আমার আল্লা বিধির নাম
দিলে করে দান
আমার আল্লা বিধিরও নাম,
পাচঁ টাকার দানে পাবে লক্ষ কোটি ছোয়াব
আমার আল্লা বিধিরও নাম………
এভাবে বিলাপ সূরে এক অন্ধ ফকির ভিক্ষা করছেন।অদ্ভুদ রকমে তার চোখের পাতাদ্বয়,ভ্রু অনেকটা নাই বললেই চলে,বিলাপের সময় দাতগুলো দেখলে মনে হয় হয়তো কয়েক জনম সে দাত মাজেননি,বিলাপে তার মুখভঙ্গি নিঃসন্দেহে বাচ্চারাতো ভয় পাবেই বরং বয়স্করাও বাদ যাবেন না।সে কাওরান বাজারে রোডের এক সাইটে বসে বিলাপ করে ভিক্ষা করছেন।সে সূরে সূরে একেক বার একেক রকমের খোদা ভক্ত বাক্য বিলাপ করে যাচ্ছেন অন্য দিকে পাশে বসা আরেক কিশোর থালা পেতে বসে আছে।কিছুক্ষণ পর পর পথ যাত্রী ভিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।বলা যায় আজকে তার ইনকামটা মনে হয় ভালই হচ্ছে।এরই মধ্যে এক পথচারী একটি এক টাকার কয়েন থালাতে ফেলতেই টুস করে শব্দ হল।ভিখারি থালা হতে কয়েনটি হাতিয়ে নিয়ে শব্দ দিয়ে পথচারীর গতি রোধ করলেন।
-ও ভাই…ওমিয়া ভাই এইডা কি দিলেন,এই লন এইডা লইয়া যান।
পথচারী অবাক!
-কেন?
-এহন এই পয়সা টয়সা চলে না।টাহা নাই!থাকলে পাচ টাহা দেন।
-আমার কাছে টাকা আছে না আছে তা জানার তোমার কি দরকার!তুমি এইটা নিবা কি না কও?
-না থাক ফেরত নেন,আপনের কাজে লাগবোনে,আমার কাছে এ সব ভারি ভারি মনে হয়।রাহনের যায়গাও নাই,এই এক টাহা দিয়া কেউ কোন হদাইও দিবো না।
পথচারীর সাথে তর্ক অযথাই মনে হল তার তাই সেও পয়সাটি হাতে নিয়ে ডাষ্ট বিনের দিকে ছুড়ে মারলেন।সেই সাথে সে লক্ষ্য করল ডাষ্টবিনে ছুড়ে ফেলা পয়সাটি সঙ্গে সঙ্গে এক টোকাই হাফপ্যান্টের পকেটে গুজে নিল।তার বুঝতে অসুবিদা হলো না,এ জগতে কোন কিছুই ফেলনার নয়।
লোকটির প্যান্টের পকেটে মোবাইলে রিং বেজে উঠল।ফোনটা রিসিভ করে পাশেই ছিল চায়ের একটি টং দোকান সেখানে বসে কথা শেষ করে ভিখারির দিকে তাকিয়ে সে আরো একবার অবাক হলেন।হায়রে ডিজিটাল দেশ ভিখারিও দেখি মোবাইল চালায়!তাইতো ভাবি ‘ও এক টাকার কয়েনটা নিল না কেন।সে তার কাজের কথা ভুলে ভিখারিদের কান্ড কারখানা দেখতে লাগলেন।তাদের অবস্থা দেখে ভিক্ষা বা দান খয়রাত দেয়া হতে ক্রমশত মন উঠে গেল তার।
আবারো অন্ধ ভিখারীর সেই সূরে বিলাপ।
আমার আল্লা বিধিরও নাম
দিলে করে দান…
আমার আল্লা বিধিরও নাম,
পাচঁ টাকার দানে পাবে লক্ষ কোটি ছোয়াব,
আমার আল্লা বিধির নাম………
ক্রীং ক্রীং শব্দ হচ্ছে।মনে হয় মোবাইলে কল হচ্ছে।ভিখারি বিলাপ বন্ধ করে ব্যাতি ব্যাস্ত হয়ে ছেড়া নোংরা পাঞ্জাবীর পকেট হতে মোবাইলটা কানে লাগিয়ে কথা বলা শুরু করলেন।
-হ্যালোউ….কেডা?ও আলমইচ্ছা,তুই কই…?আরে আমিতো কারানবাজারে…।হ হ হুন আইজ আইছিল রূপবানে যেমন নাম তেমন তার রূপ।
-ধূর!কানা,তুই ওর রূপ দেখলি কেমনে তুই না আন্ধা!
-ধূর কি যে কছনা আমিতো আন্ধাই…তয় রূপবানে আহনের লগে লগে আমি ওর শরিলের গন্ধ শুইখা বুঝছি ওখুব সুন্দর মাইয়া।তাছাড়া ওরে দেখতে গিয়া আমার চোখ ভালা হইয়া গেছিল হা হা হা।
অন্ধ ভিখারীর এ হাসি যেন লেংরা ভিখারীর দিলে গিয়ে চোট খেল।
-কি কইলি তুই?তুই আমার রূপবানরে ইজ্জত মারছস?খারা আইতাছি।
-কয় কি ছেমরায়!তুই কেমনে আইবি তুই না লুলা।
-গড়াইয়া গড়াইয়া আহুম…তোরে আইজ সাইজ করমু আন্ধাচুদা।
তড়িগড়ি করে মোবাইল পকেটে রেখে আবারো বিলাপে সূর শুরু করে দিল।আবার ভাবল ও শালায় আইবো না।আর যদি আইয়া পড়ে!বড় চিন্তার বিষয়।তাই সে আবারো মোবাইলের বাটন টিপে কারে কারে যেন কল দিল।কিছুক্ষণের মধ্যে কল করা তার সব সতীর্থরা এসে গেল।কেউ আধা লেংরা,কেউ অন্ধ,কেউ বা বোবা।
এসেই এক আধা লেংরা বলল।
-কেরে তোরে হুমকি দিছে…?
-আলমইচ্ছায়..ঐ হালায় আইতাছে…।
-আহুক আইজ!ওর লগে আমারো হিসাব আছে…ওরে লাইত্তাতে লাইত্তাতে আইজ ফুটবল খেলাম।
অন্ধয় বলছে,
-সালায় আহুক ওর গুয়ায় আইক্কা বাশ দিমুনে।
বোবায় হা হু হি হা কি যেন বলার চেষ্টায় রত।এরই মধ্যে সেই লেংরায় তার দল বল নিয়ে চলে আসছে।বোবায় তা দেখে তার সাথীদের বোবার ভাষায় কি যেন বুঝাল।সঙ্গে সঙ্গে ওরা সবাই যে যেদিকে পারল,দিল দৌড়।কেউ দৌড়াতে গিয়ে পড়ে গিয়ে উঠে আবার দিল দৌড়।লোকটি এসব দেখে মিট মিট করে হেসে সেও তার কাজে চলে এলো ।
শাহবাগের মোড়।টং দোকান হতে একটি সিগারেট নিয়ে পকেটে রাখা ম্যাচ লাইট দিয়ে জ্বালিয়ে মনের সুখে টানছেন।শাহবাগটা আজকাল বড় ব্যাস্ত।কত রকমের মানুষের যে আনাগোনা হয় এখানে।কত রকমের যে হয় মিছিল,মিটিং,প্রতিবাদের আসর।ব্যাস্ত এ শহরে সবাই ছুটছে।কেউ কারোর দিকে তাকাবার সময় যেন কারো নেই।লোকটি সিগারেট টানা অবস্থায় তার পিঠে কে যেন আলতু স্পর্শ করে তা অনুভব করল তা বুঝতে পেরে পিছনে তাকাতে সে দেখল পুরো নাকমুখ কেবল চোখ ছাড়া এক বোরকা পড়া মহিলা তাকে বললেন,,,
-বাবাগো…আমি বড় বিপদে পড়েছি।আমার লগে আমার ছাওয়াল আইছিল,হেয় আমারে এহানে ফালাইয়া চইলা গেছে…এহন আমি এহানে নতুন,কিছুই চিনি না জানিনা,চোক্ষেও কম দেহি।কেমনে যামু আমার দেশে?আমার কাছেতো কোন টাহা পয়সা নাই,কোন বাসে যামু তাও জানি না।তাই যদি কোন সাহায্য করতেন?
লোকটির এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে,তার এখন অযথা সময় নষ্ট করা ঠিক না।তাই মহিলাটির কথাগুলো কানে তেমন একটা নিলেন না।তাছাড়া কাওরান বাজারে ভিখারিদের যে ভন্ডামী দেখলেন তাতে এ সব সাহায্য টায়ায্য হতে মন বিষিয়ে আছে।তাই লোকটি আস্তে করে মহিলাটিকে বললেন….মাফ করেন।
মহিলাটিও আর কোন কথা না বাড়িয়ে গাড়ী ঘোরা চলন্ত পথটি পার হবার জন্য যেতে লাগলেন,এক পা সামনে দিলে আরেক পা পিছু নিচ্ছেন।লোকটি চেয়ে রইল মহিলাটির পথ পারাপারের দিকে।সে দেখতে পাচ্ছে মহিলাটি পথের মাঝে গিয়ে চলন্ত গাড়ীর হর্ণে থেমে গিয়ে আবার যাওয়ার চেষ্টা করছেন।সেই সময় লোকটির পকেটে রাখা মোবাইলে আবারো রিং এলো।সে পকেট হতে মোবাইল বের করে কল রিসিভ করে কানে দিয়ে যেই কথা বলতে যাবেন অমনিই থমকে গেলে সব!…সে লক্ষ্য করল হঠাৎ একটি চলন্ত গাড়ী এসে মহিলাটিকে ধাক্কা মেরে রাস্তার মাঝে ফেলে দিল,মুহুর্তেই আরেকটি গাড়ী এসে তাকে পিষে দ্রুত প্রস্থান নিল।এরই মধ্যে দ্রুত লোকজন লাশ হয়ে পড়ে থাকা মহিলাটির নিকট এসে কেউ হায় হায়,কেউ বা মোবাইলে ছবি,ভিডিও করায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।গল্পের লোকটি রিসিভ হওয়া মোবাইলে আর কোন কথাই বলতে পারলেন না,অপরপাশে কেবল হ্যালো হ্যালো শব্দ ভেসে আসছে।এক প্রকার অনুশোচনায় মন ভিষিয়ে উঠল।নিজেকে অপরাধী মনে করে মহিলার লাশের সামনে গিয়ে নিজেকে সামলে নিতে কষ্ট হল।রাজ পথের অনেকটা স্থান জুরে রক্তের প্রবাহ গিয়ে পৌছল রোড সাইটের ড্রেনে।রক্তাক্ত মুখটা খানা দেখে নিজের চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলে না।এতো বয়স্ক একটা মহিলাকে তিনি ভুল বুঝে(অন্য ভন্ড ফকিরের সাথে তুলনা)কোন সহযোগিতা না করে তাড়িয়ে দিলেন।সে সময় তিনি যদি তার সাথে একটু কথা বলতেন বা সহযোগিতা করতেন তাহলে হয়তো সে এ যাত্রায় বেচে যেত।
সমাপ্ত
৮টি মন্তব্য
প্রহেলিকা
আমরা অনেকেই ছিটকে পড়েছি। সব কিছুর মাঝেও লেখালেখি চালু রেখেছেন দেখে খুশি হলাম। শুভকামনা সবসময়।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সব আপনাদের ভালবাসা।ধন্যবাদ ভাইয়া -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
এতো অবিশ্বাসী চারিদিকে, কিভাবে একজন অচেনাকে বিশ্বাস করা যায়?
ভালো লিখেছেন মনির ভাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় শুভ্রতা হারিয়ে যায়।ধন্যবাদ দিদি।
মাহমুদ আল মেহেদী
অনেক ভালো লিখেছেন মনির ভাই । শুভ কামনা থাকলো সবসময়ের জন্য।
জিসান শা ইকরাম
গল্প ভালো হয়েছে ভাই।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
বিশ্বাস আর অ-বিশ্বাসের যাতাকলে মানুষ এখন নিত্ত নাকাল হচ্ছে। মনের জোর বাড়িয়ে যদি কিছু কিছু সময় নিজের চিন্তা-ভাবনা গুলো সঠিক কাজে ব্যবহার করে তাহলে অনেক ভুল করা থেকে বেচে যায়। কিছু ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হয়না,,শত অনুশোচনা করলেও।
ভালো লিখেছেন মমি ভাই তবে বৃদ্ধার মর্মান্তিক মৃত্যু মনকে ব্যাথাতুর করে দিলো।
মোঃ মজিবর রহমান
দেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন আপনার লেখায়। আরো অসহায় আছে যারা লেখা পড়া কইরা চাকরি নামের সোনার হরিনের পিছু ছটে।
ভাল লাগলো।