আমার হাড় কালা করলাম রে…..

বন্যা লিপি ২৩ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৪:৪৫অপরাহ্ন রম্য ১০ মন্তব্য

আম্মাকে  ছোটো বেলায় খুব বলতে শুনেছি আক্ষেপ বা রাগ ঝারতে ঝারতে- কইলজাডা তিতা তিতা হইয়া গেছে,,, বোকার মত ভাবতাম-” মানুষের কলিজা মনে হয়,,, সময় সময় তিতা হওয়া টের পায়,  যখন মানুষ খুব রেগে যায় বা মনোকষ্টে ভোগে।

মানুষকে বলতে শুনি অন্যমানুষ সম্পর্কে- ওইডার ঘিন্না পিত্ত কি কিচ্ছু নাই? আমি ভাবতে বসি-” ঘেন্না না হয় বুঝলাম! পিত্ত জিনিসটা কী? যে জিনিস থাকা খুবই জরুরী? যে জিনিস না থাকলে মানুষ প্রশ্নের মুখে পড়ে বেশরমের মত!!বড় হইতে হইতে ব্যাপার/ বিষয়গুলা বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে ক্রমান্বয়ে কিছু কিছু বোধগম্যে আয়ত্বে আনতে পেরেছি,  আর কিছু ব্যাপার নিয়ে এখনো মাঝে মাঝেই মানসিক বিরম্বনায় প্রকট ভাবে ভূগি। এই ভোগাভূগি বিষয়গুলো থেকে আমার আর এই জীবিতাবস্থায়  মুক্তি মিলবে না,,,, সে আমি পাক্কাপাক্কি রকম বুইজ্ঝা গেছি।

ওই কলিজার বিষয় নিয়া এখন আমিও ভূগি বলা যাইতে পারে এই এত বছর যাবৎ। তবু কিন্তু  ফাটা কাপাস তুলার মত মুখ  চার বিঘৎ হা করে কপাল চাপড়াইয়া হা পিত্যেস কইরা বলিনাই- কলিজা তিতা তিতা হইয়া গেলো গা”। খুব সম্ভবত এই পর্যায়ের তিতা এখনো হয়নাই বলিয়া, এই মহান বানী উচ্চারন করার মত অবস্থা এখনো তৈরী হয়নায়।

 

আমার পেটে ধরা বাচ্চা তিনটা- আহা বেচারি/ বেচারারা!! আমারে জ্বালানো বা উক্তত্ত করার সুযোগই পায়নাই কখনো। এমুন টাইটের মইদ্যে বেচারা/ বেচারিরা বড় হইয়া উঠছে যে উল্টা ওগোর কলিজা ফ্রাই কইরা ক্রিসপি বানাইয়া ছাড়ছি। তার ফলাফল এখন আমাকে করুনভাবে ভোগ করিতে হইতেছে। করুনভাবে কেন বলতেছি? এখন তাহারা আমারে টাইটের মধ্যে লালন পালন করতেছে। এখানে যাইতে পারবানা, সেখানে যাইতে যাইতে পারবানা, এত কথা বলো কেন? কথা বলা শুরু করলেই- চক্ষু  পাকাইয়া চুপ থাকতে ওরে শাসানি!!!  তাহাদের মনপুতঃ না হইলে সে কথা বলা যাবে না। খাওয়ার টেবিলে- এইটা কি রান্না করছো! ঝাল হয়নাই, লবন তো দেওইনাই, আজকে ডাল রান্না করোনাই! জানোনা ডাল ছাড়া ভাত খাইতে পারিনা! ‘ এই এক পদ রান্না করছো, এই একপদ দিয়া ভাত খাওয়া যায়? বাপরে বাপ!!!! কই যামু???

