইরে থাকি কখন বাসায় আসবো সময়ের ঠিক নাই।
এত সময় মাকে না খেয়ে রাখবে না ওনি বয়স্ক মানুষ ঠিক সময় খেতে দিবে।
আসলে তোমাকে ছাড়া মা একা খেতে চান না, বুঝতে পারছি যাও মাকে নিয়ে আস আমরা একসাথে খাব।
রহিমা জ্বী ভাইজান।
অমি কোথায়.?
ছোট বাবা ছাদে খেলা করতেছে।
তুমি অমিকে নিচে ডেকে নিয়ে আস আমার সাথে খাবে।
আচ্ছা আমি উপরে যাচ্ছি..!
শেখর সাহেব সোফায় পত্রিকা পড়ছিলেন পাশেই তার স্ত্রী বসা বসে পুরনো স্মৃতি চারণ করছিলেন। প্রিয়া এস.এস.সি পরীক্ষার পরে যখন এ বাড়িতে আসে তখন খুব কম বয়স। প্রায় চারদিক থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করে তখন প্রিয়ার বাবা, মাকে তুমি কল করে ছিলে মনে আছে.?
হুম, মিরাকে ফোন দিয়ে বিষয়টা জানালাম কিন্তু আজাদ তা না করে দেয়।
এত বছর পর এসব পুরনো কথা তুলছো কেন.?
সত্যি প্রিয়া দেখতে এতবেশি সুন্দর যে কেউ এমন মেয়েকে তার ঘরে সাজিয়ে রাখতে চায়।
আমার সব মনে আছে মিরা বলছিলো আরাফ নামে একটা ছেলে প্রিয়াকে পছন্দ করে প্রিয়া পড়াশোনা শেষ করলে তার সাথেই বিয়ে দিবে বললেন শেখর সাহেব।
আচ্ছা প্রিয়ার তো পড়াশোনা শেষ ভালো এখন চাকরি করে তাহলে আজাদ মেয়ের বিয়ে নিয়ে ভাবছে না কেন.?
আরাফের বিষয়েকে প্রিয়াকে প্রশ্ন করবো.?
আরে নাহ্ বাদ দেও এসব বিষয়।
নিজের মেয়ের বিয়ে সামনে এটা কিভাবে সামলাবে তা চিন্তা করো।
জ্বী এটা আরমান চৌধুরীর বাসা। স্যার আপনার পরিচয়টা জানতে পারি! দারোয়ান আরাফকে প্রশ্ন করলো আপনি কে.?
জ্বী আমি আরাফ চৌধুরী আরমান চৌধুরীর ছোট ভাই।
দারোয়াদের হাত পা কাঁপতে লাগলো স্যার ভিতরে আসুন প্লীজ বলেই গেট খুলে দিল।
আরে নাহ্ কোন সমস্যা নেই আপনি আপনার দায়ীত্ব পালন করবেন।
জ্বী স্যার দেশের অবস্থা ভালো না তাই অপরিচিতদের বাসায় ঢুকতে দিতে স্যার নিষেধ করছ।
খুব ভালো কাজ।
আচ্ছা আমি ভিতরে যাই।
সালাম স্যার।
আরাফ অনেকেক্ষন ধরে ড্রয়িং বসে আছে,
আরাফ তোমার চা বলেই বড় ভাবী পাশে বসলেন,
-কেমন চলছে তোমার দিনকাল.?
-এই-তো ভাবী ভালো।
আপনি কেমন আছন.?
-কবে দেশে আসছো.? -একবার ফোন দিলে না
কয়েকদিন হলো ভাবি।
-আলাদা বাসা নিয়েছো নাকি মায়ের সাথেই থাকছো.?
-বলো কি! এতবড় বাড়ি রেখে আলাদা থাকবো কেন, বাড়িতেই ওঠেছি বলেই আরাফ চায়ে চুমুক দিল।
-ভাইয়া তো পেনশনে আসছে, বর্তমানে ব্যবসা কেমন চলছে, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা, তোমাদের সংসার কথা শেষ করাই আগেই রিতা বললো সব ভালো।
-রিতা ভাবী কিছু বলতে চাইছে বুঝতে পারল কিন্ত আরাফ তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।
-তৃনার কথা তোমার মনে আছে.?
-মনে থাকবে না কেন, বড় ভাইয়ার কলিগের একমাত্র মেয়ে।
-হুম, তৃনা কিন্তু খুব সুন্দরী ছিলো।
তুমি তাকে না দেখেই প্রত্যাখান করলে। তৃনার খুব ভালো বিয়ে হয়েছি স্বামীর সাথে আমেরিকা থাকে।
-আরাফের এসব শোনতে মন চাইছিলো না।
-প্রিয়া কেমন আছে..?
…..চলবে।
১৩টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব ভালো হয়েছে আপু। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
সত্যি দিদি ভাই আমার প্রতিটা লেখা আপনার কমেন্টস আমাকে মুগ্ধ করে, অনুপ্রাণিত করে ভালো কিছুর লেখার উৎসাহ্ পাই।
কৃতজ্ঞতা রইল আপনার জন্য, ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল।
ফয়জুল মহী
সাবলীল সুন্দর উপস্থাপন । ভালো থাকুন।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ব্যস্ততার পরও আমার প্রতিটা লেখা পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।
সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় উৎসাহ্ দিয়ে পাশে থাকবেন।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
হালিম নজরুল
রিতা ভাবীর কথা তো আসলেই আরাফের ভাল লাগার কথা নয়। দেখা যাক পরের পর্বে কি হয়।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
রিতা ভাবি মূলত আরাফকে খোঁচা দিল, যে প্রিয়ার জন্য আরাফ রাজ্যসহ রাজকন্যা ত্যাগ করলো।
আজ সে প্রিয়া কোথায়.? অথচ সবাই বিয়ে করে সুখের সংসার করছে।
সেটা ভেবেই আরাফ রিতা ভাবির কথা গুলো নিতে পারে নাই, ভিতরে কষ্ট পাচ্ছে।
যাইহোক পরের পর্ব দেখার আমন্ত্রন রইল..
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
জিসান শা ইকরাম
বিশাল ক্যানভাসের উপন্যাস, ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন উপন্যাসটি।
অপেক্ষা করি প্রিয়া কেমন আছে তা জানার জন্য।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
আপনাদের সবার সুন্দর সুন্দর মতামত,সবার উৎসাহ্ আমাকে অনুপ্রেরনা দেয় প্রতিনিয়ত ভালো কিছুর লেখার।
সবার ভালোবাসা পেয়ে সত্যি আমি মুগ্ধ, সবার সহযোগীতা পেয়ে উপন্যাসটা এতদূর নিয়ে আশা সম্ভব হয়েছে।
সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, পরের পর্ব পড়ার অনুরোধ রইল ভাইজান।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
জীবন কাহিনী ভালো লেগেছে।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রানিত হলাম, এভাবে উৎসাহ্ দিয়ে সব সময় পাশে থাকার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল।
ইঞ্জা
আপু গল্পের প্রতিটি পর্বই পড়ে চলেছি কিন্তু ব্যক্তিগত ঝামেলার কারণেই বেশ কিছু লেখা পড়েও কমেন্ট করা হয়নি বলে ক্ষমাপ্রার্থী।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাই ভাইজান।
ক্ষমা চেয়ে লজ্জা দিবেন না প্লীজ, আপনাদের মতো গুনীজনেরা আমার লেখা পড়েন এটাই আমার পরম সৌভাগ্য।ব্যস্ততার পরও সময় করে লেখা পড়েন এতেই আমি খুশি, আপনার মতামত পেয়েছি এতটুকুই বলবে।
ব্যস্ততা কাটিয়ে নিয়মিত আমাদের লেখা পড়বেন এই আশায় রইলাম।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল ভাইজান।
ইঞ্জা
অবশ্যই আপু, পড়বো তো নিশ্চয়।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানবেন।