টাইম ইউ ওল্ড জীপসি ম্যান
ভোর ভোর ঘুম ভাংতেই, আঙ্গিনা জুরে মিঠে সৌরভ। কলতলায় তুমুল কোলাহল, পুরো গ্রামের তিনটা টিউবওয়েলের একটা, তাই। কাচারীঘরের থেকে ভেসেছিল মিহিকুচি দরুদের সুর।
কলতলার পাশেই বিরাট “তাফালে “জ্বাল হচ্ছে খেজুরের গুড়। গনগনে আগুনের আলোয় উদ্ভাসিতা শিশুটির নিশ্চিত আশ্রয়, দাদী। এক দৌড়ে তার কোলে সেধিয়ে যেতেই, এক পৃথিবীর ওম।
উঠোন পেরিয়ে হেটে আসে শিশুটির তরুনী মা, হাতে ধোঁয়া ওড়া কাপ। সাথে সাথেই দৌড় আবারো, দাদু ম্যাজিক বাক্স খুলে বের করে স্বর্ণ দ্যুতিময় চামচ, যেটা দিয়ে নেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত কোনদিনই ওভালটিন চা হয়নি।
প্রতিজ্ঞা ছিলো শিশুটি বড় হয়ে দাদুর চামচ অবশ্যই নিয়ে নেবে, এবং সে খাবে চা দাদু খাবে ওভালটিন। সেই ভয়ে দাদু চারপাশে তাকিয়ে কেউ নেই নিশ্চিত হয়ে, শিশুটির কাপে ঢেলে দিতেন ফু দিয়ে ঠান্ডা করা চা। রাগী তরুণ পিতা ঠিক দেখে ফেলে শশা মাচার নিচের বিস্তৃত হলুদের খেত থেকে।
তারপর একদিন, শিশুটির ঘুম ভাংগে অনেক বেলায়। উঠোন জুড়ে অপরিচিত মুখ সব। কাচারীঘর থেকে ভেসে আসছে করুন কন্ঠের কোরান পাঠ, বাড়ি জুড়ে অচেনা ঘ্রাণ, মৃত্যুর। আর লোবানের। উঠোনের মধ্যিখানে শুয়ে আছে তার আবছা জগৎ। দাদী নেই। আজও নেই কেউ, পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতা নেই। মা আর তরুণী নেই, পিতার রাগ নেই ……. শিশুটির শেকড় নেই। টবের জীবন কাটায় প্রাক্তন শিশুটি
টাইম ডিড ইউ সী ….
এবং পরবাসী প্রাক্তন শিশুটি……..
এই শহরে নিতান্তই আগন্তুক সে, স্রোতের শ্যাওলা। তবুও মানুষের প্রবৃত্তির বশে ঊষর মাটিতেও শিকড় নামানোর নিরন্তর চেষ্টা। যান্ত্রিকসভ্যতার শহরে বেমানান হেটে যাওয়া। কেবলমাত্র ব্রিজের ওপর দিয়ে পারাপারের নদীটির পার ধরে হাটাহাটির কারণে দুইবার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, যদিও যন্ত্র নগরী তবুও কিছু জায়গা টানে, অমোঘ।
ফোর্থ নভেম্বর রোড।
শুধুমাত্র হাঁটার রাস্তা। কয়েক মিটার পরপর ছোট ছোট স্পিকার ঝুলানো, অলংকৃত খিলান দুপাশে। এবং হঠাৎ হঠাৎ কেউ গেয়ে ওঠে বিষন্ন রাগিনী। টিপটিপ বৃষ্টির দিনে কখনোবা নেমে আসে ঝাক বেধে দেবদূত গন। কোন না কোন খিলান তলে বাজে করুন বেহালা, উদাসীন বাদক একমনে বাজিয়েই যায় ….. ছরের প্রতিটি টানে রিক্ত হাহাকার গলে গলে পরে। মাঝপথে হঠাৎই দাড়িয়ে যায় প্রেমিক যুগল। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ভাগ করে আসমুদ্র উষ্ণতা, সে হুডটা আরো একটুখানি টেনে দিয়ে হেটে যায় নির্বিকার,টিপিটিপ বৃষ্টিতে।
পেছনে গলে পরে …….. বেহালার কান্না, প্রেমিকের উষ্ণতা, লুকা নিয়াপলিটানোর ভরাট গলার বিষন্নতা ……. সমাজ অস্বীকার করে দুর্বীনিত বিটনিক যুবকের তারস্বরে চিৎকার।
অদুরে গীর্জার ঘন্টা ধ্বনির শব্দে ডানা ঝাপটিয়ে উড়াল পায়রা দম্পতির ………
আর সে ডুবে যাওয়া চাদেঁর পিছুপিছু হাঁটতেই থাকে
২০টি মন্তব্য
বোকা মানুষ
আহা শৈশব 🙂
আগুন রঙের শিমুল
🙂 🙂
শুন্য শুন্যালয়
পুরো একটি জীবন। মন খারাপ হয়ে গেলো লেখা পড়ে।
টবের জীবন কাটায় প্রাক্তন শিশুটি .