ছোট ছেলে আর মেয়েটা দুইজনেই মুগির কলিজা খুব পছন্দ করে। খাবার টেবিলে আগে খোঁজে – আম্মু’ কলিজা কই? বিরস বদনে তাহাদের কলিজা খুঁজে বের করে পাতে দিই।  তাহাদের পিতা মহোদয় বাজার থেকে জোড়া মুরগি আনেন। আমি জোড়া মুরগিই একবারে হাড়িতে তেল গরম কইরা,  গরম মশলা ফোড়ন দিয়া আদা, রসুন, জিরা, ধনিয়া, টমেটো কষাইয়া রসনারোচক কইরা পরিবেশন করি! তাহারা তাহাতেও মাঝে মধ্যে বিরক্তি প্রকাশ করিতে দ্বিধা বোধ করেননা। – মাঝে মাঝে একটু অন্যভাবেও তো রান্না করতে পারো! সব সময় একইরকম রান্না আর কত ভালো লাগে! কও তো! যাই কই?

আজকে ফন্দি ফিকির কি করা যায় ভাবতে ভাবতে কিচেন কাউন্টারের ওপরে বটি নিয়া মুরগি কাটতে কাটতে ভাবতেছি- মুরগির কলিজা তিতা হয়না? না জানি কত কষ্ট কইরা দিনের পর দিন কত কত ডিম পারে! তারপর আবার সেই ডিমে খাইয়া,  না খাইয়া তা দিয়ে গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চা কাচ্চা ফুটায়! সেই বাচ্চা গন্ডাগুলারে চিল,কাউয়া,কুত্তার গ্রাস হইতে রক্ষা করতে জান পানি কইরা ছাড়ে! মোরগ বাবু গলা উঁচাইয়া ঠাঁটের সাথে পিতা হবার ও দায় স্বিকার করেনা মনে হয়! নাহলে তো বোঝা যাইত, কোন মোরগের কয়টা মেয়ে আর কয়টা ছেলে!! মোরগে কোনোদিন কি কইতে পারব – আমি অমুক মুরগি বেবি, তমুক মোরগ বাবুটার গর্বিত পিতা?!! খাড়া দুপুরবেলা আমার মাথা আউলাইয়া গেছে। কি সব ভাবী!!

ডাইনিং টেবিল থেকে আৎকা চিৎকার—- আম্মাআআআ…. করল্লা ভাজি মাত্র শেষ করে মুরগির তরকারির দিকে হাতটা কাইপা উঠলো ছাৎ কইরা…… সামনের চেয়ারে মেয়ের চোখ মুখ বেজায় রকম বিকৃত; আমি কুতকুতে চোখে বিরক্তি নিয়া প্রশ্ন ঝুলাইয়া রাখছি কপালের মাঝ বরাবর,, মুখে উচ্চারন না কইরা কপালের মাঝখানে কুঁচকানো চামড়ায় প্রশ্ন ঝুলাইয়া রাখছি… কি হইছে?  দ্বিগুণ/চারগুণ বিরক্তি আর মেজাজ খারাপ নিয়া মেয়ে- মুরগির কলিজা এত তিতা ক্যান? আমিঃ কই দেখি কলিজাটা!  মেয়ে প্লেট সহ সামনে ঠেইল্যা দিলো কলিজা( মুরগির কলিজা) আমি চেয়ে দেখলাম- কলিজার বাঁ অংশে গভীর কালো দাগ। শান্ত স্বরে বলে দিলাম…..আহারে,,, বেচারি মুরগি জীবিত অবস্থায় কষ্টে কষ্টে কলিজা কালা বানাইয়া ফালাইছিলো রে…. ও মনে হয় হার্টের অসুখে ভুগতেছিলো খুউব। মুরগি ব্যাবসায়ী বুঝতে পারার পরই তারাতারি বিক্রি করে দিছে। আর তা তোর বাপের ভাগ্যেই আইসা পরছে,,, ওই কষ্টে তিতা/কালা কলিজা আইসা পড়ছে তোর পাতে……

৭৭৪জন ৬৭০জন

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