-কি রে এত রাতে ফোন দিসছ কে?
-আজ ইউনিভার্সিটিতে কি হলো দেখলি? শুভ্রকে মারতে মারতে হল থেকে বের করে দিল, অথচ কেউ কিচ্ছু বললো না।
-আরে বেটা মানুষের জানের ভয় আছেনা। প্রতিবাদ কইরা খালি খালি হলের সিটটা হারাইবো আরকি? যা রাইত হইছে ঘুমা। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা।
মা, এখন মাঝ রাত!
আমি জানি তুমি আমাদের মত ঘুমাওনি। একটা সময় ছিল তুমি রাতে বিশ্রাম নিতে। এখন আর সেই ফুসরত কই! তোমার বুকে যে ২৪ ঘন্টাই ঘুরে অর্থনীতির চাকা। তাই এই অসময়ে তোমাকে স্বরন করছি। মা, নয় মাসের অবিচল ধৈর্য আর উত্তাল বেদনার পরই তো তুমি মা! শৈশবে যে শিশু উত্তাল ভবিষ্যতের সপ্ন দেখতো, যৌবনে প্রাচুর্য্যের মোহে সে লাগামহীন টাট্টু ঘোড়া। বেয়াড়াপনা তাঁর রন্দে রন্দ্রে। দু’দশক আগেও এটাকে বোধ হয় দুষ্টুমি বলা যেত! কিন্তু এখন, কিন্তু এখন নষ্টামী বলা ছাড়া আর কোন গতি দেখছি না!! তোমার প্রসব বেদনার ক’বছর আগে যে ধ্বনি বা বর্ণমালার জন্য জীবন হারিয়ে শহিদ পেলাম, সেই সালাম বরকত রফিক, জব্বারের রক্ত ভেজা শার্ট জাদুঘরে না থেকে, ঐ শার্টের একটি সুতায়ও যদি আমার হৃদয়ে থাকতো। তাহলে বুলিতে যে মিথ্যার ঝুলিতে যে পাপ! তাঁর শাপ কিছুটা হলেও মোচন হতো।
রাজপথে সব প্রজারাই ছিল
ভাষার দাবিতে প্রানের আকুতি
শক্ত পিচে ফুল ফুটেছিল অ আ’রও সুর।
এখন ভাষার ভাষা শুধু বুকে
মুখ খুঁজে ফিরে ধুকে ধুকে
মুখে ফোটে ফিরিঙ্গী খই, ক খ গ পলাতক রয়!
“-রফিক সাহেব, ছেলেটাকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলাম, আন্তর্জাতিক ভাষায় শিক্ষিত হোক, ওসব বাংলাটাংলা শিখে আর কি হবে?
-ঠিকই করেছেন জামান সাহেব, এ লেভেল পাশ করলেই। আমেরিকা কিংবা ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দিবেন। এদেশে রেখে শুধু শুধু ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন নাকি!”
সুখ বা শোক দিবস দুটোই এখন বাণিজ্যিক হায়নার খাদ্য। ১৬ই ডিসেম্বর বা একুশে ফেব্রুয়ারি সবই ফুরফুরে হলিডে। কণসার্ট, কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্ফোজিয়াম, এমন কি, এমন কি! সংসদ অধিবেশন, সব এখন স্পন্সর্ড। সার্বজণীন পুরুষ্কার বিতরনি অনুষ্ঠানে লাখ টাকার আতস বাজী ফুটে। আর সেই একই অনুষ্ঠানে গলায় প্ল্য-কার্ড লাগিয়ে ভিক্ষা করে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। যে মানচিত্রের সীমানা লাখো শহীদের রক্তের কালিতে আঁকা। সেই সীমানায় আজো রক্ত ঝরে। যেই সার্বভৌমত্বের বড়াই করে বলি আমরা বাংলাদেশী, সেই সার্বভৌমত্ব কেনা বেচা হয় আন্তর্জাতিক মীমাংসার টেবিলে। কোটের সঙ্গে নীতি যায়না বলেই বোধহয়, কূটনীতি না বলে, সবাই ডিপ্লোম্যাসি বলতেই সাচ্ছন্দবোধ করে! আর প্রতিনিয়ত নিজের সাথে প্রতারনা করা জনগন বুঝে না। তারা বারেবার একি ভুল করে। থোড়বড়ি খাড়া, খাড়াবড়িথোড়, বারবার খালকেটে কুমির আণা কবে কবে শেষ হবে তোর।
প্রচারনাতেই প্রসার
আর্টে শুধু টাকার কালচার,
স্বাধীনতা হলো পন্য!বিলবোর্ড প্ল্যা-কার্ডে রঙ্গের বাহার।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়, দেশটাই এখন পাশার বোর্ডে
১৬ কোটি জনতা পিট বাঁচিয়ে নিজেরাই বাঁচে।
“-আপনি যে প্রশ্নটি করেছেন, তা অর্থনীতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।
-দেখুন আমাদের সময় কিন্তু এমনটি হয়নি, গনতন্ত্র এবার জাগবেই।ম্যাচাকার বন্ধ হবেই।
-আরে রাখেন আপনার গনতন্ত্র। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে ভাল। দেশের মানুষ এখন যে শান্তিতে তাতো আমেরিকার মানুষও নেই।