তবুও মানুষের প্রবৃত্তির বশে ঊষর মাটিতেও শিকড় নামানোর নিরন্তর চেষ্টা।
যন্ত্রণা স্পষ্ট।
আগুন রঙের শিমুল
🙂
বনলতা সেন
প্রচন্ড বিষণ্ণতা আপনার লেখায় । পরবাসে দাঁড়িয়ে ফিরে ফিরে দেখা ।
এ ধরনের লেখায় আপনি বেশ সচ্ছন্দ প্রকাশ করতে পারছেন । আগেও লিখেছেন যেমন ।
নিয়মিত পড়তে ভালোই লাগছে ।
আগুন রঙের শিমুল
হু
পুষ্পবতী
আপনি খুব সুন্দর করে লিখাটি উপস্থাপন করেছেন।
পরবাসী জীবন কষ্টের।মন খারাপ লাগলো লিখা পড়ে।
ভালো থাকবেন সবসময়।
আগুন রঙের শিমুল
আপ্নিও ভালো থাকবেন
ছাইরাছ হেলাল
আমার অনুমান প্রায় ঠিক এ আমি ধরেই নিচ্ছি । বিষণ্ণতা উপলব্ধির উপস্থাপন অনন্যসাধারণ ।
এ জন্যই বলি , আবারও বলি আপনি দু’জায়গায় দু’জন মানুষ । যা একটির সাথে আর একটি যায় না ।
শেকড়ের টান অনুভবের অনুভব এখনো জিইয়ে রাখতে পেরেছেন দেখে ভালো লাগল আরও ।
পড়তে ভালই লাগল । আপনি আরও একটু মনযোগী হলে আমরা আরও সুন্দর লেখা পড়ার সুযোগ পেতাম ।
আগুন রঙের শিমুল
আপনার অনুমান হয়তো ঠিক , ফেসবুক মনে হয় আমার জন্য না ।
সিনথিয়া খোন্দকার
অচেনা লাগে মাঝে মাঝে। হয়ত ছাইরাছ হেলাল এর কথাই ঠিক। তুমি দুইজন মানুষ দুই জায়গায়।
🙂
আগুন রঙের শিমুল
হয়তো 🙂
প্রজন্ম ৭১
মনে হচ্ছে আপনি দেশের বাইরে। যদি তাই হয়, চলে আসুন শিমুল ভাই। কতটা হাহাকার থাকলে এমন লেখার সৃষ্টি হয় আমি বুঝি। যদিও লিখতে পারিনা আমি। দুই বছর প্রবাসে ছিলাম। আমার মাঝে আমি ছিলামনা। এমন কষ্টে দম বদ্ধ হয়ে যেতো। অবশেষে ফিরেই এলাম। ভালো লেগেছে আপনার লেখা।
আগুন রঙের শিমুল
…
আদিব আদ্নান
স্মৃতি কথা বা এমন কিছু যা আপনি হারিয়েছেন ।
আর লিখতে পারব না ।
আগুন রঙের শিমুল
🙁
জিসান শা ইকরাম
আপনারা দুজন লেখার প্রতিযোগিতা করছেন মাষ্ট ।
কার লেখা ভালো ভোট নিচ্ছেন নাকি কৌশলে ?
বিষন্নতার লেখা
বিষন্নতাকে এভাবে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যান কিভাবে শিমুল ভাই ?
শুভ কামনা ।
আগুন রঙের শিমুল
না দাদা প্রতিযোগিতা নাহ
আমি আমার কথা লিখেছি উনি উনারটা 🙂
ব্লগার সজীব
ভালো লেগেছে খুব শিমুল ভাই। জিসান ভাই ঠিক বলেছেন, দুজনার লেখার মাঝেই অদ্ভুত বিষণ্ণতা (y) -{@
আগুন রঙের শিমুল
ধন্যবাদ সজিব
ভালো লাগলো দুইটাই মুল্যায়ন দেখে 🙂