আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবদুস সাত্তার। ফটিকছড়ির হারুয়ালছড়ি গ্রামে জন্ম। কাজী বাড়ীর বড় সন্তান।অসম্ভব সুন্দরে ঘেরা প্রকৃতির মায়াজালে আচ্ছন্ন এক মনোরম গ্রামীণ আবাস।পশ্চিমে পাহাড় ও বনাঞ্চলে আবৃত ঝর্ণা বিধৌত ছোট্ট নদীর প্রবাহমান ধারার চলৎ চলৎ শব্দের ঘোরে বেড়ে উঠা।
যমুনা অয়েলে চাকুরীর সুবাদে খুলনায় থাকাকালীন বাড়ীতে বছরে ৩/৪বার আসা হত বাবার।ছোট বেলায় বাবার যতটুকু সান্নিধ্য পেয়েছি এখনো সে অবয়ব ভেসে মানিঅর্ডারে কখন টাকা পাঠাবে, পোষ্ট মাষ্টার কখন বিল পেরিয়ে হেঁটে আসবে বাড়ীর দিকে সে এক অপেক্ষার প্রহর। মায়ের কাঁধে সংসারের চাপ আর জীবন-জীবিকার জোয়াল একাই বইতে হয়েছে। বাবা বাড়ী আসার পর জীবনের আয়োজন ছিল অন্যরকম।
উন্নতমানের রান্না আর যত বিলাসী খাবার সব একসাথে, বাবা উৎসবে মাতিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী আর বঙ্গবন্ধুর জীবন চরিত নিয়ে কত কথা কত স্মৃতি আমাদেরকে তোতা পাখির মতো শুনাত। নিজের সংগ্রামী জীবন আর স্বপ্নের উচ্চারণগুলো যেন ইতিহাসের, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ছিল অগাধ ভালবাসা। আওয়ামিলীগের সাথে জড়িত থেকে মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আমরণ সংগ্রামে ব্রত রেখে অশিক্ষা ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। এলাকার মানুষকে শিক্ষার প্রতি অনুপ্রাণিত করতে নিজের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে অনেক ত্যাগ শিকার করেছে। আরাম আয়েশকে বিসর্জন দিয়ে অবিরত কর্মোদ্দীপনা ও মানবিক জাগরণে রীতিমত যুদ্ধ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের কত অমানষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে তা বলার বাইরে। ঘরে আগুন দিয়ে তছনছ করে ভিটাশূন্য করেছে দু’বার।নিজের বাবার মৃত্যুর জানাজায় অংশ গ্রহন করতে পারেনি।বোরকা পড়ে মুখ দেখে চলে যেতে হয়েছে। ৭৫ পরবর্তী দুঃসময়ে স্রোতের বিপরীতে রাজনীতি করে দুঃসাহসী ভূমিকা রেখেছে। অনলবর্ষী বক্তা ছিল বাবা। অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের বিজয়, সত্যের জয়ে নিজেকে আমৃত্যু আত্মনিবেদিত করে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মন্ত্রবীজ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিত। সাহিত্য ও কবিতা চর্চার স্বভাবজাত ব্যক্তিত্ব । মুহুর্তেই কবিতা গান ও নাতে রাসুল সাঃ লিখে ফেলত। ডায়েরীর পাতায় পাতায় সাদা কাগজের ভাঁজে ভাঁজে শুধু বাবার হাতের সুন্দর শব্দের যুদ্ধ যা এখনো বাবার প্রতিচ্ছবি হয়ে আছে। কথা, চালচলন, ড্রেস কোড,চুলের ষ্টাইল,হাঁটার ঢং যেন কোন এক রাজপরুষের আগমন! বাবার জীবনের প্রতিটি উপলক্ষ এক একটি জীবন্ত অবয়ব যা স্মৃতির মানসপটে এখনে জীবন্ত। সাহসের তুলনা হয়না। যত বাঁধা বিপর্যয় আসুক, সাহসের ব্যঘ্র থাবায় এককভাবে প্রতিহত করতে পিছপা হতোনা।মতাই এলাকায় বাবার আরেক নাম ‘বাঘা সাত্তার’।
আমি বাকলিয়া ছাত্রলীগের আহবায়ক থাকাকালীন জামায়াত শিবিরের অত্যাচার নিপীরণ জাহিলিয়াতের যুগকে হার মানাত।কতবার আমাকে মারার জন্য উদ্ধ্যত হয়েছে কতবার কাফনের কাপড় পাঠিয়েছে হিসাব নেই। এমন এক বিভীষিকাময় অবস্থায়ও বাবা সাহস হারায়নি।ওদের বলত আমার সন্তান কারো কাছে মাথা নত করবেনা।অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে আমার মতো সংগ্রাম করে বড় হবে। এ সাহস ও মনোবলে বলীয়ান হয়েছি আমরা।বাবার একটি কথা আমাদের জীবনের বড় টনিক, তা হল বাবা সময় বলত, আমার ছেলেরা মানুষের মতো মানুষ হবে।ভাল মানুষ হবে।সম্পদে বড় হবেনা, নিজেকে ভাল মানুষরুপে তৈরী করে মানবতার কাজে নিবেদিত হবে। বাবার এ স্বপ্নকে লালন করে এতটুকু জীবন পাড়ি দিয়েছি,ভবিষ্যতেও যেন বাবার মতো জীবন গড়তে পারি এটাই আমার জীবনের বড় প্রাপ্য।আজকের এ দিনে বাবার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থণা, বাবাকে জান্নাতবাসী করুন।আমিন।।
দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর এবং বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তার সুন্দর জীবনী পড়ে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি।হয়েছি অনুপ্রাণিত। বাবাকে নিয়ে খুব সুন্দর লেখাটির জন্য ধন্যবাদ অশেষ। প্রাসঙ্গিকভাবে বলি আমাদের বাড়িও ফটিকছড়ি। আগে রোসাংগিরি ইউনিয়ন ছিল পরে দুই ইউনিয়ন ভাগ হওয়ার পরে এখন সমিতির হাট ইউনিয়ন। হালদা নদীর পাড়েই আমাদের বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বাড়িতে অবস্থান করতেন। শুভ কামনা রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ও আপনার বাবাকে। এমন সাহসী মানুষের খুব দরকার আমাদের সমাজে। বাবারা সাহস দিলে সব কিছু অনেক সহজ, সুন্দর হয়। পৃথিবীর সব বাবাদের জন্য রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা
১৫টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
মাধুর্যমণ্ডিত শ্রুতিমধুর লেখা। ♥️
শায়লা ইলিয়াস
ধন্যবাদ
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর এবং বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তার সুন্দর জীবনী পড়ে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি।হয়েছি অনুপ্রাণিত। বাবাকে নিয়ে খুব সুন্দর লেখাটির জন্য ধন্যবাদ অশেষ। প্রাসঙ্গিকভাবে বলি আমাদের বাড়িও ফটিকছড়ি। আগে রোসাংগিরি ইউনিয়ন ছিল পরে দুই ইউনিয়ন ভাগ হওয়ার পরে এখন সমিতির হাট ইউনিয়ন। হালদা নদীর পাড়েই আমাদের বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বাড়িতে অবস্থান করতেন। শুভ কামনা রইল।
শায়লা ইলিয়াস
ধন্যবাদ
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ও আপনার বাবাকে। এমন সাহসী মানুষের খুব দরকার আমাদের সমাজে। বাবারা সাহস দিলে সব কিছু অনেক সহজ, সুন্দর হয়। পৃথিবীর সব বাবাদের জন্য রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা
শায়লা ইলিয়াস
😍😍😍
আরজু মুক্তা
সব বাবা ভালো থাকুন
জিসান শা ইকরাম
বীর মুক্তিযোদ্ধা আপনার বাবার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলী। আল্লাহ ওনাকে জান্নাতে স্থান দিক।
বাবাকে নিয়ে স্মৃতিময় লেখাটি অনেক ভালো লেগেছে।
আপনার বাবার স্বপ্নপুরন হোক আপনার মাধ্যমে।
শুভ কামনা।
শায়লা ইলিয়াস
ThAnks
এস.জেড বাবু
শ্রদ্ধা রইলো বাবার প্রতি।
দোয়া রইলো, আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করবেন।
ভালো থাকবেন আপু
আলমগীর সরকার লিটন
বাবার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা জানাই
সব বাবারাই ভাল থাক————-
সুরাইয়া নার্গিস
ভালো লাগার মতো লেখা, শ্রদ্ধা রইল বাবার জন্য।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা নামক বটবৃক্ষ।
তৌহিদ
একজন মুক্তিযোদ্ধা এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আপনার বাবার প্রতি রইলো শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। বাবাকে নিয়ে লেখাটি মন ছুঁয়ে গেলো।
আপনিও ভালো থাকুন আপু।
সঞ্জয় মালাকার
বাবার জন্য অজস্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা,,
হালিম নজরুল
বিনম্র শ্রদ্ধা