মা জানি তুমি মমতাময়ী, একটাও আঙ্গেওগিরি নেই তোমার বুকে। আছে কেবল জালের মত বিছিয়ে রাখা নদী। তোমার শোকের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে, সেখানে প্রায়ই চর পড়ে। তোমার ক্ষোভ দেখে, টর্নেডোতে, ভূমিকম্পে, জলচ্ছাস আসে। তোমার কি মনে হয় না, এই অস্থিত্বের কোন মানে নেই, এই ঘর ঠিকানা বিহীন। তোমার কি মনে হয় না, আঁতুড় ঘরেই লবন দিয়ে শেষ করে দেওয়া উচিত ছিল তোমার পথভ্রষ্ট সন্তানদের। মনে হয়না, মনে হয়না, সাফারী পার্ক থেকে জঙ্গল ভালো! আমারতো মনে হয় ছোট খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে আরো বড় খাঁচায় এলাম। জেলখানাতেই আছি এখনও, এখান থেকেই চিঠিটা পোষ্ট করবো। পেলে উত্তর দিও।
ইতি
অজানার শহর হতে-আমরা শহরতলী।
মাত্রই ফিরলাম ঘরে, আবার বেরুতে হবে একটুপর, আজ যে মাতৃভাষার জন্য প্রান দেওয়া সব শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবার দিন।
৮টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
আমরা এমন হয়ে গেছি রে ভাই।
বিদেশে বসে বাসায় ছেলেকে বাংলা ছাড়া কথা বলতে দেইনা। আর সেটা নিয়ে আমার ছেলে নয়, অনেকেই বলবে এ দেশেই থাকবে এতো কি বাংলা নিয়ে কথা?
ছেলে-মেয়েরা আরবী অক্ষর জানে, চেনে। বাংলা জানেনা।
ভাবি যখন আমরা থাকবো না প্রবাসের এই মাটিতে, তখন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কতো শত রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশ, এই ভাষার সম্মান রাখবে তো?
বহুদিন পর লিখলে, নিয়মিত হবার চেষ্টা করো।
শুন্য শুন্যালয়
সবকিছুর পরেও পাকিস্থানের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার পাকিস্থানের দূতাবাসে ছেলেমেয়ের দল মিছিল করতে করতে ছুটে যায়, আজও, এখনও। যাবেও।
প্রয়োজনের তাগিদে অনেক কিছু পাল্টে যায়, তবু বিশ্বাস করি অন্তরে বাংলা আছে, থাকবেই আজীবন, হাতে গোনা কএকজনেরই না হয়।
হাল ছেড়োনা। ভালো লিখেছ উন্মাদ।
অনিকেত নন্দিনী
এখনো রাত জেগে কিছু মানুষ শহীদ মিনার সাজায়, আল্পনা আঁকে। এখনো না খেয়ে না ঘুমিয়ে কিছু মানুষ ভাষা দিবসকে সামনে রেখে রাজপথ জুড়ে তাদের মনের মতো করে নকশা এঁকে যায়। এখনো কিছু মানুষ সেই শেষ রাতে উঠে ফুল হাতে খালি পায়ে শহীদ মিনারের দিকে ছুটে যায় ভাষা শহীদদের একটুখানি শ্রদ্ধা জানাবে বলে।
এই কিছু মানুষের সম্মলিত প্রচেষ্টা যতদিন থাকবে ততদিন বাংলা ভাষাও অটুট থাকবে আশা করি।
জিসান শা ইকরাম
মাতৃভাষার জন্য প্রান দেওয়া সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি -{@
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা
অরুনি মায়া
সত্যিই বলেছেন দিবসগুলো এখন শুধুই হলিডে | মানুষ এই দিবসগুলো স্মরণ করে কারণ সেদিন অফিস,স্কুল বন্ধ | ঘুমের দিন |
ভাল লিখেছেন |
ভাষা শহীদদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই |
অপার্থিব
২১শে ফেব্রুয়ারী, ১৬ই ডিসেম্বর শুধু বাংলাদেশের জাতীয় দিবস নয় , একই সঙ্গে সরকারী ছুটির দিন। এই দিন মানুষ তার প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক এবং সেটাই হচ্ছে । এই দিন পার্ক আর আবাসিক হোটেলগুলোতে তরুণ তরুণীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কিন্ত যাদের আত্বত্যাগের কারণে এই সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ তৈরী হয়েছে তাদের স্মরণ করাও যে আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এই বোধটুকু তাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। কর্পোরেট সংস্কৃতি নিজেদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে নিজেদের মত করে এই দিবসগুলো উদাযাপনের উপায় উদ্ভাবন করেছে এবং এই উপায়গুলোকে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে । এই কর্পোরেট সংস্কৃতির বিকাশ ঠেকানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
খসড়া
ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা।